একদিন সকালে নিচ তলায় সিড়ির নিচে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক শুনতে পেলাম । ছোট ভাই নিচ থেকে একটা বিড়ালের বাচ্চাটা নিয়ে আসল । বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা একবারে খারাপ । শীতে কাঁপছে । দেখে মায়া হল । ভালভাবে কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দুধ খাওয়ালাম । অল্প দিনের যত্নে বেশ নাদুস নুদুস হয়ে উঠল । মিনি বলে ডাক দিলেই দৌড়ে কাছে চলে আসে । আমাদের সাথেই ঘুমায় । দেখতে দেখতে মিনি বেশ বড় হয়ে গেল । সে এখন আমাদের বাড়ির একজন সদস্যের মতই ।
কিন্তু এই সুখ বেশী দিন ওর কপালে সইল না । কোন এক দুষ্টু ছেলের আঘাতে ওর এক পায়ে ক্ষত তারপর ঘা । নিকটবর্তী পশু হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । ওরা বলল এর চিকিৎসা আমাদের জানা নেই । তাছাড়া পায়ে যে ঘা হয়েছে তাতে বাচার সম্ভাবনা কম । আরও ঐ ক্ষতস্থান থেকে জীবানু ছড়াতে পারে ।
হাসপাতাল থেকে চলে এলাম । সবার মন খারাপ মিনির আমাদের সাথে ঘুমানো বন্ধ ।
মা বাবা বার বার খাট থেকে নামিয়ে দিলেও মশারীর চারপাশে ডাকাডাকি করত । শেষে ঘর থেকে বের করে দিতেন । আমাদের খুব খারাপ লাগলেও কিছু বলতে পারতাম না ।
একদিন রাতে বাবা বলল পশু ডাক্তার এসেছিল । বিড়ালটা আর বাড়িতে রাখা যাবে না । সবাই নিশ্চুপ কেউ কিছু বলছে না বাবার কন্ঠ টাও ভারী । পরে বাবা মিনিকে নিয়ে রাতের বেলায় অনেক দূরে ফেলে আসলেন । মিনি বোধহয় আগেই টের পেয়েছিল । বাবা আগে ডাকলে সহজেই আসত ঐ দিন আসতে চাইছিল না ।
বাড়ির সবার মন খারাপ । ঐ দিন আমি রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম না । মনেহয় ছাদে বসে আধা ঘন্টা কেঁদেও ছিলাম ।
এখন আর কেউ খাওয়া সময় ডাকাডাকি করেনা । মাছের কাটা গুলো শুন্য থালেই পড়ে থাকে । রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের কাছটা শূন্যই থাকে ।
প্রায় একমাস পর হঠাৎ বারান্দায় দেখি মিনি হাঁটছে । প্রথমে বিশ্বাস হয়নি পরে দেখলাম না ঠিকই আছে ।
যে পায়ে ঘা হয়েছিল ওটা মনে হচ্ছে অপারেশন করার মত সুন্দর করে কাটা ।
ও হয়ত বুঝেছিল অসুস্থ থাকলে এবাড়িতে তার স্থান হবে না । তাই সুস্থ হয়েই ফিরেছে । তারপর আবার সব আগের মত ।
এরপর আমরা বাসা পরিবর্তন করে নতুন বাড়িতে উঠলাম । মিনি আমাদের সাথে আসল না । মাঝে মাঝে দেখতাম । তারপর একসময় একবারেই হারিয়ে গেল ।
কোন দুষ্টু ছেলে ওকে মেরে ফেলল নাকি নিজেই অভিমানে চলে গেল ঠিক বুঝলাম না ।
আজও অপেক্ষায় থাকি হয়ত আগের মত একদিন ও ফিরে আসবে ।
ছবিতে যাকে দেখছেন ওটা মিনির ই ছবি ।
১৮টি মন্তব্য
মা মাটি দেশ
-{@ (y) পশু একটি বিশ্বস্ত প্রানী।
সঞ্জয় কুমার
হুম
সঞ্জয় কুমার
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
প্রানীরা সব কিছুই বুঝতে পারে ।
ভালো লিখেছেন ।
ছবিটা ঠিক ভাবে দিতে পারেননি ।
পোষ্টে ছবি আসেনা ।
শুভ কামনা ।
সঞ্জয় কুমার
ইনডেক্স পেজে তো ছবি শো কর ছে । । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ।
জিসান শা ইকরাম
ছোট একটি ভুল ছিলো ,
এখন দেখা যাচ্ছে 🙂
ফেইসবুকে কথা হবে ।
সঞ্জয় কুমার
ওকে ধন্যবাদ
শুন্য শুন্যালয়
মন খারাপ হলো। মিনি ফিরে আসতেও পারে, কিছুই হয়তো অসম্ভব নয়…
সঞ্জয় কুমার
আমার মনে হয় ও বেঁচে নেই থাকলে অবশ্যই ফিরে আসত
সঞ্জয় কুমার
তবে ফিরে এলে অনেক খুশি হব
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এদের অভিমান বেশ বেশী । ফিরবে বলে মনে হয়না । ভালো লিখেছেন ।
সঞ্জয় কুমার
আমারও তাই মনে হয় । । মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ
আজিম
আপনাদের নতুন বাড়ীতে যখন এলোনা মিনি, তখন আর হয়তো আসবেনা ও। কারন ওর যে অভিমান বড় বেশী। ও কী করে বুঝবে ছোঁয়াচে রোগের পরিনাম! কিছুটা বুঝত বলে ফিরে এসেছিল, কিন্তু মনে গেঁথে রয়েছিল একটা অভিমান। অভিমান্টা এক সময় পরিপক্কতা লাভ করলো এবং চিরতরে সরেই হয়তো গেল।
ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
বিড়ালরাও অভিমানি হয়ম
রিমি রুম্মান
মিনি’র জন্য শুভ কামনা… যদি বেঁচে থাকে
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ
সায়ন্তনু
আমার মিনিও যেন ফিরে আসে এই প্রার্থনা করি ।
সঞ্জয় কুমার
আপনার মিনিও কি অভিমান করে চলে গেছে ?