
আমরা পাশাপাশি বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছি। সাগর থেকে উতলা করা প্রেম প্রেম বাতাস এসে আমার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। তোমার এতো মনোযোগ আমাতে, নাকি বাতাসের সাথে শত্রুতা? যতোবারই মুখে এসে চুল পড়ছে তুমি সরিয়ে দিচ্ছো।
আমি বাতাসের কাছে আবেদন করি, অনুগ্রহ করো, বারবার এসে ঝাপটে পড়, উড়িয়ে দাও আমার চুল। আর সামনে বসা মানুষটি তা বারবার সরিয়ে দিক। কেবলই মনে হতে থাকে, আজীবন তোমার সাথেই এভাবেই যেন আমি পাশাপাশি থাকি।
এসময়ের তোমার কামুক, প্রেমময় দৃষ্টি , যা আমাকে ক্ষত- বিক্ষত করছে। তোমার শার্টের দুটো বোতামও খোলা। হাল্কা লোমশ বুক দেখা যায়। আমি ভেতরে ভেতরে কেমন অবশ হতে থাকি। নিজেকে তোমাতে বিসর্জন দেবার আকুল আবেদন মনে মনে।
তুমিও যেমন, শাড়ী তোমার বড়ই অসহ্য। আর তা নাকি আমার বুকে একেবারেই বেমানান।
আমি জানি, ও তোমার নেহাত অজুহাত। বুকে চুমু দেবার পূর্বাভাস।
অতপর দিলাম শাড়ীর বিসর্জন। তুমিই পাগল, কি পাও এমন করে? ভালোবাসা ছাড়া এমন করে পাগল হওয়া যায়?
নির্জনতা বারবার আমাকে হুমকি দেয়, স্বাগতা, এটাই তোমার সময়, তুমি তাকে মনের কথা বলে ফেলো। এমন সময় সত্যিকার প্রেমিক, ভালোবেসে থাকলে, না বলতে পারেনা।
তাই আমি নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে তোমাকে বলেই ফেললাম, সৈকত আমি তোমাকে ভালোবাসি, বিয়ে করে সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই।
আমার বুক থেকে এক ঝটকায় তুমি সরে এলে। রেগে যাবার কি হলো বুঝলাম না? তুমি ভীষন রেগে গেলে। এবং বললে, আমাদের মাঝে তো বিয়ে সম্পর্কিত কোন কমিটমেন্ট হয়নি। আমি এসব কোথা থেকে পেলাম। এতো বেশি প্রত্যাশা আমার করা ঠিক না। দুজন অবসরে ঘুরছি, সময় দিচ্ছি এরচেয়ে আমি তোমার কাছে আর বেশি কিছু আশা করতে পারি না।
আমি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমার সাথে আর কোন সম্পর্কই রাখবে না। আমার বেশ কিছু বদ- অভ্যাসও আছে। আমি অসভ্য। রেগে গেলে অকথ্য ভাষায় তোমাকে গালিগালাজ করি। এ পর্যন্ত ‘চ’ দিয়ে যতো গালিগালাজ আছে সব দিয়ে ফেলেছি। তোমার সম্মানে লেগেছে! তবুও তুমি মেনে নিয়ে চলছো।
আমাদের মাঝে আসলেই কোন কমিটমেন্ট হয়নি? এই কমিটমেন্ট ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢোকে না। এটা কেমন করে, কি কি কাজে আসে আর কিভাবেই বা তা যায়।
আমি ভালো করেই বুঝে গেলাম, আমি বয়সে তোমার থেকে দুবছরের বড় আর ডিভোর্সী। তাই আমার মতো মেয়ের সাথে শুধু শারীরিক হওয়া যায়। কিন্তু মন দেয়া নেয়া কিংবা বিয়ে পর্যন্ত যাওয়া কখনোই কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা তোমার তা হলো, তোমার প্রেমে পড়ার মতো আমার সাথে কিছু তুমি করোনি? দুজন এডাল্ট মানুষ নিজের ইচ্ছায় এতটুকু করাকে প্রয়োজন বলা যায়, প্রেম বলা যায় না।
আমি অবাক বিস্ময়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। এতো সমস্যা আমার? তবুও তুমি আমাকে সাথে না নিয়ে টুরে আসবেই না। সম্মানে লেগেছে এমন ব্যাপার করে ফেলার পরও দিব্যি আমার সাথে সাগরের বাতাস খাচ্ছ।
আমি ডিভোর্সী, তাই আমার সাথে শুধু শরীর মেলানো যায়? মন মেলানো যায় না, ভালোবাসা কিংবা প্রেমে পড়া
যায় না? আসলেই তো, আমি তোমার প্রেমে কেন পড়লাম?
সেবারও তোমার অফিস টুরে আমাকে সাথে না নিলে তোমার চলবেই না। আমার অনেক কাজ, ছুটি নেই তবুও
তোমার জেদ, টুরে যাবার আগে তোমাকে সাথে না পাই, তারপর দেখো কি করি?
আমি ভাবলাম, এতো অধিকার? কাছের কেউই এভাবে বলে? বাধ্য হলাম, পরাস্ত হলাম তোমার জেদের কাছে। আর ভাবলাম যদি না করে দেই। তুমি রাগ করে আর কোন যোগাযোগই না রাখ? তাহলে কি হবে আমার?
তাছাড়া আমার ডিভোর্স হবার পর তুমিই আমাকে সব থেকে বেশি সময় দিয়েছ। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে সময় দিয়েছ, বুঝিয়েছ। এও বলেছ, মানুষের জীবনে ভুল মানুষ আসে। ভুল হতেই পারে। সেগুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে চলাই জীবন।
সেই তোমার কথার কথায় আমার মনে তোমার জন্য থৈ থৈ প্রেম। আমি কেমন যেন ওঁত পেতে থাকতাম তোমার ভালোবাসা পাবার আশায়। কখন মরা নদীতে সরু বেনীর মতো এঁকেবেঁকে তোমার প্রেম এসে ঢোকে। হতে পারে আমাকে ট্যুরে সাথে নেয়াটা তোমার প্রেমের লক্ষন!
আর হোটেল রুমে তোমার সেই সব কাজ, আমার জন্য এক্সাইটমেন্ট আর কেয়ারিং ব্যাপার- স্যাপার একজন প্রেমিকই কেবল করে।
সাত- সকালে ঘুম না ভাঙ্গতেই আমার জন্য গুড মর্নিং কফি!
আর আমি; ব্রাশ ছাড়া কফি খাবো কেমন করে?তাড়াহুড়োয় যে ব্রাশ নিতে ভুলেই গেছি।
তুমি অবলীলায় বললে, অতোসকালে দোকান- পাট তো খোলেনি। সমস্যা নেই, আমার ব্রাশ দিয়েই ব্রাশ করে ফেলো।
কি আশ্চর্য! কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন খেলছিলাম। এমনও হয়? সিনেমায় হয় হয়তো কিন্তু আমার সামনে তো বাস্তব! আমি মুহুর্তে শাওয়ারের পানির মতো তোমার কথায় ভিজে গেলাম, হাবুডুবু প্রেমে নিজেকে ভিজিয়ে ফেললাম। রীতিমতো শিহরিত হচ্ছি, ওগো, ভালো না বাসলে তাঁকে কেউ নিজের ব্রাশ দেয়? তাছাড়া শুনেছি প্রেমাস্পদ যুগলরাই এক ব্রাশে দাঁত মাজে। আমরা কি এমন যুগল হতে যাচ্ছি? হবে নিশ্চয়ই!
-সারাদিন একা একা কি করবো হোটেল রুমে?
আমার আদুরে আবদারের উত্তরে বললে, বিদায়ে তোমার জড়িয়ে ধরা, আর থাকবে গায়ে লেগে থাকা স্প্রের গন্ধ, গালে- গাল ঘসা আর ঠোঁটের অজস্র চুমুই আমার সারাদিনের সঙ্গী।
আমি তোমার এসব কথার প্রেমে থৈ থৈ করতে থাকি। কেমন করে বলো? আমি তোমার কথা শোনার অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে থাকি। দুপুরের তোমার সামান্য ফোন, ঠিকঠাক সময় মেপে দুপুরের খাবার খেয়েছি কিনা, শাওয়ার হয়েছে কিনা? এমন খবর নেয়া গলার শাসনের সুর আমার বড্ড ভালো লাগে। আমাকে ভেতর থেকে শীত শীত অনুভূতি দেয়, কাঁপিয়ে তোলে ভেতরে ভেতরে। আমি কিচ্ছু খুঁজে পাই না অবশেষে তোমার প্রেমের চাদরে নিজেকে ওম দিতে থাকি।
অচেনা শহরে, সন্ধ্যায় রাস্তায় হাত ধরে উদ্দেশ্যহীন হাঁটা- হাঁটিতে আমি তাকিয়ে থাকি তোমার হাতের দিকে। চিকন, লম্বা আঙ্গুল গুলো কিভাবে আমার আঙ্গুলে খেলা করে। উল্টে- পাল্টে চেপে ধরে আমার হাত। কেউ বোঝে না শুধু আমি বুঝি।
এমন হাতের গোপন খেলা, আমার কাছে শতবার ভালোবাসি বলার থেকেও শক্তিশালী বলে মনে হয়। বিশ্বাস করতে চাই না এমন করে ধরা হাতও কোনদিন আলগা হয়! স্বাধ হয় সারাজীবন এমন করে হাঁটার।
আমি সারাদিন তোমাকে কাছে না পেয়ে রিকসায় উঠতে উঠতে বলি, আমার একদম ভালোলাগছে না। সারাদিনই লাগেনি।
তোমার চটপট উত্তর, আমি ঠিকঠাক সময় দিচ্ছি না তাই? আজকের সন্ধ্যা তোমার নামে বিলীন হলো, তুমি তাঁকে যেমন করে পারো আমার সাথে উপভোগ করো।
এরপর আমি তোমার হাত শক্ত করে ধরে রিকসায় ঘুরতে থাকি। সমস্ত ওম শুষে নিতে নিতে কেবলই মনে হয়, তুমি কেবল আমারী।
এতোকিছুর পরও, সাক্ষী যখন নিজে আততায়ী হয় তখন আর কিছু করার থাকে না। আমিও আততায়ী হলাম ‘প্রেমের আততায়ী’। আর তাতে তুমি অস্বীকার করলে আর কিইবা করার আছে আমার বলো?
এতোক্ষন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে, অথচ আমার বুকে আঁচল নেই। নিজের মানুষের কাছে আবার আঁচলে ঢাকা ঢাকির কি আছে বলেই এতোকাল ভাবতাম। আজ দেখছি আমার মন মন্দিরে তোমাকে বসানো অপরাধ হয়েছে। কারন আমি একজন ডিভোর্সী, ভালোবাসা- বাসী আমাতে হয় না।
কিন্তু শরীর সেতো বহুবার অন্য কারও খেলার পাত্র হয়েও ডিভোর্সী খেতাব পেয়েছে। এখন একজন তুমি ভাবছো এ আর এমন কি? যে শরীর পূর্বে ব্যবহার হয় তাকে পুজো দেবার কিছু নেই! তাই তুমিও ব্যবহার করলে।
শিক্ষা থেকেই শেখা। আমি আমার বুকের আচঁল তুলে ঠিকঠাক করে নিলাম। শুধু মন কেন পুজনীয় হবে, শরীরও পুজনীয়। সুতরাং আর তাকে যেখানে সেখানে উদোম করা যাবে না। আর ভন্ড পুজারীর কাছে তো কখনোই না।
ছবি – নেটের।
১৭টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
পাঁজরের ক’খানা হাড় জানে কতটা আঘাতে কতটুকু ভাঙে! ভালাবাসা না প্রেম! এর ভুল ব্যাখ্যা আজও নারী জীবন দিয়ে গোণে। নিজেকে পুড়িয়ে, ছাই করে তবু বলে- ভালই তো বেসেছি আমি, ভুল কি করে ভাবি?
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রথম মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।। আঘাতের হিসেব শুধু সেই জানে । মন জানে।।শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইলো আপু।।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি গল্প পড়লাম, ভোগ করতে সমস্যা নাই কিন্তু স্থায়ী সমপর্কে গেলেই রে রে রে এটা সমাজ মানবেনা। সেটা বড় কথা বড় কথা হচ্ছে পাচ্ছি খাচ্ছি কিন্তু স্থায়ীসম্পদে আনবনা। আসলেই কে কি বোঝে জানিনা। লিখা অসম্ভব ভালো লাগলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে পাচ্ছি খাচ্ছি কিন্তু স্থায়ীসম্পদে আনবনা। আর আমিও বলি মেয়েরা লোভে বা স্থায়ী সম্পর্কে যাওয়ার পুর্বে কেন শরীরের খেলায় ভ্রমণ করে বুঝিনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এখানে মেয়েদের জন্য ম্যাসেজ হলো- নিজেদের সস্তা করে তোলা যাবেনা । কখনোই না। অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই।।
মোঃ মজিবর রহমান
সহমত।
খাদিজাতুল কুবরা
চমৎকার একটি গল্প পড়লাম, প্রেমপর্ব ও ঠিকঠাক ভাব প্রকাশ করেছে আবার প্রতারণা, বিরহ ও স্বরুপ সুচারুরুপে প্রকাশ পেয়েছে। গল্পটা এখানেই স্বার্থক।
আসলে গল্প হলেও সমাজের চরম বাস্তবতা। দ্যাখো যারা পতিতাকে পতিতা বলে ঘৃণা ছুঁড়ে দেয় তাদের হাতেই পতিতা হাতে খড়ি পায়।
তেনারা ধরে মাছ না ছোঁয় পানি। কত সাধু আছে এই বঙ্গদেশে তা মধ্যরাতে একা বেরুলেই বোঝা যাবে।
তাই এটা বলার সময় এসেছে সাধু সাবধান!
রোকসানা খন্দকার রুকু
চমৎকার শব্দটির জন্য বারবার লিখতে বসে যাই। পাশে থাকো।।
হালিমা আক্তার
কি চমৎকার গল্প। এক নিমিষেই পড়ে নিলাম। আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। ভোগের আশায় মত্ত হই। অধিকার চাইলে সাধু হই। নারী যেন পুরুষের রঙ্গশালার বন্দি পাখি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নারীর আর অধিকার কি ??? ধন্যবাদ হালিমা আপা।।
ছাইরাছ হেলাল
সুন্দর শিরোনামের গল্প পড়ে আনন্দিত হচ্ছি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমিও মন্তব্য পেয়ে আনন্দিত। শুভ কামনা অশেষ।।
মনিরুজ্জামান অনিক
আমি যখন কোন কিছু পড়ে স্তব্ধ হয়ে যাই,
তখন শুধুই চুপ থাকি।
আজও তাই… চুপ হলাম।
এতোসুন্দর লেখায় আমার পক্ষে মন্তব্য করা অসম্ভব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাই। পাশে থাকুন।।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভোগ যেখানে মুখ্য ভণ্ডামি সেখানেই বিদ্যমান।
নারী পুরুষ উভয়েরই উচিত এরুপ ভন্ড পূজারী/পূজারিণীর নৈকট্য ত্যাগ করা।
চমৎকার গল্প একটা গল্প পড়লাম।
শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।