
তনু শ্যামলা গড়নে হালকা পাতলা চেহারা। এখনকার মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। সাজসজ্জায় একেবারেই তার আগ্রহ নেই। কারন শ্যামলা মেয়েরা বেশি সাজগোজ করলে ভালো লাগে না। সাজগোজ দুধে আলতা ফরসা ঢংগি মেয়েদের জন্য। ছেলেরা দেখবে আর হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে গরীলার মত। আচ্ছা এই বেটাছেলেরা মা থেকে শুরু করে মেয়েদের দেখতে দেখতেই বড় হয় তারপরও মেয়ে দেখলেই গরীলা হয় কেন?
ভার্সিটি পড়ুয়া বড় ভাই আবির এ পর্যন্ত দশটা প্রেম করে ফেলেছে। গল্প শুনে শুনে তনুরও ভীষন শখ, আফসোস দুটোই হচ্ছিল। বন্ধু বান্ধবরা অনেকেই একাজে ডক্টরেট নিয়ে ফেলেছে। অথচ তনুর কলেজ শেষ হয়ে যাচ্ছে কেউ তাকে প্রপোজই করলনা। আনচান করা, অস্থির মন বেশির ভাগ সময়ই খারাপ থাকে। এতবেলা গেল একটু ইটিস পিটিসের অভিজ্ঞতা নেই এটা মানা যায়।
ভাইয়ের সাথে একটু বেশি খাতির হওয়ায় তার সব গল্পই শোনে। কিভাবে প্রেম হয় বা পরতে হয় বা বোঝা যায় কেউ তাকে পছন্দ করে এসব।
ভাইয়া বলেছে – কারও গোপনে লুকিয়ে তাকানো নাকি প্রেমের একটা মারাত্মক লক্ষণ। এরমধ্যে খেয়ালও করেছে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেটি তার দিকে মধুমাখা দৃষ্টিতে তাকায়। ভালোই লাগে তনুর। কিন্তু আর কিছুই বলেনা। মেয়ে হয়ে সেও তো কিছু বলতে পারে না। চিন্তা আর চিন্তা ক্যামনে যে কি হবে। মনটা উসখুস করতে থাকে।
কলেজ শেষে একটু ঢিলেঢালা হাটুনি দিয়ে বাকি বান্ধবী থেকে আলাদা হয়। যাতে দুষ্টু ছেলেটি কিছু বলতে পারে। এভাবে চলছিল। একদিন সুযোগ এসেই গেল। দুষ্টুছেলেটি চকলেট দিল তাকে। তনু দুএকবার না না করে টপাক করে নিয়ে নিল। পাছে যদি মিস্ হয়!
বেশ চলছিল চকলেট দেয়া নেয়া। মন কি আর তাতে ভরে। ভাইয়ের মুখে শোনা গল্পের বাকি গুলো কবে শুরু হবে। ভাইয়ের কাছে শুনেছিল কিভাবে পটাতে হয় আর বেশি ভালোবাসা পাবার জন্য কি কি করতে হয়।
“কোথাও বেড়াতে গিয়ে বিপদে পড়তে হবে। তারপর জীবন মরন চিৎকার করে ভাব করতে হবে। ছেলে রক্ষা করবে এবং তুমুল প্রেম হবে।”
কিন্তু তারা তো এখনও কোথাও যায়নি। মেয়েদের যেচে বলাটাও শরমের ব্যাপার। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুষ্টু ছেলে একদিন বলেই ফেলল
– চলো কোথাও বেড়িয়ে আসি।
তনু মুখে তো না না। ভেতরে ভেতরে এটাই তো চাই। জায়গা নির্বাচন হল জিয়া পুকুর। বিরাট বড় পুকুর সরকারী হলেও লোকজন তেমন নেই। কয়েকজন পাহাড়াদার থাকেন। সকাল সকাল গেল তারা বেড়াতে। কিন্তু মন ভরছে না। কারন এখনও “লাভ ইউ জান” বলেনি। জড়িয়েও ধরেনি আর চুমু তো পরের ব্যাপার। এসবের জন্য মন অস্থির, আনচান করছে।
ভাইয়া বলেছিল- বিপদে পরবি বুঝলি, একদম ইচ্ছে করে। যখন খুব কান্নাকাটি করবি দেখবি বুকে জড়িয়ে লাভ ইউ বলবে।
হাটছে দুজনে। কিন্তু বিপদে কিভাবে পড়বে এবং পড়ার মত কিছু পাচ্ছেও না। মনটা খারাপ হতে হতেই সে দেখল একটা গাছের তলায় লাল পিঁপড়ার বাসা। হায়! কপাল আর কিছুই কপালে ছিল না। লাল পিঁপড়া খুব কামড়াবে জেনেও সে একটু টলকে গিয়ে পড়ল পিঁপড়ার হাঁড়িতে। মুহূর্তে শত শত পিঁপড়া গা বেয়ে উঠে যেখানে সেখানে কামড় শুরু করে দিল। মজা কাল হয়ে সাজা হয়ে গেল। চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে এল। লাল পিঁপড়া জামার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। সুতরাং তনুকে রক্ষা করার কেউ নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে দুষ্টু ছেলে তনুকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিল।
পিঁপড়া তো মরল। জামাকাপড় ভিজে লেপ্টে একাকার। তনু সাঁতার জানে তবুও উঠছে না। কারন যে ভালোবাসা পাবার জন্য এত রিস্ক নিল তারতো কিছুই হলনা। এখন দুষ্টু ছেলের দায়িত্ব তাকে পানি থেকে তুলে আনা।
সিনেমা হলে তো নায়ক লাফিয়ে পড়ত। তনু বড় দূর্ভাগা তার দুষ্টু ছেলে সাঁতার ও জানে না। বেচারী ভিজে নেয়ে একাকার হয়ে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে দিল। উপরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেমিক কাটা মুরগীর মত ছটফট করেই গেল।
এভাবে কাটলো বেশ কিছুক্ষন। দুষ্টু ছেলে নিজের উপর ভীষণ বিরক্ত হল। এ জীবন তার অযথা। তনু কান্না করছে অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। কাপুরুষের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই। নিজের উপর ভীষণ রাগ হল। চোখে টলটলে পানি নিয়ে তনুকে পানিতে রেখেই হাঁটতে শুরু করে দিল। তনু চিৎকার দিচ্ছে- এই দুষ্টু ছেলে , এই জান, ও জানু তোমাকে উঠাতে হবে না। আমি উঠছি আমাকে ছেড়ে যেওনা। তোমার কিছুই বলতে হবেনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তারপরও সে ফিরে তাকালো না। তনুকে এমন দুঃসহ মুহূর্তে ফেলে রেখে চলে গেল। এজীবনে আর প্রেম হলনা। যাও একটু সম্ভাবনা ছিল তাও বোকামি আর বেশি চাইতে গিয়ে ভেস্তে গেল। একবুক হতাশা আর যন্ত্রণা নিয়ে একা একা বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ করে গান শুনে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো-
“দিল মে হো তুম আখো মে তুম
বলো তুমহে ক্যায়সে চাহুউ।
পুজা কারুউ সিজদা কারুউ
জ্যায়সে কাহো এয়সে চাহুউ।
জানু ও মেরে জানু, জানে জানা জানু”
বহু বছর পর-
তনুরা বেড়াতে যাবে। সে অনেকক্ষন গাড়িতে বসে আছে । অথচ বাবা মেয়ের কোন পাত্তাই নেই।
গাড়িতে বসে তনু চিৎকার দিল- এই তিতলী কি হল, তুইও তোর বাবাকে ডাকতে গিয়ে হারিয়ে গেলি নাকি? আয় তারাতারি।
ভেতর থেকে- মা একটু ওয়েট কর? বাবা কেরোসিন তেলের বোতলটা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। কোথায় যে রেখেছ?
– কেন তেল কি হবে?
– ওই বাবা বলছে, আমরা যেখানে বেড়াতে যাচ্ছি সেখানে যদি পিঁপড়ার বাসা থাকে! আর তোমাকে কামড় দেয়।বাবা তো সাঁতার জানেনা। তাই আগেভাগেই মারার ব্যবস্থা করবে।
তনু মুচকি হেসে চুপ হয়ে গেল। এ বয়সেও মনে মনে শিহরিত হল। মনে পড়ে গেল কত মধুর স্মৃতি। কতগুলো বছর পেরিয়ে গেল অথচ মানুষটা সেই একটা জিনিসই ভুলতে পারল না। আহামরি আহ্লাদে কোনদিন ভালোবাসাও প্রকাশ করেনি। কিন্তু সবসময় ভীষন কেয়ারিং এটা ভাবতে তার ভালোই লাগে।
ছবি- আমার
২৫টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
দুষ্টু ছেলেটা সত্যি খুব ভালোবাসে তনুকে কিন্তু বেঁচারা প্রকাশ করতে পারে না। আহারে! তনুর পিঁপড়ার কামর খাওয়া, পানিতে পরা, আমি হলেতো লাভ ইউ জান বলেই দিতাম😋 প্রেম হয়েছিল ঠিকই এইজন্যই আজ তারা এখনো দুজনে একসাথে। দুষ্টু ছেলেও কত কেয়ারিং❤️ প্রেম বিষয়ক গল্প ও খুব ভালো লেখ তুমি।তুমিতো কবিতা, গল্প সমসাময়িক সবটাতে এগিয়ে আছ। মনের অলিগলি থেকে যে ভালোবাসার পাথর এনেছিলাম সেটা তবে ভালোই কাজে দিছে😋ভালোবাসা উছলায় উছলায় পরতেছে বইন। শুভকামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পাথর এনে দেবার জন্য ধন্যবাদ। বোন বলে কথা। ভালো তো চাইবেই॥
শুভ কামনা রইলো আপুনি। ভালো থেক।
দিপালী
বাহ্! দারুন মিষ্টি মধুর প্রেম। সত্যিকারের প্রেম কথায় প্রকাশ করার দরকার হয় না বরং আচরনই সেটি প্রকাশ করে দেয়। ভাল লাগল। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পাঠকের ভালোলাগাই বড় পাওয়া।
শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
কেউ কেউ এমনই হয় অনেক ভালোবাসলেও মুখে তা প্রকাশ করতে পারে না। আপনার গল্পের দুষ্টু ছেলেটিও সেই দলের। ভালোই লাগলো গল্পটি। বেশ মজার ছিলো। ভালো থাকুন আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
ছাইরাছ হেলাল
গরীলা!!!!! এটি আগে ঠিক করুন,
গল্পের তনু তো দেখছি পেকে লাল, কী করে কী করতে হয় !!
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভারী মজার গল্প তো
পিপরার কামড়ে বেহাল দশায়
প্রেমের পরিনতি শেষে বিয়েতে গড়ায়।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ দাদা মন্তব্যের জন্য।
শুভ কামনা ও কৃতজ্ঞতা রইল।
খাদিজাতুল কুবরা
বাহ্
চমৎকার গল্প!
আমিতো ভাবলাম জলে ডুবে সব শেষ!
এখন দেখি না, প্রেমের মরা জলে ডুবে না।
ভালোবাসা বলার চেয়ে ও বোঝানোর প্রয়োজন বেশি।
গল্প ভালো হয়েছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। প্রেমের মরা জলে ডোবে না॥ দারুন মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা অবিরাম।
আরজু মুক্তা
রোমাঞ্চিত ( ঞ + চ) বানান ঠিক করেন।
প্রেম না করেও বিয়ে পরবর্তী প্রেম। জাগ্রত থাকুক।
দুষ্ট মেয়ের মিষ্টি প্রেমের কাহিনী।
ভালো লাগলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঠিক করছি আপুনি। ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো।
মোঃ খুরশীদ আলম
বর্তমান কালে অধিকাংশ ছেলেরাই প্রলোভনে ………. করে । তার আগে প্রেম। সারাদেশে আজ মহোৎসব চলচে। মানুষ গড়ার কারিগররাও তাতে পিছিয়ে নেই। যাচ্ছেতাই অবস্থা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কথা ঠিকই বলেছেন ভাইয়া। প্রেম শব্দটা বা করাটা কোনটাই খারাপ নয়॥ আমরা কোন না কোন ভাবে করেই থাকি॥ তবে তফাৎ হচ্ছে সবারটা হয়ত এক হয়না। ভালো খারাপ দুটোই থাকবে। বেছে নেবার দায়িত্ব আমার।
হাদিস বলে, ছেলে মেয়ে বিয়ের পূর্বে একেঅপরের পছন্দ হবে তারপর বিয়ে করবে। তারা একা একা কথা বলবে , জানবে, শুনবে তারপর বিয়ে॥
মানুষ গড়ার কারিগর আমরা সবাই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ॥
শুভ কামনা রইলো।
মোঃ খুরশীদ আলম
একে অপরকে দেখে-শুনে-বুঝে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া আর বিয়ের পূর্বে প্রেমে ডুবে যাওয়া এক নয়। র্ব্তমানে দেখা-শুনা-বুঝার নামেও কিন্তু ভালবাসার ষোলকলা পূর্ণ করে দেয় অপদার্থ ছেলেগুলো, মেয়েগুলোও কিন্তু কম না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার ভাবে সমাপ্তি ঘটালেন গল্পের। লাল পিঁপড়া থেকে সরাসরি মেয়ের বাবা-মা! এমন ভালোবাসা কে ধন্যবাদ দিতেই হয়, দিলাম ধন্যবাদ। সবার প্রকাশ এক হয় না। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প উপহার দেবার জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। মহা অষ্টমীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ নিলাম এবং আপনার বিস্তারিত মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
আপনিও সুন্দর থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহা অষ্টমীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্যও।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহাহা, পিপড়া থেরাপি দেখি সেইইই রকম কাজে লেগেছে! এমন লাইফ গ্যারান্টি মার্কা ফর্মুলা থাকতেও আজকালকার প্রেমিক/ প্রেমিকারা কেন যে ব্যর্থ হয়!
বুঝেছি, সোনা জান জানু ডাকের মধ্যেই রিয়েল লাভ থাকে, বাবুরা থাকে খাওয়ার তালে 😜😜
কোটি টাকার প্রশ্ন কিন্তু আমারও! “ আচ্ছা এই বেটাছেলেরা মা থেকে শুরু করে মেয়েদের দেখতে দেখতেই বড় হয় তারপরও মেয়ে দেখলেই গরীলা হয় কেন?”
কেন হয় গরীলা বাহিনী?
রোকসানা খন্দকার রুকু
**বুঝেছি, সোনা জান জানু ডাকের মধ্যেই রিয়েল লাভ থাকে, বাবুরা থাকে খাওয়ার তালে 😜😜***
হা হা হা হা। আপনারা সবাই দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প লিখেন। আপনার লেখায় তো কেমন আবেশ ছুঁয়ে যায়। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে।
আমি পারিনা, চেষ্টা করছি। গরীলারা মানুষ হোক।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
শামীম চৌধুরী
আপনার সব ছোট গল্পই ভাল। এটাও ভাল লাগলো। দারুন লেখনী।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাইয়া আপনার লাবউউউ এর মত না। যতবার মনে হয় ততবার হাসতে হাসতে শেষ।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এরকম আইডিয়া প্রেমিকযুগলের জন্য ফ্রীতেই দিলেন দেখে নিশ্চিত সকলের দোয়া পাবেন আপু।
লেখা ভালো লেগেছে খুব। শুভকামনা রইল।