
শোনা কাহিনীঃ
একজন পরহেজগার আউলিয়া একবার জিদ ধরলেন, পৃথিবীতে সঞ্জীবনী কিছু আছে কিনা জানার জন্য। অর্থাৎ, মৃতসঞ্জীবনী। যা সেবন করে অনন্তকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যায়। তাঁকে বুজুর্গ পীর বলে দিলেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোনো এক বনে রয়েছে এমন একটি গাছ, যার পাতায় রয়েছে এই সঞ্জীবনী নির্যাস। তবে শর্ত একটাই তোমাকে তা নিজগুণে চিনে নিতে হবে।চেনার পরে এ খবর কাউকে প্রকাশ করতে পারবে না। তাহলে এই গাছ তার গুণাগুণ হারিয়ে ফেলবে। সঞ্জীবনী সন্ধানী লোক হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করলো এই অমৃত নির্যাসের পাতার গাছ। খুঁজে খুঁজে একদিন সেই গাছের কাছেই এসে ক্লান্তিতে বিশ্রাম নিতে বসলেন। এক পথিক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন এবং কোথা থেকে এ পথিক এসেছেন? অবচেতনে পুরো কাহিনী অমৃত সন্ধানী সব বলে দিলেন। বললেন,এমন কোনো গাছের খোঁজ কেউ জান কিনা! যার পাতার রঙ লাল? আগত পথিক বললো, আপনি তো সে গাছের ছায়াতেই বসে আছেন!’ তৎক্ষনাত গাছের পাতা লাল থেকে সবুজ হয়ে গেলো। অমৃত সঞ্জীবনী সন্ধানী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন আবারো। ততক্ষনে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন তিনি। কাউকে কিছু বলা বারন ছিলো।নিজেই চিনে নেবার শর্তে হেরে গেলেন সঞ্জীবনী সন্ধানী।
এই সেই গাছ যা এখন আমরা মেহেদি গাছ নামে চিনি। এ কাহিনীর সত্যতা সম্পর্কে আমার সত্য জ্ঞান নাই। তা না থাকলেও আমার ভালো লাগলো বলে কাহিনীটা সবার সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে হলো বলে ঘটনাটা বর্ননা করলাম।
শৈশব প্রতিটা মানুষের কাছে এক হারানো সোনালী দিন। ভাবনাহীন প্রজাপতির মত উড়ে ঘুরে বেড়ানো শৈশব পিছু ছাড়েনা একদণ্ড। মাঝ বয়স এসে যখন দরজায় জোরেসোরে কড়া নেড়ে বলে! ‘ তেমার এখন অনেককিছু বলতে মানা, অনেককিছু করতে বারন! বুকের কাছে দীর্ঘশ্বাস আরো আরো দীর্ঘ হয়। চোখের সামনে এসে ছোটাছুটি করে ফ্রক পরা, চুল ওড়ানো সেই শিশু কিশোর বেলার নানারঙের দিনগুলো……
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায় ?!
আজ কে যে কোথায় আছি
কোন খবর নেইত কারো !
অথচ তোর ওই-দুঃখ গুলোতে
অংশ ছিল আমারও !
এই চলতি জীবন ঘটনাবহূল
দু-এক ইঞ্চি ফাঁকে,
তুইতো পাবিনা আমায়- আর
আমিও খুঁজিনা তোকে !
নানাবাড়ি যাবার জন্য যখন আম্মা আব্বার মধ্যে কথা শুরু হত! তখন আমার চোখ চকচক করে উঠত। আব্বা সহজে রাজি হতে চাইতেন না আমাদের নিয়ে নানাবাড়ি যাবার ব্যাপারে। তাঁর ধারনা ছিলো গেলেই বড় খালা সুযোগ পেলেই হয়ত আমার কেনো একটা ক্ষতি করে ফেলতে পারেন। আমার ওপরে আমার বড় খালার ভীষণ ক্ষোভ ছিলো যে!! কয়েক বছর আম্মা বাপের বাড়ি যাবার কথা মনেও আনেননি সেই একই কারনে। বড় খালা খবর পেলেই হয়ত চলে আসবেন লিলার মেয়ে লিপির কোনো ক্ষতি করতে। সে কাহিনী আজ তোলা থাক।অন্যকোনোদিন সুযোগ এলে লেখা যাবে।
নানাবাড়ি যাবার কথা উঠলেই জোড় আবদারে আব্বার পা জড়িয়ে ধরে….. আব্বা নানাবাড়ি যাব বলে ঝুলে থাকা দিন গুলো এখন চোখ ভিজিয়ে দ্যায়। সেই তখন থেকেই খেয়াল করি,বাবা আমার কথা ফেলতে পারেন না কোনোভাবে। শুধু আম্মাকে শর্ত জুড়ে দেন যেন অতিরিক্ত নজরদারি রাখেন!
কয়েকঘন্টার রাস্তা। লাগে যেন কয়েকযুগ। কখন পৌঁছব? আর কতদূর সে পথ? মায়ের কোল ছেড়ে তখন আলাদা সিট নিয়ে বাসে চড়ার মজা উপভোগ করি আপনমনে।জানালার কাছেই বসতে হবে। দীর্ঘ পথটুকু প্রকৃতির গাছপালাদের সাথে আপনমনে বকবক করতে করতে একেকটা ষ্টেশন পার করা। বাস থেকে নেমে হাঁটাপথের পরিমাপ আজও জানিনা। সে অনেকটা পথ। হেঁটেই যেতে হয় শফিউদ্দন আহমেদের ( আমার নানা) বাড়ি পর্যন্ত। আমার আম্মার কথা ভাবি আজ…. কী অসীম ধৈর্য্য মহিলার!! লাগেজ ব্যাগেজ নিয়ে আমাদের ২/৩ জন ছোট ছোট ভাইবোন নিয়ে একাই চলেন বাপের বাড়ি! সামনে পেছনে দুটো বিশালাকার পুকুর। ভেতর বাড়ির পুকুর ঘাটের কাছেই বিশালাকার এক মেহেদি গাছ। তরতর করে গাছে চড়ে যাওয়া যায়, গাছের ভঙ্গিমা এমনই। মূল বাড়ির দুই দিকেই প্রধান দরজার সামনে বসার জন্য সিমেন্টের আসন। মেহেদি পাতা ছিঁড়তে দেরি নাই আর বাটনার জন্য আলাদা শীল পাটারও দরকার নেই। ওই সিমেন্টের আসনেই বসে পরি মেন্দিপাতা বাটতে। এবং নিজেই বাটি আমি। বড় খালা ততদিনে শান্ত হয়েছেন অনেকখানি। বড়খালার অনেকগুলো মেয়ে। শিরু আপা( যাকে কোনোদিন দেখিনি আমি) দিপু আপা,শিপু আপা,রেখা আপা, নিশু। নিশু আমার বয়সী বলে খুব ভাব হয়ে যায় আমার সাথে। একসাথেই মেন্দি আয়োজনে লেগে পড়ি। মেহেদি বাটতে বাটতে ডান হাতের পাঞ্জা এমনেই লাল হয়ে ওঠে…… ইশশশ্… লিপি,তোর হাত কী লাল হইছে!! তোর হাতে অনেক রঙ হইবে। আমার খুশি লাগে তখন।সত্যিই হবে তো? গোল্লা গোল্লা করে বাঁ হাত ভরে মেহেদি পরি। নখগুলো ঢেকে দেই থাম্বা থাম্বা করে। সারাদিন ধরে আর কোনো কাজ নেই মেহেদি শুখাবার অপেক্ষা।
মেহেদি গাছ প্রিয় হয়ে উঠলো তখন থেকেই। তখন থেকেই প্রিয় হয়ে উঠল হাতে মেহেদি পরা। মেহেদি গাছ দেখলেই হলো। সংগ্রহ করতেই হবে,নিজ হাতেই পাতা পিষে হাত রাঙাতে হবে। আম্মা নিজে লাগালেন মেহেদি গাছ। তাও আমার হাত দিয়েই লাগালেন। আমার নিত্যদিন সেই গাছ চোখে চোখে রাখা। পাতাগুলো কী সুন্দর! একটু মোটা পুষ্ট পাতাগুলোতে রঙ হয় বেশি। যে পাতায় কালো কালে দাগ পড়ে!! সেই পাতায় রঙ বেশি হয়। মেহেদি পাতার গুণাগুণও অনেক। বিশেষ করে চর্মরোগের মহৌষধ। মাথার চুলের জন্যও ভীষণ উপকারি। চুল পরা রোধ করা, আবার চুল ঘন হওয়ায় কার্যকরী। তবে কথা আছে। অনেকের ঠিকঠাক সয়না মেহেদি পাতার প্রয়োগ। ফল বিফল হয়।
আমার মেহেদি পরা শুরু এভাবেই। আমি ফ্রিকি( এই ফ্রিকি শব্দের যথাযথ বাংলায় বললে ততটা আমেজ আসে না বলে বাংলিশ চালিয়ে গেলাম) হয়ে পরলাম। মেহেদির রঙ ফিকে হতে না হতেই আবার পাতা ছিড়ি, আবার বাটি,আবার নকশা আঁকি হাতের তালুতে। পাড়াপড়শি চোখ ট্যারা করে। আবোল তাবোল বলে….. কাম নাই কাইজ নাই খালি হাত ভইর্রা মেন্দি দেয়। আব্বার ধমক একদিন- ‘ তোর কি বিয়া? পড়াশুনা নাই? কাল কী পরীক্ষা? আমি: বাংলা, সব পারি তো!
মেন্দিই তো দিই! তাতে এত কথা বলার কি আছে? শবই বরাত আসে। মেহেদি পরার উপলক্ষ। লাভলি, ঈরানী,বনানী,হ্যাপী ফুপু,মুক্তি,পলি ফুপু সবাই একযোগে মেহেদি তুলি। যার যার বাসায় বাটনা বাটি। যার যার হাতে মেহেদি পরিও নিজে নিজে। তারপর দেখতে বেরই কে কতটা সুন্দর ডিজাইন এঁকেছে। তারপর রং পাকা করতে কে কতটা কায়দা আয়ত্ত করছে। মেহেদি শুকিয়ে গেলে পানি লাগানো যাবেনা কয়েকঘন্টার মধ্যে। সর্ষের তেল মেখে সারারাত রাখতে হবে।সকালে উঠে চোখের সামনে আগেই মেহেদি পরা হাত নিয়ে দেখি, সকালের আলোর মত চোখমুখ জ্বল জ্বল করে ওঠে রং দেখে। আমার থেকে ওদের হাতে যদি বেশি রং হয়! ম্লান হয় মুখের হাসি। ধরন বদলাই মেহেদি দেয়ার। ততদিনে তো কৈশোর পেরিয়ে গেছি! মেহেদির রং তো আগেরই মত রয়ে গেছে!! বদলেছে আঁকার ধরন। বদলেছে অনেককিছু। মেহেদি পরার পাগলামি বদলায়না আমার। আমি হাত খুঁজি পরিয়ে দেব বলে। মুক্তি ( আমার ছোট ফুপি+ বান্ধবি) অনেক জ্বালিয়েছি এই মেহেদি পরানো নিয়ে। এত ধমকেছি ওকে!! এখনো বলে ও ওর মেয়ের কাছে- ‘ অনু, তোর বুজি’র ধাবার(ধমক) খাইতে খাইতে আমি শ্যাষ।খালি ওর ধারে মেন্দি দিতে বইলে হইছিলো!!
বিয়ের পরে শশুর বাড়িতেও পেয়ে গেলাম বিশাল মেহেদি গাছ। আমার শশুড় বাড়িতে থাকা হয়না বেশি। সর্বোচ্চ ১৫/১৬ দিন! তাও সেই বিয়ের প্রথম দিকে। তারপর আমি মা হলাম। মেয়েটা বড় হতে হতে ওর হাতে পরাতে শুরু করলাম। নিজেও পরি,মেয়েকেও পরিয়ে দিই। আমার আর্ট দেখে অনেকেই পছন্দ করতে লাগলো। বলা যায় আমার মেহেদি পরা/ পরানোর চর্চটা চলছিলো বলেই হয়ত! মেয়ের হাতেও রং উঠে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা, তারপর আবার আমিই দিয়ে দেই। কাছের আত্মিয় স্বজন আমার কাছে আসে মেহেদি দিতে। কোনো বিয়ের কনেকেও দিতে শুরু করেছি সেই নিজের বিয়ের আগে থেকেই। এ আমার আনন্দ। এক আলাদা আনন্দ।আমার আরেক নেশা মেহেদি। মেয়েটা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলো। ক্লাশ ফাইভে আইডিয়াল স্কুল& কলেজের বনশ্রী শাখায় ভর্তি করালাম। প্রায়ই মেয়ের হাতে মেহেদি থাকে বলে বান্ধবিরা জানতে চায়, তুমি দিয়েছ? মেয়ে মায়ের কথা বলে। যে ফ্লাটে ভাড়া থাকি, পাশের ফ্লাটের প্রায় সবাই উৎসব গুলোতে হাজির হতে শুরু করলো। একে তো পরিশ্রম, তারওপর সময়। তবুও আমার ক্লান্তি বা বিরক্তি কোনোটাই নেই। আমি কোনো আর্ট দেখে দেখেই হাতে এঁকে দেই মেহেদির নকশা। ২০০৭ এ আমি সার্ভিক্যাল সমস্যায় পরলাম।অস্টিওপরোসিস। ডান হাতে সমস্যা শুরু হলো। মেহেদির কোন চেপে ধরে ডিজাইন আঁকা তো দূর, স্বাভাবিক কাজকর্মে আমি বিরতি দিয়েছি অনেক কাজ। মেহেদি পরানোও ছাড়লাম,নিজেও অব্যাহতিতে চলে গেলাম কিছুদিন। আমার কন্যা যখন কিন্ডারগার্টেনে পড়ে, তখনই মেয়ে আমার ছবি আঁকায় বেশ পটু। ড্রইংএ সে দ্বিতীয় হয় সবসময়। প্রথম হওয়ার জন্য ওকে আমি কোনো আর্ট স্কুলে দিতে পারিনি কখনো। আমি নিজে ঘরে যতটুকু পারতাম দেখিয়ে দেবার চেষ্টা করতাম। ওই শিক্ষাটুকু পরবর্তিতে কাজে লাগালো শিফা(আমার মেয়ের নাম) মেহেদির ডিজাইনে। আমার বিপরীতে এরপর থেকে শিফার কাছে সবাই আসতে শুরু করলো মেহেদি পরতে। ক্লাশের বান্ধবিরা ভীড় করে ওর কাছে। ফ্লাটের সবাই এবং ভাড়াটে প্রতিবেশির আত্মিয়রাও। মেয়ে আমার বড় হিসেবি হয়ে গেলো শেষাবধি। -‘ আমার কষ্ট হয়না এতজনকে মেহেদি দিতে? আমি কী ফ্রিতে দেব নাকি? এরপর থেকে আমি দাম নির্ধারন করব’ আমি বললাম: দেখবি এরপর আর কেউ আসবে না।
শিফা- না আসুক। তাও আমি এত কষ্ট করে ফ্রিতে ফ্রিতে দিয়ে দেবনা মেহেদি। দেয়ওনি আর। স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় তিন বান্ধবি মিলে স্টল নিয়ে বসলো ২০০৯ এ। ওরা তিনজনে একদিনের কয়েকঘন্টায় আয় করলো প্রায় খরচ বাদ দিয়ে ১২০০ টাকার মত। ওরা উৎসাহ পেয়ে গেলো এভাবেই। ঈদ বা বৈশাখের উৎসবে ওরা বসতে শুরু করলো মেহেদির স্টল নিয়ে। বাড়তে বাড়তে পরিসর আরো বাড়লো। এরই মধ্যে স্কুল বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ ছিন্ন হলো। তবু থেমে যায়নি শিফার মেহেদি ব্যাবসা। পার্টনার পেয়ে গেলো আরেকজন স্কুল বান্ধবি। তাঁকে নিয়েই পূর্ণ উদ্যোমে চালু হলো মেহেদির কাজ। ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহা, অথবা বৈশাখী পার্বণ! কারুকা” মেহেদি নামে অনলাইন ভিত্তিক পেজও খুললো। বেশ চলছিলো এই মেহেদি পাগলামি। কেভিড-১৯ এলে বিশ্বে।এরপর সব থমকে গ্যাছে…….
পুনশ্চঃ গত দুদিন আগে ব্লগার সাবিনা ইয়াসমিন এবং আজ জিসান শা ইকরামের মেহেদি নিয়ে গ্রুপে পোষ্ট দেখে ইচ্ছে হলো আমিও আমার মেহেদির গল্প শোনাই। অনেকদিন পরে কিছু লেখার চেষ্টা…..। জানি এও মনমোতাবেক কিছু হয়নি। তবুও…..
৩৬টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
অর্ধেক পড়ে এলাম প্রথম হতে
বন্যা লিপি
আমি ব্লগ ছাইরা যাবার আগেই কইত্থাইক্কা আইয়া টপকাইয়া পড়লি?😂😂😂 পেরথম হবার জন্য এত্তগুলা ভালাবাসা❤️❤️❤️❤️❤️
সুরাইয়া পারভীন
এসেছি তো অনেক আগেই। পড়তে পড়তেই দেরী হয়ে গেলো। ভালোবাসা নিলাম আপু💖❤️💖
সুরাইয়া পারভীন
বাপ্ররে বাপ এক লেখায় অদি থেকে অন্ত তুলে আনলো তবুও বলে মনমতো হয়নি। বলি ওটা মন না অন্য কিছু গো😁
পড়লাম মেহেদী প্রেমী হয়ে ওঠা আর তারপর থেকে সব ঘটনা। বড় খালার ঘটনাটা জানতে চাই…
ধন্যবাদ সাবিনা আপু ও জিসান ভাইয়াকে
যাঁরা আপনাকে দিয়ে এতো সুন্দর স্মৃতিবিজড়িত মূহূর্তে
বিচরণ করাতে বাধ্য করলেন।
আমি ছোট থেকেই এ মেহদী বিমুখ। রঙচঙ প্রথম থেকেই ভালো লাগতো না। সাদা হাতের তালুতে ছোট ছোট রক্ত বিন্দু থাকে ওটা আমার ভীষণ ভালো লাগে দেখতে
বন্যা লিপি
প্রথমত বলতে চাই, আদি থেকে লিখতে সত্যি গুছিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম…. কিন্ত হয়নি সেরকম,যেরকমটা হলে সত্যি আমার নিজেরই ভালো লাগত।
মানুষ মূলত বৈচিত্রের ধারক বাহক বলে আমাি মনে করি। তোমার রঙ( রঙচঙ) পছন্দ না। আর আমি সবসময় কালারফুল পছন্দ করি সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
আর হ্যাঁ শোনা গল্পটার ব্যাপারে মন্তব্য করতে ভুলেই গেছিলাম। গল্পটা বিশ্বাস না হলেও প্রথম শুনলাম এমন গল্প আর ভালোই লেগেছে। থ্যাঙ্কু এমন গল্প প্রথম শোনানোর জন্য 💖💖💖
বন্যা লিপি
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দিকে না গিয়ে রূওকথাও ধরে নেয়া যেতে পারে।আমার কাহিনীটা যোগ করতে ভালো লাগলো বলে যুক্ত করেছি লেখাটা শুরু করা উদ্যেশ্যে।
মোঃ মজিবর রহমান
লাভলি, ঈরানী,বনানী,হ্যাপী ফুপু,মুক্তি,পলি ফুপু= ভালোবাসা, সুদুর ইরান, সুদুর বনজঙ্গল, খুশি, ফু ফু পু, মুক্তির আশা পলি পড়ল
খুব বভালো লাগলো পড়ে মেহেদী সবারই পছন্দের।
বন্যা লিপি
বাহ্…. মজিবরদা তো নামগুলোয় আটকে গেলেন দেখছি। শৈশব নিয়ে লিখব ইনশাল্লাহ বেঁচে থাকলে। এই নামগুলো আবারো আসবে। কারন এরাই আমার শৈশব কৈশোর জুড়ে ছিলেন/ আছে।
মন্তব্যে ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
গল্পটা সত্যি কিনা জানিনা তবে খুব ভালো লাগলো। ছোটবেলার মেহেদী দেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। মা পাটায় বেটে দিতো। সেই মেহেদী অনেকক্ষণ লাগিয়ে হাতে দেয়া হতো। এখন তো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় দেওয়াও সহজ হয়ে গেছে। শুভ কামনা অবিরাম।
বন্যা লিপি
গল্পটা সত্যি ভাবার কোনো সুযোগ আমি কিন্ত লেখায় রাখিনি। আমি যখন প্রথমেই লিখে দিয়েছি- ” শোনা কাহিনী”!! সেখানে এ কাহিনীর সত্যাসত্য নিয়ে কারো মন্তব্য আসাই উচিত না।
মেহেদি আমি নিজে না বাটলে, কারো বেটে দেয়া পছন্দই হয়না! কারন কেউই আমার মত এক পেষায় মিহি করতেই পারেনা।আর মেহেদি মিহি বাটা না হলে হাতে বা চুলে আমি দিতেই পারিনা। মিহি বাটা না হলে হাতে ডিজাইনও ভালো করে আঁকা যায়না।
বাটাবাটি ছেড়ে দিয়েছি অনেক বছর। এখন কেনা কোন মেহেদিই ব্যবহার করি।
মন্তব্যে আন্তরিক ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মেহেদীর গল্প, শিশুবেলার মেহেদীময় ঘটনা পড়ে খুব ভালো লাগলো। মেহেদী নিয়ে এমন কৈশোর সবাই মনে হয় পার করেছে। ধন্যবাদ আপু শিশুবেলা মনে করিয়ে দেবার জন্য। যদিও ফিরে পাবো না সেই স্বর্ণালী সময় তবুও ভাবতে ভালো লাগে।
বন্যা লিপি
শিশুবেলাটা সবারই রঙিন থাকে। আমার মত মেহেদি পাগলি কমই ছিলো দিদি🙂🙂
ঢের বকা খেয়েছি আব্বার কাছে। তাও আমি সবসময় লেগে থাকতাম ডিজাইন সুন্দর করা উদ্দেশ্যে। কিছুই হত না😥😥😥 আমার মেয়েটা দুর্দান্ত মেহেদির ডিজাইন করে। দেখে দেখেই।
আর একটা কথাঃ আচ্ছা আমরা কেন বার বার এ কথাটা বলি? “যদিও ফিরে পাবো না সেই স্বর্ণালী সময়….. ” এটা চিরন্তন সত্য!!! পাওয়া সম্ভব না বলেই আমরা সবসময় স্মৃতি রোমন্থন করি। আমরা স্মৃতিকথায় তুলে আনি পুরোনো দিনের নির্যাস।
এই বা কম কিসে!
সবসময় শুভ কামনা
নার্গিস রশিদ
মেহেদী দেয়ার গল্পের মধ্যে দিয়ে ছোটো বেলা থেকে বড় বেলা সব বেলার জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে। টার সাথে আমারও ছেলেবেলার ফেলে আসা সিন গুলোতে মেন্দি দেয়ার গল্প কথা মনে পড়ে গেলো । সুন্দর লাগলো ।
বন্যা লিপি
এই লেখার সার্থকতা বোধ করি এটাই।সবার ছেরবেলা ছুঁয়ে/ ঘুরে আসা। মন্তব্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা মাননীয়া।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একটা সময় থাকে মেহেদী পরার আমেজ। বাটা মেহেদী রং সুন্দর হয় আর যার হাতে লাগে বেশী সে নাকি জামাই আদুরে হয় বলে শুনেছি।সে ক্ষেত্রে আপনি লাকি বলা যায়।
মেহেদী যখন বাজারে প্রথম আসে তখন প্রচারের বিভিন্ন প্রগ্রাম হতো। বেশ টাকা দিতো কম্পানির লোকজন আমরা কজন মিলে একবার এমন আয়োজনে ছিলাম ঢাকায় । টাকাও পেয়েছিলাম।।।
শুভ কামনা আপু!!
বন্যা লিপি
কেন যেন ছোটবেলা থেকেই আমি কতক বিষয়ের ওপরে ভীষণ একগুঁয়ে। কিছু প্রচলিত বাক্য একদমই মাথায় নিতে পারিনা। এই যেমন আপনি, মেহেদি রঙের সাথে জামাই আদুরে ব্যাপারটা উল্লেখ করলেন! এমনি আরো অনেক ব্যাপার আছে বয়জ্যেষ্ঠ্যরা বলে বলে আসছেন। আমি একদম মানিনা এসব। এত কষ্ট করে মেহেদি লাগাবার পরে যদি দেখি রঙ হলোনা! তবে তা অবশ্যই মনকষ্টের কারন। মানুষের শরীরে একধরনের মেলানিনের কারনে মেহেদির রঙ কম বেশি হয়ে থাকে। আবার পাতারও অনেক সময় রঙ কম হয়। স্বামী সোহাগরে এর মধ্যে টানাটানি করে কোনো লাভ নেই। এমন কোনোকিছুই নেই পৃথিবীতে যে, চিহ্নিত হতে পারে কে কতটা স্বামী সোহাগি।
আমার কাছে এই কথাগুলো ভীষণ বোগাস লাগে।
নাজমুল আহসান
আমি তো পোলা মানুষ। মেহেদী-টেহেদী দেইনি কখনো। স্মৃতিও নেই।
কিন্তু আপনার লেখা পড়ে কেন যেন রুনা লায়লার “মেহেদী রাঙাব এই হাত, আরে ডিংডাং ডিংডাং” গানটা মনে পড়ে গেল। 🤓
বন্যা লিপি
এমন গান তো জীবনে শুনিনাই!!! সত্যি কী রুনা লায়লা এরকম কোনো গান গাইছে নাকি??
বাই দ্য ওয়ে….. পোলা মানুষেও মেন্দি পরে, এই কমেন্ট অপশনে যদি ছবি আপলোড করার কায়দাটা থাকত ফেসবুকের কমেন্ট অপশনের মত! তাইলে এইখানেই প্রমান দিতে পারতাম।
আপনারে কী বিয়ের সময়ও কেউ হাতে দ্যায়নি🤭🤭?? সেই স্মৃতিটুকুই না হয় বলতেন!!
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি শুনেছি,, একটা সিনেমার গান। কিন্তু নাম মনে পড়ছে না 🙁
নাজমুল আহসান
এইযে দেখেন-
নাজমুল আহসান
আর আমার বিয়ের সময়ও হাতে মেহেদী দিইনি। কে কে যেন বলছিল, আমি রাজি হইনি!
বন্যা লিপি
সাবিনা@ আমি শুনিনাই এই গান।বরং তপন চৌধুরি শম্পা রেজার একটা গান আছে মেহেদি নিয়ে… লিরিক ভুলে গেছি, ওটা শুনেছি।
বন্যা লিপি
নাজমুল আহসান# আপনি বিয়ের একটা সুন্নত তরক করেছেন😊😊
এবং ধন্যবাদ ডিডাং ডিডাং মেন্দির গান আমাকে শোনাবার জন্য😃😃
আরজু মুক্তা
হাতে না দিলেও মাথায় তো এখন দিচ্ছেন ঠিকই।
হা হা।
শৈশবের কথা মনে পরলো।
বন্যা লিপি
এহ্…… হাতেও এখনো দিই তো!! সাবিনার ধমকের পরই কিন্ত মেহেদি পরেছি! তাতেই তো জিসান ইকরামের পোষ্টে নিজের হাতের ছবিখানা দিয়েছিলাম!!
সবার স্মৃতিতে নাড়া দিতে পেরেছি বলে লেখা সার্থক।
ভালবাসা।
আরজু মুক্তা
সাজুনি
বন্যা লিপি
এইটা এক্কারে সইত্য,,, আমি বরাবরই সাজুনি…. কোনো সমস্যা???
সাবিনা ইয়াসমিন
শোনা গল্পটা আজই শুনলাম। আগে জানা ছিলো না।
শেষমেশ মেহেদী নিয়ে হাজির হলে,, থ্যাংক ইউ 🙂
ছোটবেলায় মা হাতে মেহেদী দিয়ে দিতো। তখন অনেক ফরমায়েশ দিতাম। কখনো বলতাম গোলাপ ফুল দাও, কখনো কলাগাছ, কলাগাছের সাথে কলাও থাকা লাগবে। আর অবশ্যই দুই তিনটা চাঁদ-তাঁরা থাকা লাগবে। অনেক জ্বালাতন করতাম আমার মাকে।
তারপর নিজে নিজে দেয়া শিখলাম, হাতের তালুতে গোল একটা চাঁদ, আঙ্গুলের অর্ধেক মেহেদী দিয়ে মুড়িয়ে রাখা, এটা ছিলো শর্টকাটে বানানো বেস্ট আর ফেভারিট ডিজাইন। ( অন্য কোন ডিজাইন তখন পারতাম না) অবশ্য চাঁদ আঁকতে কখনোই ভুলতাম না।
এখন মেহেদী দিই কালেভদ্রে। আমার মেয়েরা বড় হয়েছে, ওরা অনেকরকম করে মেহেদী দেয়। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। ওরা আমার হাতেও দিয়ে দেয়। আমার ভীষণ ভালো লাগে। তখন মনে অদ্ভুত অনুভূতি হয়! ঐ মুহূর্তে ওরা কেমন করে যেন আমার মা হয়ে যায়!
ভালো থেকো বন্যা।
শুভ কামনা 🌹🌹
বন্যা লিপি
সেই পিচ্চিকালে ওরকম চাঁদ তারা ফুল, গাছ, লতা,পাতা আঁকতাম।একটু বড় হবার পরে আঁকাআঁকিতে বিস্তর পরিবর্তন চলে আসলো। এরপর মেয়ে। মেয়ে আমার বাঁ হাতে দিয়ে দেয় সময় পেলে। সময়ই তো নেই মেয়ের।
তোমার সাথে কথা ছিলো। ইনবক্সে এসো একটু।
তোমাকেও Thank You…মেহেদির পোষ্ট আইডিয়াটা তোমার আর জিসান ইকরাৃমের জন্যই সম্ভব হলো। তাও মন মত হলো না😓😓
শুভ কামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
মেহেদী কথন , অপূর্ব লেখনি। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
আপনার জন্যেও শুভ কামনা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
প্রত্যাশা সুস্থ আর ভালো থাকবেন।
বন্যা লিপি
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে। প্রত্যাশা শব্দটা ভালো লাগলো। দোয়া করবেন আমার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
মেহেদী নিয়ে কাহিনীটা আগে কখনো শুনিনি।
তোমাকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম ব্লগে, ভাবছিলাম পরে আর এক পর্ব দেবো। তুমি বললে যে তুমি লিখবে, তাই পরে আমার আর লেখা হয়নি। তোমার বড় খালার প্রসংগও থাকতো সে লেখায়।
চমৎকার একটি পোষ্ট দিলে মেহেদী নিয়ে। মুগ্ধ হয়েই পড়লাম। রাইটার ব্লক তো উধাও হয়ে গেছে।
পড়তে পড়তে যখন ভাবছিলাম মেহেদী নিয়ে এত আগ্রহ যখন, তখন ‘ লিপি’স মেহেদী ‘ ধরনের একটি নাম দিয়ে এটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে একটা দোকান দিলেও পারতে। পরে পড়লাম শিফা নাকি এটি শুরু করেছিলো।
মেহেদী দিয়ে উঠানোর পরে সর্ষের তেল দিলে ভালো হয়, তা কিভাবে যেন জেনে গিয়েছিলাম আমি। হয়ত আফরোজা আপাকে দেখেছি এমন করতে।
গ্রুপে আইডিয়া দেয়ার পর এত স্বল্প সময়ে এমন পোষ্ট দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। লেখা ফিরে এসেছে তোমার। লিখতে থাকো এখন।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
আমি লিখব ওইটা নিয়ে। তবে এই একবছরে সে সুযগোটা হয়ে ওঠেনি।
রাইটার ব্লক উধাও হয়নাই এখনো😥😥 আপ্রাণ চেষ্টা করছি আগডুম বাগডুম লিখে। শিফা এখনো অর্ডারে মেহেদি পরায়। হ্যাঁ,, আফরোজা ফুপুর হাত পায়ে সবসময় মেহেদি থাকত। বিউটি মঞ্জিলের শিরিন ফুপুরও হাতে সবসময় টকটকা খয়েরি রঙা মেহেদি থাকতই। কখনো ফিকে হতে দিতেন না শিরিন ফুপু। উনার সাথে সাথে আমিও দিতাম। শিরিন ফুপু অনেক আদর করতেন আমাকে।
লেখার ক্লু পেয়ে গেলে আমি বরাবরই গড়গড় করে লিখে যাই। গ্রুপ পোষ্টের মন্তব্যের পরই মাথায় এলো, এটা নিয়ে এভাবে তো লিখতেই পারি! সুরাইয়াকে বলছিলামও…. তখনই গটগট করে লেখা শুরু করে, শেষও করে ফেললাম। এখনো ভাষা/ শব্দের আকালে ভূগছি। সময় লাগবে আরো বুঝতে পারছি। পুরোনো লেখাও দেব কিছু কিছু এখানে জমা রাখতে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, লেখায় ফিরিয়ে আনার পেছনে আপনার এবং সাবিনা ইয়াসমিনের একনিষ্ঠ অবদানের জন্য।