
কৃষকের কৃষি ঋন:
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা কৃষি ব্যাংককে বলা হয় কৃষকের ব্যাংক। যারা নাকি সর্বদা কৃষক সেবায় নিয়োজিত। কৃষক উন্নয়নের জন্য তাদের বিভিন্ন সেক্টর যেমন- মৎস্য চাষ, গাভী পালন, ছাগল পালন, মৌসুমী ফসল যেমন- আলুসহ অন্যান্য এ জাতীয় সবজি চাষের জন্য লোন দিয়ে থাকেন। একজন কৃষক তার জমির দলিল ব্যাংকের কাছে জমা রেখে বিপদে কিছু টাকা লোন নিয়ে চাষ- বাস করতে পারেন।
গতবছর করোনাকালীন সময়ে সরকার বিপুল পরিমান টাকা কৃষকদের জন্য মাত্র ৪% সূদে ছেড়েছিল। আমার আশেপাশের বন্ধুরা অনেকেই টপাটপ নিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ দশ লাখ পর্যন্ত নিচ্ছে। আমার নেবার ইচ্ছে ছিলো না। গৃহকর্তা একটু বেশীই বৈষয়িক। তিনি বারবার ফোন করে বলছেন অনেক কম সূদ নিয়ে নাও কাজে লাগবে।
প্রচন্ড শীত মাথায় নিয়ে মোটামুটি একটু ভারিক্কি টাইপ পোশাকে যেন একটু বয়স্ক লাগে এমন সেজে গেলাম। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। তেমন কাউকে চিনিও না।
ম্যানেজার সাহেব গুরুগম্ভীর হয়ে বসে আছেন। আমার মতো গ্রামের একজন মহিলা কৃষককে দেখে তিনি একটু বিচলিত। আগা গোডা তাকিয়ে আমি কি করি জানতে চাইলেন?
-কিছু করি না, আমি কৃষক।
-লোন আপনিই নেবেন। জমি কি আপনার নিজ নামে?
-কেন মহিলারা লোন নিতে পারে না বুঝি?
-তা পারে কিন্তু ভরসা কম। হাজব্যান্ড কি করেন?
-মনে মনে ভাবছি, ভাই স্বামী তো আর জমা নিবেন না। নিবেন তো জমির দলিল। মজা করে বললাম, স্বামী গার্মেন্টস এ চাকরী করতো, তা করোনায় নেই। তাই দোকান ধরিয়ে দেবো লোন খুবই জরুরী
এবার ম্যানেজার অন্য সুত্রে গেলেন, বাবার বাড়িতে জমি কিনেছেন কিন্তু থাকেন আবার অন্য জায়গায়। এরকম অনেক দেখেছি লোনের সময় ঢাকা পালাতে। আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি লোনের সময় এলে হয়তো আপনাকেও পাওয়াই যাবে না। আমার লোকজন কোথায় খুঁজবে!
আমি তাকে অনেক করে বোঝালাম পালাবো না। বাধ্য হয়ে তিনি বিরাট এক কাগজের লিষ্ট ধরিয়ে আমায় বিদায় করলেন।
১. জমির খারিজকৃত মূল দলিল।
২. খাজনা/ খারিজের কপি।
২.ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি।
৩. ছবি।
৪. নমীনির ছবি ও ভোটার আইডির ফটোকপি।
৫. দুটো ব্যাংক স্টেট মেন্ট সেখানে কোন লোন আছে কিনা।
৬. ব্যাক্তি নামে জমির হোল্ডিং নম্বর।
আরও থাকতে পারে মনে নেই। এতোগুলো কাগজ রেডি করতে আমার জীবন প্রায় পানি হয়ে গেলো। পনের দিন পর হাজির হলাম। আমাকে দেখে ম্যানেজার বাকরুদ্ধ ও হতাশ। এ কোন মহিলা? এমন নাছোর বান্দা মহিলা তিনি জীবনে দেখেন নি। সেদিন বিদায় করে ভেবেছিলেন উটকো ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়া গেলো।
আপনি আসতেও দেরী করে ফেলেছেন। ৪% সূদ এর লোন শেষ হয়ে গেছে। বুঝলাম,ডাহা মিথ্যা কথা কিংবা শেষ হতেও পারে। কারন মাত্র পনের শতক বাডির জমির দলীলের বদলে আমার এক বন্ধুকে সাতলাখ টাকা নিতে দেখলাম। এবং তাও চারদিনের মাথায়। সে বলেছিলো পরিচিত ও রেফারেন্সেই সব লোন শেষ হয়ে যায়।
তিনি আমায় জানালেন, আমাকে আলু চাষের জন্য লোন নিতে পারেন। তাও জমি লাগবে অনেক। পৈত্রিক সম্পত্তিতে দলীল না থাকলেও পাবো না। এ দলীল যতোক্ষন না ভাইবোন মিলে বাটোয়ারা করে নতুন করে দলীল লেখালেখি না হয় ততোক্ষন আপনি দলীল পাবেন না। সুতরাং আমি বাবার জমি থেকে লোন পাব না। আমি পরে জেনেছি, এই শষ্য লোন কৃষক জমি রেখে সারাবছরই নিতে পারেন। ম্যানেজার আমাকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢেকে’ পাঠিয়েছেন।
আমার কেনা জমির তারও সব খারিজ করা নেই। জমি খারিজে আর এক মহা হ্যাপা। এসিল্যান্ড এর সাথে ঘুষজনিত তর্কাতর্কীর পর তিনি সমস্ত কাগজ ঝুলিয়ে রেখেছেন।তিনি না যাওয়া পর্যন্ত আমার নামখারিজ করতে পারবো বলে মনে হয় না। যা দলীল দিয়েছি তাতে অল্প লোন পাব। দুই একর জমির জন্য মাত্র আশি হাজার।
ম্যানেজারকে প্রশ্ন করলাম, দুই একর জমির বাজার মূল্য কত আপনি নিশ্চয়ই জানেন?
-সে যাই হোক এটাই পাবেন? আর আপনি তো বোধহয় চাকুরী করেন সেখান থেকে নিয়ে নেন।
-কেন ভাই, চাকুরী থেকে তো ৪% সূদ এ লোন পাবো না। আর আমি কৃষক! সরকার আমার জন্য করোনাকালীন সাহায্য দিয়েছে এটা আমার অধিকার আমাকে কেন দেবেন না? আমি অবশ্যই নেব। জমির দলীল যেখানে জমা আমি ভারতে যাই আর লন্ডনে যাই আপনার তাতে তো কিছু না। আমি সময়মতোই আসবো। আর না এলে জমি বেঁচে টাকা নিবেন।
নানারকম খোঁজখবর নেবার পর এবং আমার একমাসের দীর্ঘ কষ্টের ঘোরাঘুরিতে ম্যানেজার অতিকষ্টে মাত্র আশিহাজার টাকা লোন দিলেন। তা থেকেই স্ট্যাম্পের টাকা কাটলেন, একাউন্টের টাকা কাটলেন,তারপর যা থাকে তাই আমার।
আর আমার ন্যায্য হক যেটা করোনাকালীন পাওয়ার কথা সেটা খেলো স্বজনপ্রীতি!!
(সাম্প্রতিক ঘোষনা-
“প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি স্কিম গঠন করবে। এখানে শুধু কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড তৈরি করব। এখানে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।’ তিনি জানান, এই তহবিল থেকে গ্রামাঞ্চলে যাঁরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি, তাঁদের দেওয়া হবে। যাঁরা পোলট্রি, কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবেন, তাঁরা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন, যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সরবরাহ হয়। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন।”)
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
বিনা ঘুষে কাজ হয়ে গেল! নাকি ভয়/টয় দেখিয়েছেন!
কথা/ঘোষনা আর কাজ এক রকম হয়-না/হয়-নি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হেলাল ভাই ঠিকই বলেছেন , আপনি যে মানুষ তাতে কিছু একটা করেছেন তা না হলে এটাও পাবার কথা নয় যতটুকু শুনেছি। যদিও শোনা কথার মূল্য নেই। কিছুটা হলেও আদায় করে ছেড়েছেন। স্যালুট জানাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা নাছোর বান্দা আর কি! আমি কোনকিছুর শেষ না দেখে ছাড়ি না এটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঘুস আর আমি কখনোই না। যে লোনটা দিয়েছে সেটা কৃষক সারাবছরই তুলতে পারে। কিন্যতু করোনা কালীন লোন তো দেয়নি। কোটি কোটি টাকা কাকে দিয়েছে ম্যানেজারই ভালো জানে।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
দেখি পোল্ট্রি করা যায় কিনা।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওরে বাবা পোল্ট্রিতে তো আরও খারাপ অবস্থা। গরুর খামারের অনেক ডিমান্ড। এটা ট্রাই করতে পারেন।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এভাবেই সরকারের সুযোগ-সুবিধা গুলো গ্রাহক পর্যায়ে যেতে যেতে নিচের তলানি টুকুই জুটে । প্রশাসন, উপরের দিকের লোকজনের পোয়াবারো থেকে পোয়া চৌদ্দ, বিশ হতে সময় লাগে না। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিক কথা দিদিভাই।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
হালিমা আক্তার
লোন নিতেও ও এত ঝামেলা। শুভেচ্ছা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
রেফারেন্স ছাড়া লোন সহজে হয়না। ম্যানেজার আপনার কাছ থেকে ঘুষ নিতে পারবেনা ভেবে অসহযোগিতা করেছে।
সরকারের এই প্রনোদনা প্রকৃত কৃষক খুব কম পেয়েছে।
আর জমির নামজারী! ঘুষ দিলে দ্রুত হবে। না দিলে নামজারী হবেই না। আমার আছে এ বিষয়ে করুন ইতিহাস। ভাবছি সে ইতিহাসকে পোস্ট দিয়ে প্রকাশ করবো।
পোস্ট ভালো হচ্ছে।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা ভাইয়া। পোষ্ট দিয়ে দিন ।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা দেবো, লিখে নেই আগে।
তৌহিদুল ইসলাম
কৃষিঋণ পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। যাক তবুও আপনি পেয়েছেন। তাড়াতাড়ি শোধ করে দিয়েন, না হলে সুদ হবে অনেক। এর কারনেই কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম অবশ্যই। ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া