
** এই লেখাটি মুলত মন্তব্য পোস্ট। এটি লেখার উৎসাহ জুগিয়েছেন সোনেলার জনপ্রিয় রম্য ব্লগার রোকসানা খন্দকার রুকু। তার জার্নি বাই কুড়িগ্রাম টু রংপুর পড়ে লিখতে ইচ্ছে হলো। লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি পোস্ট দেয়ার জন্যে 🙂
*************** *************** *************** *************** ************
মেয়ে মানুষ হয়ে পাব্লিক বাসে উঠেছেন আর ঠ্যালা ধাক্কা মানবেন না! প্রাইভেটকারে চড়লেই পারেন। এসব চিরসত্য বাণীর ভুলেও প্রতিবাদ করা যাবে না 😉
শুধু তাই নয়, বাসে বসে হয়তো সব ইগ্নোর করে একমনে মোবাইল টিপছেন, পাশের মানুষটি আপনার বানান ভুল ধরে ফেলেছে, তখন ইচ্ছে হবে তাকে বলতে, নিন আপু/ ভাই আপনিই বাকিটা লিখে দিন 🙂
আরোও আছে, আপনি কি সামনেই নামবেন? তাহলে জানালার পাশে আমি বসি? ( এখানে বক্তার মুখে হাসি থাকবে)
মলম পার্টির ভয় বাসেই বেশি,মলম কিনতে না চাইলে শশা,আমড়া থেকে শুরু করে বুটবাদাম সবই খেতে পারা যায়। আর যাদের সস্তা সামগ্রী কেনাকাটার অভ্যাস আছে তাদের জন্য লোকাল বাস হতে পারে আদর্শ স্থান!(এসবের আড়ালে আরও কিছু বেচাবিক্রি হয় হয়তো,কেউ খেয়েদেয়ে সর্বস্ব হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে/থাকবে। কে রাখবে তার খবর)
আসবে হিজড়ার দল, তালি দিয়ে কানের বারোটা বাজিয়ে বাসভাড়ার বেশি টাকা নিয়ে যেতে 🙂
আসবে বিভিন্ন ধরনের চলন্ত দানবাক্স,তখন মনে হবে ভাগ্যিস তাজমহলটা সম্রাট শাহজাহান আগেই বানিয়ে রেখেছিলো! 🤔
সিটের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে নিজের মাস্কের দিকে খেয়াল রাখা লাগবে। হতে পারে সে শীতকালীন সব্জী প্রেমী। প্রিয় ব্যাঞ্জন খেয়ে গণপরিবহনে উঠে সেসবের বর্ননা চারপাশে ছড়িয়ে দিতে চাইলেতো তাকে আর নিষেধ করা যাবে না 😜
এবার আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা বলি,
এক গরমের দুপুরে বাসে উঠেছি, মেয়েকে নিয়ে নিউমার্কেট যাবো। একজন আঙ্কেল উঠলেন, হাতে ছাতা। বসলেন আমার সামনের সিটে। মেয়ে হঠাৎ চোখে হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে নিলো! আমিতো অবাক! কি হলো দেখতে গিয়ে নিজের মাথার কোনে খেলাম খোঁচা! খোঁচা দিচ্ছে কে, দেখার জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি ছাতা আঙ্ককেল ছাতা মেলে বসে আছেন! হ্যালো, ও আঙ্কেল, আপনি বাসের মধ্যে ছাতা খুলে বসেছেন কেন? জিজ্ঞেস করতেই গম্ভীর জবাব এলো – জানালা দিয়ে রোঁদ আসে তাই..। আমি আজও ভেবে পাইনা তিনি জানালার রোদ ছাতা দিয়ে কীভাবে ঠেকিয়েছিলেন, ছাতা ছিল তার মাথায়!
আরেকবার বাসে যাচ্ছিলাম মামার বাড়ি। হেলপার বলেছিলো সিট আছে, কিন্তু গাড়িতে উঠে বুঝলাম হেলপার ছিলো মিথ্যুক। যাইহোক উঠে পরেছি নামতে পারছিলাম না, গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলো। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই গাড়ি ব্রেক করলো, আর আমি সাথে সাথে নিজেকে সিটে আবিষ্কার করলাম! এটা কীভাবে হলো!!! তাকিয়ে দেখি এক ঘুমন্ত যুবকের কোলেই সিট পাইসি! বেচারী অকস্মাৎ ভারী কিছু অনুভব করার সাথে সাথে চোখ মেলেছিলো। তারপর আমায় সিটখানা দান করে সোজা নেমে গেলো,, স্যরি থ্যাংকস কিছুই নিলো না, আজীবনের জন্য ঋণী করে এভাবেই প্রতিশোধ নিলো 🙁
সব সময় বাসে একা চড়ে ঘুরে বেড়াই তা নয়। কখনো প্রিয়জনের পাশেও বসা হয়। অল্প কথা, হাতে হাত রেখে, “ভাড়া আমি দেই? তুমি না” করতে করতেই গন্তব্য এসে যায়। তখন মনে হয় ঢাকার রাস্তায় যান-জট আরও বাড়ুক, আরও কিছু সময় থাকুক একান্ত আমাদের।
* ছবি- নেট থেকে নেয়া।
৩০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ভ্যাগ্যিস রুকু খন্দকার লিখেছিল,
তাই আমরাও অল্প-বিস্তর বাস-সঙ্গী হয়ে অভিজ্ঞতা জানলাম।
গানে অবগুণ্ঠিত-রাজস্থান দেখতে পেয়ে ভাল লাগল।
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, ভাগ্যিস তিনি লিখেছিলেন! কথায় কথায় যেমন কথা আসে তেমনি লেখা দেখেও লেখা আসে বৈকি।
প্রথম মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মহারাজ 🌹🌹
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ চমৎকার লেখেছেন সাবিনা আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ লিটন ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
ভাগ্যিস রুকু আপু লিখেছিল জার্নি বাই কুড়িগ্রাম টু রংপুর, তানাহলে এত সুন্দর লেখা পেতাম কিভাবে? সি্টে যুবকের কোলে পরা ঘটনা পড়ে হাসতে হাসতে আমি কাহিল,এরকম আমারও এক ঘটনা আছে পরে কোন এক সময় লিখব। আর ছাতাওয়ালা আংকেলের মত এরকম অনেক মানুষ আছে আজব মানুষ। অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। লোকাল বাসের অভিজ্ঞতা সত্যি অদ্ভুত। শুভকামনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন তাদের কাছে কোন না কোন অভিজ্ঞতা থেকেই যায়। আপনার ঘটনাটি জানার অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
অসাধারণ লিখেছেন
শুভকামনা রইল প্রিয় লেখক
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন অপুর্ব। শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
বাসে ছাতা খুলে মাথায় দিয়েছে! এমন আজব ঘটনা এ জীবনে আর কখনো শুনিনি।
ভাগ্যিস আপনার শরীর লোহা দিয়ে তৈরী নয়, দুই মন ওজনের লোহা ঘুমন্ত যুবকের উপরে পরলে খবর হয়ে যেতো 🙂
লেখা খুবই মজারু হয়েছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমিও জীবনে প্রথম দেখেছি তাই ভুলিনি।
লোহা দিয়ে তৈরী হলে সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম, বেচারি সিট দখল করা লাগতো না।
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপিল করলাম রম্য বিভাগে লেখাটি দেন। একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন। অনেকবার পড়তে হবে।
ইশ্ কোলটা অ এর হলে ভালো হতো। তবে বেচারা মজাই পেয়েছে কারন এমন সুন্দর মানুষ যার কোলে তার তো রাজ কপাল😍😍
আর আমারে ওয়েট আসছি বলে এ অবস্থা॥ আমি শীতে ওয়েট করে করে একাকার। বাসের এরকম সবার নোংরা কিছু অভিজ্ঞতা আছে যেগুলো তো বলাই যায়না। সবাই লিখতে থাকুক। কারন এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
বিভাগ চেঞ্জ করে দিয়েছি, এবারই প্রথম এবং শেষ। এরপর থেকে আপিল শব্দটা আর শুনতে চাই না, যা বলার বন্ধুত্বের অধিকার নিয়েই বলবেন।
ভালো থাকুন সব সময়। শুভ কামনা 🌹🌹
হালিম নজরুল
চমৎকার লিখেছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেশ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন,দিদি লোকাল বাসের।
আর হিজড়া রা তো কানের কাছে এসে বলে টাকা দে টাকা দে..
এসব ট্রেনের যাত্রাকালে দেখতে পাওয়া যায়।
বেশ বেশ মজাদার লেখনী।
সিটখানা যে দান করে গিয়েছে সে তো মহান একজন দয়ালু বলা যায় নির্দ্বিধায়।
সাবিনা ইয়াসমিন
খারাপ অভিজ্ঞতাও আছে, কিন্তু ওসব লিখতে ইচ্ছে করে না, তাই মজার গুলোই লিখলাম।
ছেলেটা নিঃসন্দেহে ভদ্রলোক ছিলো।
ভালো থেকো প্রদীপ। শুভ কামনা 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মন্তব্য পোষ্ট পড়ে হাসি থামছে না ।লোকাল বাসের মতো ধাক্কাধাক্কি লেগে গেছে, মন বলছে থামতে কিন্তু হাসি গায়েই লাগাচ্ছে না হেসেই যাচ্ছে। এমন সব অভিজ্ঞতা সবার সাথেই কম বেশি ঘটে কিন্তু ছাতা খোলার বিষয়টি নতুন।সিট ছেড়ে দেবার বিষয়টি দারুন লেগেছে। রুকু আপুকে অবশ্যই ধন্যবাদ এমন পোষ্ট লেখার অনুপ্রেরণা দায়ক হবার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা অবিরাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহাহা, এই জন্যেই আমি এতদিন পরে জবাব দিতে এলাম। আপনার হাসি দেখে আমার এতই আনন্দ হচ্ছিলো যে থামাতে ইচ্ছেই করেনি 🙂
রুকুকে অবশ্যই ধন্যবাদ। আপনাকেও।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা অবারিত 🌹🌹
তৌহিদ
বাসে আসলে এমনই হয়। লোকাল বাসে উঠে এমনসব মজার এবং বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যাবেনা এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
লেখার বানান ভুল হলে বাকীটা লিখে দিয়েন কিন্তুক ☺
আমি ছাতার নীচেই আছি। জানালা দিয়ে কুয়াশা আসছেতো তাই। 😜
ভালো থাকুন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
আসলেই, অভিজ্ঞতাহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা যারা লোকাল বাসে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি তারা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু কিছু ব্যাপার ভুলে যাওয়া কঠিন।
বানান ভুল ধরার ব্যাপারটাও তেমনি একটা অভিজ্ঞতা 😀
শুভ কামনা রইলো ভাই 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
বাসে ছাতা!কান্ডজ্ঞানহীন মানুষের কাজ।কিছু অসভ্যদের জন্য নারীরা বাসে নিরাপদে চলতে পারেন না -এটা বাস্তব।সিঙ্গাপুরেও বাঙালী ইন্ডয়নদের এমন অসভ্যতা দেখেছি অবশেষে সিঙ্গাপুরয়ানরা যে সব বাসে বঙালী ইন্ডিয়ানরা বেশী থাকত সেসসব বাস তারা ডিনাই করত-জানতে চাইলে বলত অনেক ভীর কিন্তু বুঝতে পারতাম এ আমাদের অসভ্যতাকে ইগনোর করল।এমনিতে ওরা সাধারনত চলাচলে কারোর শরীরের সাথে কারো শরীর লাগিয়ে চলে না যদিও কোন কারনে আনমনে লেগে গেলে একে অন্যে সরি বলে ফেলত।
সাবিনা ইয়াসমিন
সিঙ্গাপুরীরা এভয়েড করতে পারবে কারণ তাদের অপশন আছে। কিন্তু আমরা করতে চাইলে নিজেদের পায়ের উপর প্রেশার পড়বে ছোট্ট ভাই।
সারা বাংলাদেশে আমরা সবাই বাঙ্গালী 🙂
সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, আল্লাহ তায়ালা সহায় হোন। শুভ কামনা 🌹🌹
রুমন আশরাফ
চমৎকার লেখা পড়লাম। সত্য এবং বাস্তব ঘটনা। এ যেন আমার মনের কথাগুলোই বলা হয়েছে। লোকাল বাসে ঘটে যাওয়া ছোট বড় বিভিন্ন ঘটনাও আমার ঝুলিতে আছে বেশ। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথমেই ধন্যবাদ দিচ্ছি রুমন ভাই। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে থেকেও লেখাটি আপনি পড়েছেন। আপনার ঝুলি খোলার অপেক্ষায় রইলাম, পড়তে পারলে আমাদেরও ভালো লাগবে। ভালো থাকুন, শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
আমি যেহেতু চট্টগ্রামে থাকি এখানকার ভাষা বুঝতে পারি কিন্তু বলতে পারি না। একদিন লোকাল বাসে দুজন চট্টগ্রামবাসি মহিলা আর ড্রাইভারের সেকি ঝগড়া। আমিতো হাসতে হাসতে শেষ। এখনো মনে পড়লে হাসি চেপে রাখতে পারি না। যদিও মহিলাদের পয়েন্ট সঠিক ছিল। উঠানোর সময় খুব খাতির করে উঠায় নামার বেলায় চেহারা পাল্টে যায় ড্রাইভার হেলপারের।
আপনার লোকাল বাস অভিজ্ঞতা পড়ে খুব মজা পেলাম।কিন্তু টুকরো ঘটনা গুলো একেবারেই সত্যি নিত্যদিনের ভোগান্তি।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি চট্টগ্রামের ভাষা বুঝেন! আপনি ভাগ্যবতী!
আমার পরিচিত কিছু মানুষ আছে, ওরা যখন নিজেদের মাঝে কথা বলে আমি কিছুই বুঝি না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। একবার কক্সবাজারগামী এক গাড়িতে চট্টগ্রামের ভাষায় ঝগড়া শুনেছিলাম, মনে হচ্ছিলো বিভিন্ন সুরে বিদেশি গান শুনছি, সুরে সুরে ঝগড়া করছিলো তারা 🙂
ঢাকার বাসের হেল্পারদের চাইতে মিথ্যুক মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। এরা এক সিট দেখিয়ে একডজন যাত্রী উঠায়, আর একটাকা কম হলে যেমন ঝগড়া করে তেমনি একশো টাকার ভাঙতি ফেরত দিতে হুটহাট ভুলে যায়।
আপনিও লিখুন প্লিজ। ভালো থাকুন, শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
আমি নোয়াখালীর মেয়ে তারপর ও প্রথমবার চট্টগ্রামে এসে ওদের ভাষা শুনে তাকিয়ে থাকতাম কিছুই বুঝতাম না। ভাষা যেমন দুর্বোধ্য তেমনি কথা বলে হড়বড় করে।
আমার কলমে গদ্যটা যেন সাজেনা তাই লিখিনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি যথার্থ অর্থেই একজন কবি। আপনার কবি সত্বার প্রতি সম্মান জানাই।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
ভালো লাগল পড়ে
সাবিনা ইয়াসমিন
আবারও ধন্যবাদ আবার পড়ার জন্যে 🌹🌹