আমি সমাজ থেকে হারিয়ে গেছি।
আমি একজন নামী লেখক। কতো লোক আমার সাথে দেখা করতে চায়, আমি কারো সাথে দেখা করতে পারিনা। কারো সঙ্গ ভালো লাগেনা। সবাই আমাকে অহংকারী ভাবে।
আমি বিপত্নীক, আমার ছোট্ট বাড়ীর দোতলায় আমি একা থাকি। নিচের তলায় আমার ছেলে তার বউ বাচ্চা নিয়ে থাকে। একদিন পা পিছলে পড়ে গিয়ে ‘মাথায়’ ভীষণ চোট পেয়েছিলাম।
তার কিছুদিন পরে হটাৎ আমার কি যে হোল কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি কিছু লিখতে পারছিনা। কিছুতেই লেখার সেই আবেগ আসছেনা “তাজা খবর”এর সম্পাদক তাগাদা দিচ্ছেন পুজা সংখার লেখাটার জন্য। প্রকাশক সেন মশায় নিয়মিত ফোন করছেন। আগে আগে রাতে লিখতাম, লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়তাম।
কদিন আগে ঘরের আলো নিভিয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালতেই ঘরে আলোআঁধারির মধ্যে ….ও কে? এক ছায়া মূর্তি আগে কখনো দেখিনি। শাড়ী পরা।
আমার লেখার সময় কেউ আমার ঘরে আসুক আমি চাইনা ওকে চেঁচিয়ে বলি “কে তুমি, আমার ঘরে কেন এসেছ ? আমার লেখার সময় বিরক্ত কোরোনা, যাও চলে যাও” (ও কি আমার কথা শুনতে পেল না ? আমি জানিনা)
ও কোনও কথা বলে না, শুধু হাতের চুড়ি বাজায় রিনিরিনি পায়ের নুপুর নাচায় ঝিনিঝিনি। ও সারা ঘর ঘুরে ঘুরে নাচে তারপর, আমার পিছনে চলে আসে আমায় আলিঙ্গন করে; আমার ঘাড়ে ওর নিঃশ্বাস আমার শরীরে উদ্দামতা আনে (আমার ভয় করেনা, ভালো লাগে)
আমি টেবিলে বসি ও আমার পিছনে ঘেঁসে থাকে। আমি লিখতে চেষ্টা করি।লেখার passion আসেনা, কিছুতেই কিছু লিখতে পারিনা। প্রথম দিন ধীরে ধীরে মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হয়, sleeping pill খাই ঘুমিয়ে পড়ি। খুব বেলায় ঘুম ভাঙ্গে, সারাদিন অবসাদে শরীর মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
আবার রাত আসে, আবার আসে ছায়াময়ী আমার শরীরে মিশে যায়; রিনিঝিনি বাজনা বাজায়। উঃ আমাকে পাগল করে দেয়। আমি কিছতেই লিখতে পারিনা। কলম নড়ে না।
আমি ওর সাথে নাচতে শুরু করি। ধীর তালে নাচতে নাচতে ক্রমে ক্রমে আমরা উদ্দাম হয়ে উঠি। কোথা থেকে কারা যেন নাচের বাজনা বাজায়। ঝম ঝম বাজনার তালে পাগলের মতো নাচি। (ও কে? কোথায় থাকে? কেন আসে? বুঝতে পারিনা) সারা রাত আমার সাথে লেপ্টে থাকে। আমি ঘুমিয়ে পড়লে চলে যায়।
রাত হলে ও আবার আসে; আবার আমরা উদ্দাম হয়ে উঠি। এই ভাবে দিন যায় মাস যায় (ওর হাত থেকে কি করে নিস্তার পাব আমি জানিনা) বুঝতে পারছি আমার লেখক জীবন শেষ হয়ে গেল। আমি আর কখনো লিখতে পারবনা।
প্রকাশক কে ফোনে বলে দিলাম, আমি আর লিখবো না; লেখার জীবন থেকে অবসর নিলাম। তারপর থেকে আমি কারো সাথে দেখা করিনা। লেখকের জগত থেকে আমি এক রহস্যময় জগতে বাসিন্দা হয়ে গেছি।
রোজ রাতে ওর সাথে নাচার নেশায় আমি বুঁদ হয়ে থাকি।
আমার রহস্য নিয়ে সমাজে গবেষণার অন্ত নেই। খবরের কাগজে আমার রহস্যের নানা কারণ লেখা হয়।
কোনটা ঠিক আমি জানিনা। আমি আজও নেচে চলেছি। বেঁচে আছি। সামাজিক জগত থেকে হারিয়ে গেছি।
লেখকঃ বিমান
৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এমন নারী ভালোনা , লেখা লিখতেই হবে লেখককে ।
খসড়া
লেখক শুধু নাচেই না খবর রাখে তাকে নিয়ে জনমনের কৌতুহলের।ভালইতো। এই ভাবে এই বয়সে নাচলে তো আপ্নার হার্ড এটাক, ব্লাডপ্রেসার, ডাইবেটিস কিচ্ছু হবে না। শুভ কামনা।
স্বপ্ন নীলা
লেখাটা পড়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল,,,,,,,,,তার সাথে বলতে চাই ভীষণ ভাল লেগেছে লেখাটা,,,,,,,,তবে লিখুন মন খুলে,,,,,,আর এত নাচানাচি করা ভাল নয়,,,,,,,,,,,শুভকামনা
রিমি রুম্মান
ভাল লাগলো… লেখার জীবন থেকে অবসর নেওয়া … আর লেখকের স্বত্বার মৃত্যু একই কথা… লেখা চলুক অবিরত।
শুন্য শুন্যালয়
মাথায় চোট ভালোই পেয়েছেন ভাইয়া ..
সিনেমার ভাষায় আরেকটা বড়সড় চোট দিতে হবে,
আর ডাক্তারি ভাষায় ক্যাটস্ক্যান করান ভাইয়া :p
নীলকন্ঠ জয়
লেখা চলুক। অবসরে না যাওয়াই উত্তম। -{@
বিমান
আপনাদের মতামত আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আপনারা সকলে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ নেবেন।
নীলকন্ঠ জয়, মহাশয়ের উপদেশ গ্রহণ করে অবসরে না যাওয়াই মেনে নিলাম আবার লিখতে চেষ্টা করবো।
-{@