
লকডাউন সর্বাত্মক বিধিনিষেধ মেনে আবার বাড়লো। বৃষ্টিও টিপ টিপ ঝরছে। আবার ঝড়ও হচ্ছে। খিচুরি হবে না, তাও মানতে চাচ্ছে না মন। ইলিশ খিচুরি খাইতে মন আকুলিবিকুলি করতেছে।
আপনারা আবার কিছু ভাবিয়েন না। করোনাকালে কোনটা রসিকতা, কোনটা সিরিয়াস, কোনটা রস + সিরিয়াস বোঝা মুশকিল। এক রসিক বন্ধু বললো, সবটা ঐ মাস্কের দোষ। কেউ পরছি মাথায়, কেউ থুতনিতে, কেউ কানে পতাকার মতো, কেউ আবার উপরে হেলমেটের মতো। মানুষ এখন তাই তাপ ও চাপ দুটা মিলায় আছে।
যাই হোক, কন্যা রাশির জাতিকা ধনু ভাঙ্গা পণ যখন করেছি ; তখন মিস নাই। আজ রাতেই খাবো ইলিশ খিচুরি। রেডি হয়ে গেলাম বাজারে। জানেন তো মাছের বাজারের হাউ কাউ। পরিচিত হলে তো কথাই নেই। আপা, ম্যাডাম আসেন, টাটকা মাছ, এখনি আসছে, লেজ বড়, ফুলকা লাল, নদীর মাছ, আজ দাম কম, কাল কিন্তু পাইবেন না। হায়রে কথার ফটফটানি।
শেষ পর্যন্ত কার্তিকের দোকানে দাঁড়ালাম। আফা পানির দরে আজ ইলিশ, নিয়া যান। এই দেখেন : এখন আনছি। জাল শুকায় নাই। পাশের মাঝি বুধো আবার হাঁক দিচ্ছে। আফা, আমারটা কোয়ারেন্টাইন ইলিশ।
কোয়ারেন্টাইন ইলিশ মানে?
মাছ এখানে নিয়ে আসার আগে কোল্ড স্টোরেজে ছিলো। ওখানে তো সামাজিক দূরত্ব মেইন টেইন হয়নি। আমি কিনে এনে, এই দেখেন আলাদা আলাদা বক্সে রাখছি।
সিন্ধান্ত নিলাম, কোয়ারেন্টাইনড মাছ কিনবো। বাসায় এসে কেটে বেছে, যেগুলো ভাজি করবো তা আলাদা করে হলুদ, মরিচ, লবণ, ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে মেখে রাখলাম। খিচুরি রাইস কুকারে দিলাম পেঁয়াজ ছাড়া। এই রান্না, যখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছিলো। তখন শিখেছিলাম। মেথি দিয়ে খিচুরি। পিঁয়াজ + আদা + রসুন ছাড়া।
ভাবলাম, টেবিলে যাই। একটু লেখালেখি করি। লেখকরা লেখা ছেড়ে দিচ্ছে। রাইটার্স ব্লক নিয়ে ই লিখি। আশ্চর্য ! ঘুম থেকে উঠে দেখি…..১২:০৫ ! বিলাসিতা পাইছে ঘুমকে।
কিন্তু একি। রাইস কুকার ফাঁকা। ওভেনে এক পিস ইলিশ ভাজাও নেই। ডাইনিং তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিশানাও পেলাম না। কে খেলো ? ভুত ঢুকছে নাকি ? হঠাৎ শুনি ঘড় ঘড় আওয়াজ। আক্কেলগুড়ুম। গেস্ট রুমে ভুড়িওয়ালা এক লোক ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে। কি এক সুর যে তুলছে ? বিসমিল্লাহ সাহেবের সানাই এর সুরও হার মেনে ফেলেছে।
: এ…ই..ই ! তুমি কে ?
: আমি, আবদুল। ম্যাডাম আমি মামদো চোর।
: ঐটা আবার কি? যাই হও। তুমি আফ্রিকান হও। সোমালিয়া হও। কিন্তু খিচুরি খেয়েছো কেনো?
: কি করবো ? আপনার সব ঘর খুঁজে কিছুই পাইলাম না। তাই খাইলাম। এতো মজা হইছে। আমি ওভারলোড করে ফেললাম। শরীল চলছিলো না। ঘুমায় গেছি। আচ্ছা, এখন যাবো আমি।
বলেই, দূরে কি এক্টা দড়ির সাথে প্যাঁচানো রিং ছুঁড়ে দিলো। কিছু বোঝার আগেই পাইপ বেয়ে নামতে লাগলো।
: আচ্ছা। তোমরা চোরেরা লকডাউন মানো না ? আবার মাস্ক ছাড়া, চুরি করতে এসেছো?
: কি যে কন না ! লেখকদের মাথা আসলে আউলা ঝাউলা। করোনাভাইরাস চুরি করে আমাদের শরীলে ঢুকে। ওরা কি মাস্ক পরে ?
২৫টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
ছবিতে এত সুন্দর ইলিশের সাথে চমৎকার খিচুড়ি।
আর লেখাও ভাললাগার মতোই।
অথচ নাম কি না জগাখিচুড়ি!!!!!!
আরজু মুক্তা
নামটাই পছন্দ হলো না?
গল্প পছন্দ হয়েছে শুনে ভালো লাগলো।
শুভ কামনা ভাই
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সত্যিই তো
করোনা ভাইরাস তো মাস্ক পরে না!
লক ডাউনে ঘর ফাঁকা
কিছু না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে চোর খেয়েছে খিঁচুড়ি।
ছবিটা কিন্তু দুর্দান্ত।
অতিশয় মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
আরজু মুক্তা
বাস্তবতা। সবারি একি অবস্থা। লক ডাউনে ইনকাম কমে গেছে। বাজারও কমেছে।
সুন্দর বললেন। শুভ কামনা সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
ফটফটানি লেখা কিন্তু বরাবরের মতই ফাইন, সে রম্যের ছলে বলুন বা অনুগল্প ভেবে লিখুন।
ইলিশের গপ ঠিকাছে, তবে ছবির ইলিশ ইলিশ-না!! অবশ্য কোয়ারেন্টাইন শরীর বলে চালাতে পারেন।
মেথি খিচুরি এই প্রথম জানলাম। গুড।
মোরা কিন্তু ইলিশের মানুশ, এই বক-ইলিশের বেইল এখানে নাই।
তা দশ দিন বাদে লিখলে পাঠক তো হেসকি তুলে খাবি খেতে থাকবে।
আরজু মুক্তা
কোয়ারেন্টাইন্ত ইলিশ। হা হা।
ইলিশ মৌসুমি তাহলে ইলিশ পাচ্ছি।
বাড়িতে ছিলাম। তাই বিরতি। লেখা চলবে।
শুভ কামনা
আলমগীর সরকার লিটন
আগে অনেক ইলিশ খাইছি এখন ইলিশ খাইলেই এলার্জি হয় ত রাতে ঘুম পারা যায় না মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
হা হা। তাই বলে এই মজার মাছ বাদ। কাভি নেহি। মাছও খাবো। ওষুধও খাবো।
শুভ কামনা ভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমি কিন্তু এ লেখার কিছুই বুঝলাম না। আসলেই লেখকদের মাথা আউলা ঝাউলা কিছুই বোঝা যায় না।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
গল্প লেখার সময় তিনটা জিনিস খেয়াল করতে হয়। টাইম, স্থান, এ্যাকশন। এখানে লক ডাউন, মাস্ক এবং এগুলো কারণে যেসব পরিস্থিতি মোটামুটি উপস্থিত। আর লকডাউনে আমাদের যে অবস্থা তা দুই এক লাইনে বলা হইছে। গল্প পড়ার সময় কি ওয়ার্ড গুলো বের করে পড়লে আরও ভালো বোঝা যায়।
লেখকদের মাথা আউলা না। পাঠক কীভাবে নেয়, সেটাই বড়।
আর কোন প্রশ্ন?
শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মজা পেয়েছি রম্য পড়ে। খিচুড়ি সাথে ইলিশ ভাজি দেখে লোভ সামলানো বড় দায়। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
একদম। মজাদার খাবার। চোরেরও একি অবস্থা।
শুভ কামনা সবসময়
প্রদীপ চক্রবর্তী
বৃষ্টির দিনে ইলিশ মাছের ভাজি আর খিচুড়ি সে তো বেশ জম্পেশ খাবার।
আর এ খাবারের রসাত্মক গল্প বেশ ভালো লাগলো, দিদি।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগতেই হবে। দিদি বলে কথা।
শিপু ভাই
ইলিশ খিচুড়ির দাওয়াত চাই
আরজু মুক্তা
আচ্ছা। রান্না করেই দাওয়াত পাঠাচ্ছি।
অনেকদিন পর। কেমন আছেন ভাই?
হালিমা আক্তার
বৃষ্টির দিনে ইলিশ আর খিচুড়ি, সাথে যদি থাকে আচারের ছোঁয়া। চলবে ভরপুর খাওয়া দাওয়া। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
এটা চোরও বুঝে গেছে।
শুভ কামনা আপা
শামীনুল হক হীরা
বেশ মনোহর।।।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সাবিনা ইয়াসমিন
পদ্মার ইলিশ, চাঁদপুর এর ইলিশ, তাজা ইলিশ, ডিমওয়ালা ইলিশ, পুরুষ ইলিশ, জাটকা ইলিশের সাথে যোগ হলো কোয়ারেন্টাইন ইলিশ! দোকানীরা পারেও। ব্যবসা করতে কতইনা ফন্দি ফিকির করা লাগে তাদের। ভাগ্যিস তারা ইলিশের মুখে মাস্ক পরানো শুরু করেনি। তবে লেখক যদি চাইতেন ইলিশের মুখে মাস্ক লাগিয়ে নেয়া ব্যাপার ছিলো না।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাজারে গেলে, ঘুমের মধ্যেই রান্না করলে আব্দুল ভুতের মামদো চোর ইলিশ খিচুড়ি খেয়ে ভাগবেই 😀😀
রম্য বেশ উপভোগ্য হয়েছে, আরও লিখুন।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
ভালো পয়েন্ট যোগ করলেন। অনেক সময় কমেন্ট পড়েও আইডিয়া মাথায় চলে আসে।
চোরদেরও যে অবস্থা পেট ভরলেও লাভ।
শুভ কামনা সবসময়
কামাল উদ্দিন
আজকের বৃষ্টির দিনে এমন একটা উভারলোড খিচুরি খেতে পারলে মন্দ হতো না 🙂
আরজু মুক্তা
বৃষ্টি খিচুরি চা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন কেমনে পাঠাই? সে চিন্তাই আছি।
শুভ কামনা
কামাল উদ্দিন
হুমম, চিন্তা কইরা ঠিকানা বইলা ফালান, আমি দৌড় লাগাই 🙂