
সকাল- সকালে ঘুম থেকে উঠলাম প্রতিদিনের মতো। সৃষ্টিকর্তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম রান্না ঘরে। নাস্তা বানাবো, নাস্তায় গতকালের মেন্যু কি ছিলো মনে করতে পারছিলাম না। ইদানীং এই একটা সমস্যা হয়েছে, অনেক কিছু ভুলে যাই। ছোট কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোও এখন মনে থাকে না। ভাবছি এখন থেকে খুটিনাটি বিষয় গুলো কোথাও লিখে রাখতে হবে। যাইহোক পরোটা, ডিম ভাজা, গতরাতের বেঁচে যাওয়া তরকারি সব রেডি করলাম নাস্তার জন্য। সাথে এক মগ চা, এক গ্লাস দুধ।
দুধ বানানোর পর মনে পড়লো ছোট মেয়েটা বাসায় নেই, তার ছোট খালার বাড়ি বেড়াতে গেছে। মেঝ মেয়ে নাস্তায় চা, দুধ কিছুই খায় না। আর বড়জন এক কথার মানুষ, সে সকালে চা ছাড়া অন্য কোন মগ/গ্লাসে চুমুক দিবে না। তারমানে আজকের এই জিনিস আমাকেই খেতে(পান) হবে। মনটা দমে গেলো সকাল-সকাল!
সকালের একটু পর- নাস্তা খেতে খেতে মোবাইলটা হাতে নিলাম। ও মাই গড! ফোনে চার্জ ৫০% এর নীচে। রাতে চার্জ দেইনি। এখন দেয়া যাবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লোকেরা এলাকায় কাজ করছে সকলের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে। এর মধ্যে ফোনে মেসেজ এসেছে,
❝ শুভ সকাল, ভালো থেকো সারাক্ষণ ❞
মুখে হাসি প্রাণে বেদনা নিয়ে রিপ্লাই দিলাম ❝শুভ সকাল, আপনিও ভালো থাকুন ❞
এছাড়া উপায় ছিল না, সকাল-সকাল কাউকে কীভাবে বলি আমার মর্নিং গুড হয়নি, ক্যাম্নে হবে শুভ সকাল!
সকাল পেরিয়ে প্রায় দুপুর- এইবেলা এসে বসেছি জানালার ধারে। তিনদিন আগে এক আলুওয়ালাকে বলেছিলাম আশেপাশে পেয়াজ-রসুন ওয়ালাদের দেখলে যেন এদিকে পাঠিয়ে দেয়। সে আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি, তিনদিন পর নিজেই ভ্যানভর্তি পেয়াজ-রসুন নিয়ে হাজির। ঘরে পেয়াজ/রসুন থাকার পরেও কিছু কিনতে হলো, তার উৎসাহ ধরে রাখতে। বাড়িতে পেয়াজ রসুনের ঝাঁজ বাড়লে বাড়ুক আলুওয়ালার উৎসাহ কমানো যাবে না।
দুপুর- রান্নাবান্না শেষ করে এবার খাওয়াদাওয়ার পালা। মেয়েদের নিয়ে একসাথে খেতে বসি সব সময়। আজকে ব্যতিক্রম। ছোট মেয়ে তার ছোট খালার বাসায় বেড়াতে গেছে শনিবার। মেঝ মেয়ে কিছুক্ষণ আগে তার মেঝ খালার সাথে গেল ছোট খালার বাসায় তার ছোটবোনকে আনতে। অগত্যা দুই জন খেতে বসলাম। মা-মেয়ে একসাথে বসে অনেক আলোচনা, সমালোচনা করলাম তাদের লেখাপড়া নিয়ে, নিজেদের অবস্থা-অবস্থান, আত্মীয়দের, সমাজ, দেশ নিয়ে। ধনী গরীব বৈষম্য, বাড়িতে আসা উটকো বিড়াল, পাশের বাড়ির আংকেল-আন্টির টিকাভীতি,,, বাদ গেলো না কিছুই। মেয়ের সাথে আলাপচারিতায় বুঝলাম বড়মেয়ে আমার আসলেই বড় হচ্ছে, মনে-মানে।
আর মেয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলো আমি অনেক বাস্তববাদী মানুষ! (তার মুখ থেকে আগে কখনো শুনিনি) মেয়ের উন্মুক্ত প্রশংসা পেয়ে দুপুরটা ভালো-ই গেলো।
দুপুর-বিকেলের মাঝামাঝি- এবার কিছুটা অবসর। বিদ্যুৎ এখনো আসেনি। ফোন হাতে নিলাম, সকালের শুভাকাঙ্ক্ষীকে মেসেজ দিলাম, ❝শুভ বিকেল, ভালো থাকুন ❞ তারপর ফেসবুকে.মেসেঞ্জারে। (ডাটা অন করে)। ব্লগে ঘুরাঘুরি, ফেসবুকিং, মেসেজ আদানপ্রদাণে সময়টা বয়ে গেছে হুহু করে। এরমধ্যে কুরিয়ার থেকে ফোন এসেছিল, কিন্তু আজকে সেখানে যাবো না।
প্রায় সন্ধ্যা- শুভাকাঙ্ক্ষীর মেসেজ এসেছে, ❝তার বিকেলটা ভালো হয়নি❞ কিছু বললাম না। সময় ভালো না গেলে কেমন লাগে আমি জানি। সব সময় সান্ত্বনা দিয়ে কাজ হয় না। কিছুক্ষণ পার হোক। তারও ভালো সময় আসবে।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একটা কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম, কিছু একটা। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম কি নিয়ে লেখা যায়? হাবিজাবি চলবে? পরামর্শ দিলো যা খুশি লিখে ফেলুন। শুধু চিঠি বাদে। ( আমার চিঠিতে কমেন্ট দিতে গেলে তার নাকি হোচট লাগে!) হাহাহাহা,
চিঠির প্রসঙ্গে আসতেই একটা চিঠির কথা মনে পড়ে গেলো। অনেক বছর আগে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম। নাম-ধামহীন ঐ চিঠিতে ছিল ভালোবাসা!
কিছু প্রতিশ্রুতি। কিছু প্রেরণা আর কিছু অভিশাপ!
ওটা নিয়ে আরেকদিন লিখবো।
সবাইকে শুভ সন্ধ্যা 🌹🌹
* ছবি- আমার।
* গান– ইউটিউব থেকে।
২৩টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভালো মন্দ মিলে দিনটি ভালোই গেছে। আপু উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি —- “চিঠির প্রসঙ্গে আসতেই একটা চিঠির কথা মনে পড়ে গেলো। অনেক বছর আগে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম। নাম-ধামহীন ঐ চিঠিতে ছিল ভালোবাসা!
কিছু প্রতিশ্রুতি। কিছু প্রেরণা আর কিছু অভিশাপ!
ওটা নিয়ে আরেকদিন লিখবো”।
শুভ কামনা রইল।
সাবিনা ইয়াসমিন
হ্যা, দিনটি ভালো গেছে৷ আলহামদুলিল্লাহ।
কপি পেস্ট করে কমেন্ট না দেয়ার অনুরোধ রইলো।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জ্বি , মনে থাকবে।
শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
এমন করে কাটত যদি আমার সারাবেলা!
সাদাপাতায় ভরে দিতাম কালো হরফের ছায়া।
অনেক উঁচু দেউড়িতে মোর সকাল দুপুর বিকেল সন্ধা
একসমানই যায়।
বৈচিত্র বা একটু অন্যরকম কিছু যদি হতই এমন করে…. মুখটি বুজে রইতাম না আর লবনপানি গুণে……
সাবিনা ইয়াসমিন
সব সময় এমন করে কাটেনা। একেক দিন একেকরকম হয়।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
ভালু বাসার কথা শুনব সামনে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
এখনকার সময়গুলোই মনে হয় এরকমই। সকাল এভাবে শুরু হলেও রাত কেমন কাটলো তা জানা হলো না! মেয়েদের সাথে গল্পে নাকি ঘুমিয়ে?..
চিঠি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
এখানে শুধু সারাদিনের কথা, হয়তো কোনোদিন রাতের কথাও লিখবো।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
তিনদিন পরে এলেও রীতিমতো ব্যবসা বদল করে আসা সহজ কথা না। এখানে পেয়াজ অলাকে বেরসিক বলা যায় না। এরকম কজনই করতে পারে!
প্রিয় কারো মুখে নিজেকে আবিস্কার পরে হলেও দিন ভালোই কাটে। আর ভালুবাসাময় চিঠির অপেক্ষায় রইলাম-
এমন ভালোই থাকুন সবসময় এই কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এই এক সুবিধা। তারা পরিস্থিতি/প্রয়োজন বুঝে কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার কাছে লোকটাকে উদ্যমী মনে হয়েছিল।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
দিন যায় কথা থাকে। এভাবে স্মৃতি বিস্মৃতি নিয়েই জীবন। এখনকার বাচ্চারা অনেক বোঝে।
সবার জন্য শুভ কামনা।
শুভ সন্ধ্যা
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চারা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি বাস্তববাদী হয়। পারিবারিক পরিবেশ, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং উন্নত শিক্ষা তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
সামান্য শব্দ-বৈকল্য নিয়ে খুব সাদামাটা ডায়েরি। তবে এক্সেলেন্ট ছিল বড় মেয়ের সাথে আলাপটুকু,
আপনাকে প্রশংসা করেছে সেটি বাদে। শুভ সক্কাল/বিক্কাল/সন্দা এই গুলাইন মেকি।
তবে চিঠি যে লিখতে নিষেধ করেছে যে পূণ্যের কাজ করেছে। আপনার চিডি আসলেই চিডি!! চিডি!! অসহ্য সব ট্যাঁ ট্যাঁ !!
ধরে নিন এই লেখার রিভিউ দিলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
দৈনন্দিন ঘটনা গুলো নিয়ে কেউ ডায়েরির পাতায় কবিতা লেখে, কেউ শব্দ নিয়ে খেলা করে, আবার কেউ আমার মতো শুধু লিখে রাখে। শুনেছি মা আর সন্তানের মাঝে সৃষ্টিকর্তাও নাক গলায় না। সন্তানের দৃষ্টিতে মায়ের রুপ-মর্যাদা অন্যান্যদের দৃষ্টভঙ্গির সাথে মিলবে না। এটাই স্বাভাবিক।
লিখলে সবই লিখবো, চিঠি-ও। পড়া না-পড়া পাঠকের ব্যাপার। আমি কাউকে খুশি করতে নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিখি।
প্রথম রিভিউ লেখার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
যদিও বুঝতে পারিনি আপনি এই লেখার রিভিউ দিলেন নাকি চিঠির।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
সকাল থেকে সন্ধ্যার চমৎকার দিনলিপি। দিনগুলো মনে হয় এভাবেই বয়ে যায়। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাদের প্রতিটি দিন বইয়ের একেকটা অ-পঠিত পৃষ্ঠার মতন। আগে থেকে জানা যায়না পরের পৃষ্ঠায় কি আছে!
শুভ কামনা আপনাকে-ও 🌹🌹
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক সময় অতি সাধারণ শব্দগুচ্ছে অসাধারণ মায়া জড়ানো থাকে। মায়াবী শব্দগুচ্ছের জন্য শুভকামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক সময় কিছু কমেন্টের মাঝেও অদৃশ্য মায়া ছড়িয়ে থাকে।
ধন্যবাদ সৌবর্ণ, শুভ কামনা 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কি সুন্দর একটা দিনলিপি পড়লাম, জীবন এভাবেই সুখদুঃখে কেটে যায়। মেয়েদের জন্য শুভকামনা রইলো।মেয়েরা একটু তাড়াতাড়ি ই বড় হয়ে যায়, বুঝে নেয় সবকিছু। অবিরাম ভালোবাসা 🌹🌹🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
সুখে-দুঃখে পার হয়ে যাওয়াই জীবনের ধর্ম।
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদুল ইসলাম
সারাদিনের রোজনামচায় জীবনযাপনের অনেক কিছুই ফুটে উঠেছে। এভাবেই কেটে যাচ্ছে প্রতিটি দিন। পরিবারের নারীদের সকালে ঘুম থেকে ওঠা হতে পরদিন সকাল পর্যন্ত সব সময় যেন কাজের উপরে থাকতে হয়। হোক সে ছোট কিংবা বড় কাজ অথবা সন্তানদের সঙ্গে আলাপচারিতা। আপনার লিখাটি তারই প্রতিচ্ছবি। ভালো থাকুন আপু।
নাস্তায়ভচা অর্থ কি?
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাদের (বেশিরভাগ নারীদের) দিন গুলো এভাবেই কেটে যায়। আর এমনি করেই জীবনের শেষদিন চলে আসে।
বাড়তি টাইপ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক করে দিয়েছি।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹