
লক্ষ কোটি বছর আগে আমার পূর্বপুরুষ ত্রিকোণ পিরামিডের গহীনে যে আগুন জ্বালিয়েছে তাকে নেভানোর সাধ্য আমার নেই। সভ্যতার উত্থানপতনে নাম না জানা কত বন্দর সেই অনলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো যার প্রতিটি ঘাটেই আছে আমার পায়ের ছাপ।
কোষ বিভাজনে রুপান্তরের খেলায় আমি নাকি বানর থেকে মানুষ হয়েছি! তবে কি বানর আমার পরম পূজ্যনীয় প্রাণী নয়? অথচ ইদানিং বানর দেখলে আমি মজা করি, আদর করে তাকে বাদাম খেতে দেই। কি অদ্ভুত সভ্যতা!
পরিবর্তনপ্রিয় হোমোসেপিয়ান হিসেবে নতুনত্বকে বরণ করে নেবার ক্ষমতা আমার অস্থিমজ্জায়। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণেপোকারা আমাদের অস্তিত্বকে কুটেকুটে খাচ্ছে তাতে কি! প্রস্ফুটিত সভ্যতায় নতুন যেকোনো কিছুতেই আনন্দদিশারী মায়ার কুহকজাল বিছানো এটাও পিতৃদেবের কাছেই পাওয়া।
জীবাশ্মবিদ্যার আদিঅন্ত প্রজ্ঞা আমাকে শিখিয়েছে হৃদপিন্ডকে বদলে দেবার প্রকৃয়া। রক্তমাংস ভক্ষণ করার অভ্যস্ততায় আমি ভুলে গিয়েছি আগুন দিয়েই এটাকে ঝলসে নেয়া যেত! অথচ নোনা জলের স্বাদ আগত কোন সভ্যতাই ভুলতে পারেনি।
সভ্যতার একপাশের তীর ভাঙ্গে তো অন্যপাশে সবুজের মোহমায়ায় বসত গাড়ে নাম না জানা মুনিয়ার দল। তাদেরও পূর্বপুরুষ ছিলো কি? হয়তো ছিলো! নাকি জীবনের তাগিদে তারা দিগম্বরী রয়ে গিয়েছে এখনো? সেই একই সভ্যতা মুনিয়াদের আজও কথা বলা শেখাতে পারেনি এর দায় কার? উত্তর দেবার মত সভ্য কোন অভিনেতাদের কেউ যে আর বেঁচে নেই!
সভ্যতার আলোতে নিয়ে এসে যে মুনিয়াটিকে আমি বন্দী করেছিলাম, কথা বলা শিখতে গিয়ে বিরক্তিভরা ঝামটা দিয়ে সুযোগ পেয়েই ফুড়ুৎ করে উড়াল দিয়ে আবার ওপাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সে। সভ্যতাজনিত নিগূঢ় সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা তার পূর্বপুরুষেরও যে ছিলোনা একথা অনস্বীকার্য।
সভ্যতার জোয়ারে একদিকে ট্রয় ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে মোনালিসা ফ্রেমে বন্দী হয়ে শত মানুষের মনে স্থান পেয়েছে। অথচ সেই একই সভ্যতা আমাকে ধিক্কার দিয়েছে, বারেবারে মনে করে দিয়েছে আমার আদি পিতার আস্ফালিত জোনাকির ঢেউ।
সভ্যতা জ্বলছে সুপ্ত ভিসুভিয়াসের রক্তিম গর্ভে। ইদানীন্তন সভ্যতা কুয়াশাভেজা শিশিরের সুপ্ত জাল বিছিয়ে ফাঁদ পেতে রয়েছে ঘাসফড়িঙ শিকারের অপেক্ষায়। এর থেকে কারোরেই নিস্তার নেই।
সভ্যতার এই বেড়াজালে বন্দি আমি এখনো সভ্য হতে শিখতে পারিনি। এ ব্যর্থতা আমার নয়, লিখে দিতে পারি এর দায় আমার পূর্বপুরুষের। সভ্যতার মিথ্যে আর লোক দেখানো অভিনয় শিখতে গিয়ে নাগরিক সভ্যতার যাঁতাকলে পিষে ইদানীং আমি আধুনিকায়নের সংজ্ঞা শিখছি।
৩১টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি ফার্স্টু 🙂
আগে গিফট চাই, পরে অন্য কথা
তৌহিদ
অভিনন্দন! বোনেরা ভাইদের আগে গিফট দেয় বলেই এতদিন জানতাম, এ কি নতুন নিয়ম বানালেন আপু?
আমিও গিফট চাই।
কামাল উদ্দিন
আমি সেকেন্টু, আমাকে একটু ছোট গিফট দিয়েন ভাইজান।
তৌহিদ
এ বাবা! দুই দু’জন সেকেন্ড! লটারি কত্তে হপে!!
তৌহিদ
নো নো নো সময় দেখেন, জিসান ভাইজান সেকেন্ড। আর আপনি অটোপাশে সেকেন্ড কামাল ভাই 😆
জিসান শা ইকরাম
প্রথম মন্তব্য দিতে এসে দেখি আর একজনে দিয়ে ফেলছে,
এইডা কিছু হইলো!
তৌহিদ
হা হা হা, প্রথম হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। সবসময় নজর রাখতে হয়। সাবিনা আপুকে টপকানো খুব মুশকিল ভাইজান। ☺
আপাতত সেকেন্ড প্রাইজ নিয়ে খুশি থাকতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
দারুণ লিখেছেন একান্ত অনুভূতি
শুভকামনা রইল প্রিয় বরেণ্য লেখক
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সবসময়।
মনির হোসেন মমি
সভ্যতার চরম অসভ্যতায় এখন আছি আমরা।মানিনা অতীত বুঝিনা বিবর্তন সময়ের তালে কেবলি আমরা স্বর্থপর । চমৎকার লিখেছেন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাইয়া, শুভকামনা জানবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সভ্যতার বেড়াজালে আবদ্ধ আমরা সত্যিই কি সভ্য হতে পেরেছি ? আমরা আদিম খেলায় মেতে উঠি প্রতিনিয়ত তবে কোন ফর্মূলাতে নিজেদেরকে সভ্য ভাববো! পুর্বপুরুষের দায় নাকি নিজেরা খোলশ থেকে বের হতে পারছিনা সে-ই দায় তো আমাদের উপর ই বর্তায় নাকি?
একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
লেখার তাৎপর্য কিছুটা ধরতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগলো দিদিভাই। আদিমতা আমাদের এখনো নারীলোভী করে রেখেছে। রিপুর তাড়নাকে এড়ানো কোন সভ্যতার মানুষই পারেনি।
আমরা আধুনিক সভ্যতায় এখনো যৌনলিপ্সাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছি আমাদের পূর্বপুরুষের মতই।
ভালো থাকুন দিদিভাই।
জিসান শা ইকরাম
নিজেকে খুঁজে ফেরার চমৎকার পোষ্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখাটি অনেক উঁচুমানের হয়েছে।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
সভ্যতার প্রতি যুগে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক মানুষকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং হবেও। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা,সভ্যতার চরম অসভ্যতায় এখন আছি আমরা।
সভ্যতার বেড়াজালে আবদ্ধ আমরা সত্যিই কি সভ্য হতে পেরেছি।
আমরা শুধুই স্বর্থপর, নিজেকে খুঁজে ফেরার।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা, শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদ
সভ্যতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি নেই কারোরেই। ভালো থাকুন দাদা।
খাদিজাতুল কুবরা
আপনি একদম সঠিক বিশ্লেষণ করেছেন। সভ্যতা গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতা শুধু আমার নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী কিছু কুসংস্কার এবং ভোগবাদের জাল বিছিয়ে গেছেন পূর্ব পুরুষরা, যে নিয়মগুলিকে ভাঙার নিয়ম তৈরি করা সহজ কাজ নয়। তাই বাধ্য হয়ে আমি ও গড্ডালিকায় গা ভাসাই।
আমার খুব ভালো লেগেছে লেখাটি।
অনেক শুভেচ্ছা রইল।
তৌহিদ
আমরা ত্যাগের চেয়ে ভোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেই বেশি। নারীলিপ্সুতা আমাদের রন্ধ্রেরন্ধ্রে।
ভালো থাকুন আপু।
ছাইরাছ হেলাল
সব কিছুর ই এপিঠ ওপিঠ থাকে/আছে, এই বেড়াজাল আদৌ টপকানো যায় কী-না
তা কেউ বলতে পারনি, পারবে তাও তো বুঝছি না।
শুধু ভাবি, এই তো জীবন।
তৌহিদ
সভ্যতার বিকাশে আমরা মনন ও মানসিকতায় খুব একটা পরিবর্তিত হইনি। এপিঠ ওপিঠ একইরম আছে। ভোগ্যতা, হয়তো এই একটিমাত্র জায়গায় আমরা এখনো আদিমতা ধরে রাখতে পছন্দ করি।
ভালো থাকুন ভাইজান।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন তৌহিদ দা অনেক শুভেচ্ছর রইল
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকুন ভাই।
হালিম নজরুল
আসলেই সভ্যতার বেড়াজালে বন্দী আমরা।
অসাধারণ লিখেছেন ভাই।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
রেজওয়ানা কবির
আদৌ আমরা সভ্য হয়ে উঠতে পেরেছি কি এইটাই ভাবি শুধু। তবে এটা শুধু সত্যি আমার একার দোষ না ঘুরে ঘুরে কুসংস্কার, গোরামী, আর কিছু ভুল মানসিকতার কারনে আমরা পিছিয়ে আজ। ভালো বিশ্লেষন করেছেন ভাইয়া। শুভকামনা ।
তৌহিদ
আমরা সভ্য হয়েছি তবে কিছুক্ষেত্রে আমরা আদিমতাকে বিষর্জন দিতে শিখিনি। হয়তো ইচ্ছে করেই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সভ্য হতে সময় লাগবে। যে বানরকে নিয়ে মজা করি আমরা তার চেয়েও নোংরা। পদে পদে জরাজীর্ণতা।
বাস্তবতা লিখেছেন ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন সবসময়।
আরজু মুক্তা
আগে নিজেকে বদলাতে হবে। সভ্যতার চিহ্নতো ইতিহাস বলে।
তৌহিদ
একদম তাই, রিপুর তাড়না থেকে নিজেদের মুক্ত করা সভ্যতা একসময় আসবে হয়তো!
ভালো থাকুন আপু।