ছেলেটি মৃত্যুশয্যায়। শেষবারের মত দেখতে এলো মেয়েটি।খুব সুন্দর করে সেজেগুজে, সেই বাসন্তী রং এর শাড়িটি পড়ে।ছেলেটির দেয়া শেষ উপহার।
ছেলে- কেমন আছ?
মেয়ে- ভালো। তুমি?
ছেলে (একটু হেসে)- মৃত্যুশয্যায় থেকে কি করে বলবো যে ভাল আছি? মরি নি এখনো, এটাই বলতে পারি। তোমাকে কিন্তু বড্ড সুন্দর লাগছে। তোমার গায়ের রং এর সাথে বাসন্তী রংটা খুব যায়।
মেয়ে- মিথ্যে বলছো?
ছেলে- মরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কি মিথ্যে বলা যায়?
মেয়ে (প্রচন্ড রেগে) যাক হয়েছে। বারবার মরণের কথা কেন বলো? এত মরার শখ কেন তোমার!
কিছুক্ষণ চুপচাপ। নিস্তব্ধতা ভাঙলো মেয়েটি।
মেয়ে- শাড়িটা চিনতে পারছো?
ছেলে- নাহ। আমি তো পুরুষ মানুষ। শাড়ির কথা মনে রেখে কি লাভ! (অট্টহাসি)
মেয়ে- সবসময় ঢং করো না। সত্যি বলো।
ছেলে- ইদানিং স্মৃতিশক্তি কোমায় গেছে। কিছুই মনে থাকে না আমার। মনে হচ্ছে প্রচুর মধু খেতে হবে। এই, আমাকে মধু কিনে দিও তো। (আবারো অট্টহাসি)
মেয়ে (অভিমানের স্বরে)- থাক। তোমাকে বলতে হবে না।
ছেলে- বলো না লক্ষিটি। আমার সত্যিই মনে নেই।
মেয়ে- গত বছর আমার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলে। বলেছিলে, এটা পড়ে তোমার সাথে সারাদিন রিক্সায় ঘুরবার কথা ছিলো কোন এক দিন।
ছেলে- সেই কোন একদিন আর আসবে না এ জন্মে। পরের জন্মে তোমাকে নিয়ে খুব ঘুরবো।
মেয়ে- এভাবে বলো না। আমার কষ্ট হয়।জানোইতো, আমার কান্না পায় কম, কষ্টে বুক ফেটে গেলেও। এতে কষ্টের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।
ছেলে- আর তো মাত্র কটা দিন আমাকে সহ্য করবে হয়তো। এর পর তো আর কোন কষ্টই নেই তোমার। শোন, আমি মরে গেলে তুমি বিয়ে থা করে সংসারী হবে কিন্তু! তা না হলে ভুত হয়ে তোমার ঘাড় মটকে দেবো… আবারো অট্টহাসি।
মেয়ে – আমি আর আসবো না তোমাকে দেখতে। তুমি বড্ড খারাপ।
বলে একটু পা বাড়াতেই ছেলের আকুতি…
ছেলে- যেয়ো না। আজ সকাল থেকেই বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি আসার পরই মনে হলো যে সব ঠিক হয়ে গেছে। চলে গেলে যদি নিঃশ্বাসটা আবার আমার সাথে খেলতে শুরু করে…
মেয়েটি পেছনে ফিরেই দেখলো ছেলেটির চোখ রক্ত বর্ণ হয়ে আছে। চোখ ঠিকরে যেন তার সকল কষ্ট বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে সে ছেলেটির বুকে আছড়ে পড়লো।
ছেলে- কাঁদবে না। কাঁদার কি আছে! সবাই তো আর বাঁচে না। আমি না হয় একটু আগেই চলে গেলাম।
মেয়ে- তুমি এত নিষ্ঠুর কেন।আমাকে একা ফেলে গেলে তোমার খবর আছে।
ছেলে- বোকা মেয়ে। তোমার কত সুন্দর জীবন সামনে পড়ে আছে তুমি জানো? বিয়ে করবে, সুন্দর সুন্দর বাবু হবে, জামাই নিয়ে ঘুরবে দেশ বিদেশ। জীবনটা অনেক সুন্দর।আগামী পরশুই তো তোমার বিয়ে তাই না।
মেয়ে- আমি পারবো না ওই বিয়ে করতে। তোমাকে ছাড়া আমি আর কাউকে নিজের করতে দেবো না।আমি শুধু তোমার, শুধুই তোমার।
ছেলে- দূরু বোকা। তুমি তো আমারই। আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরোতো। নিঃশ্বাসটা হয়তো এতে ভয়েই আমার মাঝে আটকে থাকবে।খুব জোরে ধরতে হবে কিন্তু।
মেয়েটি খুব শক্ত করে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ ছেলেটি খুব জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিলো।মেয়েটি অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলেটিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
৬টি মন্তব্য
শামীনুল হক হীরা
এক কথায় চমৎকার।।শুভকামনা সতত সম্মানিত প্রিয়।।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভালোবাসা অবিরাম।
হালিমা আক্তার
চমৎকার কথোপকথন।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভালোবাসা অবিরাম।
নার্গিস রশিদ
খুব ভালো লাগলো ।শুভ কামনা।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভালোবাসা অবিরাম।