
বৃষ্টিতে ভেজার নাকি সুনির্দিষ্ট বয়স ও সঙ্গী দরকার হয়।অবশ্য এ নিয়ম শুধু মেয়েদের বেলায়। পুরুষরা এই নিয়মের মধ্যে পড়ে না।তারা চাইলেই যখন তখন ভিজতে পারে। আর এজন্যই বোধহয় ছেলেদের এটা পছন্দ না এবং তাদের ভেজার দৃশ্য কুৎসিত।
বৃষ্টিতে ভেজার বয়স হলো ষোল সতের কিংবা বিশ। এরপর যদি আপনার মন আকুলি বিকুলি করে, নিজেকে সংবরণ করুন। কারণ জ্বর অবশ্যম্ভাবী, আসবেই। কারন বৃষ্টির পানি হলো প্রেমের মতো। বেশি বয়সে মন চাইলেও শরীর নিতে পারে না। জ্বর তো হবেই সাথে গা ব্যথা, মাথা ব্যথা এসবও থাকবে। গা ব্যথা, মাথা ব্যথা হলো পরশীদের জ্বালা।
কোন কারনে আপনি পরশীদের আলোচনার বিষয় এবং দু একজনের বাঁকা চোখের ক্রাশ। বিকেল বেলা কিংবা সকালের সঙ্গী হিসেবে আপনাকে তার চাই-ই চাই। সে আপনাকে ভীষন অপছন্দ করে তবুও আপনার সঙ্গ মিস করতে থাকে।
সকালে হাঁটার সময় অসময়ে ডায়াবেটিক বাধিয়ে ফেলা স্মার্ট পুরুষটি আপনার সাথে সামান্য চোখাচোখির আশায় এ রাস্তায় হাঁটতে আসেন। এটি আপনার মহিলা পরশী আড়চোখে খুব খেয়াল করেন। তার হিংসা হয় কারন তিনি মোম সুন্দরী হবার পরও তাকে কেন দ্যাখে না। তারও তো সামান্য চোখাচোখির খায়েশ হয়। তাই আপনার মতো তারও স্মার্ট হবার আপ্রান চেষ্টা। প্রতিদিন আপনি কি পোশাক পরেন কিংবা কি জুতা পরেন, কি করলে আপনাকে স্মার্ট লাগে। তাই ফলো করতেই সকালে আপনাকে তার চাই- ই চাই।
যদিও স্মার্টনেস ব্যাপারটা অর্জন করা যায় না তবুও পরশী আপনাকে ফলো করতে করতে একসময় পছন্দ করে ফেলেন। এবং আপনি হাঁটতে বের না হলে তার সকাল- বিকেল সব নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধানোর আগে অবশ্যই ভেবে নেবেন আপনার জন্য কতজনের সকাল- বিকেল নষ্ট হতে পারে। সেজন্যই বলছিলাম, এই আজাইরা বয়সে শ্রাবণের ডাকাত বৃষ্টিকে মোটেও পাত্তা দেবেন না। অযথাই জ্বর হবে। এ সময় মাথার উপর শেড দরকার হয়। ঝুপ করে লুকিয়ে পড়তে পারলেই ঝামেলাহীন জীবন যাপন!
এবার আসি সঙ্গীর কথায়। আপনি ব্যাচেলর বা একা থাকেন কিংবা ডিভোর্সী। তাহলে তো বৃষ্টি- ফিষ্টি রীতিমতো আপনার জন্য অনুচিত একটা ব্যাপার।কোনভাবেই বৃষ্টি আপনার জন্য জায়েজ না। তবুও নাজায়েজ এ কাজ খানা লোলুপ হয়ে যদি করেই ফেলেন। তাহলেই হলো, কথায় আর থাকা গেলো না, জাত তো গেলোই। বেহায়াপনার চরম সীমাও পার করে ফেললেন।
** এতো বয়সের বুডি মেয়ে বিয়ে করেনি। বয়স এখন বিয়ে করে স্বামীর সাথে বৃষ্টিতে ভেজার তা না করে দ্যাখেন একা একা ভিজে পুরুষগুলার মাথা খাচ্ছে।
** বিবাহিত মহিলা স্বামীর গায়ে গায়ে থাকবে। কি জানি বাপু কলি কাল বুঝি না। কেমনে যে একা একা থাকে। আবার একা একা বৃষ্টিতেও ভেজে। লাজ সরম নাই এক্কেরে!
** ডিভোর্সী, সর্বোনাস! ওর তো মুখ ঢেকে রাখা উচিত। সে আবার বেহায়ার মতো বৃষ্টি বিলাস করে। তাও একখান কদম ফুল খোঁপায় গুঁজে। স্বামী হলো পরম ধন, সে যেমনই হোক। সামান্য অন্য মাইয়ার কাছে যায়। আসল পুরুষ হইলো সেই যে এপাড়া- ওপাড়া একটু আধটু যায়। এজন্য নাকি তাকে ছুঁতে ঘেননা লাগে। এখন থাকো ডিভোর্সী হয়ে। আর বড় চাকরী করলে মেয়েরা কেমন অহংকার হয় এজন্য আর স্বামীকে দাম দিতে চায় না।
আমিও এক গায়ে গায়ে বৃষ্টি প্রেমিক মানুষ। বৃষ্টি শুরু হলে আমি বয়স ভুলে যাই। জ্বরের কথা তো মনেই থাকে না। পরিচয়েই প্রেম, তাই নেমে পড়ি আলিঙ্গনে।
” বর্ষার প্রথম দিনে ঘনকালো মেঘ দেখে,আনন্দে যদি নাচে তোমার রিদয়। সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়,,,
সকাল বেলা হাঁটতে গিয়েছি, ফেরার পথে শুরু হলো সেই ডাকাত বৃষ্টি। সে ছুঁয়ে দিলে বেহায়া না হয়ে উপায় আছে বলেন। উকিল আন্টি খুউব বারণ করলেন। অন্য সবাই লুকিয়ে পড়লেন যেখানে সেখানে। আর আমি সুনসান ঘাঘোট নদীর পাড়ে তাকে সাদরে গ্রহন করলাম। তারপর যা থাকে কপালে।
কিছুক্ষন পর, উকিল আন্টি আধভেজা হয়ে আমার পাশে এসে বললেন- আধাআধি তো ভিজেই গেছি। বাকিটা ভিজি কি বলো?
-হা হা হা অবশ্যই। সে আপনাকে সাদরেই বুকে টেনে নেবে। একমাত্র প্রকৃতির প্রেমে কোন বাচবিচার নেই। সে সবাইকে গ্রহন করে। তাছাড়া বৃষ্টিতো কাউকে চিনে না।
বাকিরাও একে একে লোভ সামলাতে পারলেন না। অবশেষে আমরা সব ব্যাচেলর, সঙ্গীহীন, ডিভোর্সী বৃষ্টির প্রেমে হাবুডুবু, ভিজে একাকার। আর পাশের সন্দিহান লোকজন তখন টোটালী দিশেহারা।
কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরলে গৃহকর্তার চোখ ছানাবডা।আর গৃহিনীদয়ের জবাব- ওই হাঁটতে গিয়ে ভিজেই গেলাম। তারপর কোনমতে পাশ কাটিয়ে বাথরুমে। সেখান থেকেও আজ গানের আওয়াজ আসছে- “ আজ কিছু হতে চলেছে, আজ কিছু হতে চলেছে। সে(বৃষ্টি) আমায় কথা(ছুঁয়ে)দিয়েছে!!!“
এক বৃষ্টিই কতো কিছুই না দিতে পারে। আজ রান্নাও ভালো হবে কিন্তু?? সুতরাং বৃষ্টি মিস করা যাবে না। না ভিজলে কালই নেমে পড়ুন! জীবনকে ঠকাবেন না যে যাই বলুক!
এরপর আসবে ভালুক জ্বর, সে পাশে ভেংচি দেবে। আপনি ভুল- ভাল বকতেই থাকবেন।
-এই যে, কতো হলো?
-বেশি না ১০২।
-কি? জ্বর না চুমু?
-দুটোই।
-ল্যাও ঠ্যালা,,,,,জ্বরের ঘোরে কি সব,,,,
উৎসর্গ: ( আমার অতি প্রিয় বর্ষা প্রেমিক লেখক হুমায়ুন আহমেদকে। ভালোথাকুন ওপারে। আর আমরা হাজারো বর্ষাপ্রেমিক বর্ষায় আপনাকে জিইয়ে রাখি, জ্বর বাঁধাই আপনার উদ্দেশ্যে, আপনার মতোই ভালোবেসে)
ছবি- নেটের
১৬টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে। ঠিক বলেছেন পুরুষের বৃষ্টিতে ভিজতে কোন বয়স লাগে না। সব বিধি-নিষেধ শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে। তবু কদাচিৎ বৃষ্টিভেজা হয়। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টির পরশ নিতেই হবে। শুভ কামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম অবশ্যই মিস করা যাবে না। এটা মনের অধিকার। ধন্যবাদ ও শুভ কামনা আপু।
রেজওয়ানা কবির
আগে গানের দুলাইন শোন,,,,বৃষ্টি দেখে তোমায় নিয়ে চেয়েছিলাম ভিজতে, এক কথাতেই বুঝিয়ে দিলে তুমি যে হারকিপ্টে,কিছুই তুমি চাও না দিতে, কিছুই চাও না শিখতেভ,কেমন করে হলে তুমি এমনি হারকিপ্টে???
বৃষ্টি বিলাস করতে চাই, এরকম ঘন বরষায় জ্বর বাঁধলেও সব ভেঙ্গে ভিজতে চাই। ভালো লিখেছো,শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
গানের লাইনে হার কিপটে আবার কেন? কলিজাটা ছ্যাত করে উঠলো।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা
আরজু মুক্তা
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি….. কি যে অনাসৃষ্টি।
তবুও মন মাতাতে বৃষ্টিই দরকার। প্রকৃতির প্রাণ ফেরাতে বৃষ্টি দরকার। কে কী মনে করে করুক। এক গোছা কদম হাতে ভিজতে চাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম। তুঝে মিরচি লাগি তো মে কেয়া কারুউ,,,,
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
এমন বৃষ্টি ভেজা বিলাস সবার সয় না, সয়ে গেলে যদি এমন লেখা বেরোয় তাহলে জয়তু বৃষ্টি।
ভাল থাকুন তিনি আমাদের সবার হয়ে, যেখানে থাকুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জয়তু বৃষ্টি। ধন্যবাদ অনেক অনেক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণে বৃষ্টিকে নিয়ে এমন মজাদার লেখা পেলাম। আহা দেরী হয়ে গেল পড়তে। হোক তবে বৃষ্টি ভেজা সকাল,দুপুর, বিকেল। জ্বর আসলে দেখার যে কেউ নেই 😭😭। এমনিতেই মাথা ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা নিয়ে কয়েকদিন ভুগছি। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
আহারে! তবুও নিজে নিজে জ্বর বাধিয়ে উপভোগ করাই যায়। নিজের খেয়াল রাখবেন!
ধন্যবাদ দি ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
তার আগমনের আভাসেই
রোমাঞ্চিত চঞ্চলা হয় মন
আর তার ছোঁয়াতে সদ্য যৌবনা
প্রেমত্ত পদ্মার মতো উন্মত্ত নেশাতুর হয় মন ও মনন
এমন প্রেমে একটু আধটু জ্বরটর এসে যদি আসুক
চমৎকার লিখেছেন আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমারও তাই কথা জোরে সোরে আসলেও সমস্যা নেই। প্রেমে কাটা তো থাকেই,,,
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি বৃষ্টি ভালোবাসতাম। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার ঠান্ডা লেগে যায়। জ্বর আসে। তাই বৃষ্টির সাথে আড়ি করেছি। বৃষ্টি এলেই আমি বুঝে যাই এই বৃষ্টি আমার নয়। কথার বৃষ্টি, প্রেমের বৃষ্টি, কবিতার বৃষ্টি কোনটাই আমার নয়। আমার হলে জ্বর আসবে কেন!
রোকসানা খন্দকার রুকু
ইশরে আপনি তাহলে শেডের নিচে ঢুকে পড়েছেন। এটা মানা যাচ্ছে না।।
নার্গিস রশিদ
ছোটো বেলাতে বৃষ্টিতে ভিজতে যে কি ভালো লাগতো ! বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতাম আর বৃষ্টি হলেই নেমে যেতাম । কোথায় গেছে দিন গুলো। ভালো লাগলো আপনার লেখাটি ।
দালান জাহান
জীবনের চারদিক নিয়ে একাকার , রঙ আলো আঁধার বৃষ্টি ও মাটি ছোঁয়ার আহ্লাদ তার ভেতরেও খেলা করছে প্রেম। আসলে পৃথিবীতে যে বৃষ্টি পড়ে তা বোধহয় প্রেমরস। তানাহলে প্রেম মানুষ এতো বৃষ্টি দুর্বল কেন! খুব চমৎকার লেখা দারুণ উপভোগ করেছি।