দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চাকরি করার বদৌলতে এদেশের মানুষের আচরণগত সমস্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি, দেখেছি। আসলে আমরা জাতি হিসেবে ‘শক্তের ভক্ত আর নরমের যম’। তাই মাঝে মাঝে কিছু রোগী বা রোগীর সাথে আসা লোকজনের ব্যবহারে এতটাই কষ্ট পেতাম যে হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিতে মন চাইতো। আবার কিছু লোকের ব্যবহারে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। তবে আমি যে সেকশনে ছিলাম সেখানে সবার কমবেশি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছি। কারন এ ডিপার্টমেন্টে আমি বা যারা ডিউটি করতো তারা মেশিন অপারেট থেকে শুরু করে রিপোর্ট ডেলিভারী পর্যন্ত সমস্ত কর্মকান্ড একারই করা লাগতো। এখানে ডাক্তার, অপারেটর, কাউন্সিলর এর ভূমিকা একজনকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হতো । তো সেক্ষেত্রে যারা বিষয়টি বুঝতো বা পর্যবেক্ষণ করতো বা যাদের এই সম্পর্কে ধারণা থাকতো তাদের ব্যবহারটাও তেমন নমনীয় বা পরিশীলিত হতো। তবে এখানে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ও চলে আসে।
ছোট থেকে বড় দেশের সর্বোচ্চ নামধারী হাসপাতালগুলোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তো সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা বিষয়টিই মুখ্য। আর তারপর আমরা যারা এই ডিপার্টমেন্টটা হ্যান্ডেল করতাম তাদের চরম ধৈর্য্য আর সহনশীলতার পরীক্ষা দিতে হতো। তো ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলে আমাদের উপর চাপটা কম পড়তো। সে ব্যবস্থাপনার কারনেই রোগীরা বা রোগীর সাথের লোকজন হাসপাতালে এসে হাউকাউ বা বাজারের মতো শোরগোল করতে পারতো না । যেমন এই আমরাই ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ঢোকার আগেই নিয়মানুবর্তিতার পড়া মুখস্থ রেখে শান্ত, ভদ্র হয়ে যাই। আর যেই ঐ এলাকা থেকে বের হই অমনি আমরাই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অনিয়মের চর্চা অব্যাহত রাখি। আমার এতোকিছু বলার কারন হলো, আজকে সারা বিশ্বে করোনার ছোবলের যে আগ্রাসন তা শুধু সম্ভব হয়েছে আমাদের বিশৃঙ্খলার কারণে। তানা হলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মৃত্যুর হার এতো বেশি হবে কেন! তারপর আসি আমাদের দেশে- এইযে মহান বাঙালি যারা রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছে অস্ত্রধারীদের হাত থেকে। আজ সেই আমরাই নিজের ও দেশের পরোয়া না করে মহামারীকে নিজ হাতে সারা দেশে ছড়িয়ে দিলাম।
বলতে বাধা নেই , এই দেশেরই কিছু মুসলিম জনগনই বলেছিলো এ রোগ অমুসলিমদের জন্য আর চীন ইসলামকে অবমাননা করেছে বলে তাদের এমন রোগ হয়েছে। তাইতো প্রবাসীরা দেশে এসে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে , রেমিট্যান্স এর পাওয়ারে সমস্ত নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বের হয়ে গেল আশকোনা হজ্ব-ক্যাম্প থেকে। আর সরকার যখন লকডাউন দিলো সবাই ঈদের খুশীতে ছুটি কাটাতে পর্যটন কেন্দ্রে আর গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। আরো একধাপ ছড়ালো করোনার করাল গ্রাস। তবে গ্রামের বাড়িতে যাবার ফলে একটা ভালো দিক হলো তারা না খেয়ে থাকছেনা , রাজধানীটা অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেলো। কারন অনেকের খাবার ব্যবস্থা হতো না এখানে থাকলে আবার থাকা নিয়েও সমস্যা হতো কারন বাড়ি ভাড়া না দেয়ার জন্য অনেকেই বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে। রোগ গোপন করে ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল এর সব কর্মচারীদের মাঝে রোগটি ছড়িয়ে দিলো। যারাই ভয় না পেয়ে মানবতার খাতিরে সেবা দিচ্ছিলো তারাই আজ আইসোলোশনে, মৃত্যু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আর সরকার যখন ত্রাণ দিচ্ছে লকডাউন মানার জন্য সেটা নিয়ে হলো আরেক দফা অরাজকতা। ত্রাণ চুরি করা হলো, আবার ত্রাণ নিতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেনা। গার্মেন্টস এ বেতন দেয়ার নামে আরেক দফা ছড়ালো এই ভাইরাস।
বাজারের নামে লোকজন অহরহ বাইরে আসছে, আড্ডা দিচ্ছে কারন এ রোগে আক্রান্ত হবার হার বেশি চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের। ফলাফল, সবারই জানা হয়ে গেছে । আমাদের দেশে ত্রিশ থেকে চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিরাই আক্রান্ত হলো বেশি। গরীবরা পেটের ক্ষুধাকে বড় ইস্যু করে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই। আজ যদি সেনাবাহিনীদের হাতে সরকার ত্রাণ বিতরণ ছেড়ে দিতো তাহলে ত্রাণ চুরিও হতোনা আবার সামাজিক দূরত্ব ও মানতো সবাই। কাঁচাবাজার সহ সব দোকান পাট সপ্তাহে দু’দিন খোলা রাখতো সেটাতেও নিয়ন্ত্রণ হতো এই মহামারীর আগ্রাসন। আমরা হলাম ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম ‘ জাতি । আমাদের সরকারকে কঠোর হতে হবে আর সেটা মানাতে পারবে কঠোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিকল্প দেখছি না । আমরা ঐ একজায়গায় সবাই ধরাশায়ী, বিড়াল হয়ে যাই।
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
বলতে বাধা নেই , এই দেশেরই মুসলিম জনগনই বলেছিলো এ রোগ অমুসলিমদের জন্য আর চীন ইসলামকে অবমাননা করেছে বলে তাদের এমন রোগ হয়েছে। তাইতো প্রবাসীরা দেশে এসে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে , রেমিট্যান্স এর পাওয়ারে সমস্ত নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বের হয়ে গেল আশকোনা হজ্ব-ক্যাম্প থেকে।
কথাটির সাথে কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করছি আপু, এমন কথা জনগণ বলেনি, কিছু ধর্মান্ধ উম্মাদেরা এইসব কথা বলেছিলো যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিলোনা,সাধারণ মানুষের কাছে।
ইঞ্জা
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ জানাই আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া ঐটা ঠিক করে দিচ্ছি। সরি কিছু লিখাটা বাদ পড়ে গেছে।
ইঞ্জা
সরির কিছু নেই আপু।
অনুরোধ রাখলাম করোনা নিয়ে আরও বিশদ আকারে লিখুন।
ছাইরাছ হেলাল
কথা ঐ একখানাই, ডাণ্ডাতন্ত্র,
সব সুর সুর করে মেনি বেড়াল সেজে ভাল হয়ে যাবে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একদম ঠিক বলেছেন। মাইরের উপর কোনো ভিটামিন নাই। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা হলাম ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম ‘ জাতি । আমাদের সরকারকে কঠোর হতে হবে আর সেটা মানাতে পারবে কঠোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিকল্প দেখছি না । আমরা ঐ একজায়গায় সবাই ধরাশায়ী, বিড়াল হয়ে যাই।
এছাড়া আমাদের আর উপায় নেই।
যাকে যেভাবে আরকি মানাতে হয়।
.
সাধুবাদ চমৎকার উপস্থাপনের জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা । ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
দারুণ পোস্ট করেছেন দিদি। আমরা শক্তের ভক্ত বটে আবার সুযোগ সন্ধানীও। তাই তো শক্তকেও বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক এলাকায় তাড়িয়ে অন্য এলাকায় গেলে। আবার সেই এলাকায় ভরে যাচ্ছে। এই তো গবেট জাতি আমরা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সহমত আপু। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লিখেছেন দিদি ভাই।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
সহমত। খুব ভালো লিখছেন
এত সেনা কোথায় পাবেন ?
সেনা ভাইরা তো মাঠেই আছে।
সেনা ভাইরা ক্ষমতায় থাকতে ও ত্রান কিন্তু
জনপ্রতিনিধিরা দিতো।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঐখানেই কবি নীরব দাদা। যা আছে তাকে ঠিকমত কাজে লাগাতে হবে, নৌবাহিনী আছে, বিমান বাহিনী আছে দরকার হলে তাদের সাহায্য নিতে হবে। ধন্যবাদ দাদা।
কামাল উদ্দিন
আমরা হলাম ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম’ এটা বাস্তব। ইন্ডিয়ার মতো খালি পাছায় লাঠি পেটা করলেই মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও সোজা থাকতাম। তবে বাস্তবতা হলো পুলিশ আর কতটা করবে, আমাদের নিজেদের সচেতন না হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সেটা তো আছেই, বললাম ইতো আমরাই ঠিক না। আমরা কবে যে সচেতন হবো, মানবিক হবো সেটাই বুঝিনা। আর কতো ক্ষতি হলে আমরা নিজেদের কে শোধরাবো? ধন্যবাদ ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
শোধরানোর ইচ্ছেটা আমাদের ভেতরে জাগিয়ে তুলতে পারলে যদি কিছু হয়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ঠিক বলেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে
ফয়জুল মহী
সুচিন্ মনোভাবের প্রকাশ, ভালোই হয়েছে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই কিন্তু। কিছু বক ধার্মিক লোকের কারনে এই অবস্থা। আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত জানাচ্ছি দিদিভাই। চমৎকার লিখেছেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ।
জিসান শা ইকরাম
শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছেনা বলেই করোনা আজকে সমস্ত দেশে এমন ভাবে ছড়িয়েছে।
সেনাবাহিনীর হাতে এসব কার্যক্রম দেয়া হলে নিয়ন্ত্রন অনেক ভালো হতো।
অনেক ভালো একটি পোস্ট।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা ভাই। আপনার জন্য ও শুভকামনা রইলো। 🙂🙂
হালিম নজরুল
শক্ত হাতের নিয়ন্ত্রণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি আমাদেরও মানুষ হতে হবে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সহমত ভাইয়া। দুদিকে ব্যালেন্স না হলে তো যেকোনো কিছুই বিফলে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো