
দুই বন্ধুর কাজ হলো পতেঙ্গার মেরিন ড্রাইভের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে কর্ণফুলী আর বঙ্গোপসাগরের উথাল পাতাল ঢেউ দেখা। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির কেমন জানি একটা জলপ্রপাতের মতো শব্দ হয় তা শোনা। আর হুটহাট প্ল্যান করে বেড়িয়ে পরা। ছুটি পাইছি। কোন কথা নাই। ব্যাগ গোছাও। ছুটে চলো।
সবাই আমারে ডাকে সন্জীব চাকমা। আদতে আমি পাহাড়ি নই ; বাঙালি। অচেনা টানে আমিও পাহাড়ি ঝর্ণা হয়ে থেকে গেছি। গতবছর বৈশাখি উদযাপন করেছিলাম রাঙামাটিতে। ওর যেহেতু গাড়ি। শুধু আমার হ্যাঁ বলার অপেক্ষা। আমি ঝট করে বললাম, ” চলো, লাল পাহাড়ের দেশে। ”
আমরা উঠলাম সাজেকের “মেঘ রোদ্দুর ” কটেজে। সাজেকে বেড়াতে গিয়ে একটা কথা মনে হয়েছে। পাহাড়িদের চেনা পরিচিত জায়গাগুলো মানুষের সাথে সাথে প্রকৃতিও তার সবুজ, হলুদ, লাল, কালো নানা রঙের নিশান উড়িয়ে দেয় জোনাকির মতো। ঝাড়লণ্ঠন আকাশের চাঁদোয়ার নীচে অন্ধকার রাতে। এভাবে হয়তো, বনের সাথে বন, ফুলের মধ্যে ফুল, কিংবা স্মৃতির মধ্যে স্মৃতি বেঁধে যায়। চিনবার উপায় নাই।
মেঘ দেখার জন্য দুই বন্ধু খুব সকালে উঠে যেতাম। দূর থেকে চোখে পরতো ” পাহাড় কেমনে আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমায়। ” মনে হতো সবুজ কার্পেটে সাদা ধোঁয়া। পাহাড়িরা কোন সকালে উঠে দূরের ঝর্ণা থেকে গোসল সেরে পানি নিয়ে আসতো।
“মা গো !”
শব্দশুনে আমি আর ইমন বাহিরে বের হয়ে দেখি ; তিন পাহাড়ি সুন্দরির, একজনের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেছে। আর পানির কলস থেকে পানি পরে একাকার। মনটাই খারাপ হলো। বেচারি এতো কষ্ট করে উপরে উঠেই এই দশা। দ্রুত রুমে গিয়ে স্ট্যাপলার এনে স্যান্ডেল ঠিক করে দেই। মাথার খসে পরা বুনো ফুলটাও দেই কুড়িয়ে। কেমনে জানি পাঁচদিনেই গাঢ় ভাব হয়ে গেলো। গল্প করার থেকে শোনা হয় বেশি। ওদের কণ্ঠের যাদুতে আমরা মুগ্ধ। আতিথেয়তাও কম যায়না। কতো রকমের যে বুনো ফল খেলাম। কচি বাঁশের তরকারি। বন মোরগ।
ফেরার সময় ঝুড়ি বোঝাই করে আমলকি, কলা, কচি বাঁশ, বাঙ্গি, বিভিন্ন পিঠা দিয়েছিলো। শহরে ফিরে মন বসে না। মন তো লাল পাহাড়ের সবুজ কার্পেটের বুনো ফুলের অকৃত্রিম সৌন্দর্যের চোখের চাহনীতে আটকে গেছে।
ইমন বলে, ” বাদ দে। তোকে মারিয়া মাটিতে পুঁতে রাখবে। কাজ কর। সমুদ্রের ডাক শোন।”
ওকে না বলেই রওনা দেই। পৌঁছে দেখি, চোখের নীচে কালি। নাম তার কনকবালা। আমাকে দেখে আবেগে উচ্ছ্বসিত। ওর মাকে রাখ ঢাক না রেখে বললাম, ” বিয়ে করবো !” শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো, ” গেলে একবারে যাবা। ”
সেই থেকে ‘মেঘ মাচাং ‘ কটেজ এর কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট দিয়েছি। দুজনেই কাজ করি। ভালোবাসা থাকলে, সব কিছুই জয় করা যায়।
ইমন মাঝে মাঝে আসে আমাদের দেখতে। ওকে বলি, কিছু না দিতে পারলেও তোকে ক্যামিক্যাল মুক্ত ফল সবজি খাওয়াতে এবং দিতে পারবো।
সুখেই আছি। আপনারাও চলে আসেন ” লাল পাহাড়ের দেশে। ”
★ ছবি : নিজ
৩৫টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
ভালবাসা থাকলে সবই সম্ভব। বেঁচে থাকুক এমন অপার্থিব ভালবাসা। মন কেমন করা গল্প। আমারো ইচ্ছে করে লাল পাহাড়ের দেশে যেতে।
আরজু মুক্তা
বেঁচে থাকুক এমন ভালোবাসা।
শুভ কামনা। অনেকদিন পর কমেন্টে এলেন।
বন্যা লিপি
এহন থেইক্কা খালি কমেন্টামু ভাবছি। যা পারি তাই। ১/২/৩ লাইনে। কিছু ভালো লাগে না আর।
আরজু মুক্তা
চলুক তাহলে। আমি আছি তোমার সাথে
স্বপ্নীল মেঘ
নজরুল ইসলাম এর অনুগল্প বলেন আর ছোট গল্প বলেন আমি অনেক পড়েছি। বলার অপেক্ষা রাখেনা, উনার রচিত প্রায়সব ই পড়ে নিয়েছি। কোথাও বিরক্তির আশ্বাস পাইনি। বরং ডুবে যেতাম ভালো লাগার এক চরম মুহূর্তে।
উনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরো অনেক ছোট গল্প লিখতেন। আজ উনি নেই তো কি হয়েছে? আরজু বুবু আছেন তো। একি ফ্লেভার পাই, একি রকম ভালো লাগা কাজ করে আপনার অনুগল্প পড়ে।
বিশেষ করে, আপনার প্রতিটি গল্পের শেষ টুকু খুব চমৎকার ভাবে রচনা করেন যা নজরুলকে স্মরণ করায়।
ভালো থাকুন। আরো লিখুন। শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
কি যে বলেন? আমি অতো ভালো লিখি না। আমিতো সবার লেখা পড়ি ও শিখি।
তবে, একজন মানুষের কথা না বললে নয়। তিনি হলেন ছাইরাছ হেলাল। যার অনুপ্রেরণায় এতোটুকু আগানো।
দেয়া করবেন
কামাল উদ্দিন
গল্পটা হয়তো কাল্পনিক, এমনটা সত্যি হলেও আমি বলতাম খুব ভালো হয়েছে। কারণ মানুষের জীবন একটাই, সেখানে ভালোবাসা আর ভালোলাগা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারাটা খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। তবে মানিয়ে নেওয়াটা খুব কঠিন হবে এটা বলাই যায়……….শুভ সকাল আপু।
আরজু মুক্তা
একেবারেই কাল্পনিক নয়। গল্পটা কিছুটা সত্যও বটে।
তবে আপনার কমেন্ট চমৎকার। তবুও এমন ভালোবাসা বেঁচে থাক।
নিরাপদে থাকুন
জিসান শা ইকরাম
কোনো বড় লেখা বা সিরিজের সুচনা পর্ব লেখা মনে হচ্ছে এটিকে।
আরো লেখা আসবে মনে হয় এ বিষয়ে।
সাজেক যাওয়া হয়নি এখনো, যেতে হবে অবশ্যই। এত সুন্দর স্থান দেখতে না যাওয়াও অন্যায়।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা ভাই তাহলে চলেন সাজেকে একটা ট্যুর দিই সবাই। কেমন হয় সবাই আওয়াজ দিয়েন?
আরজু মুক্তা
না, এ ব্যাপারে দাদা কিপ্টুস।
কামাল উদ্দিন
দাদা কিপটুস নয়, লক ডাউন শেষ হলেই সবারে নিয়া ছুট লাগাবে নিশ্চিৎ 🙂
আরজু মুক্তা
সাজেক বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রং ধারণ করে। সময় করে ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে।
আমার সাজেক ভ্রমণ নিয়ে একটা পোস্ট ছিলো ব্লগে। কিন্তু ছবিগুলো ডিলিট হয়ে গেছে কেনো জানিনা।
আরজু মুক্তা
কামাল ভাই, এমন প্রত্যাশায় নাকে সরিষার তেল দিলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন প্রেম বেঁচে থাকুক যুগে যুগে এই পৃথিবীতে। খুব সুন্দর প্রেমের গল্প। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
আরজু মুক্তা
অনুে্রাণিত হলাম।
শুভ কামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহ! দারুণ গল্প।
এভাবেই ভালোবাসা বেঁচে থাকে। ভালোবাসার শক্তি এমন করে কাছাকাছি নিয়ে যায়। গল্পটা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।
আর ছবি…….. আমি একদিন এই লাল পাহাড়ে যাবো ইনশাআল্লাহ 😍😍
ভালো থাকুন, শুভ কামনা অবিরাম 🌹🌹
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলেই লেখা সার্থক।
একা একা যাইয়েন না। আমাকেও সাথে নিয়েন।
ভালোবাসা বাঁচুক নিভৃতে নীরবে
তৌহিদুল ইসলাম
একদিন সুযোগ পেলে যাব লাল পাহাড়ের দেশে। ভালোবাসা বেঁচে থাকুক প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যময় সবুজে।
ভালো থাকুন আপনিও।
আরজু মুক্তা
আমিও যাবো আপনার সাথে। মনে থাকে যেনো। সবিজ াতেজ ভালোবাসা গুলো বাঁচুক।
শুভ কামনা ভাই
তৌহিদুল ইসলাম
ইনশাআল্লাহ আপু।
আরজু মুক্তা
★ সবুজ সতেজ
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাবা মা ছেড়ে চলে গেলো। এতো সাহস সবার হয় না।
বেঁচে থাকুক ভালোবাসারা এভাবে।
আরজু মুক্তা
ভালোবাসাতে প্রথমেই সাহস দরকার।
থাকুক এই ভালোবাসাগুলো বেঁচে।
শুভ কামনা
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় সাজেকের রূপ-রস-ভালোবাসা টের পাওয়া যাচ্ছে।
আহা গল্প!! সাজেক সত্যি সত্যি ধরা দিয়েছে।
বুঝতে পারছি, দাক্তার হলে কত কত সুবিধে!!
আরজু মুক্তা
এমুন দাক্তার হইতে চাই না।
একেবারে হক কথা। সাজেক রূপ রস ভালোবাসা নিয়েই উপস্থিত।
নিরাপদো থাকেন। শুভ কামনা
আরজু মুক্তা
★ নিরাপদে
হালিমা আক্তার
চমৎকার গল্প। ভালোবাসায় সাহসী হতে হয় । ভালোবাসার সাথে সাজেকের চমৎকার বর্ণনা। খুব ভালো লাগলো। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
আসলেই সাজেক রূপের রাণী। ভালোবাসা এমনি হওয়া উচিত।
শুভ কামনা আপা
নার্গিস রশিদ
বর্ণনা শুনে লাল পাহাড়ের দেশে মন চলে গেছে। ভালো লাগলো ।
আরজু মুক্তা
এজন্যই এভাবে লেখা। লাল পাহাড়ের দেশে যাই, বুনোলতায় সুখ খুঁজে পাই।
শুভ কামনা সবসময়
প্রদীপ চক্রবর্তী
এমন সিরিজের গল্প আমার কাছে বেশ পছন্দের।
কাল্পনিক ও সত্য যেখানে মিলেমিশে আবহ তৈরি করে।
যা এই, লাল পাহাড়ের দেশে যা গল্পে বিদ্যমান।
বেশ লাগলো,দিদি।
আরজু মুক্তা
দারুণ কমেন্টে চমৎকৃত।
ভালো লাগা রাখলাম। আপনাদের এমন কমেন্ট পেলে গল্প চলবেই।
শুভ কামনা
পপি তালুকদার
ভালোবাসার গভীর একটা টান আছে যার জন্য অনেক কিছু করার যায়।। দারুণ গল্প।ভালো লাগলো।
লাল পাহাড়ের দেশে যেতে চাহি মনে!!
আরজু মুক্তা
ভালোবাসায় বিশ্ব জয় করা যায়। চলেন ঘুরে আসি।
শুভ কামনা