
“জিন্দেগী বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি বাবুমশাই…” এটি ‘নীরজা’ মুভির একটি পপুলার ডায়ালোগ।
আসলেই, অর্থহীন বহু বছর বেঁচে থাকার চেয়ে কারও জন্য কিছু করে গিয়ে অল্প সময় বেঁচে থেকে স্বরনীয় হয়ে যাওয়াটাই জিন্দেগী। যদিও আমরা সেটা করতে পারিনা কিংবা মানসিকতা রাখিনা। আমরা কম্পিটিশন পছন্দ করি।
হিংসা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের যুগে, মনুষ্যত্বের বড্ড অভাব। জব স্পিরিট বা পেশাগত আবেগ খুব কম মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আজকাল নিজে বাঁচলেই যেন বাপের নাম। এতোকিছুর ভীরে তবুও কেউ কেউ মহান ও নিবেদিতপ্রাণ। তাই তারা কখনও মরেন না। এমনি কদিন আগে আমাদের এক পাইলট নিজের কথা না ভেবে হার্ট এ্যাটাকে মারা গিয়েও শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে দিয়ে গেছেন ১২৪ আরোহীকে। আমরা তাঁকে সারাজীবন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবো এবং তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।
১৯৮৬ সালে প্যান অ্যাম ফ্লাইট-৭৩কে হাইজ্যাক করা হয়েছিল। হাইজ্যাক হওয়া প্যান অ্যাম ফ্লাইট-৭৩ এর ৩৮০ জন যাত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ২৩ বছরের বিমানসেবিকা ” নীরজা ভানোট”। আমার আজকের এ মুভিটি তাঁরই বায়োপিক। কদিন আগে এই মহান মানুষটির জন্মদিনও ছিলো। ২০০৪ সালে অসম সাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারতীয় ডাকবিভাগ।
বাংলাদেশে বায়োপিক অনেক কম। চাইলেই ভালো ভালো অনেক বায়োপিক তৈরি করা যায়। কেন যেন হয়না। তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সম্প্রতি বায়োপিক তৈরি হতে যাচ্ছে। দেখা যাক আরেফিন শুভ ও পরিচালক কি দেয় আমাদের।
ছবির মুখ্য তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর, শাবানা আজমি এবং যোগেন্দ্র টিকু।
সোনম কাপুর বরাবরই ইনোসেন্ট, তাই চরিত্রের সাথে মানিয়ে গিয়ে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তা মুভিটি দেখলেই বোঝা যাবে।
ঘটনা যেমন হয় তেমনি। বাবা- মায়ের আদরের ‘নীরজা‘ আবেগী, নিজের মনের কথা শুনেই চলে। মডেলিং তার ভালো লাগে। তবুও মেয়েদের আব্রুতা যেহেতু বিয়ে। তাই পরিবার থেকে তাঁকেও বিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু স্বামী একটা হীন চরিতার্থের লোক। তবুও নীরজা কাপুরুষ, মেরুদণ্ডহীন, লোভী স্বামীকে ছেড়ে চলে এসে স্বাধীনভাবে বাঁচার কথা ভাবেনা। যে কোন মূল্যে সংসার টিকিয়ে রাখার চেস্টায় একসময় ব্যর্থ হয়। অবশেষে তাঁকে স্বামীর সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হতে হয়!
তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের বিষয় ছিলো বিমানসেবিকা। এবং সে চাকুরী নেয় বিমানসেবিকা হিসেবে। বিয়ের আগে থেকেই তাঁর জন্য এক পাগল প্রেমিক অপেক্ষায় ছিলো। আজও তার দেয়া চিঠি বুকে নিয়ে এখন তাঁর শুধুই উড়বার পালা। কিন্তু নীরজা থেমে গেলো মাত্র ২৩ বছর বয়সেই। কাউকে দেয়া কথা, মায়ের ভালোবাসা, বাবার ভালোবাসা সব উপেক্ষা করে রোমহর্ষক কিছু ঘন্টার যুদ্ধে অনেকগুলো প্রান বাঁচিয়ে সে বেঁচে রইলো আজীবন। মুভিতে প্লেনের ভেতরের এটাক হওয়া কয়েকঘন্টাকে পরিচালক ও সোনম কাপুর নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন যে এক নি:শ্বাসেই দেখে ফেলা যায়। ভয়ংকর ও অস্ত্রধারী এট্যাকারদের সাথে টক্করদিয়ে নিজেদের বাচিয়ে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়।
আমরা আজও জাতিতত্ব ভুলতে পারিনা। অথচ জীবন দেবার আগে ‘নীরজা’একবারও ভাবেনি প্লেনে কে ভারতীয়, কে আমেরিকাবাসী, কে পাকিস্তানী, কে ব্রিটিশ। সবাইকে সমানভাবে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। একবারও ভাবেনি এর জন্য কী দাম দিতে হবে তাঁকে।
যে কোন ঘটনা বললে হয়তো এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায় কিন্তু কোন দূর্ঘটনায় যাঁরা সাক্ষী থাকে শুধু তাঁরাই জানে এমন অবস্থায় কতোটা সংগ্রাম ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়।
সবশেষে এটুকুই বলবো, ‘নীরজা’ আবেগঘন, অণুপ্রাণিত করা একটি ছবি। হয়তো নিখুঁত নয়, তবুও চোখে লেগে থাকবে শুধুই আবেগ, সম্মান। দু চোখ ভরা অশ্রুতেই হবে নীরজার স্মৃতিচারন। মুভি লিঙ্ক
Sonam Kapoor, Shabana Azmi, Yogendra Tikku, Shekhar Ravjiani
Director: Ram Madhvani
১৫টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
ছবিটি একটি বিমান হাইজ্যাকমুলক ।।ছবির প্রতিটি মুহুর্তে ছিলো কী জানি কী হয় এমন একটি ব্যাপার। মুভি রিভিউ ভাল হয়েছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
যারা সংগ্রামী ও তাঁরাই নিবেদিত প্রাণ। তাঁরাই দিতেই জানে প্রাণ। মানুষের কল্যাণে। সুন্দর মুভি রিভিউ। শুভব্লগিং।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিবেদিত মানুষের সংখ্যা কম। ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু, রবীন্দ্রনাথের একটি লেখায় পড়েছিলাম পৃথীবির ১৫% লোক কর্মট বা কাজ করে বাকী তাঁদের পিছনে চলে।
আলমগীর সরকার লিটন
ছবিটা দেখার ইচ্ছা আছে আপু সময় করে দেখব
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা ভাই দেখে নিয়েন। শুভ কামনা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমাদের জাতিগত বৈষম্যের বিষয়ে আপনার মন্তব্য খুবই প্রণিধানযোগ্য — আমরা আজও জাতিতত্ব ভুলতে পারিনা। অথচ জীবন দেবার আগে ‘নীরজা’একবারও ভাবেনি প্লেনে কে ভারতীয়, কে আমেরিকাবাসী, কে পাকিস্তানী, কে ব্রিটিশ। সবাইকে সমানভাবে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। একবারও ভাবেনি এর জন্য কী দাম দিতে হবে তাঁকে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো আপু।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সুন্দর রিভিউ করেছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
সময় পেলে দেখে নিতে হবে, বুঝতে পারছি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
যে যতদিন যেভাবে বেঁচে থাকবো কষ্টকে আড়াল করে চলা ছাড়া আর উপায় কি আছে। সকল চেষ্টাই স্বাভাবিক হবার।
হালিমা আক্তার
খুব সুন্দর রিভিউ। ছবিটি দেখেছিলাম। চমৎকার ছবি। শুভ কামনা রইলো।