
বৃষ্টিভেজা ছুটির দিনেও ছুটি নেই! আপনাকে রাঁধতে হবে খিচুরী, গরুভূনা। মা দূর্গার দশহাতে সারাদিন সংসারের ঘানি টেনে টেনে মুখ থেকে বের হতেই পারে ধুর ভাল্লাগেনা ছাই! তবুও জীবনের টেষ্ট ছাড়লে কি চলে? তাই চলুন কিছু সময় কাটানো যাক বিদ্যা বালানের Tumhari Sulu র সাথে। বিদ্যা বালান মানেই আমার কাছে আলাদা, অন্যরকম কিছু। যার কাছে ‘লাইফ অলওয়েজ এনটারটেইনিং’
মুভিতে অনন্য নেহা ধুপিয়ার অভিনয় বস ‘মারিয়া ম্যাডাম’ হিসেবে একেবারেই অনবদ্য। নারী কেন্দ্রিক এই মুভিতে অতিথি সুপারস্টার আয়ুস্মান খুরানাও রয়েছেন। পরিচালক সুরেশ ত্রিভানী দেখিয়েছেন- চল্লিশ ছুঁইছুঁই গৃহিনী মানেই রসুই ঘর নয়। কিংবা শাড়ি, বয়স, গৃহিনীতেই শেষ নয় বরং সবজি কাটতে কাটতেও জীবনে কিছু হওয়া যায়। শত অভাবেও স্বপ্নের সাথেই বসবাস, কবুতরের সাথে সখ্যতা যার কাজ, হ্যাঁ ‘Tumhari Sulu’ মুভিতে আমাদের মতো হাউসওয়াইফ বিদ্যা বালান ওরফে সুলোচনার কথাই হচ্ছে। আর হ্যাঁ, মুভি দেখতে দেখতে ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানটির নতুন ভার্সানে শাড়ি, খুন্তি, কড়াইয়ের সাথে একচোট নাচলে কিন্তু মন্দ লাগবে না। সারাদিনের ক্লান্তি কেটে গিয়ে ফুরফুরে একটা ভাব চলে আসবে।
কাহিনী সংক্ষেপ: হাসিখুশি, চটপটে বিদ্যা বালান (সুলোচনা) দুম করে পড়াশুনা বাদ দিয়ে সাধারন একটি ছেলেকে বিয়ে করে। গার্মেন্সের সামান্য পয়সায় অনেক স্বাধই পূর্ন করতে পারে না। পরিবারের দিদিরা বড় বড় পোষ্টে জব করে তাই ইউজলেস বলে তাঁকে নানাভাবে কটাক্ষ করে। সুলু পাত্তাই দেয় না, কারন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সুলু চরম আশাবাদী। সংসারের পাশাপাশি পাড়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, রেডিও শোনা, বিভিন্ন কুইজে অংশ নেয়া তার কাজ। পুরস্কার জিতেও নেয় অনেকগুলো। এমন পুরস্কার নিতেই তিনি রেডিওতে যান। চোখে পরে ‘রেডিও জকি’ হবার পোষ্টার। কোন কথা নেই তিনি সরাসরি পরিচালকের সাথে কথা বলেন। সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে। কারণ রেডিও জকি হবার মতো বয়স, গেট আপ কোনটাই যে নেই তার! তবুও অডিশন শুরু হয়।
‘হ্যালো আজ সুলুকি সাথ কন বাত কারনা চাতে হ্যায়!!! এমন ডায়ালগ ও গলায় যৌনআবেদন দিয়ে একটি মেয়েকে রাতে শো করতে হবে। অতিসাধারণ শাড়ি পরা সুলোচনা কি পারবে এমন আবেদনের গলায় শো চালাতে? যার অধিকাংশ ফোন কলার দারোয়ান, রিক্সা, ভ্যান, টেক্সী ড্রাইভার। যাদের অশ্লীল চাওয়াকে ম্যানেজ করা অতো সহজ নয়।
কিন্তু মুখ্যচরিত্রে যে বিদ্যা বালান! অন্যরকম কিছু তো থাকতেই হবে। বিদ্যার চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি যৌনতাকে নতুন করে ভাবাতে শিখিয়েছেন। ‘যৌনতা বা সেক্স একটা অনুভূতি মাত্র। কোনও ট্যাবু নয়।’
একদিকে রাতের শো হবার কারণে সংসার, ছেলের ভবিষ্যত ভেস্তে যেতে থাকে। অন্যদিকে পরিবারের, লোকজনের সমালোচনা, কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়। তাঁর অভিনয় এবং সংলাপ কখনও হাসায়, কখনও চোখের পানিতে ভাসায়, আবার কখনও বা নিছক আনন্দ দান করে। লঅসাধারন ক্ষমতা ও দক্ষতা দেখিয়ে সুলোচনা প্রমান করেন বয়স, শিক্ষাই সব নয়, ইচ্ছা শক্তিই সব কিছু।
বিদ্যার সঙ্গে যোগ্য স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মানব কউল। দুজনের অসাধারণ মধ্যবিত্ত ক্যামেষ্ট্রিতে দর্শক মুগ্ধ না হয়ে পারে না। তাদের অভাব যেমন সীমাহীন, তাদের বোঝাপড়া কিংবা ছায়া হবার ক্ষমতাও ততো বেশি। তাইতো সুলু রাতদুপুরে এমন একটি চাকরী করার মতো সাহস পান। কথায় আছে, ‘প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর হাত থাকে।’ এখন কথাটা বোধহয় এমন হওয়া উচিত, ‘প্রত্যেক সফল নারী/ পুরুষের পেছনে একজন নারী/ পুরুষের হাত থাকে।’ ফাইনালী সবকিছু খুবই সাজানো গোছানো ভাবেই শেষ হয়। সকল সমালোচকের মুখে টেপ লাগিয়ে বিদ্যা বালান ভর রাতে একাকী মানুষদের বন্ধু হয়ে যায়। আমরা যে শো কে আমরা যৌনতা ভেবে বসে থাকি সেটি ভালোলাগায় শোতে পরিনত হয়। অনবদ্য, এন্টারটেইনিং মুভিটি মেয়েদের দেখা জরুরী। যারা ভেবে বসে আছি- I have nothing to do.,,,
তো দেখতে বসে যান!!!
মুভিটির IMDB রেটিং ৭/১০
পরিচালক- সুরেশ ত্রিভানী
শ্রেষ্ঠাংশে:
বিদ্যা বালান (সুলু)
নেহা ধুপিয়া( মারিয়া)
মানব কৌল ( অশোক)
অভিষেক শর্মা
১২টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার গরুভুনা বেশ লাগল রুকু আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ লিটন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
বিদ্যা বালান আমার খুবই প্রিয় একজন অভিনেত্রী। তার অভিনয় দেখে মনেই হয়না সে অভিনয় করছে। মনে হয় চিরচেনা কেউ তার স্বাভাবিক আচরন করছে।
মুভিটির অন্তর্নিহিত যে ম্যাসেজ তা আপনি সঠিক ভাবেই রিভিউতে বর্ননা করেছেন।
রেডিওতে অডিশনের জন্য টিভি পরিচালক এর কাছে যাবে কেন? রেডিও পরিচালক হবে না?
সুন্দর রিভিউ,
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা ঠিক করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা।
আরজু মুক্তা
ইচ্ছাশক্তিই বড়। বয়স সমস্যা না। এখন তো আরও অনেক সুবিধা।
ভালো মেসেজ দিলেন মুভি রিভিউ তে।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
হালিমা আক্তার
ইচ্ছাশক্তি থাকলে অনেক কিছুই জয় করা যায়। শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আপনজনের আস্থায় বাড়ানো হাত
জীবনকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।
ভীষণ সুন্দর উপস্থাপনা।
মুগ্ধতা রেখে গেলাম চিরন্তন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল
ছাইরাছ হেলাল
তবে চল্লিশে চালশে নয় সে তো বুঝতে/দেখতে পাচ্ছি।
চার/পাঁচ দিন হয়ে গেল লেখা নেই,এ ক্যামন কথা!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা খালি ঘুম পায়। আম কাঁঠালের দোষ! বয়সের কোন সমস্যা নাই।