১ম…
চার্লস ডারউইনের ‘বানর তত্ত্ব’ অনুসারে বানর থেকে বিবর্তিত হতে হতে মানে বদলাতে বদলাতে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের সৃষ্টি তত্ত্বটা বিতর্কিত হলেও বদলে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। অর্থ আবিস্কারের আগে দ্রব্য বিনিময় প্রথা অর্থাৎ বদলা’বদলির উপরই চলত গোটা পৃথিবী। কোথায় নেই এই অদল-বদল? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পোশাক বদল করে- নাইট ড্রেস, অফিসে যাবার আগে অফিসিয়াল ড্রেস, শ্বশুর বাড়িতে যাবার আগে মাঞ্জা মারা ড্রেস। এভাবে বদলা বদলির কোন শেষ নেই।
দুটো ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থক দুই বন্ধুতে কথা হচ্ছে। ১ম বন্ধু ২য় বন্ধুকে বলল-
: দোস্ত তোর দল তো ক্ষমতায়, অথচ কোন বদল হলো না।
২য় বন্ধু প্রতিবাদ করে বলল-
: কেন, তুই কোন বদল দেখতে পাচ্ছিস না?
: কোথায় বদল?
আবার জানতে চাইল ১ম বন্ধু। ২য় বন্ধু জবাব দিল-
: কেন, আগে দৌড়ের উপর থাকতাম আমরা, এখন থাকিস তোরা। আগে সাংবাদিক পিটাতি তোরা, এখন পিটাই আমরা। আগে হরতাল দিতাম আমরা, এখন দিস তোরা। তোদের স্বরাষ্ট্রামন্ত্রী গায়ে সাদা-কালো ডোরা দেখলেও আঁতকে উঠে বলত ওগুলো বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র। এখন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুজব, অতিরঞ্জন।
কী বদলায়নি বল?
২য়…
এভাবেই ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে নানান কিছুর অদল-বদল ঘটে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ক্ষমতা বদলের নীতি প্রায় ফিক্সড করা। ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে অদল বদলের হিড়িক পড়ে যায়। গন শৌচাগার থেকে শুরু করে কমিনিউটি সেন্টার পর্যন্ত সব নিজ দলের লোকের নামে নাম করন করা হয়। বিপক্ষ দল এসে আবার বদলায়। অন্তর আলী সেতু বদলে হয় জব্বার আলী সেতু। ওদিকে সরকারী অফিসের কর্তাবাবুরা রুটিন বদলাবদলীর পাশাপাশি ব্যাস্ত থাকেন টেবিলের নিচের অদল বদল নিয়ে। রাজনৈতিক ক্ষমতার মতোই রাজনৈতিক দলে প্রার্থী বদল করা হয়। শীত এলেই যেমন গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে, সিগারেটের শুন্য প্যাকেট যেমন ছুঁড়ে মারা হয়, তেমনি দলের অবাঞ্চিতদের দল করে বঞ্চিত। লোক বদলায়, কেউ কেউ চাপে পড়ে দলের ব্যানারটাও বদলে ফেলেন। যদিও কেউ কেউ চাপে পড়ে-ধাপে পড়ে-বাটে পড়ে বদলান, তবুও বোধ হয় মুনির চৌধুরীর কথাই ঠিক- মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারনে অকারনে বদলায়।
এমনি এক বদলানোর গল্প বলি-
বাংলাদেশের এক মন্ত্রী আর নেপালের এক মন্ত্রীর মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান হলো। পাহাড়ি দেশ, নেপালের মন্ত্রী সহজেই বাংলাদেশের মন্ত্রীকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়ে গেলেন। কিন্তু বিটিভর জ্বি হুজুর কর্মকর্তারা তাদের মন্ত্রীর পরাজয় বেমালুম চেপে গিয়ে রাত ৮টার সংবাদে খবর পরিবেশন করল- ‘তমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর বাংলাদেশের মন্ত্রী রৌপ্যপদক জয় করেছেন। অথচ নেপালের মন্ত্রী অনেক দৌড়ের পর শেষ ব্যাক্তির আগে পৌছেছেন মাত্র’। এভাবেই সংবাদের মত সব বদলে যায়।
৩য়…
গানটা উচ্চস্বরে সবাই না গাইলেও আপনি, তুমি, আমরা, এরা, ওরা সবার মনেই একই সুর-‘চল বদলে যাই’। রোমান্টিক গান বলেই কিনা কে জানে এই বদলে যাওয়ার ভাইরাস থেকে মুক্ত নয় হালের প্রেমিক প্রমিকারাও। ইন্টারনেট, সেলফোন আর লিভটুগেদার তত্ত্বের প্রভাবে ভালোবাসার রং বদলেছে বহু আগেই, হাল্কা হয়ে গেছে সবই। সকালে একজন তো বিকেলে আর একজনের সঙ্গে প্রেম। প্রশ্ন করলে উত্তর একটাই ‘বদলে ফেললাম’ !!
৪র্থ…
এক ভদ্রমহিলার বদলানোর রোগ ছিল! প্রতি সপ্তাহে তিনি চাকরি বদলাতেন। কালের বিবর্তনে তিনি ৩ বার স্বামী, ৪ বার বাড়ি, আর ৯ বার চাকরি বদল করে শেষমেশ অদল-বদলের ধাক্কায় নিজেই হেমায়েতপুরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই বদলাতে গিয়ে অত সিরিয়াস না বদলানোই ভাল। কথাটা প্রকৃতি তৈরি করে দিলেও বদলানোর ঠ্যালা থেকে রেহাই পায়নি সে নিজেও। ক্ষমতা, ধন আর মন বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিও বদলায়। ঋতু বদলের তালে তালে বদলায় আমাদের জীবন। শীতের পর গরম আর খরার পর বৃষ্টি আসবেই। এক সময় রাজত্ব ছিল কলেরার ওলাবিবির, এখন আছে ডেঙ্গুজ্বর, এডিস মশা। যক্ষা এখন আর কোন মারাত্বক কোন ব্যাধি নয়। কিন্তু বাঁচতে হলে জানতে হবে-যক্ষার চেয়েও মারাত্বক ব্যাধি হলো-এইডস, ক্যানসার, বার্ড ফু, সোয়াইন ফু আর সম্প্রতি যোগ হওয়া এনথ্রাক্স……অদল-বদল। সবই বদলায়, কিছু সময়ে বদলায় আবার কিছু অসময়ে বদলায় শুধু দুর্নীতির ব্যাধিটাই না বদলানোর দলে রয়ে যাচ্ছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও প্রতিটি বসন্তে। মনে বড় সাধ জাগে ইস্, এদেশের দূরর্নীতির কুৎসিত রুপটা যদি বদলে যেত। কিন্তু হায়, আমাদের দেশের ক্ষমতার আসিনে বসে থাকা মানুষ গুলোর প্রতি মূহুর্তে কন্ঠে সুর উঠে কাল জয়ি সেই গানের মতন-“দূরনীতি” প্রথমত আমি তোমাকে চাই, দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই, তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই, তোমাকে চাই।
অঃটঃ এই রম্য রচনাটি উন্মাদ পত্রিকায় ছাপা হয় আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে যখন উদৃত সমস্থ চিত্র ছিল রাজনৈতিক কষাঘাতে জরজরিত আমাদের এই দেশটার। ঐ সময়ে আমাদের ভাবনাটা ছিল আর হয়ত কয়টা দিন ঠিক আমাদের রাজনীতিবীদদের চিন্তা চেতনা, কিন্তু না, আজ ১০ বছর পরও আমাদের রাজনীতির এই একই দৃশ্যমান পুনোরাবৃত্তির চক্রবুহে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। তাই সামান্য কিছু পরিবর্তন করে আবারো প্রকাশ করলাম কিছু উন্মাদীয় কথাবার্তা। হাঁ বুকের ভীতর কেন জানি একটা চাপা কান্না ডুকরে উঠছে। সবার জন্য শুভকামনা।
বিঃ দ্রঃ ইহা একটি রম্য রচনা, কারো জীবনের সাথে মিল খাইলে আমি পাগল দায়ী নই। আর জানেন তো পাগলে কিনা বলে। সবাই ভাল থাকুন, শুভ কামনা রইল।
২০টি মন্তব্য
নীহারিকা
বদল বদল বদল ভালই তো! লেখাটি ভালো লেগেছে।
সীমান্ত উন্মাদ
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর।
মা মাটি দেশ
-{@ (y) পরিবর্তনের ছোয়াঁ (y)
সীমান্ত উন্মাদ
হা হা। এই আশায়ই বেঁচে থাকা।
খসড়া
হা হা হা মজারু মজারু। হা হা চে থে পে গে।
সীমান্ত উন্মাদ
চেয়ার থেকে পড়ে যান আর যেখান থেকেই পড়েন আমাগো তেনারা পরির দেশে বর্তন মাঝতে যাইবো না। হুদাও বেথা পাইয়া লাভ নাই।
ছাইরাছ হেলাল
আমরাও আপনাকে চাই
নিয়মিতই চাই ।
সীমান্ত উন্মাদ
চেষ্টাতো করি ভাই, কিন্তু জীবনের দায়ে পড়ে, চাপে পড়ে ধাপে পড়ে আসা হয় না নিয়মিত। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
🙂
ভালো হইছে ।
সীমান্ত উন্মাদ
ধন্যবাদ মামা।
রাতুল
বদলে বদলে বদলদলিত হয়ে জ্য সব বদল…
তবুও তো বদল হয় না দুর্নীতির আদল !!
সীমান্ত উন্মাদ
সেইটাইতো দুঃখ রাতুল ভাই। ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর।
শুন্য শুন্যালয়
লেখা তো চরম হয়েছে ..রম্য রচনা যে মনোবেদনা দিলো ভাইজান তার জন্য আপনি পাগল অবশ্যই দায়ী ..
সীমান্ত উন্মাদ
পাগলে কিনা বলে, তার কথা মাথায় নেয়া মানে বেদনা পাইলে সেইডা আপনের দোষগো ভাইজান।
রিমি রুম্মান
ভালোলাগা রইল… শুভকামনা
সীমান্ত উন্মাদ
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।
রাসেল হাসান
দারুন লাগলো! চরম হইছে। 😀
সীমান্ত উন্মাদ
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার জন্য।
আমীন পরবাসী
দশ বছর আগের লিখা সেটি সামনে আরো দশ বছর যাবে সেটা নিশ্চিত। সব কিছুই তাতে বদলাবে তবে এই লিখাটির কথা গুলো আগামী দশ বছর পরেও আরো দশ বছরের অপক্ষায় থাকতে হবে পরিবর্তনের জন্য। এক সময় দেখা যাবে বছরের পর বছর চলে যাবে লিখাটির বিলুপ্তি হলেও কথা গুলো ঠিকই থেকে যাবে কোনো অদল বদল হবে না. ভাল লেগেছে ভাই। শুভকামনা রইল।
সীমান্ত উন্মাদ
তবে সত্যি আমি কিন্তু হতাশ নই, প্রতিনিয়ত আশায় বুক বাঁধি এই ভেবে যে আমরা এই ব্যাধিকে একদিন জয় করবোই। আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।