মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকার ‘সেন্ট লুইস পোস্ট’-এ যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোলান্ডে নাৎসীদের গণহত্যার পর এই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সবচেয়ে নৃশংস। সরকারী হিসেব অনুযায়ী ”প্রথম চার মাসে ২ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ বাঙালি নিহত হয়েছে এবং ৬৫ লক্ষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ” ৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত, নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর। রাজধানী ঢাকায় প্রথমে তারা হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসে এবং পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দফতরে। এরপর তারা ধ্বংস করেছে ঢাকার বস্তি, বাজার এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসমূহ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘরে ঢুকে কিংবা ঘর থেকে বের করে এনে হত্যা করেছে তারা। বাজার ও বস্তিগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনের ভয়ে হাজার হাজার মানুষ যখন ঘর থেকে দলে দলে বেরিয়ে এসেছে তখন ওদের ওপর মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হয়েছে একটানা, যতক্ষণ না প্রতিটি মানুষ নিহত হয়। বহু মানুষ নিহত হয়েছে ঘুমন্ত অবস্থায়। এসব মানুষ জানতেও পারেনি কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে কিংবা কারা হত্যা করছে। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে ২৫ মার্চের অন্ধকার রাতে শুধুমাত্র ঢাকায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার নিরীহ মানুষকে অকাতরে জীবন দিতে হয়েছিল। সময়ের সাথে হত্যার আনুপাতিক হাঁর বিবেচনায় নিলে, বিশ্বের যে কোন যুদ্ধে ঘটিত গণহত্যার চেয়ে বাংলাদেশে বেশি গণহত্যা হয়েছিল। অর্থাৎ এত অল্প সময়ে যত মানুষকে বাংলাদেশে হত্যা করা হয়েছিল, সেই একই সময় অনুপাতে পৃথিবীর অন্য কোথাও এতো মানুষ গণহত্যার শিকার হয়নি। গণহত্যার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে বছরে অন্তত একটি দিন আমাদের বেছে নিতে হবে। যে দিনটিতে পৃথিবীর মানুষ স্মরণ করবে যুদ্ধে নিহতদের, দাবি জানাবে গণহত্যাকারীদের বিচারের এবং বাধা হয়ে দাঁড়াবে বিশ্বে পূনঃবার গণহত্যা অবসানের।
বাংলাদেশে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গত ২১ বছর ধরে ২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাত্রি পালনের কর্মসূচি হিসেবে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আলোর মিছিল নিয়ে নিকটস্থ বধ্যভূমিতে গিয়ে মোমবাতি জ্বালায়। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্মূল কমিটির শাখাগুলো এই কর্মসূচি পালন করছে। তাঁদের এই মহতি উদ্যোগের প্রতি একাত্বতা ঘোষনা করে আমিও উপস্থিত হয়েছিলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
আলোর মিছিলে হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে কী যে ভালো লেগেছে !
আমরা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি যে, তা আরেকবার প্রমানিত হলো।
আজকে আমার ব্যাক্তিগত অর্জন বেশ কজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে পরিচিত হতে পারা।
আর সামগ্রিক ভাবে … আলোর মিছিলে মানুষের ঢল, মোমের আলোর শিখার সাথে ছিলো অনেকের পুরো পরিবার! এমনকি ক্ষুদে ক্ষুদে বাচ্চারাও। শহীদ মিনার থেকে মোম হাতে হেটে হেটে জগন্নাথ হল পর্যন্ত গিয়েছে তারাও ! ফেসবুকের অনেক বন্ধুকে দেখলাম আলো হাতে। মুগ্ধ আমি।
[ এক বুক ঘৃনা তাদের জন্য যারা ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের কথা জানার পরেও জামাত-শিবির নামক জানোয়ারদের সমর্থন দেয়। ]
কেবল তো যাত্রা শুরু হলো ‘আলোর মিছিলের’। এবছর যদি আমাদের দাবি পূরণ নাও হয় তবে আগামী বছরে তা অবশ্যই পূরণ হয়ে যাবে। অন্ততঃ আজকের মিছিলের পরে এমনটা ভাবতেই পারি ।
সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা…
৮টি মন্তব্য
মামুন
লিখাটি ভালো লাগলো। ছবিগুলো ও অনবদ্য।
আপনাকেও স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা…
খেয়ালী মেয়ে
এক বুক ঘৃনা তাদের জন্য যারা ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের কথা জানার পরেও জামাত-শিবির নামক জানোয়ারদের সমর্থন দেয়।
জিসান শা ইকরাম
এই আলো চিরস্থায়ী হোক আমাদের মননে।
শত প্রতিকুলতার মাঝেও আমাদের এই আলো ধীরে ধীরে আলো ছড়াচ্ছে।
ধীক্কার ও ঘৃণা জানাই তাদের প্রতি যারা ২৫ মার্চের হত্যাকারীদের সমর্থনকারী।
মেহেরী তাজ
একটা অসাধারণ উদ্যোগ। আজ হোক কাল হোক দাবি পুরন হবেই। এটা এখন সময়ের বেপার মাত্র। আমি সশরীর থাকতে পারিনি তবে মনে প্রাণে আপনাদের সাথে আছি।
ব্লগার সজীব
শ্রদ্ধা জানাই ২৫ মার্চ নিহত সমস্ত শহীদদের,আলোর মিছিলে অংশ নেয়া সমস্ত বাংগালীদের।আপনাকেও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এই আলোতে মুছে যাক সব অপশক্তি।খুবই আবেগীয় দিনটি।
লীলাবতী
এই আলোতে আলোকিত করি নিজদেরকে।দুর করি সকল অন্ধকার।
শুন্য শুন্যালয়
আমাদের গৌরবোজ্জ্বল আর আত্মত্যাগের ইতিহাস জানুক পুরো বিশ্ব। সবার আগে আমাদের পরের প্রজন্ম জানুক, এ আলোর মিছিলে আলোকিত হোক সবাই, আলোকিত করুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
মিস করছি এমন দিনগুলো। নিষ্ঠুর এই বর্বর হত্যাকান্ডের তীব্র ঘৃনা জানাই। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা আপনাকে আপু।