করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়েই বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও নতুন একটি রোগ সংক্রমণের সন্ধান পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এই রোগটির নাম- Multisystem inflammatory syndrome in children (MIS-C)। এই রোগকে বাংলায় মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম বা রক্তনালীর প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ বলা হচ্ছে যা একটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং এটি করোনাভাইরাসের সাথে সম্পৃক্ত। শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয় এ রোগ। এরই মধ্যে এদেশে আক্রান্ত বেশ কয়েকটি শিশুকে শনাক্ত করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। (ভিডিও দেখুন)
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্ট্রাল ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC) সম্প্রতি ২-১৫ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একটি নতুন রোগের সিন্ড্রোম বা লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন যেটি COVID -19 এর কারণ হিসাবে বা করোনাভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত। যদিও এই সিন্ড্রোমটি খুবই বিরল, তবে এটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে শিশুদের মধ্যে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম (এমআইএস-সি) সনাক্ত করেছিলেন। এই রোগের বৈশিষ্ট্যগুলি বেশীরভাগই কাওয়াসাকি রোগের সাথে মিলে যায় যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিশুর পুরো শরীর জুড়ে রক্তনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই অবস্থাটিকে পেডিয়াট্রিক ইনফ্ল্যামেটরি মাল্টিসিস্টেম সিন্ড্রোম (পিআইএমএস) বা প্রদাহজনিত সিন্ড্রোম বলা হয়।
শিশুদের মধ্যে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোমের লক্ষণঃ
২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আপনার শিশুর ১০০.৪ ডিগ্রি বা তারও বেশি জ্বর এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এর সাথে-
– অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি
– দেহে লাল ফুসকুড়ি
– পেটে ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়া
– ঠোঁট অতিরিক্ত লাল ও ফাটা ঠোঁট
– লাল চোখ
– হাত বা পা ফুলে যাওয়া
এ ছাড়াও আক্রান্ত শিশুর অন্যন্য যেসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে-
– শ্বাস নিতে সমস্যা হয়
– বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়
– একসময় শিশু অচৈতন্য হয়ে পড়ে
– ঠোঁট বা মুখ নীলবর্ণ ধারণ করে
এমআইএস-সি (MIS-C) আক্রান্ত হলে এটি শিশুর দেহে রক্তের প্রবাহকে সীমিত করতে পারে। ফলে হৃদপিণ্ড, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। SARS-CoV-2 করোনভাইরাস উপস্থিতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়ার (ইমিউনিটি কমে যাওয়ার) কারণেও এই সিনড্রোম হতে পারে। এরকম লক্ষণ দেখলে আপনার শিশুকে নিয়ে অতিসত্বর একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
তবে যেহেতু এই রোগটি নতুন তাই এটি পরিপূর্ণ বোঝার জন্য আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন। চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা যা এখনো পর্যবেক্ষণ করেছেন। সিডিসি (Central Disease Control) নিশ্চিত করেছে যে এমআইএস-সি ভাইরাস সংক্রমণের সাথে করোনাভাইরাসটির সম্পর্ক রয়েছে। তবে এটি এমন শিশুদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে যাদের কোভিড -১৯ এর কোনও সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় নি, যেমন শ্বাসকষ্ট বা কাশির সংক্রমণ। তারা বলছেন – এমআইএস-সি খুব বিরল এবং এটি বিপজ্জনক হতে পারে। বাচ্চাদের মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো উচিত।
এমআইএস-সি (MIS-C) একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। ভীত না হয়ে আক্রান্ত শিশুকে প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে নিতে পারলে এটির দ্রুত চিকিৎসা করা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে প্রত্যেকের বিশেষকরে বাবা-মা’র স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। শুধুমাত্র অধিক প্রচারণা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শই সবার কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নতুন এ রোগটির ব্যাপারে চিকিৎসক ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র –
1. US Central Disease Control (CDC)
৩০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এটি আমি আমার ওয়ালে শেয়ার দিয়েছিলাম। আপনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে বুঝলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
সবার উপকারে আসলেই লেখাটি স্বার্থক। সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ভালো থাকুন দিদিভাই।
ইঞ্জা
বেশ গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট, কোভিড-১৯ যে কত রূপ বদলাচ্ছে তা এখনো বিজ্ঞানীরা ফলো করে কূল কিনারা করতে পারছেনা, আমি তো দেখছি এ চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে, ভয় লাগছে ভাই।
তৌহিদ
জ্বী দাদা, করোনাভাইরাস নানানরকম রুপে আমাদের মাঝে বিরাজ করছে। ফলে অজানা রয়ে যাচ্ছে এর গতিবিধি, প্রকৃতি। সচেতনতার বিকল্প নেই আসলে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, শুভকামনা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
খুবি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করলেন দাদা।
একের পর একেক রোগব্যাধি বেড়েই চলছে।
কি হতে যাচ্ছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন।
কোভিড ১৯ এর সাথে সম্পর্কিত!
তৌহিদ
আসলে আমাদের নিজেদেরই সচেতন থাকতে হবে দাদা। সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই।
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থেকো।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটা রোগের সমাধান পাওয়ার আগেই আরেকটা! আল্লাহ তাআলাই জানেন তিনি কি চান।
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেনো তার সকল সৃষ্টির সহায় হোন, আমাদের ক্ষমা করে দেন।
সচেতনতা মূলক পোস্টের জন্যে ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বুঝতে কিছুটা সময় লাগেই আপু। করোনার পাশাপাশি এই ভাইরাসও মারাত্মক হতে পারে শিশুদের জন্য। সবার সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
ইসিয়াক
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। এতো নতুন নতুন রোগ দিশেহারা অবস্থা।
গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভকামনা।
তৌহিদ
জ্বী ভাইয়া, পাঠকের সচেতনতাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। সবার উপকার হলে লেখাটি স্বার্থক।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বর্তমান সময়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পোস্ট । এমন পোস্টের জন্য ধন্যবাদ । ভালো থাকবনে ভাই ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, নিজে সচেতন থাকুন অন্যদেরকেও সতর্ক করুন।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
নিতাই বাবু
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী পোস্ট। আপনার পোস্ট পড়ে নিজের নাতি-নাতিনদের জন্য চিন্তায় পড়ে গেলাম! আমাদের এই পৃথিবীতে কী হতে চলছে? একের-পর-এক সমস্যা দেখাই দিচ্ছে। বর্তমান সময়ে যেসব প্রাকৃতিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা থেকে সহজে সেরে উঠার উপায় দেখছি না। তাই খুবই চিন্তায় আছি।
সুন্দর সময়োপযোগী পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
তৌহিদ
চিন্তার কিছু নেই দাদা, একটু সচেতন থাকবেন। এই উপসর্গগুলি সবার জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। ভাইরাসের গতিবিধি নির্ণয় করতে কিছুটা সময় লাগেই যার ফলে চিকিৎসা কিছুটা বিলম্বিত হয়।
ভালো থাকুন দাদা, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তৌহিদ
লেখাটি স্টিকি করার জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সুপায়ন বড়ুয়া
একের পর এক উদ্ভট রোগ যে কোত্থেকে আসে
কেন আসে বুঝা বড় দায়।
ভালই হলো বিশদ তুলে আনলেন।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
তৌহিদ
সবার সচেতনতা কাম্য দাদা। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
এ তো দেখছি গোদের উপর বিষফোঁড়া, আমাদের সাবধানতা দরকার ,
এক-ই সাথে যেন প্যানিক সৃষ্টি না হয় সে দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে।
সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ।
তৌহিদ
কি যে হচ্ছে! আল্লাহ ক্ষমা করুন। সবার সচেতনতা কাম্য ভাইয়া।
শুভকামনা সবসময় ভাই।
জিসান শা ইকরাম
করোনার ধাক্কাই সামলে উঠতে পারলাম না, এরপরে করোনা থেকে উদ্ভুত আরো রোগ এসে গেলো শিশুদের।
লেখাটি কয়েকজন আত্মিয়কে পাঠিয়েছি। অত্যন্ত জনগুরুত্বপুর্ন পোস্ট।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
তৌহিদ
ভাই ধন্যবাদ, লেখাটি স্বার্থক বলে মনে হচ্ছে। আসলে নিত্যনতুন রোগবালাই আসছে এখন, যেগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। আমাদের সকলের সচেতন থাকার বিকল্প নেই।
আর শিশুদের বেলায়তো সচেতনতা আরও বেশি প্রয়োজন। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম ভাই।
ভালো থাকুন সবসময়।
মাহবুবুল আলম
তৌহিদ ভাই! এটি খুবই জনসচেতনতামূলক পোস্ট। এটি পড়ে অনেকেই উপকৃত হবে।
আপনি ভাল থাকবেন। শুভ ও মঙ্গলময় হোক আপনার সময়।
তৌহিদ
পাঠকের উপকার হলেই লেখাটি স্বার্থক ভাইজান। আমার সকল লেখায় আপনার সুগঠিত মন্তব্য আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় সবসময়। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন সবসময়।
আরজু মুক্তা
এটা নতুন জানলাম
তৌহিদ
সচেতন হতে হবে আপু। শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। আপনার পোস্টেই প্রথম এই রোগ সম্পর্কে জানলাম।জানি না মহান রাব্বুল আলামীন কী চাইছেন?এটা রোগ থেকে রেহাই না পেতেই আরো একটা নতুন রোগ
মহান রাব্বুল আলামীন সবাইকে রক্ষা করুন।
তৌহিদ
আপু নিজে সতর্ক থাকুন, সকলকে সচেতন করুন। আল্লাহ সহায়।
ভালো থাকুন সবসময়।
হালিম নজরুল
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপনাকেও ভাই, ভালো থাকুন সবসময়।