এখন আমার ক্যালেন্ডারি বয়স ৪৪। যখন থেকে জন্মদিনের মানে বুঝতে শিখেছি, প্রতিটি বছরকেই নতুন মনে করে আনন্দে মেতে উঠি। জীবনের একেকটি ধাপ, কতো কতো মোড় পাড়ি দিয়ে আজ এখানে এসেছি। ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছে, নীরব কান্নায় চোখ ভিঁজিয়েছি, প্রচুর যুদ্ধ করেছি হাসিমুখে, আবার প্রাণভরে নেচে উঠেছি। যদিও পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষের জীবনই এমন। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে আমার ভাগ্য অনেক ভালো। জন্মের আগেই “নীলাঞ্জনা” নামটা পেয়েছি। তার মানে হলো আমার বাবা-মা কন্যা সন্তান আশা করেছিলো। কথায় কথায় জেনেছি বাপি দুটো নাম ঠিক করেছিলো। একটা হলো “কঙ্কনা’ আর অন্যটি এই আমি, যে নামে পরিচিত হয়ে আছি। কঙ্কনাকে হারিয়ে দিয়ে নীলাঞ্জনা জয়ী হয়েছে। আচ্ছা যদি কঙ্কনা হতো আমার নাম, তাহলেও কী আর বদল হতো জীবনের সমস্ত মানচিত্রের? আমার পুরো নামটি খুব প্রিয় আমার। যদিও বেশিরভাগ মানুষ আমাকে “নীলা” নামেই ডাকে। তবে এই ডাকটা আমার ভালো লাগেনা, তাও সাড়া দেই। বাপি আদর করে ডাকতো “নীলমন” খুব ভালো লাগতো। এই নাম নিয়ে ভালো-খারাপ কতো কী যে আছে! সেই কবে শুনেছি, “নীলা সকলের সহ্য হয়না!” কিন্তু আমি তো পাথর নই! মানুষ! ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে যখন মাস্টার্স শেষ করি, তখন আমাদের ৫০৩ রাজিয়া হল থেকে চলে আসার সময় হয়ে যায়। আমি বন্ধুদের অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম। একজন লিখেছিলো, “শুনেছি নীলা সকলের সহ্য হয়না। কিন্তু নীলাঞ্জনা আমাদের দিব্যি সয়ে গিয়েছিলো!” কথাটা এখনও ভুলিনি।
নিজের নাম নিয়ে লিখতে কেমন জানি লাগছে! তখনও স্কুলে পড়ি, টিভিতে শেখ ইশতিয়াকের “নীলাঞ্জনা” গান প্রচারিত হলো। বাপি সাধারণত আধুনিক শিল্পীদের গান শুনতো না। ওই গানটা শুনে সোফায় এসে বসলো। আমাকে বললো, “আয় আমার কাছে। দেখেছিস কেমন নাম রেখেছি? তোকে নিয়ে গানও হয়!” কী যে লজ্জ্বা! আয়নায় দেখিনি, তবে নিশ্চিত চোখ-মুখে লাল আভা ছড়িয়ে গিয়েছিলো। একসময় এই গান আমায় বিরক্ত ধরিয়ে দিয়েছিলো। কারণটা যে যার মতো করে ধারণা করতে পারেন। তারপর জীবনানন্দ দাশের কবিতা “আকাশলীনা”—“সুরঞ্জনা ওইখানে যেওনাকো তুমি, বলোনাকো কথা ওই যুবকের সনে…” ভাইবা বোর্ডে শিক্ষকেরা বলতেন নীলাঞ্জনা ওইখানে যেওনাকো তুমি…।” বলতাম স্যার ওটা তো সুরঞ্জনা। স্যারেরা বলতেন, “বাহ বেশ বেশ!” পরে জেনেছি আসলে ওটাও একটা ক্যুইজ। অবশেষে এলো নচিকেতার নীলাঞ্জনা। সত্যি বলছি আফসোস হতো গানটা শুনলে, যদি আমি ছেলে হতাম! আমার প্রেমিকার নাম রাখতাম নীলাঞ্জনা।
আজ এতোকিছু লেখার কারণ, জন্মদিনে প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছি। ব্লগ থেকে ফেসবুক, মোবাইল টেক্সট, ফোন বিভিন্নভাবে। খুব ভালো লেগেছে। কারণ আন্তরিকতার জন্য মন লাগে, কোনো আর্ন্তজগত কিংবা ফোন লাগেনা। এমন অনেক মানুষ আছে যারা আমার নাম্বার জেনেও যোগাযোগ করেনি। তবে দেখানোর জন্য ফেসবুকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছে। আসলে আজকাল আমাদের মনটা ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। তার মধ্যেও কেউ কেউ আছে এখনও যাদের মন শুভ্র কাশফুলের মতো নরম-কোমল-আন্তরিক। সোনেলায় এসে আমার জন্মদিন উপলক্ষে যে ক’জনের পোষ্ট পেয়েছি,তাঁদের মধ্যে জিসান শা ইকরাম নানা, শুন্য শুন্যালয় আপু, ছাইরাছ হেলাল কুবিরাজ ভাই (বিল্পম্বিত পোষ্ট)। তাছাড়া ফেসবুকে প্রতিবছর আমাকে আমার ভাই রানা সারপ্রাইজ দেয় একেকটি পুরোনো ছবি দিয়ে, তার সাথে বিশাল স্মৃতিকে তুলে ধরে। এবার প্রথম ফোন মামনির থেকে পাওয়া, তারপর আমার ছেলে, তিন নম্বরে আমার বন্ধু বেলাল। সারপ্রাইজ গিফট পেয়েছি বন্ধু শিল্পীর থেকে। পার্শ্বেলের রিসিট দেখে ভাবছিলাম কে পাঠালো? পোষ্টঅফিসে গিয়ে দেখি ইয়া বিশাল বড়ো প্যাকেট। তার মধ্যে চমৎকার একটা কার্ড এবং চিঠি(যা সবচেয়ে দামী আমার কাছে), আর তিনটি শাড়ী, একটা পার্স, সাজগোজের জিনিস, জুয়েলারি। আর গতকাল সন্ধ্যায় আমার ছেলেটা ওর পছন্দের রেস্টুরেন্ট AUGUST 8-এ নিয়ে গেলো। সত্যি বলছি এভাবে যদি প্রতিবছর পাওয়া হয়, আরোও অনেকদিন বাঁচার ইচ্ছে অব্যাহত থাকবে।
নার্সিং স্কুলে আমাদের একটা টেষ্ট দিতে হয়েছিলো, যেটা ছিলো বয়স নিয়ে। আশি বছর বয়সে আমরা কে, কেমন থাকবো? আমি লিখেছিলাম শরীর ভাঙ্গবে, কিন্তু হাসবো। লাফিয়ে নাচতে পারবো না, এভাবে ছুটতেও পারবো না, তবে হাত-মাথা ড্যান্স মিউজিকে নাড়াবো। ২০১৬ সালে এক্সিডেন্টের পর অফিস পার্টিতে গিয়ে ওয়াকার নিয়ে যখন নাচতে পেরেছি, আশি বছরে পারবো না, তাই কী হয়! আজ কথা হচ্ছিলো বন্ধু জুনেদের সাথে, বললাম এখন জীবনের হাফ সেঞ্চুরির অপেক্ষা করছি। বন্ধু জুনেদ বললো “নীলাঞ্জনা আচ্ছা তুমি কবে বড়ো হবে?” বললাম দেখি পঞ্চাশে গিয়ে কী হয়!
কচি ঘাসে যেমন লেপ্টে থাকে শিশির, আমিও শিশিরের মতোই ছিলাম রোদ্দুর ওঠার আগে
রোদ্দুর যেই এলো, আরেকটি ভোরের অপেক্ষায় রইলাম মেঘের কোলে
একদিন আমি শিশির না হয়ে বৃষ্টি হলাম, আমার জলে ভিঁজলো প্রেমিক-প্রেমিকা
মাটি গর্ভবতী হলো
কিছু ঘাস আবার গজালো…
একদিন নীলঘাসফুলে ছেয়ে গেলো সবুজ ঘাসের বুক
আবার আমি শিশির হলাম একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে,
যে একদিন আবার বৃষ্টি হবো!(পুরোনো লেখা থেকে নেয়া)
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩০ আগষ্ট, ২০১৭ ইং।
(y) এই লেখাটি লেখা হতোনা, যদি না শুন্য আপু পোষ্টটি দিতো। তাই সকল কৃতিত্ব শুন্য আপুর। আমার তিলোত্তমার জন্য ভালোবাসা। (3
১৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আপু, খুব সুন্দর ভাবে আপনার মনের কথা গুলো তুলে ধরলেন, আপনার যা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে, তা হলো আপনি সবাইকে হাসাতে পারেন, আপন করে নিতে পারেন, যা আপনার অনেক ভালো গুণ, নীলা সয়না কে বললো, এই যে নীলা আপু সয়ে গেল আমাদের।
অনেক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রাশি রাশি, ভালো থাকবেন প্রিয় আপু।
-{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আপনি জানেন না আমার প্রচন্ড রাগ আছে। আর যা বলার সরাসরি বলে দেই। তাতে আমাকে সহজে কেউ মেনে নিতে পারেনা।
এই দুই খারাপ আমার মধ্যে। আর সহজে কাউকে ছেড়ে যাইনা। তবে যদি যাই, শত অনুরোধেও আর ফিরে আসিনা।
এখন আমাকে কি বলবেন আপনি? 😀
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া অনেক ভালো থাকুন। হাসুন, সুস্থ থাকুন। -{@
ইঞ্জা
আপু অন্যায় সহেননা বলেই মুখের উপর বলে দেন, এ খারাপ কিছুই নয়।
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া ক্ষতি তো হয় আমারই। কী যে করি! 🙁
অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
সিকদার
যতটুকু জানি সোনেলায় তো নীলাপু ছাড়া চলেই না । এখানকার সবাই এর কাছে নীলাপু ভালবাসা , আনন্দ , উচ্ছলতা ও প্রেরনাদায়ী । কামনা করি তাই থাকুন সবসময় ।
-{@
নীলাঞ্জনা নীলা
সোনেলা আপনাদের কাউকে ছাড়াই চলেনা। কিন্তু কী যে হলো আজকাল সবাই আসছেনা।
জানি সকলেই ব্যস্ত। চেষ্টা করবেন রেগুলার হতে।
অনেক ভালো থাকুন।
মৌনতা রিতু
নীলাঞ্জনা নামটার সাথে পরিচিত হতে পেরেছি এই সোনেলায় এসে।
তুমি চমৎকার লেখ তা সব সময়ই বলি।
তোমার লেখা পড়েই তোমাকে চিনেছি। তোমার ভিতরের মানুষটার সাথে পরিচিত হয়েছি, তোমার সাথে কথা বলে।
কঙ্কনা নামটাও সুন্দর।
তবে তোমার সাথে নীলাঞ্জনাই যায় ভাল।
সন্তানের ভালবাসার মতো আর কারো ভালবাসা মেলানো যায় না।
ভাল থেকো নীলাআপু সব সময়।
এমন করে কেটে যাক যুগ থেকে যুগে শতো বছরেরও বেশি। নামে বেঁচে থাকো পৃথিবীর আয়ুর সাথে।
-{@ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
“নামে বেঁচে থাকো পৃথিবীর আয়ুর সাথে”—এতো চমৎকার মন্তব্য এ জীবনে প্রথম পেলাম। সবাই বলে দীর্ঘজীবি হও।
আপু মনটা ভরিয়ে দিলে। অনেক ভালো থেকো। -{@ (3
জিসান শা ইকরাম
নীলা সকলের সহ্য হয়না। কিন্তু নীলাঞ্জনা আমাদের দিব্যি সয়ে গিয়েছে 🙂
নাম জন্মদিন নিজকে নিয়ে কত সুন্দর একটি পোস্ট দিলে।
নিলাঞ্জনা গান এর আমিও একটি ভিডিও বানিয়েছিলাম। ভিডিওতে আমার এক নাতনীর ছবি আছে অনেক। যতটা মনে পরে তার জন্মদিন উপলক্ষেই ভিডিওটি বানিয়েছিলাম।
হ্যা আজকাল শুভেচ্ছা প্রায় সবাই অনলাইনে দেয়। এটি সত্য।
জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা,
আজীবন এমন হাসি আনন্দে কাটাও এই প্রার্থনা করি।
নীলাঞ্জনা নীলা
হুম ভিডিওটা ইউটিউবে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওটাকে কাষ্টম করে রাখা হয়েছে মনে হয়।
এমন শুভকামনা পেয়ে আবেগাপ্লুত হলাম।
ভালো থেকো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম জানলাম অনেক কিছুই
৫০শে বুড়ো তা কি হয়
মন যখন বুড়ো হয়
সকলেই তারে বুড়ি কয়।
-{@ -{@ শুভেচ্ছা ০১ শুভ জন্মদিন
-{@ -{@ শুভেচ্ছা ০২ ঈদুল আযহা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই তাইতো এ জীবনে আমি কখনও বুড়ো হবো না। 😀
অনেক ভালো থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
দেখো সাথে সাথে মন্তব্য লিখলেতো ফুরিয়ে যেতো। এই যে এত্তদিন পরে মন্তব্য দিচ্ছি, আবার আমাদের আমি নীলাঞ্জনা কে দেখা যাবে। (পিঠ বাঁচানোর এর চাইতে ভালো কৌশল খুঁজে পাচ্ছিনা) 🙂
নামটা নীলাঞ্জনা বলেই না লোকে এতো এতো বার নিচ্ছে। তবে তোমাকে নিয়ে লিখছে, গাইছে এ আবার ভেবে বসোনা। লোকের খেয়ে আর কাজই নাই; সারাক্ষন হি হি করা মাথা পাগলী নিয়ে লিখবে।
কী কফাল!! আমার জন্মদিনই কেউ মনে রাখেনা। আর এত্তসব উপহার!! সবই চাপা, জানিতো :@
পঞ্চাশে গেলে তোমার বড় হওয়া সেলিব্রেট করবো, ঠিক আছে?
তোমাকে আবার লিখিয়ে নেয়া লাগে নাকি? লেখার জন্য তো কলম বাড়িয়েই রেখেছো। 🙁 ক্যাম্নে লেখো এতো? আমি কেন পারিনা ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
পিঠ বাঁচলো কোথায়? তুমি কি ভেবেছো এভাবে কেটে যাবে? অত্তো নো সহজ। আন্ডারস্ট্যান্ডো?
পাগলীরাই পাগলী চেনে। বুঝেছো তিলোত্তমা? সামনের বছর গিফটো দিতে ভুলে যেওনা যেনো। তা নইলে কিন্তু একেবারে সুস্থ হয়ে যাবো, তখন পাগলীকে খুঁজেও পাবেনা। হুমকি দিয়ে রাখলাম। :p
তোমার জন্মদিন কেউ মনে রাখেনা মানে? আমারে কী কইছো কখনো? জানোই তো ইস্ক্রু পুরাই ঢিলা আমার। পঞ্চাশে গেলে আমি কারিনা কাপুর হমু। মানে জিরো ফিগার। এমন ছেলিবেরেটিরে দেখার লাইগ্যা টিকিট লাগবো। তুমি যদি আমারে নিয়া এইভাবে লিখতে থাকো, তোমার লাইগ্যা ভিভিআইপি গ্যালারির টিকিট রাইখ্যা দিমু। 😀
ভালুবাসা দিলাম। -{@
ওই রেগুলার হওনা ক্যান? ভালু লাগেনা। 🙁