উত্তরায় দিয়াবাড়িতে লালমুনিয়ার খোঁজে বের হলাম। সময়টা ছিলো ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস। তখন লালমুনিয়ার দেখা না পেলেও যে পাখিটির দেখা পেয়েছিলাম সেটাও আমার প্রথম দেখা ও ছবি তোলা। এই পাখিটির ছবি তুলতে পারায় লালমুনিয়া না পাওয়ার কষ্টটা ভুলে যাই। কারন যে কোন বার্ড ফটোগ্রাফারের জন্য নতুন কোন পাখির সন্ধান পাওয়া মানেই সারাদিনের কষ্ট ভুলে যাওয়া। দিন শেষে যখন বাড়ি ফেরা হয় তখন নতুনকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার আনন্দ একজন বার্ড ফটোগ্রাফারের কাছে সোনার হরিনের মতন। আমাদের দেশে যে ৬ প্রজাতির মুনিয়া পাখি দেখা যায় তারমধ্যে Chest-nut Munia বা কালো-মাথা মুনিয়া আরেক প্রজাতির মুনিয়া পাখি। প্রথম দর্শনেই এই পাখিটি আমার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। নিজের অজান্তে ভালোবাসি। আর এই ভালোবাসার টানে প্রতি বছরই এই প্রজাতি মুনিয়া পাখির ছবি নিয়মিত তুলে আসছি।
Chest-nut Munia বা কালো-মাথা মুনিয়াEstrildidae পরিবারের Lonchuraগণের ১০ সেঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ও ১৬ গ্রাম ওজনের লালচে পিঠের তৃণচর পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা,বুক ও পেটের কেন্দ্রভাগ ও লেজতল কালো। বাকি দেহ লালচে-বাদামী কিংবা তামাটে রঙের। ঠোঁট ত্রিকোনাকার। ঠোঁটের রঙ নীলচে-হালকা খয়েরী। চোখ কালো-বাদামী। পা ও পায়ের পাতা কালচে হালকা খয়েরী। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। সারা বিশ্বে এদের দুটি উপপ্রজাতির দেখা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে Lonchura atricapilla উপপ্রজাতি পাওয়া যায়।
কালো-মাথা মুনিয়া উঁচু ঘাসের তৃণভূমি, জলা, ধানক্ষেত ও ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে। এরা অন্যান্য মুনিয়ার ছোট মিশ্র ঝাঁকে থাকে। ভূমিতে এবং ধান গাছে ও ঘাসে এরা খাবার খোঁজে। এদের খাদ্যতালিকায় ঘাস-বীজ ও ধান রয়েছে। সচারচর এরা চিট..চিট…চিট উয়িই শব্দে বার বার ডাকে। মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে এরা জলার খাড়া নল, ঝোপ অথবা আখখেতে মাটি থেকে ২ মিটার উচ্চতায় পাতা ও ঘাস দিয়ে বড় বলের মত বাসা বানায়। এদের বাসায় প্রবেশের মুখটা একটু ভিন্নতর। বাসার ভিতরে ঢোকার জন্য ফুলদ ঘাস দিয়ে সুড়ঙ্গের মতন করে বানায়। কখন কখন বাবুই পাখির পরিত্যাক্ত বাসাও ব্যাবহার করে। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৫-৬টি সাদা রংয়ের ডিম পাড়ে। মেয়ে ও ছেলে উভয়েই ডিমে তা দিয়ে ২১ দিনে বাচ্চা ফুঁটায়। ছানাদের খাবার থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিচর্যা ও সংসারের কাজ মা-বাবা দুজনই করে থাকে।
কালো-মাথা মুনিয়া বাংলাদেশের দূর্লভ আবাসিক পাখি। তার মূল কারন হলো এরা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে ও বংশ বৃদ্ধি করে। ঝোপের নীচুতে বাসা করায় বিড়াল কুকুর ও সাপের উপদ্রব হইতে ডিম বা ছানা রক্ষা করা এদের জন্য দুস্কর হয়ে উঠে। যার ফলে দিন দিন এরা আমাদের দেশীয় পাখি হবার পরও দূর্লভ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান,ভারত,ভূটান,নেপাল,শ্রীলংকা,ভিয়েতনা ও থাইল্যান্ড সহ পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
কালো-মাথা মুনিয়া বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। তবুও আমাদের দেশীয় পাখি হয়েও দিন দিন এরা দূর্লভ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষনা করা হয় নি।
আসলে বিড়ার কুকুর সাপ এদেরও দোষ দিবো না। কারন বিধাতাই নির্ধারন করে দিয়েছেন তার সৃষ্টি কোন প্রজাতির কি ভাবে বেঁচে থাকবে। কেউ খাবার খেয়ে আবার কেউ প্রজননে বংশবৃদ্ধি করে। এরই মাঝে বেঁচে আছে ও বংশ বৃদ্ধিও করছে। এটাও বিধাতার হুকুম। এমনওতো হতে পারতো এদের বংশ বিস্তারে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকতো তবে এমন হারে বেড়ে যেত তখন মুনিয়া ছাড়া আর কোন প্রজাতিই চোখে পড়ে না।
বিধাতা ভালো জানেন।
পরিশ্রম করে পাখির ছবিগুলি তুলতে পেরেছিলাম বলে আপনাদে জানাতে পারছি। আর এই জানানোতে যে কত আনন্দ তা প্রকাশ করার মতন নয়। আপনাদের ভাল লাগা ও উৎসাহ পাই বলেই আরো বেশী বেশী কাজ করার আগ্রহ পাই।
ভাল থাকবেন আপু।
২৩টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অনেক কিছু জানলাম ভাই, খুব ভালো লাগলো।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইজান।
ইঞ্জা
❤️❤️❤️
মনির হোসেন মমি
এতো ভাইজান কটকটি পাখি ছোট বেলায় আঠার ফাঁঁদ বানিয়ে কত ধরেছি।।সভ্যতার অগ্র যাত্রায় নগারায়ণে এ সব পাাখি কমে গেছে ঠিকই বলেছছেন।অনেক কিছুই জজানা হহল।
শামীম চৌধুরী
ঠিকই বলেছেন ভাইজান। আঞ্চলিক ভাবে এদের কটকটি নামেই ডাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিড়াল, কুকুর, সাপের উৎপাতে এরা দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে বিষয়টি সত্যিই খারাপ লাগলো। কালো-মাথা মুনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম আপনার সুন্দর উপস্থাপনায়। অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
আসলে বিড়ার কুকুর সাপ এদেরও দোষ দিবো না। কারন বিধাতাই নির্ধারন করে দিয়েছেন তার সৃষ্টি কোন প্রজাতির কি ভাবে বেঁচে থাকবে। কেউ খাবার খেয়ে আবার কেউ প্রজননে বংশবৃদ্ধি করে। এরই মাঝে বেঁচে আছে ও বংশ বৃদ্ধিও করছে। এটাও বিধাতার হুকুম। এমনওতো হতে পারতো এদের বংশ বিস্তারে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকতো তবে এমন হারে বেড়ে যেত তখন মুনিয়া ছাড়া আর কোন প্রজাতিই চোখে পড়ে না।
বিধাতা ভালো জানেন।
জিসান শা ইকরাম
আপনি আছেন বলেই এত পাখির নাম জানছি,
এতদিন কালো-মাথা মুনিয়াকে শালিক এর একটি প্রজাতি ভেবেছি। যদিও খুব কম দেখেছি এই পাখি।
এমন পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শামীম চৌধুরী
যতটুকু জানি তার সবটুকুই পাঠক বন্ধুদের জানানোর চেষ্টা করছি। আর এই সুযোগটা সোনেলা করে দেয়ায় আমি ঋনী হয়ে রইলাম সোনেলার প্রতি।
শুভ কামনা রইলো।
সঞ্জয় মালাকার
, খুব ভালো লাগলো দাদা, অনেক কিছু জানলাম।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদাভাই।
শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
মুনিয়াদের ও কত কত রকম!
তবে সে তো অবাক চোখে ক্যামেরাম্যান কে দেখছে।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…অবাক চোখেতো দেখবেই। কারন তারও তো শখ জাগে প্রর্ট্রোট ছবি তুলতে।
যে ৬ প্রজাতি মুনিয়ার দেখা যায় আমাদের দেশে সবই আমাদের আবাসিক বা দেশীয় পাখি।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর খুব সুন্দর ————-মুনিয়া পাখির রঙ
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদাভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কি সুন্দর পাখি। আপনার বদৌলতে জানতে পারছি।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা ভাই।
সবসময় ভালো থাকুন।🌹🌹
শামীম চৌধুরী
পরিশ্রম করে পাখির ছবিগুলি তুলতে পেরেছিলাম বলে আপনাদে জানাতে পারছি। আর এই জানানোতে যে কত আনন্দ তা প্রকাশ করার মতন নয়। আপনাদের ভাল লাগা ও উৎসাহ পাই বলেই আরো বেশী বেশী কাজ করার আগ্রহ পাই।
ভাল থাকবেন আপু।
হালিম নজরুল
আপনি আমার মুনিয়া, আপনি আমার টিয়া, আপনিই আমার ভালবাসার কবুতর।
শামীম চৌধুরী
সবই মেনে নিলাম ভাইজান।
তবে আরজ রইলো।
মন পিঞ্জরে পুঁষে রাখবেন।
শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
এই মুনিয়াটা সচারচর দেখা যায়।
শামীম চৌধুরী
জ্বী। এটা দেশের সর্বত্র দেখা যায়।
তৌহিদ
এই মুনিয়া বাজারেও খাঁচায় খুব বিক্রি হতে দেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো বিলুপ্তি ঘটবে এটিরও।
ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
এই মুনিয়া কমন।