— জেগে আছো?
—–হম।
—ঘুমাও নি কেন?
—-ঘুম আসছে না।
—কেন?
—-আমার চোখ থেকে কে যেন ঘুমটা কেড়ে নিয়েছে!
–ওহ। কে সে?
—— যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, যাকে নিয়ে প্রেমের এক উপাখ্যান রচনা করতাম।
—– এত ভালোবাসো তাকে?
—– হয়তো বাসি।
—– তাকে তো পাবে না এ জীবনে।
—– ভালোবাসাটা যেদিন মনের মধ্যে গেঁথে গেলো, সেদিন থেকেই জানি ওকে আমি পাবো না।আমি তো কখনো কারো হতে পারি নি।কিন্তু তাতে কি? ভালোবাসলেই যে সে আমার হবে, সে রকম কোন সূত্র তো নেই।
—প্রায় তো ভোর হয়ে এলো। এবার একটু ঘুমাও।
—- নাহ। ঘুৃম আসছে না। আমার এই একাকি জীবনে ঘুমটাই ছিলো। সেও আস্তে আস্তে আমার সাথে বিট্রে করা শুরু করেছে।
—– শরীর তো খারাপ করবে।
—— করবে না। সয়ে গেছে।
—— সারা জীবন কি এভাবেই থাকবে?
—– জীবন তো চলেই গেলো দেখতে দেখতে। আর ত মাত্র কটা বছর!
——-তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
—— পেয়ো না। কষ্ট যে জানালা দিয়ে ঢুকবে, সেটা বন্ধ করে দাও। ঢুকতে দিও না।
—–আচ্ছা, তোমার প্রিয় কবিতাটা একবার আবৃত্তি করে শোনাবে?
—–একটা সময় কবিতাটা বুকে ধারণ করতাম। এখন করি না। আবৃত্তি ভালো হবে না।
—– শোনাবে না?
—– নাহ।
—— আমার কষ্ট তো বাড়ছে?
—— কষ্টের রেগুলেটরটা ঘুরিয়ে শূণ্যে নিয়ে এসো। আর কষ্ট পাবে না।
—— এভাবে বলো না।
—— আচ্ছা বলবো না। ভোর হয়ে গেছে। বাইরে পাখির কিচির মিচির শুনতে পাচ্ছো? কি অদ্ভুত সুন্দর, তাই না?আমি একটু ছাদে গেলাম, ভোর দেখবো। তুমি ঘুমিয়ে পরো, তোমার তো অফিস আছে আবার। এখন রাখলাম, কেমন?
—–শোন না, আরেকটু কথা বলি।
—–আরো কথা বলবে?এত কষ্টের ওজন কি নিতে পারবে আমার মতো!
—- না। তোমার মতোন পারবো না। এত ওজন নেয়ার মত আমার শক্তি নেই।
—- ভালো বলেছো। আচ্ছা, তুমিও ছাদে এসো। দুজন দু’জায়গায় এক সাথে ভোর দেখি।
—- বাহ। কি সুন্দর একটা ভোর। ধন্যবাদ তোমায়। অনেকদিন এমন অপরূপ ভোর দেখি না।
—- এই তো কিছুদিন আগ পর্যন্ত ভোর ভালো লাগে নি। পাখির কিচির মিচির শব্দ কে বড্ড অপছন্দ করতাম।
আর এখন এসবই জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। শুধু একজনকে ছাড়া।
—– তুমি কি তাকে ক্ষমা করতে পেরেছো?
—– আমার কারও প্রতি কোন অভিযোগ কিংবা ক্ষোভ নেই। কপালে যা লিখা তা পরিবর্তন করার সাধ্য কখনো ছিলো না আমার। দুঃস্বপ্ন ভেবে ভালোবাসাটাকে পাথরচাপা দিয়ে ফেলেছি বহু আগেই।
—– ওসব আর মনে করিয়ে দিও না। সব ভেঙেচুরে তোমার কাছে ফিরে যাওয়ার মতো সাহস আমার ছিলো না।ভয়ের কাছে আমি হেরে গেছি, আমার ভালোবাসা হেরে গেছে।
—– ভালোবাসা কি সত্যিই হারে? যদি সেটা সত্যিকারের হয়!
—– হয়তো হ্যাঁ, হয়তোবা না।
—– তোমার সাথে আজই আমার শেষ কথা।তোমার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি আজ রাতেই। চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।কথা শেষ হওয়ার পরই সিমটাও খুলে ফেলবো। আমি একাই এখন থেকে কষ্টের সাগরে না হয় নিমজ্জিত থাকি।
—– কি বললে? কোথায় যাচ্ছো?
—– জিগ্যেস করো না। বলতে পারবো না।
—– আমাদের কি আর কথা হবে না?
—— না। জীবনের বাকি সময়টুকু ঠিক করেছি একাই কাটাবো। কাউকে আর মায়ার বাঁধনে জড়াবো না। ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে আর বৃথা ছুটবো না।ভালো থেকো তুমি।
কথা না বাড়িয়ে ফোনের লাইনটা কেটে দিলো সৌরভ।
সিম খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো বাড়ির পাশের ডোবাটায়।
কষ্ট হচ্ছে খুব কিন্তু ভারমুক্ত লাগছে নিজেকে।
আজ সে মুক্ত, তার ভালোবাসাটাকেও মুক্ত করে দিলো।
ওদিকটায় কি হলো তা আর জানা যায় নি।
৮টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
পরে আসছি মন্তব্যে……প্রথম হয়ে গেলাম আপাতত।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভালোবাসা অবিরাম। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
আগের পোস্ট থেকে পরবর্তী পোস্ট দেয়ার অপেক্ষামান সময়ের ব্যবধান মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা। সুপ্রিয় ব্লগার অনুগ্রহ করে ব্লগের নীতিমালা অনুসরণ করে পোস্ট প্রকাশিত করুন৷
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ভুলে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ
দালান জাহান
উপভোগ করলাম
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো
হালিমা আক্তার
ভালোবাসা থেকে চাইলেই কি মুক্তি পাওয়া যায়। খুব সুন্দর লিখেছেন। একথা সত্যি কপালের লিখন খন্ডন করা যায় না। শুভ রাত্রি।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো