আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা কোচিং সেন্টার নির্ভর হয়ে পড়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে স্কুলে কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি গৃহ-শিক্ষকদের মাধ্যমে নিজেদের লেখাপড়া শেখা বা বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুব জরুরী। অনেক স্কুলে, কলেজে, ক্লাসে শিক্ষকরা লেখাপড়া ঠিকভাবে বুঝিয়ে পড়ান না। আবার অনেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে তা ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে না শুনার কারণে অথবা লেখাপড়ায় বা মেধায় দুর্বলের কারণে তাঁদের পক্ষে তা সঠিকভাবে গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। পাশাপাশি এমন অনেক নামী দামী স্কুল আছে যারা শুধু সিলেবাসটাই শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। সিলেবাস শেষ করার দায়-দায়িত্ব শিক্ষক মণ্ডলীর নয় যেন তা শুধু শিক্ষার্থীদেরই। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার পাবলিক পরীক্ষায় সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়। কারণ একটাই এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা নিজেদের মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে ভালো ফলাফল করে থাকে। পরীক্ষায় শুধু পাশ করা নয় পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করাটাও যে খুব জরুরী সে বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা রাখা অতীব জরুরী।
সব বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক রাখাটা অভিভাবকের জন্য খুব ব্যয়বহুল এবং সাধ্যের বাইরে। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলো বিভিন্ন রকম চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে লোভের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে শিক্ষক রাখার পরিবর্তে কোচিং সেন্টারমুখী করে তুলছে। সবচেয়ে বড় কথা বেশিরভাগ শিক্ষক এখন লাভজনক কোচিং সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় আমাদের ডাক্তার সাহেবদের মতো তাঁদের মনোনীত কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার জন্য চাপ দেয় বা সুপারিশ করে। কোভিডের আগে আগে চকবাজারের গুলজার টাওয়ারে গিয়ে আমি নিজেই হতবাক হয়ে গেছি। মার্কেটের ৩ তলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের কমপক্ষে ২০০ টির উপরে কোচিং সেন্টার আছে। এবং প্রতিটি ফ্লোরেই ছাত্র ছাত্রীরা গিজগিজ করছে এটা যেন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর পুরো চট্টগ্রামে যে কত হাজার হাজার কোচিং সেন্টার রয়েছে সেকথা আর নাইবা বললাম।
আমরা এখন সবকিছুতেই মুনাফা খুঁজি। শিক্ষা কেন বাদ যাবে। তার মানে এই নয় যে আমাদের পুরো শিক্ষক সমাজ কোচিং ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের কথা পরিষ্কার— আপনারা কোচিং সেন্টার চালান ব্যবসা করেন মুনাফা করেন। কিন্তু শিক্ষক সমাজের যে ব্যাক্তি পরিবার সমাজ এবং দেশের প্রতি জ্ঞান বিতরণের একটা দায় বা অঙ্গীকার রয়েছে সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। ভুলে গেলে চলবে শিক্ষকতা একটা অতি মহৎ পেশা। আপনারা শুধু পরীক্ষায় পাশের, সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য শিক্ষা দেন না। পাশাপাশি স্বশিক্ষিত হওয়ার, মানুষ হওয়ার, জ্ঞান অর্জনের শিক্ষাটাও দেন। দেন শিক্ষার্থীদের মানবিক নৈতিক শিক্ষাটাও। আমাদের শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় রীতি নীতি অনুশাসন শিক্ষা দেন যাতে করে ওরা ধর্মের নামে বিপথগামী না হয় বা মুক্তমনার নামে ধর্মকে কটাক্ষ করতে না পারে বা বেহায়াপনা না করে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর এই শিক্ষার কারিগর হচ্ছেন আপনারা মানে শিক্ষকরা। আপনারা আমাদের শ্রদ্ধার আস্থার ভরসার অনেক উঁচু আসনে অবস্থান করছেন। দয়া করে কিছু শিক্ষকের অতি লোভের কারণে আপনাদের সেই উচ্চ আসনকে মাটিতে নামিয়ে আনবেন না। আশা করি মাটিতে নামিয়ে আনতে দেবেন না ।
১৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
মেধা বিকাশের জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা বা শিক্ষকরা শিক্ষাদান করেন না।আমরা যেমন টিচারও তেমন।যত সর্টকাট সম্ভব তাই করি বা করছি।এখন যে লেখা হচ্ছে তা অনেকটা গাইড বা কোচিং সেন্টারগুলোর নোটের উপর নির্ভরশীল।আর যে পরিমান কোচিং সেন্টার দেশে সেই পরিমান ভালো শিক্ষক আছে বলে মনে হয় না।এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সমসাময়িক চমৎকার লেখা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভাইয়া আপনি গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন — “মেধা বিকাশের জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা বা শিক্ষকরা শিক্ষাদান করেন না।আমরা যেমন টিচারও তেমন।যত সর্টকাট সম্ভব তাই করি বা করছি”। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
আলমগীর সরকার লিটন
সময় উপযোগি বিষয়ে পোষ্ট করেছেন প্রিয় আলম দা অনেক শুভেচ্ছা রইল
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইয়া। সুস্থ আর ভালো থাকবেন।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
এটাই সত্য
আমরা সবকিছুতেই মুনাফা খুঁজি
তাই শিক্ষাকে জ্ঞানার্জন না ভেবে ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছি।
আন্তরিক শুভ কামনা রইল সতত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ — “আমরা সবকিছুতেই মুনাফা খুঁজি
তাই শিক্ষাকে জ্ঞানার্জন না ভেবে ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছি”।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনন্য অর্ণব
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন মুমুর্ষ অবস্থায় আছে। আগামী প্রজন্মের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে কি জবাব দেবেন সে প্রস্তুতি এখন থেকেই নেওয়া উচিত। আর কোচিং বানিজ্য অতি দ্রুত বন্ধ করা উচিত। কেননা এই কোচিং বানিজ্যের কারণে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়ার সুযোগ বিনষ্ট হয়। শিক্ষকরা ক্লাশে বিস্তারিত আলোচনা করে না। আর দুর্বল পরিবারের সন্তানরা টাকার অভাবে প্রাইভেট ভাবে পড়ে সেটা বুঝে নিতে পারেনা। তাই অচিরেই এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা দরকার।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার মতামত সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে। আপনি সঠিক বলেছেন — “কোচিং বানিজ্য অতি দ্রুত বন্ধ করা উচিত। কেননা এই কোচিং বানিজ্যের কারণে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়ার সুযোগ বিনষ্ট হয়। শিক্ষকরা ক্লাশে বিস্তারিত আলোচনা করে না। আর দুর্বল পরিবারের সন্তানরা টাকার অভাবে প্রাইভেট ভাবে পড়ে সেটা বুঝে নিতে পারেনা। তাই অচিরেই এই সিস্টেমের পরিবর্তন করা দরকার”।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আজ সবাই অর্থের পিছনে দৌড়াচ্ছে। একজন শিক্ষক এখন আদর্শ কোচিং টিচার বটে কিন্তু আদর্শ প্রতিষ্ঠানের আদর্শ শিক্ষক হতে চান না। একজন শিক্ষকই একজনই কোচিং মালিক/টিচার/ছাত্রের অবিভাবক।
তাই বিগত সময়ে কোচিং সেন্টার তুলে দেওয়ার সির্ধান্ত নিলে তারাই নিজ সন্তানকে একজন শিক্ষকই একজনই কোচিং মালিক/টিচার/ছাত্রের অবিভাবক কোচিং সেন্টার গুরুত্ আছে বলেই আন্দোলনে নামিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারকে এই ব্যবস্যা বন্ধ করতে না পারে তাঁর জন্য।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের দরকার। এবং সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আপনার গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার প্রতিও রইল শুভেচ্ছা ভাইসাব।
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে অবশ্যই, অনেক অনেক আশাবাদী কথা বার্তা ও শুনি,
কিন্তু বাস্তব প্রয়োগ দেখতে পাই না, নোট বই কিন্তু গাইড নামে চালু আছে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভাইয়া আপনার মুল্যবান মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। সম্ভবত সামনে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছি। যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা জরুরি হয়ে উঠেছে। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
খোঁজ নিলে দেখা যায় বেশির কোচিং সেন্টার গুলো চালায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অথবা ক্লাসটিচাররা। অনেক স্থানে বাচ্চা/অভিভাবকদের বাধ্য করা হয় স্কুলের বেতনের দ্বিগুণ/তিনগুণ বেশি মাসিক বেতন দিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য।
কোচিং সেন্টারের পড়াশোনা গুলো যদি ক্লাসরুমে দেয়া যেত!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু আপনার মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নার্গিস রশিদ
খুব ভালো একটা লেখা। পড়াশুনা গুলো যদি টিচাররা ক্লাসেই পড়িয়ে দিতেন তবে কোচিং সেন্টার এর দরকার হতনা। আর তা আকর্ষণীয় করার জন্য পড়ার পদ্ধতিও পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনি মূল্যবান এবং সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়েছেন। আসলে ক্লাসেই পড়াগুলো শিক্ষকদের পড়িয়ে দেয়া উচিৎ। শুভ কামনা রইলো আপা।