
খাবেন?
হুম, শুধু চা।
দাড়িয়ে খেতে হবে, চেয়ার খালি নেই।
সমস্যা নেই আমি এখানেই আছি।
এখানেই আছি বলার পর আশপাশটায় চোখ বুলানো হলো, ফুটপাতের উপর ছোট্ট একটা টং দোকান। কেরোসিনের দুটো চুলা। একটা চুলায় মাঝারি সাইজের একটা কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে চিংড়ি মাছ আর রসুনের বড়া। অন্যটায় চায়ের কেটলি। রান্না, বিতরণ, টাকা লেনদেন সব কাজ দোকানি একা করছে।
এই জায়গায় প্রায়ই আসে সে। দুপুরের পর বেরিয়ে ছিলো, কিছু বই কেনার ইচ্ছে নিয়ে। বই হাতে পেতে বেশি কষ্ট হয়নি, বাড়ি যাওয়ার তেমন তাড়া ছিলো না। কেন জানি আজ তার মন খারাপ, একান্ত কিছু সময় দরকার ছিলো তার।
চায়ের দোকান থেকে একটু দূরে ফুটপাতের একধারে একটা নির্বাচনী পোস্টার বিছিয়ে সে বসে পরলো। অনেকেই এভাবে বসে আছে।
বিকেল/ সন্ধ্যা বেলায় এখানে মোটামুটি একটা ভীড় জমে উঠে। চা, ফুসকা চটপটি, পিঠা খেতে খেতে চলে নানা ধরনের গল্প আড্ডা। কেউ আসে দল বেঁধে, কেউ একা, ওরই মতো।
বইয়ের ১৭৯পৃষ্ঠা পড়া প্রায় শেষ, এমন সময় অনুভব করলো কেউ সামনে আছে।
দেখে আর কেউ নয় সেই চায়ের দোকানি, হাতে এককাপ চা।
< চা দিয়ে গেলাম দুইবার, এসে দেখি আপনি চা খান নাই। কাপ নিয়ে গেছি তখনো খেয়াল করলেন না। বই তো বাড়ি গিয়েই পড়তে পারতেন। এখন আটটার বেশি বাজে। দোকান বন্ধ করবো।
কিছু না বলে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চা খেলো। দোকানি তখন সব গোছাতে ব্যস্ত। টাকা আর চায়ের কাপ দিয়ে রিক্সায় উঠে সোজা বাসায়।
এরপর কেটে গেছে দুই বছরেরও বেশি। মন খারাপ হলে সে আর বাইরে বের হয় না। শখের বইগুলোয় ধুলো জমে থাকে, বইয়ের তাকে নতুন বইয়ের আগমন ঘটে, কিন্তু তাদের সাদরে গ্রহণ হতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।
দুইবছর পর ঘটনাক্রমে আবার সেখানে এলে দেখা গেলো কিছুই বদলায়নি। সেই আলোকিত রাস্তা, ভীড়, আড্ডা,,,সেই দোকানিও।
আজ চা খেতে ইচ্ছে নেই, বাড়ি ফেরার তাড়া ছিলো। কিন্তু থামিয়ে দিলো পিছুডাক!
< আরে আপনি! দাঁড়ান, কথা আছে।
বলেই দোকানি সামনে এসে দাঁড়ালো, হাতে একটা প্যাকেট। সহাস্যে আরও বললো -এই নিন আপনার আমানত।
_ মানে? কিসের আমানত? আর এটা কি?
< এটা আপনার সেই বই যেটা পড়তে বসে আমার দুইকাপ চা ঠান্ডা করে দিয়েছিলেন। আর এই হলো আপনার বাকি টাকা, ভাঙতি ফেরত না নিয়েই চলে গেছিলেন।
_ ওহ, আপনি এসব আপনার কাছে রেখে দিয়েছিলেন! আর আমাকেও মনে রেখেছেন!!
< হ্যা, আমানতের খেয়ানত করতে নেই। একজন আমানতদার আমৃত্যু মনে রাখেন আমানতকারীকে।
_ এগুলো আপনার কাছেই থাকুক, আমানত নয় উপহার হিসেবে।
আর হ্যা, উপহার কখনো ফেরত দিতে নেই।
+ছবি গুগল থেকে।
৭টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আমি দেখি চোখের ভেতরেও চোখ আছে, সেখানেও অচেনার মত হাজারো আলো আছে।
আমি দেখি সত্যের ভেতরেও সত্য ঘাপটি মেরে থাকে অবিশ্বাসের গলায় কুরবানির পশু জবেহ করার ছুড়ি চালাবার প্রতিক্ষায়!
আমি মিথ্যের আড়াল ভেঙে চোখ রাখি
মিথ্যের ছাল খুলে নিতে।
এসবই দেখা শোনার গুছিয়ে রাখা আমানত করে রাখি একদিন সব ফেরত দেব বলে…….
জিসান শা ইকরাম
এই লোক এর কাছে আমানত একটি পবিত্র দায়িত্ব,
তাই তিনি গচ্ছিত রেখেছেন পরম যত্নে।
আজকাল আমানতের খেয়ানত হচ্ছে স্বাভাবিক বিষয়,
আমানত তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেয়া অত্যন্ত ভালো কাজ হয়েছে।
ভালো লেগেছে লেখা।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
আমানত আর উপহার নিয়ে চমৎকার একটি অনুগল্প পড়লাম।আসলে এখকার যুগে এমন লোক পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।
_ এগুলো আপনার কাছেই থাকুক, আমানত নয় উপহার হিসেবে।
আর হ্যা, উপহার কখনো ফেরত দিতে নেই।
এ বাক্যগুলোতে বাধ্য করলেন তাকে এতো দিনের আমানত উপহার হিসাবে নিতে। মুগ্ধ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন করে যদি সবাই সবার আমানত গচ্ছিত রাখতো তাহলে কি আজ আর এমন অমানবিক আচরণ দেখতে হতো মানুষের!! শেষপর্যন্ত আমানত কে উপহার দিয়ে যোগ্য কাজটাই করেছেন উনি। চমৎকার গল্প। আমানতের খিয়ানত যেন না হয় সেটাই কামনা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম। শুভ রাত্রি
আরজু মুক্তা
ভালো লোকগুলো এখন আছে বলেই পৃথিবী এখনও সুন্দর।
শুভকামনা
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লাগল অনেক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ লাগলো লিখনির স্টাইল। আমানত খেয়ানতকারী জান্নাতে যাবে না। যাদের করা দরকার তারাই খেয়ানত করে। আর এমন মানুষরাই টিকিয়ে রাখে।
শুভ কামনা রইলো🌹🌹