FIRE

রোকসানা খন্দকার রুকু ৬ জুন ২০২১, রবিবার, ১০:১১:০৪অপরাহ্ন মুভি রিভিউ ২২ মন্তব্য

তসলিমা নাসরিনের ‘শোধ’ উপন্যাস পড়েছিলাম। ঢাকা ভার্সিটির ফিজিক্স এর মেয়ে বিয়ে করে, বিয়ের রাতে চাদর কেন ভেজে না এই সতীত্ব পরীক্ষা করা হয়। একসময় প্রেগন্যান্ট হওয়া মেয়েটির বাচ্চাও বিয়ের আগের ও অন্যের বাচ্চা হয়ে যায় কারন তার অনেক ছেলেবন্ধু। পরে সেটি এবোরশ্যান করে ফেলা হয়। কিন্তু স্বামী বুঝতে পারে না মায়ের কষ্ট। জরায়ু থেকে এক টুকরো মাংস পিন্ড কেটে বের করে আর মায়ের কাছে মনে হয় যেন তার কলিজা ছিঁড়ে/ কেটে বের করা হচ্ছে।

এমন কষ্টের অনূভুতি শেষ হয়না। মেয়েটি প্রতিশোধ নেয় সত্যি সত্যি অন্যের বাচ্চা পেটে ধারণ করে। অবাক হলেন? এমন প্রতিশোধ কজনই বা পারে নিতে। আজকের ২০২১ এ এসেও মেয়েদের ভার্জিনিটির পরীক্ষা হয়। আপনি মুখরা হলে সমাজ বহিস্কার করে। যেমন তসলিমা নাসরিনের বহিস্কার করা হয়েছিল। এমন অনেক মানুষও আছেন যারা তাঁর একটি বইও পড়েন নি কিন্তু গালি দেন শুনে শুনে। নারীদের ভেতরের কথা, কষ্টের কথা, চাওয়ার কথা সহজে বলা মানেই সে নষ্ট মেয়ে।

আজ ইউটিউবে মুভি খুঁজতে গিয়ে পেলাম শাবানা আজমী ও নন্দিতা দাসের ‘ ফায়ার’ মুভিটি। তারা মানেই অবশ্যই চমক হবে, শুরু করলাম দেখা। ও মাই গড ১৯৯৭ সালেও পরিচালক দীপা মেহতা সাহস দেখিয়েছেন। আপনারা কি বলবেন জানি না আমি তো সাধুবাদ জানাবো। এটি পুরুষদের প্রতি হুমকিস্বরুপ!

তবে শেষটুকুতে তারা তসলিমার মত সাহসী  হতে পারেন নি। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী নামক দেবতা। যিনি অধিকাংশ সময় ধর্ম-কর্ম, পুজা-পার্বন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এমন দেবতুল্য মানুষটি শাবানা আজমীর স্বামী। যিনি আধা নপুংশক, স্ত্রীর মূল্য কোনদিন দিতে পারেন নি। নিজের সেবা , সংসার , বাবা- মায়ের বাইরে একটা মেয়ের কোন জীবন নেই, চাওয়া নেই এমনটাই তার অভিপ্রায়।

নন্দিতা দাস নতুন বিয়ে করে শাবানা আজমী তথা রাঁধার  জা হয়ে আসেন। নন্দীতার স্বামীও আর এক দেবতা যিনি অন্য মেয়েতে আসক্ত এবং তাকেই সারাক্ষন পুজো করেন। বিবাহিত জীবনের কোন স্বাধ নন্দিতা দাস পান নি। এদিকে বড় জায়ের সাথে তার মোটামুটি সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক রাতে ক্রন্দনরত অবস্থায় শাবানা আজমী নন্দিতা দাসকে দেখে শান্তনা দিতে যায় আর সেদিন থেকে কাহিনী ঘুরে যায় অন্যদিকে। বললাম না দেখে নেবেন!!

সমালোচকদের মতে, এটি সমকামিতার মুভি। না তা নয়। দুজন স্বামী দ্বারা অবহেলিত মানুষ তাদের একাকিত্বতা কিংবা যৌন্যতা যেটাই বলেন, তা কাটাতে গিয়ে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরে। আর এই নেগেটিভ দিকটা তৈরি করছে পুরুষরা।

জীবনটাকে শেয়ার করার জন্য একজন মানুষ খুব দরকার। মনের চাহিদাই বড় চাহিদা এটা আমরা বুঝতে পারি না। সংসার মানে খাওয়া, ঘুম আর দৈনন্দিন কাজ তার পাশাপাশি পুরুষ আশ্রয়ই যথেষ্ঠ মনে করা হলেও তা নয়!

এই এক সমাজ যেখানে নারীরা অন্য ঘরে মানে পতিতা আর পুরুষ যত পাত্রেই খেয়ে থাকুক না কেন তার সেটা শারিরীক অধিকার। নপুংশক স্বামী কিংবা নষ্ট স্বামীকে দেবতা মনে করে সংসার করতে হবে এমনটাই নিয়ম! যদি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যান তাহলে সেটা নারী অধিকার নয় বরং সেটা জরায়ুর স্বাধীনতা। যেখানে দাম্পত্য অধিকার না পেলে একজন পুরুষ আবার বিয়ে করে, পতীতালয়ে যায়। আর নারী হাত বাড়ালেই নষ্ট, স্বামীর ঘর ছাড়া কিংবা ডিভোর্স। দোষ সবসময় নারীর!

আর এসবের ভয়ে হাজার হাজার মেয়ে মুখ বুজে সহ্য করে সংসার নামক ঘানি টেনে যায়। সবাই মুভিটি দেখবেন আশা করি। আমার ভালো লেগেছে একজন চরিত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে। একজন নারী কেন এমন হয় বা হতে পারে আমরা সেটা কখোনো কি ভেবে দেখি?

চলুন সমাজকে বদলে দিতে মানসিকতার পরিবর্তন আনি। আপনার অযোগ্যতাকে ঢাকবার জন্য অন্যকে অপরাধী বা তাকে সাজা দেবার কোন অধিকার নেই। নারীরাও মানুষ আপনার মতোই তারও মন ও মনের সকল চাওয়া বিদ্যমান। তার এটা অধিকার, লাজ নামের শৃঙ্খল নয়???

 

Rating

7.2/10  (5,771)

 

Cast:

শাবানা আজমী( রাঁধা)
নন্দীতা দাস ( সীতা)জাভেদ জাফরী

Written and Directed by

দীপা মেহতা।

ছবি নেটের

৯৯১জন ৭৫৭জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ