একঃ
ফোনের রিংটোনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো । রাতে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি । ফোনটা ধরে
– হ্যালো !!
ওপাশ থেকে, ” হ্যালো !! কমান্ডার আব্দুল্লাহ !! আমি ডিজিএফআই থেকে মেজর জেনারেল শাখাওয়াত বলছিলাম । ”
ঘুম ঘুম ভাবটা দূর হয়ে গেলো ।
– জ্বি স্যার । বলেন ।
– একটা জরুরী ব্যাপারে কথা ছিলো । আজকে ১১টায় হেডকোয়ার্টারে দেখা করো ।
– ওকে স্যার ।
মনে মনে ভাবছিলাম যে কি এমন ব্যাপার হতে পারে যে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স থেকে আমার ডাক পড়লো । একটু পরেই কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আজিজ স্যার ফোন দিলেন ।
– শাখাওয়াত স্যারের ফোন পেয়েছো ?
– জ্বি স্যার ।
– ওকে তাহলে ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে দেখা হচ্ছে ।
১০টার মধ্যেই রেডি হয়ে গেলাম । ঠিক ১০টা ৪৫ এ পৌঁছে গেলাম ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে । গিয়ে দেখি স্কুল জীবনের পুরানো বন্ধু লে.কর্ণেল ইয়াসির ও বসা । জিজ্ঞেস করতেই জানলাম ওর বর্তমান পোস্টিং ডিজিএফআইতে ।
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো, ” মামা যতটা ভাবতেছো ব্যাপারটা তারচেয়ে সিরিয়াস । এই কেসের মেইন দায়িত্বটা আমাকেই দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তোমাকে দরকার কারণ এই কেসে একজন কমান্ডো লাগবে । আর বর্তমানে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে তুমিই একমাত্র SWADS এর কমান্ডো । আর বাকি ডিটেইলস স্যার জানাবে । ”
বুঝে গেলাম মারাত্বক সিরিয়াস এক কেসে ডাকা হয়েছে আমাকে । হুদাই কোন কমান্ডোকে এই ধরণের মিশনে ডাকা হয় না । স্নায়ু শক্ত করে ফেললাম । বুঝতে পারছি দেশের উপরে কোন মস্তবড় আঘাত আসতে চলেছে । মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম কমিশন প্রাপ্তির দিনে নেওয়া সেই শপথ অনুযায়ী ” প্রাণ দিয়ে হলেও দেশকে রক্ষা করবো । ”
ঠিক ১১টায় ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাখাওয়াত স্যারের রুমে ডাক পড়লো আমার আর ইয়াসিরের । ভেতরে যেতেই আমাকে বসতে বলার আগে বলে নিলেন, ” কেসটা খুবই টপ সিক্রেট ব্যাপার । যা এখন শুনবা তা যেন বাইরের কেউ না জানে । মিডিয়াতে এই খবর ফাঁস হলে বিপদ আছে । ”
আমি বললাম, ” স্যার কেউ জানবে না । ”
দুইঃ
প্রথম খবর শুনে তেমন ধাক্কা খেলাম না কারণ খবরটা আমার আগেই জানা । সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সচিবকে তার মেয়েসহ অপহরণ করা হয়েছে । আরেকটা খবর পেলাম এই অপহরণ তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের মেজর নজরুল ও তার আগে দায়িত্ব পাওয়া সিআইডির পুলিশ সুপার আরিফ ও সহকারি পুলিশ সুপার তামান্না তিনজনেই নিহত হয়েছেন । এই খবরটা পত্রিকাতে দেখেছিলাম ।
তবে আসল ঘটনা এই মাত্র জানলাম আর সেটা হলো, ” বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে গেছে । ”
তাও যা তা কোন কিছু নয়, আমাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য যেটা শত্রু রাষ্ট্রের হাতে পড়লে আমাদের মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে । বড় একটা শক খেলাম কারণ আমাদের শত্রু রাষ্ট্র পাকল্যান্ডের গুপ্তচরেরা এই কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
প্রথম দিকে অপহরণের ব্যাপারটা এত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কারণ তথ্য যে চুরি গেছে এটা প্রথমে ধরা পড়েনি । ঈদের ছুটির সময়ে তথ্য চুরি হয় আর চুরি করে ঐটার জায়গাতে ভুয়া একটা কাগজের বান্ডিল রেখে যাওয়া হয় । যে কারণে ইঞ্জিনিয়াররা না চেক করা পর্যন্ত ব্যাপারটা ধরা পড়েনি । তবে এই ব্যাপারে ভিতরে যে গাফেলতি হয়েছে এই ব্যাপারে বোঝা যাচ্ছে , সবার সন্দেহের তীর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের দিকে । ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং গ্রেফতারও করা হয়েছে ।
শাখাওয়াত স্যারঃ বুঝলে আমরা এখনো সিউর না এই ফাইল টা কোথায় আছে ।
আমিঃ কেন ? স্যার
– কারণ ওদের গুপ্তচরদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে । ফাইল পেলে ওরা সোজা উড়াল দিতো ।
– গুপ্তচর গুলা কারা ?
– কতিপয় দেশী-বিদেশী লোক যাদেরকে আগে আটক করেও প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।
– ওদের উপরে নজর রাখা হয়েছে ?
– হ্যা । তবে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না ।
– তাহলে ??
– সেটা তোমাদের বের করে নিতে হবে ।
– ওকে স্যার ।
– শুনো আমাদের এই মিশনের নাম ” অপারেশন রেড লাইট ” । কারণ যে প্রোজেক্টের ফাইল চুরি গেছে ওইটার নাম ছিলো ” প্রোজেক্ট রেড লাইট ” । আর শুনো তোমার কেস সম্পর্কিত সব কিছুর ডিটেইলস এই একটা ফাইলে পাবা । আজকে থেকেই কাজ শুরু করে দাও । সময় খুব কম । আমাদেরকে খুব দ্রুত ওই চুরি যাওয়া তথ্যের ফাইলটা বের করতে হবে । আর সচিব ও তার মেয়েকেও । কারণ সচিবের থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারবে ওরা ।
– জ্বি স্যার । আল্লাহ ভরসা !
– ওকে । আর তোমাদের সহযোগীরা ইয়াসিরের রুমে অপেক্ষা করছে ।
– ওকে স্যার
– নাউ ইউ মে লিভ । অল দা বেস্ট ।
– থ্যঙ্কু স্যার ।
– ডোন্ট ফরগেট দেশের ভবিষ্যত এখন তোমাদের হাতে ।
– ইয়েস স্যার ।
মহাপরিচালকের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি আর ইয়াসির । বের হওয়ার পরেই ও বললো, ” বুঝলা কুদ্দুস সাহেবকে আমার অপরাধী মনে হয় না । ”
– কেনো ?
– ফাইলটা পড়ে দেখো । কোথাও একটা ঘাপলা ঘাপলা আছে মনে হবে ।
– ওকে ।
ইয়াসিরের রুমে যেতেই পরিচয় হয়ে গেলো আমাদের সহকারীদের সাথে । মেজর বাধন, ক্যাপ্টেন রাকিব আর লেফটেন্যান্ট বিথি ।
সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে ইয়াসির বললো, ” আগে একটু ফাইলটা পড়ে নাও । তারপরে ঠিক করবো আমাদের কর্মপ্রণালি । ”
ফাইলটা পড়তে বসলাম । জানতে পারলাম একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য ।
তিনঃ
প্রতিরক্ষা সচিবের নাম মুশফিকুর রহমান । অস্ট্রেলিয়ার নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এসেছেন । ঈদের দিন তাকে মেয়েসহ অপহরণ করা হয়েছে । মেয়ের নাম প্রান্তি রহমান । মেয়েটা কয়েকদিন হয়েছে দেশে এসেছে । তার আগে সে বাবার মতই বিদেশে নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো । মেয়েটা অনেক মেধাবী আর মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট ধারী । এছাড়াও পুরা কেস ফাইলটা পড়ে অনেক ঘাপলা দেখতে পেলাম ।
সচিবকে ঈদের দিন অপহরণ করা হয়, ঐদিনেই সিআইডিকে এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় । ৩ দিন পরে মতিঝিল থেকে সিআইডির দুই কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার হলে দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে । এরপরে ৪ দিন পরে র্যাব কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেলে ব্যাপারটা সবাইকে ভাবিয়ে তুলে । মজার ব্যাপার ঈদের পর থেকে ওই ” প্রোজেক্ট রেড লাইট ” এর কাগজের কোন খোঁজ কেউ নেয় নাই । কাগজের জিম্মাদারি ছিল যুগ্ম-সচিব কুদ্দুস সাহেবের । উনি ঈদের আগেরদিনই লন্ডন গিয়েছিলেন এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে । উনি দেশে আসার পরে মন্ত্রণালয়ে চুরির ব্যাপারটা প্রকাশ পায় । এরপরেই অপহরণ কেস নতুন দিকে মোড় নেয় ।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখলাম ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে তাদের মৃত্যু হয়েছে । একমাত্র কারাতের আঘাতেই এমনটা হওয়া সম্ভব । ব্যাপারটা বেশ চিন্তার ।
গুপ্তচর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তিকে । বাধন বললো ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট লোকটার চেহারার সাথে পাকল্যান্ডের সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তা লে.কর্ণেল মোহাম্মদ ইউনূসের চেহারার সাথে অনেক বেশি মিল । যে কারণে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে । ওর উপরে চিলের নজর রাখা হয়েছে । লোকটা থাকে গুলিস্তানের এক বাসায় । তবে তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি কারণ এতে হয়তো তারা আরো বেশি সতর্ক হয়ে যাবে !!
কেস ফাইল পড়ে ইয়াসিরকে বললাম, ” চুরি কিভাবে হলো ব্যাপারটা পরিষ্কার না । পুরা ব্যাপারটা কেমন ঘোলাটে !! ”
– আসলেই । কি করবা এখন তাইলে ??
– কুদ্দুস সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে ।
– উনি এখন সিআইডি হেফাজতে । রাজারবাগের কার্যালয়ে রাখা হয়েছে তাকে ।
– চলো তাহলে ।
চারঃ
ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজারবাগ আসতে প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে গেলো আমাদের । ঐখানে গিয়ে কুদ্দুস সাহেবের সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলাম । অনুমতি মিললো …
আমাদের দেখেই বললেন ” ওয়াহ !! শেষ পর্যন্ত ইন্টেলিজেন্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । দেরি করে ফেলেছে । আরো আগেই ডাকা দরকার ছিল । ”
ইয়াসিরঃ কুদ্দুস সাহেব আমার সাথে হচ্ছেন কমান্ডার আব্দুল্লাহ !! SWADS এর একজন কমান্ডো ।
আমার দিকে তাকিয়ে কুদ্দুস সাহেব বললেন, ” কমান্ডার যত দ্রুত পারো এই কাগজগুলা উদ্ধার করো । আমি মরি না বাচি তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু ওই গুলা না পাওয়া গেলে দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ।
– তা স্যার ঈদের আগের দিনের ঘটনাটা একটু বলবেন কি ?
– সিউর ।
একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন উনি । এরপরে বলতে শুরু করলেন
” ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফ্লাইট ছিলো । ওইদিন সচিব স্যারের সাথে এক অনির্ধারিত মিটিং শেষ করতে করতে প্রায় সোয়া ৪টা বেজে যায় । বাসা থেকে বারবার ফোন আসছিলো । তাড়াহুড়ায় ছিলাম অনেক । ঘুরাক্ষণেও ভাবিনি এমনটা হবে । তাহলে লন্ডন যাওয়ার পরিকল্পনাই করতাম না । ” একটু থামলেন উনি ।
– এরপরে কি হলো ??
– তাড়াহুড়া ছিল । সচিব স্যার বললেন ফাইলটা চেক করতে । আমার আসলে নিজের চেক করতে যাওয়া উচিত ছিল ।
– আপনি নিজে চেক করেননি ??
– না আমার সহকারী বুশরা তাসনিমকে পাঠিয়েছিলাম ।
– এরপরে ??
– ও এসে বললো ” স্যার সব ঠিক আছে । ” আমিও নিশ্চিন্তে বের হয়ে গেলাম ।
– বুশরা কি বুঝতে পারবে কোনটা আসল আর কোনটা নকল ??
– হ্যা ওই অফিসে কেবল ও আর আমিই বলতে পারবো এইটা ।
– ও আচ্ছা বের হওয়ার আগে কাউকে কিছু জানাননি ??
– হ্যা সচিব স্যারকে বলে এসেছিলাম ” সব ঠিক আছে । ” ঐ সময় স্যারের রুমে স্যারের মেয়েও ছিলো ।
– ধন্যবাদ আপনাকে ।
সিআইডির কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ইয়াসির বলতে লাগলো ” দেখলা । তোমাকে আগেই বলেছিলাম ওনাকে নির্দোষ মনে হচ্ছে । ”
– হুম । আসলে ওনাকে লোক দেখানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে । তেমন শক্ত প্রমাণ ওনার বিপক্ষে নেই । আদালতে কেস গেলে এমনিতেই খালাস পেয়ে যাবে ।
– এখন কি করবা ??
– বুশরার সাথে দেখা করতে হবে ??
– ওকে তো মনে হয় অফিসে পাওয়া যাবে ।
– চলো ।
রাজারবাগ থেকে পুরান হাই-কোর্ট । প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়ে বুশরার খোঁজ করতে জানা গেলো আজকে সে অফিসে আসেনি ।
হটাতই মন সতর্ক হয়ে উঠলো । বললাম, ” ওর বাসার ঠিকানা নাও । ওর বাসায় যাবো আমরা । ” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোয়ার্টারে নয় ঢাকার মগবাজারে ওর বাসা । বাসায় গিয়ে দেখি দরজা খোলা । সন্দেহ হলো । সাবধানে ভিতরে যেতেই ঘরের অবস্থা দেখে চমকে উঠলাম । পুরা ঘর তছনছ হয়ে আছে । বুঝতে পারছি মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র সহকারী সচিবকেও অপহরণ করা হয়েছে ।
বিথি আর বাধনকে বললাম, ” এই জায়গাতে তোমরা তদন্ত করে দেখো । ” ইয়াসিরকে বললাম, ” চলো । একটু অফিসে যাবো । ”
পাঁচঃ
বুশরার বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে উঠলাম । মনে হাজারটা প্রশ্ন আসছে । সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে । জানি এখন খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে । কিন্তু মাথা ঠান্ডা করে বসে ভাবার সময়টাও হাতে নেই আমাদের ।
অফিসে বসে ফুলস্পীডে এসি দিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম । চোখ বন্ধ করে ভাবতে আমার ভালো লাগে । এই সময় মাথা কাজ করে বেশি ।
” আচ্ছা ইয়াসির ঘটনার শুরু থেকে যদি আমরা শুরু করি তাহলে একটা ব্যাপার ভেবে দেখো আমাদের প্রতিপক্ষ কিন্তু এখনো ঐ কাগজটা পায় নাই । তাইলে বলো তো ওইটা কোথায় গেলো ?? ”
– কিভাবে সিউর যে পায় নাই । এটা তো আমাদের অনুমান ছিল ।
– আমি সিউর । পেলে বুশরাকে অপহরণ করা হতো না । আর এই ধরনের কাজে ওরা যথাসম্ভব রাখঢাক করে কাজ করবে । কিন্তু ওরা কি করতেছে ?? পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ব্যাপারটা যে সিরিয়াস সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে । অথচ আমরা এই ধরণের মিশনে গেলে কি করতাম ??
– যত পারা যায় গোপনে কাজ সারতাম ।
– হ্যা কিন্তু ওরা কি করছে ??
– মনে হয় বেশি মরিয়া হয়ে গেছে ।
– উহু আমার তদন্ত কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয়টা ভালো ঠেকছে না । খামোখা ওরা খুন করতে যাবে না ।
– তাহলে ??
– খুব সম্ভব ওদের তদন্তে এমন ফল বের হয়ে আসছিলো যেটা ওদের জন্য আরো বেশি সমস্যার কারণ হতো ।
– হতে পারে ।
– হ্যা । এক কাজ করো রাকিবকে পাঠাও । ও গিয়ে ওদের প্রতিবেদন গুলা নিয়ে আসুক ।
– ওকে । আমরা কি করবো ?? বসেই থাকবো ??
– না রাকিব আসুক । এরপরে যেখানে অফিসারেরা খুন হয়েছে ঐ জায়গাগুলা একটু দেখতে যাবো ।
– কি দেখবা ??
– আশেপাশের এলাকা গুলা দেখতে চাই ।
– এই রাত ১১টায় যাবা ??
– হ্যা এইটাই উপযুক্ত সময় ।
– ওকে ।
রাকিবের নিয়ে আসা প্রতিবেদন গুলা দেখতে দেখতে ১২টা বেজে গেলো । তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই । উল্লেখযোগ্য কিছু হয়তো তাদের মাথায় ছিলো যেটা আর এখন পাওয়া সম্ভব না ।
রাস্তা-ঘাট ফাঁকা । সময় লাগলো না বেশি মতিঝিলের এই জায়গাটাতে পৌঁছাতে । ২টা খুনের জায়গাই খুব কাছাকাছি । একটা মতিঝিল আর জসীমউদ্দিনের মিলিত সড়কের ঠিক পাশের গলিতে । অন্যটা এজিবি কলোনীর কাচা বাজারের ঠিক সামনে ।
জায়গাটা এমনিতে খুব ভালো না । এই এলাকাতে ছোটখাট অপরাধ রাত-দিন চলতেই থাকে । মন বলছে এই ছোট অপরাধগুলার মাঝেই বড় অপরাধ দানা বেধে উঠেছে । খুব ছোট থেকে এই এলাকাতে বড় হয়েছি । আশেপাশের অলি-গলি সব আমার চেনা । সম্প্রতি কমলাপুরের দিকের রাস্তায় যেতে নাকি একটা নাইট ক্লাব হয়েছে । যে কারণে এই এলাকাটা এখন অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠেছে । নাইট ক্লাবের এই তথ্যটা আমাদেরকে দিলেন মতিঝিল থানার ওসি তাশফিক আহমেদ । মস্ত বড় ভুড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, ” আর বইলেন না স্যার গত ২ মাস ধরে শান্তিতে খাইতেও পারি না ঘুমাইতেও পারি না । প্রতিদিন একটা না একটা গন্ডোগল হবেই । ”
জিজ্ঞেস করলাম, ” সিআইডির কর্মকর্তাদের সর্বশেষ কোথায় দেখা গেছে ?? ”
– ওই ক্লাবেই স্যার । এমনকি র্যাবের মেজরকেও সেইখানেই সর্বশেষ দেখা গেছে ।
– ওহ !! তাহলে তো এই ক্লাবে একটু ঢু মারতেই হচ্ছে ।
– আস্তাগফিরুল্লাহ !! স্যার এই জায়গাতে এখন গেলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে ।
– আমার নষ্ট হবে না । আপনার নষ্ট হইলে যাওয়া লাগবে না । ইয়াসির চলো । সময় কম আমাদের হাতে ।
নাইট ক্লাবের ভিতরে প্রবেশ করেই একটা ধাক্কা খেলাম । প্রচন্ড জোরে গান বাজছে । আর প্রচুর মানুষ । এত মানুষের ভিতর থেকে কাকে জিজ্ঞেস করবো ?? কে আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে ?? চোখ পড়লো একজন কমবয়সী ওয়েটারের উপর ।
– এই ছেলে এইদিকে আসো !!
– জ্বি স্যার বলেন কি দিব ।
– কোন কিছু দিতে হবে না । তোমার সাথে আমার কথা আছে ।
– স্যার এখন ব্যস্ত ।
– তাহলে ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাবো ।
এইটা শুনে সতর্ক হয়ে গেলো ও । নিচু কন্ঠে বললো ” বলেন কি জানতে চান ?? ”
একটু অবাক হলাম । ও বুঝলো কি করে আমি কিছু জানতে এসেছি !!
জিজ্ঞেস করতেই বললো ” এইটা নাকি এখানের নিত্ত-নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে । ”
ওকে নিহত অফিসারদের ছবি দেখাতেই বললো ” পত্রিকায় দেখেছে তাদেরকে । ওইদিন দেখেই চিনে গিয়েছে যে আগের রাত তারা এইখানে এসেছিলো । ”
জানলে পারলাম তিনজনের কেউই এইখানে কিছু খায়নি । আর তিনজনেই হটাত করে বের হয়ে গেছে ।
আর কিছু জানার নেই । তাই বের হয়ে আসতে গেলাম । হটাত হাত চেপে ধরলো ইয়াসির । বললো ” মাথা নামাও । কুইক !! ”
মাথা নামিয়ে বললাম, ” কি হয়েছে ?? ”
– ঐ যে দেখ সামনের লোকটা ।
– চেনা চেনা লাগছে যে ।
– হ্যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঝাড়ুদার । নাম জালাল উদ্দিন ।
– হুম ব্যাটা এইখানে মনে হয় নেশা করতে আসছে ।
– মনে হয় না হাব-ভাব দেখে ।
– তাই তো !! কেমন জানি মনে হচ্ছে কারো সাথে দেখা করতে আসছে !!
– ইন্টারেস্টং মনে হচ্ছে ।
– অপেক্ষা করে দেখি ব্যাটা কি করে !!
( চলবে )
৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
অবাক হলাম আপনার উপস্থাপনা দেখে ।
নিখুত উপস্থাপনা,
জম জমাট বর্ননা , পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে জানেন আপনি।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি ।
শুভ কামনা ।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
অসংখ্য ধন্যবাদ ।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল পেয়ে যাবেন ।
বনলতা সেন
মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছেন না , দিলেও শুধু ইমো দিচ্ছেন । বুঝলাম না ।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
আসলে অনেকের মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না :p তাই ইমো দিয়ে কাজ সারছি 😀
শুন্য শুন্যালয়
চমৎকার গল্প। একসাথে এতোটা দেয়ায় আমি খুশি, গড়গড় করে পড়ে গেলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকবো।
ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ
পরের পর্ব আজকে দিয়ে হয়েছে ।
ধন্যবাদ 🙂