
সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিধায়, মাঝে মাঝে ফিল্ড ভিজিট করতে হয়। সেদিন একটি বাসায় গিয়ে দেখতে পেলাম। প্রায় ৩/৪ বছরের একটি শিশু নির্বিঘ্নে মোবাইলে গেম খেলছে। বাড়ির অভিভাবকদের বললাম এতোটুকু বাচ্চার হাতে মোবাইল কেন? শিশুটির মায়ের উত্তর মোবাইল হাতে দিয়ে রাখলে বিরক্ত করে না। দেখতে পেলাম শিশুটির মা অন্যদের সাথে খোশ গল্পে মশগুল। বুঝতে পারলাম তার আড্ডার যেন ব্যাঘাত না ঘটে তাই শিশুটির হাতে মোবাইল দেওয়া হয়েছে।
এ চিত্রকল্প শুধু এক স্থানে নয়। মোবাইল ফোনের এ ধরণের ব্যবহার এখন যত্রতত্র। পরিচিত অনেক মাকে দেখেছি শিশুকে খাওয়ানোর জন্য শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে রাখছেন। তাদের যুক্তি হলো শিশুর হাতে মোবাইল না দিলে শিশু খেতে চায় না। ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল শিশু যাকে বলে।
একজন শিক্ষিত মা। যিনি নিজে একটি স্কুলের শিক্ষিকা। তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানের হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন তুলে দেন। শুধুমাত্র যোগাযোগ রক্ষার কথা ভেবে। অথচ তাঁর সন্তানের স্কুল এবং কোচিং বাসা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে।
মোবাইল এখন প্রতি মুহূর্তের প্রয়োজনীয় বস্তু। একসময় মোবাইল শুধুমাত্র যোগাযোগের বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল। ডিজিটাল যুগের উন্নয়নের সাথে সাথে এর বহুমুখী ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বিস্তৃতি লাভ করে। এখন এন্ড্রয়েড ফোন দিয়ে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ করা যায়। মোবাইল এখন রেডিও, টিভি, ক্যামেরাসহ অনেক কিছুর স্থান একাই দখল করে নিয়েছে। বলতে গেলে মোবাইলের ব্যবহার এখন “একই অঙ্গে কতো রূপ”।
তথাপি এর যত্রতত্র ব্যবহার বা যদি বলে এর অপব্যবহার আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেটা কম বলা হবে কি! ছোট ছোট শিশুদের হাতে মোবাইলের ব্যবহার। ভবিষ্যৎ কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমরা ভেবে দেখেছি কী। এক সময় মায়েরা গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়াতেন। এতে সময় এবং শ্রম দুটো ই বেশি লাগতো। এখন কম সময় এবং শ্রমের জন্যই কি শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। একটি কথা বলতে হয় এঘটনা কিন্তু গৃহিণী মায়েদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। শিশুদের হাতে মোবাইল দিয়ে মায়েরা শিশুদের কোন সর্বনাশ করছেন।সেটা নিজেরা বুঝতে পারছেন না। এতে করে শিশুরা মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেক টা মাদকাসক্তির মত। কোন কোন মাকে বলতে শুনেছি, টয়লেটে গেলে ও সন্তান মোবাইল হাতে ছাড়া করছে না। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, অবশ্যই সফল বাবা-মায়ের উচিত সন্তান যেন মোবাইলে আসক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। শিশুদের মোবাইলে অভ্যস্ত করা কোন ক্রমেই উচিত নয়।
ছবি সংগ্রহ-নেট থেকে
১৫টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আজকেই আমি আমার ঘরে আসা কয়েকজন অতিথি কে বলছিলাম, – আমার এইসব* দেখে শুনে মনে হয়, মোবাইল সুবিধা জেঁকে বসার আগেই আমি আমার সন্তানদের আল্লাহ্ র অশেষ রহমতে বড় হতে দেখেছি।’
আরো ভাবি,,, আমার কি খুব কষ্ট হয়েছে আমার বাচ্চাদের সামলাতে বা শাসন করতে মোবাইল ছাড়া!!! অদ্ভূত!!! এখনকার প্রায় মা’কেই বলতে শুনি বা দেখি- মোবাইল দিয়ে খাওয়ানো বা বাচ্চাকে শান্ত রাখতে। আমি নিজেও বুঝিনা এর সঠিক যুক্তিটা আসলে কী?
প্রজন্ম এখন হুমকির মুখে নয়! বরং ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। পরিনতি হরহামেশা ভোগ করতে হচ্ছে কোনোনা কোনো বাবা মাকে। সময়োপযোগী পোষ্ট। সাধুবাদ লেখক আপনাকে।
হালিমা আক্তার
বর্তমান অবস্থা দেখলে কষ্ট হয়। বাবা মা যদি সচেতন না হোন তাহলে কি আর করা। আমাদের সময় ঘড়ির প্রচলন ছিল। সে ঘড়ি পেতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর আগে আব্বা ঘড়ি কিনে দেননি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেটা ভালো মন্দ বিচার করে। অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো আপা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে
শিশুরা আজ মোবাইলেই আসক্ত আপু!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
সত্যি বলেছেন। আমাদের অভিভাবকরা অতি আধুনিক। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
টয়লেটে যাওয়ার সময়ও বাচ্চার হাতে মোবাইল থাকে!
ব্যাপারটা সত্যিই দুঃখজনক। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার।
সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন হালিমা আপু। ভালো থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো আপা। শুভ রাত্রি।
আলমগীর সরকার লিটন
সংসার বড় আজব জায়গা কবি আপু আমার খুব আফসোস হয় মেয়ের মধ্যে ওই মেয়েরা ভয়ঙ্কর যারা নিজের ভালমন্দ বুঝে না বুঝার চেস্টা করে না
এদের মানুসিক রোগি বলা যাবে কিনা খুবি ভাবি!
হালিমা আক্তার
আপনার মন্তব্য বুঝতে পারলাম না। ভয়ঙ্কর মেয়েদের কথা কোথা থেকে আসল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমার বাড়িতেই এই অবস্থা। ভাবী চাকুরী করেন তার সময় নেই তাই ছোট্ট মেয়ে তোহা বাবুর একমাত্র ভরসা মোবাইল ফোন।।।ফোন দিয়েই তাকে খাওয়াতে হয়।।।
হালিমা আক্তার
আমার মামাতো বোন একই কাজ করে। এতে শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না। অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো আপা।
রিতু জাহান
সবাই বলে আমি খুব কড়া মা।
আমি আমার বাচ্চাদের একটা অনুশাসনের মধ্যে রাখতে পছন্দ করি।
বাচ্চার জন্য কোনটা ভালো কোনটা খারাপ বাবা যেনো আজকাল বোঝেই না।
বাচ্চাদের বিজি রেখে নিজেরাও বিজি থাকছে ফোনে।
হালিমা আক্তার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কড়া হতে হয়। সেটা সন্তানের ভালোর জন্য। অনেক মায়েরা তা বুঝতে পারে না। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
রিতু জাহান
আমি এখনো আমার বাচ্চাদের পিটুনি দেই। বড়টা ক্যাডেট কলেজ থেকে ছুটিত আসলে যদি বেশি মোবাইল ঘাটে, খুব বকি। ইন্টার পরীক্ষা দিবে, তবু আমি বলেছি চাকরিতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমার কোনো ব্যাক্তি জীবন নেই।
ছাইরাছ হেলাল
প্রযুক্তির কল্যাণ অকল্যাণ দু’ই আছে, আমরা কীভাবে এর ব্যাবহার করবো তার উপর নির্ভর করে।
সাবধানতা অবশ্যই আমাদের লাগবে।
হালিমা আক্তার
একদম সঠিক বলেছেন। আমরা প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ করতে পারছিনা, এটা আমাদের ব্যর্থতা। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।