
তসলিমা নাসরিনের ‘শোধ’ উপন্যাস পড়েছিলাম। ঢাকা ভার্সিটির ফিজিক্স এর মেয়ে বিয়ে করে, বিয়ের রাতে চাদর কেন ভেজে না এই সতীত্ব পরীক্ষা করা হয়। একসময় প্রেগন্যান্ট হওয়া মেয়েটির বাচ্চাও বিয়ের আগের ও অন্যের বাচ্চা হয়ে যায় কারন তার অনেক ছেলেবন্ধু। পরে সেটি এবোরশ্যান করে ফেলা হয়। কিন্তু স্বামী বুঝতে পারে না মায়ের কষ্ট। জরায়ু থেকে এক টুকরো মাংস পিন্ড কেটে বের করে আর মায়ের কাছে মনে হয় যেন তার কলিজা ছিঁড়ে/ কেটে বের করা হচ্ছে।
এমন কষ্টের অনূভুতি শেষ হয়না। মেয়েটি প্রতিশোধ নেয় সত্যি সত্যি অন্যের বাচ্চা পেটে ধারণ করে। অবাক হলেন? এমন প্রতিশোধ কজনই বা পারে নিতে। আজকের ২০২১ এ এসেও মেয়েদের ভার্জিনিটির পরীক্ষা হয়। আপনি মুখরা হলে সমাজ বহিস্কার করে। যেমন তসলিমা নাসরিনের বহিস্কার করা হয়েছিল। এমন অনেক মানুষও আছেন যারা তাঁর একটি বইও পড়েন নি কিন্তু গালি দেন শুনে শুনে। নারীদের ভেতরের কথা, কষ্টের কথা, চাওয়ার কথা সহজে বলা মানেই সে নষ্ট মেয়ে।
আজ ইউটিউবে মুভি খুঁজতে গিয়ে পেলাম শাবানা আজমী ও নন্দিতা দাসের ‘ ফায়ার’ মুভিটি। তারা মানেই অবশ্যই চমক হবে, শুরু করলাম দেখা। ও মাই গড ১৯৯৭ সালেও পরিচালক দীপা মেহতা সাহস দেখিয়েছেন। আপনারা কি বলবেন জানি না আমি তো সাধুবাদ জানাবো। এটি পুরুষদের প্রতি হুমকিস্বরুপ!
তবে শেষটুকুতে তারা তসলিমার মত সাহসী হতে পারেন নি। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী নামক দেবতা। যিনি অধিকাংশ সময় ধর্ম-কর্ম, পুজা-পার্বন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এমন দেবতুল্য মানুষটি শাবানা আজমীর স্বামী। যিনি আধা নপুংশক, স্ত্রীর মূল্য কোনদিন দিতে পারেন নি। নিজের সেবা , সংসার , বাবা- মায়ের বাইরে একটা মেয়ের কোন জীবন নেই, চাওয়া নেই এমনটাই তার অভিপ্রায়।
নন্দিতা দাস নতুন বিয়ে করে শাবানা আজমী তথা রাঁধার জা হয়ে আসেন। নন্দীতার স্বামীও আর এক দেবতা যিনি অন্য মেয়েতে আসক্ত এবং তাকেই সারাক্ষন পুজো করেন। বিবাহিত জীবনের কোন স্বাধ নন্দিতা দাস পান নি। এদিকে বড় জায়ের সাথে তার মোটামুটি সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক রাতে ক্রন্দনরত অবস্থায় শাবানা আজমী নন্দিতা দাসকে দেখে শান্তনা দিতে যায় আর সেদিন থেকে কাহিনী ঘুরে যায় অন্যদিকে। বললাম না দেখে নেবেন!!
সমালোচকদের মতে, এটি সমকামিতার মুভি। না তা নয়। দুজন স্বামী দ্বারা অবহেলিত মানুষ তাদের একাকিত্বতা কিংবা যৌন্যতা যেটাই বলেন, তা কাটাতে গিয়ে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরে। আর এই নেগেটিভ দিকটা তৈরি করছে পুরুষরা।
জীবনটাকে শেয়ার করার জন্য একজন মানুষ খুব দরকার। মনের চাহিদাই বড় চাহিদা এটা আমরা বুঝতে পারি না। সংসার মানে খাওয়া, ঘুম আর দৈনন্দিন কাজ তার পাশাপাশি পুরুষ আশ্রয়ই যথেষ্ঠ মনে করা হলেও তা নয়!
এই এক সমাজ যেখানে নারীরা অন্য ঘরে মানে পতিতা আর পুরুষ যত পাত্রেই খেয়ে থাকুক না কেন তার সেটা শারিরীক অধিকার। নপুংশক স্বামী কিংবা নষ্ট স্বামীকে দেবতা মনে করে সংসার করতে হবে এমনটাই নিয়ম! যদি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যান তাহলে সেটা নারী অধিকার নয় বরং সেটা জরায়ুর স্বাধীনতা। যেখানে দাম্পত্য অধিকার না পেলে একজন পুরুষ আবার বিয়ে করে, পতীতালয়ে যায়। আর নারী হাত বাড়ালেই নষ্ট, স্বামীর ঘর ছাড়া কিংবা ডিভোর্স। দোষ সবসময় নারীর!
আর এসবের ভয়ে হাজার হাজার মেয়ে মুখ বুজে সহ্য করে সংসার নামক ঘানি টেনে যায়। সবাই মুভিটি দেখবেন আশা করি। আমার ভালো লেগেছে একজন চরিত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে। একজন নারী কেন এমন হয় বা হতে পারে আমরা সেটা কখোনো কি ভেবে দেখি?
চলুন সমাজকে বদলে দিতে মানসিকতার পরিবর্তন আনি। আপনার অযোগ্যতাকে ঢাকবার জন্য অন্যকে অপরাধী বা তাকে সাজা দেবার কোন অধিকার নেই। নারীরাও মানুষ আপনার মতোই তারও মন ও মনের সকল চাওয়া বিদ্যমান। তার এটা অধিকার, লাজ নামের শৃঙ্খল নয়???
Rating
7.2/10 (5,771)
Cast:
শাবানা আজমী( রাঁধা)
নন্দীতা দাস ( সীতা)জাভেদ জাফরী
Written and Directed by
দীপা মেহতা।
ছবি নেটের
২২টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ওয়াও! ফার্স্ট হইসি!!
গিফট দিন, তারপর কমেন্ট দিবো 🙂
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা ফাস্টু হতে পারাটাই তো একটা বড় গিফট্। তবুও রোলকলের সাথে ধন্যবাদসহ ভালোবাসা দিলাম আর বৃষ্টি যেহেতু নামেনি তাই আর কিছু দিতে পারছি না।💕💕💕🥰🥰🌹🌹🌹
ফয়জুল মহী
অনেক আগে দেখেছি ছবিটা। নন্দিতার অভিনয় অনেক ভালো লেগেছে
রোকসানা খন্দকার রুকু
নন্দিতা দাস অসাধারন!!! ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
বন্যা লিপি
দেখতে হবে ছবিটা। হাত পাকাতে লেগে থাকুন রিভিউ লিখতে। তবে সমাজ,সংস্কৃতি,আইন,ধর্ম নারীবাদ কোনোকিছুই নারীর ত্যাগ ছাড়া আর কিছু সহ্য করে না,করবেও না কোনোদিন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
না করলে তো জবাব দিতে হবে আমাদেরও। ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপু। ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ছবিটা দেখা হয়নি। কারন তখন সিনেমা দেখা হতো পরিবারের সাথে তাই এসব সিনেমা দেখাটা কেউই ভালো চোখে দেখতো না। তবে ম্যাগাজিন, পত্রিকা পড়ে সিনেমার কাহিনী মোটামুটি সবই জানা। মেয়েরা সর্বত্র ই অসহায়, পরাধীন তবে বৈবাহিক জীবনে সবচেয়ে বেশি পরাধীন। আপনি সাহসী লেখিকা তাই আপনার কথা গুলো ভালো লাগে । তসলিমা নাসরিনের লেখা ১/২ টা বই পড়েছি তাই তার সাহসের সঙ্গে পরিচিত। আজকের এই ডিজিটাল যুগেও মেয়েরা এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে। তাই এ নিয়ে কথা বলাটাই বেকার আমার কাছে। আপনি আপনার বৈচিত্র্যময় লেখা চালিয়ে যান। পাশেই আছি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
বৈবাহিক জীবনে সবচেয়ে পরাধীন এটা দারুন বলেছেন।
সাহসী লেখিকা বলার জন্য ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন ভালোবাসা সবসময়!!
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর————
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই
আরজু মুক্তা
নারীরাই সবখানে অগ্রগামী। এই পুরুষরাই বাধা আর বিপত্তির মধ্যে রাখে।
তবে, নারী এখন এমনি। হয়তো নিজের বিপন্ন হবে বলে পিছ পা।
ভালো থাকুক সকল নারী।
রিভিউ চালু থাক।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিকই বলেছেন!
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা সবসময়।
হালিমা আক্তার
মুভিটি মনে হয় দেখেছি। নারীরা প্রতিবাদ করলে হয়ে যায় পুরুষ। নারীরা কিছু করলে দোষ। পুরুষরা হচ্ছে পুতপবিত্র। তসলিমা নাসরিনের বেশ কিছু লেখা পড়েছি। উনি অকপটে সত্য কথা বলতে পারেন। নারীরা এগিয়ে যাক। শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা সবসময়।
ত্রিস্তান
অনেক সুন্দর উপস্থাপন । মুভিটি আগে দেখিনি তবে সুযোগ পেলে দেখে নেবো। তসলিমার বই পড়ে তার বিরোধিতা করেছে বিরোধীদের এক পার্সেন্ট আর বাকি নিরানব্বই পার্সেন্ট ই “কান নিয়েছে চিলে”- এই টাইপের।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই কান নিয়েছে চিলে অবস্থা। অনেকদিন পর মন্তব্য পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ। থাকুন সবসময়। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
সাবানা আজমি অভিনিত মুভিগুলো দেখি আমি। ফায়ার মুভি দেখেছি কয়েকবছর আগে। আপনার রিভিউতে মুভির কাহিনীর অন্তর্নিহিত ভাব চলে এসেছে। আপনি যে মুভিটি সুধু দেখেননি, এতে আসলে কি বলতে চেয়েছেন কাহিনীকার তা উপলব্দি করতে পেরেছেন।
‘ জীবনটাকে শেয়ার করার জন্য একজন মানুষ খুব দরকার। মনের চাহিদাই বড় চাহিদা ‘ – এটিই সত্যি।
নারীদের আমরা গুরুত্ব দেই না, তাকে আমার মানুষ হিসেবেই ভাবি না। যে কারনে নারীর সবকিছুই গ্রুরুত্বহীন।
খুব ভালো রিভিউ হয়েছে।
আরো রিভিউ চাই।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সিনেমা প্রেমিকে বলছেন তো এরপর ইংলিশ মুভির রিভিউ লিখবো ভাবছি। কিন্তু সময় লাগে অনেক। তোমারী সুলু রেডি।
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
ইংরেজি মুভির পোকা আছেন আমাদের ব্লগে একজন। ছাইরাছ হেলাল। ব্লগে কমেন্ট দিয়ে তার পরামর্শ নিতে পারেন এ বিষয়ে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওরে বাবা! ভয় পাইলাম। তাইলে বাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
অবলার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে সে আর অবলা থাকে না, হয়ে উঠে অকুতোভয় দুঃসাহসী। প্রমাণ করে তিনিই সৃষ্টির সেরা মানুষ_তিনি নারী। নারী শক্তির অনন্য উপস্থাপন দেখানো হয়েছে এই মুভিটায়। আমার পছন্দের মুভি গুলোর মাঝে এটা একটি।
মুভি দেখে অনেকেই, কিন্তু গল্পের প্রতি মনোযোগ রেখে চরিত্র গুলোর মর্মার্থ বের করা সহজ কাজ নয়। আপনি পেরেছেন!
মুভি রিভিউ চালু থাকুক। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা মুভির ভালগার দেখি কিন্তু পেছনের ঘটনা দেখি না। এটি সত্যি বলেছেন। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে পড়বার জন্য ধন্যবাদ।