
জীবনে চলার পথে মাঝে মাঝে এমন কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করি যা কখনো হাসায় কখনো স্তব্ধ করে দেয়।
এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়তো সবার জীবনে কম- বেশি ঘটে থাকে।তেমনই একটি অভিজ্ঞতা যদিও এখন সেটা মজার তখন ছিল লোমহর্ষক ঘটনা।
প্রতিদিনের মতো কলেজ থেকে বাসায় আসার জন্য কলেজ গেটের সামনে আমি ও আমার দু’জন বন্ধু দাড়িয়ে ছিলাম।
প্রতিদিন যেভাবে তাড়া থাকে সেই দিন তেমন তাড়া ছিল না।
যদিও মাঝে মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষার প্রথমে যে গাড়িটি আসলো সেটা না উঠে পরবর্তী গাড়ির জন্য পাশে চলে গেলাম।
যথারীতি পরের গাড়ি আসলো আমার তিনজন উঠে পরলাম।গাড়িতে যাত্রী তেমন ছিলনা।তবে অনেকগুলো দুধভর্তি কলসি তোলার জন্য মাঝখানের পথে যাত্রী দাড়ানো অবস্থা ছিলনা৷ আমার তিনজন পিছনের দিকে সিটে গিয়ে বসলাম।গাড়ির পিছনের দিকে দরজাটা ছিলনা তাই যাত্রী যা উঠার সামনের দিক দিয়ে উঠতেছে।
বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। আমার নিজেদের মধ্যে কথা বলছি। গাড়িও স্বাভাবিক গতিতে চলছে।কিছু দূর যেতেনা যেতে বিপত্তি ঘটলো। গাড়ি একটা ব্রিজের উপরে উঠার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই গাড়ি চলছে না। হঠাৎ বিষয় টা আমাদের নজরে এলো। ডাইভার বারংবার চেষ্টা করেই যাচ্ছে।যাই হোক আমরা আবার আমাদের কথা মনোযোগ দেই।এমন সময় গাড়ি থেকে নেমে এক মহিলা উন্মাদের দৌড়াছে আর চিৎকার করছে গাড়িতে আগুন লাগছে।তার দৌড় আর চিৎকারে সবাই নড়েচড়ে উঠলো।
আমরা তাকিয়ে দেখি সামনের দিকে ধোঁয়া, এরি মধ্যে যাত্রী যে যার মতো সামনের দিকে ছুটছে, কেউ কেউ জানালা দিয়ে লাফ দিচ্ছে! আমি হতবাক কি করবো! কলসির কারনে সামনে যেতে পারছিনা।আমার বান্ধবী সে জানালা দিয়ে লাফ দিবে তাই জানালার কাছে গেল, আমাকেও বললো চল জানালা দিয়ে লাফ দেই।আমি তখনও নির্বাক ভঙ্গিতে সিট ধরে দাড়িয়ে আছি।কি করবো! এতো অল্প সময়ে ঘটনা ঘটছে যে বুদ্ধি কাজ করছেনা। সমস্ত শরীর কাঁপছে।এমন সময় আমাদের বন্ধু বলল,দাড়া দেখি কি ঘটছে।এতোক্ষণে অনেক যাত্রীর নামা শেষ।
যাইহোক আমরা সামনে দিকে আসলাম। হেল্পার বলল কিছু হয়নি। গাড়ি বারবার স্টার্ড দেয়ার কারনে ধোঁয়া হয়েছে।আর ঐ মহিলা আগুন মনে করে নেমে গেছে।
হেল্পার তো মহিলাকে আচ্ছা মতো গালাগালি করতেছে।আমরাও দু- চারটা কথা বলি। তারপর আমরাও অবশেষে নেমে পরি।
গাড়ি থেকে নেমে স্বাভাবিক হতে অনেকক্ষণ লাগে।
এখন স্মৃতিচরন করলে মজা পেলেও তখন ছিল ভয়াবহ মুহূর্ত।
স্মৃতি পাতায় রয়ে গেল জীবনের মজার কিন্তু ভয়াবহ বিপদের অভিজ্ঞতা।
২০টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
প্রথমদিকে লেখাটি পড়ে আগুন জেনে একটু ভয় লাগছিল, কিন্তু পড়ে শেষপর্যন্ত রাগ লেগেছে মহিলাটার কান্ড দেখে। মনে পড়ল চিলে কান নিয়ে যায় তার পিছনে আমরা ছুটছি।।।।। এরকম অনেক অভিজ্ঞতা আমারও আছে কোন একদিন লিখব। ভালো থাকবেন আপি।
পপি তালুকদার
অসংখ্য ধন্যবাদ। কান চিলে নিয়েছে সে রকম ই ঘটনা।
ভালো থাকুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভয়ের মুহূর্তে মানুষ বেশিরভাগ সময়েই দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলে, ব্রেইনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আগুন এমনিতেই ভয়ংকর। তার উপর যদি নিজের সাথেই এমন দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা আসে তাহলে হতভম্ব হবার জন্য দোষ দেয়া যায় না।
শেষটায় হাসলাম।
সুন্দর পোস্ট দিলেন। আপনার এমন লেখাগুলো পড়তে ভালো লাগে।
শুভ কামনা 🌹🌹
পপি তালুকদার
অনিঃশেষ ধন্যবাদ।
আসলে বুদ্ধি বিবেচনা সে মুহূর্তে হারিয়ে ফেলেছিলাম। যাই হোক শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি।
ভালো থাকুন ও নিরাপদে থাকুন।
তৌহিদুল ইসলাম
গাড়ি দুর্ঘটনায় মানসিক অবস্থা কেমন হয়ে যায় তার ভুক্তভোগী কী আমি নিজেই। কিছুদিন আগেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেচে ফিরে এসেছি। তাই আপনার মানসিক অবস্থা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছি। তবে দুর্ঘটনার মাঝে এমন হাস্য রসাত্মক বিষয় ঘটলে তা হাসির খোরাক হয় বৈকি।
শুভকামনা আপু।
পপি তালুকদার
হুম তা সত্যি। যদিও এখন হাসি পায় ঘটনা মনে পরলে তখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য অস্থির ছিলাম।
ভালো থাকুন সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রথমেই ধন্যবাদ অনুরোধ রাখবার জন্য। কলম চলুক।
বাহ্ মজার ছিল। কিছু মানুষ থাকেই এমন না জেনেই দৌড় দেয়। মজা হতো ওকে আরও দৌড়াতে দিলে কিংবা একটু আগুন ধরিয়ে দিলে দৌড়াতেই থাকতো।
আমি ভাবলাম আপনি যেহেতু জানালা দিয়ে নামছেন না দুধের কলস বোধহয় মাথায় ঢালবেন।
জীবন পুরোটাই একটা সাহিত্য। এমন গল্প আরও চাই!
পপি তালুকদার
মন্তব্যে মজা পেলাম।সুযোগ থাকলে মহিলাকে দৌড় দেয়াতাম।আসলেই জীবন ই সাহিত্যে ভরপুর।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
যাক আল্লাহ রক্ষার মালিক।বড় ধরনের কিছু ঘটেনি। হঠাৎ বিপদে পড়লে আমরা বুঝতে পারিনা কি করব। ধোঁয়া দেখে আগুন ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুভকামনা।
পপি তালুকদার
আল্লাহ রক্ষাকর্তা সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকুন।
আরজু মুক্তা
বিপদে ধৈর্য হারাতে নেই। কথাটা এমনি এমনি আসে নি।
হা হা।মজা পেলাম
পপি তালুকদার
ধৈর্য্য ধরে রক্ষা।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ভালো থাকুন সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
এ তো দেখছি ভয়াবহ অবস্থা, ভাগ্যিস জানলা টপকাতে হয়নি।
চলার পথে কত-কী-না আমাদের সামলাতে হয়।
আল্লাহ সহায়।
পপি তালুকদার
সত্যি মহা বিপদে থেকে বেঁচে ছিলাম। আল্লাহ ভরসা।
ধন্যবাদ জানাই মন্তব্যের জন্য
ভালো থাকুন।
আশরাফুল হক মহিন
ধৈর্য হারাতে নেই
দেশে আগুন লাগলে অস্বাভাবিক কিছু নেই
সবই স্বাভাবিক
শুভকামনা রইল
পপি তালুকদার
মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অতীতের এমন বিভৎস ঘটনা বর্তমানে হাসির খোরাক যোগালেও তখন কিছু হয়ে গেলে কতটা বেদনার, কষ্টের হতো তা যার সাথে ঘটে সেই বুঝে। ঈশ্বর সহায় ছিল বলে সেটা মামুলী ব্যাপার ছিলো কিন্তু এভাবে তো কত দূর্ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনার আমিও মুখোমুখি হয়েছিলাম গতবছর মার্চে।তবে হুড়োহুড়ি করে নেমে যাইনি সামনের সিটেই আমি আর আমার এক বোন ছিলো। দেখি ধোয়া উড়ছে নামতে যাবো তখন হেল্পার বললো ইঞ্জিনের গরমে পেট্রোল মাখানো কাপড় পুড়ে ধোঁয়া উড়ছে। তাই আর নামা হয়নি। ধন্যবাদ আপনাকে এমন ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। সবাইকে যানবাহনে চলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয়। এমন দূর্ঘটনা খুব খারাপ , ভুক্তভোগীরাই জানে। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
পপি তালুকদার
হুম সত্যিই তাই একমাত্র ভুক্তভোগী জানে পরিস্থিতি কেমন গেছে।সবাই কে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ভালো থাকুন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
গাড়িতে আগুন লাগলে যাত্রীরা আতংক গ্রস্থ হবেই, বুদ্ধি তখন কাজ করে না। যাচাই করারই বা সময় কই?
মজা পেলাম আসল ঘটনা পড়ে।
সুন্দর স্মৃতি, সুন্দর উপস্থাপনা।
পপি তালুকদার
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেকদিন পর আপনার মন্তব্য পেলাম ভালো লাগলো।।
ভালো থাকুন সবসময়।