
অনেকদিন হল পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।বন্ধের দিন হকার করুন চোখে তাকালো । বুঝলাম কষ্টটা। তবুও মুখ ফিরিয়ে নিলাম।প্রতি মাসে তিনশ টাকা করে বিকাশ করি ওর নাম্বারে।ও বোধহয় বুঝতে পারে।প্রায়ই নেইম প্লেটের পাশে পেপার গুঁজে দিয়ে যায়।মাঝে মাঝে নিয়ে রাখি ,তরকারী কাটার সময় ব্যবহার করি।তখনই মাঝের বিনোদন পাতাটা দেখি ক্যাটরিনা,দিপীকার খবর কি? আর পড়তে ইচ্ছে হয়না।আছেই বা কি?
সকাল বেলা হেঁটে এসেই টিভি ছাড়া অভ্যাস ,তাও বদলে ফেলেছি। ভয় হয়!যদিও ছাড়ি হিন্দি গানের চ্যানেল এ গানই শুনি। মোবাইলেও ঢুকি না খারাপ খবর দেখার ভয়ে!
সকালবেলা খারাপ খবর দেখার পর মনটা তেঁতো হয়, বিষিয়ে ওঠে সারাদিন খারাপ কাটে। ভালো কোন খবর নেই,তাই চুপচাপ সংসারের কাজ করে যাই!
মন কিন্ত ঠিকই আনচান করে! মা ডিসকভারি চ্যানেল দ্যাখে।পানি খেতে গিয়ে হরিন নৃশংসভাবে কুমিরের ধারালো দাঁতের থাবার শিকার হয়।আহ্হা শব্দ করে ওঠে।চেন্জ করে সংবাদ দেয়।
চোখে পড়ে একানব্বই বছরের বুড়ি, ছয় বছর, পাঁচ বছরের শিশু, আদিবাসী, গৃহবধূর ধর্ষনের খবর।
প্রতিনিয়ত এসব ঘটছে।বাবা-মা সন্তানদের লুকিয়ে রাখছে। টাকা পয়সা দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে বলে,তুই লুকিয়ে থাক আমরা দেখছি।আত্নীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। ভালো উকিল নিয়োগ,মেয়ের পরিবারে হুমকি-ধামকি সহ সকল প্রক্রিয়া অনুসরন করে।এবং একসময় নির্দোষ প্রমাণিত করে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেয় বাড়িতে।
বাংলাদেশের আইন কি করে? চেয়ে চেয়ে দ্যাখে।কারন আইনের ধারক বাহক সব বন্দী,শেকলে বাঁধা হাত পা তাদের।
অধিকাংশ ধর্ষকই প্রভাবশালী কিংবা কোন দলের দোহাই,নেতাদের দোহাই দিয়ে বেঁচে যায়।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার আশি বছরের মায়ের দিকে তাকাই।জীর্ন শীর্ন শরীর,কোথায় আকর্ষন হবার মত কি আছে সে শরীরে!
ভাইয়ের ছোট্ট মেয়ে প্রশ্ন করে,রক্তাক্ত শিশুর ছবি দেখিয়ে –
-ফুপি ওর কি হয়েছে? অবাক চোখে ওর দিকে তাকাই ।ওর বয়সীই তো!কি আছে এই এতটুকু শরীরে।
আমার এগারমাসের সন্তান আযানকে বুকে আঁকড়ে ধরি। ওকে তো এডপ্ট করেছি মানুষ করব বলে,পারব কি মানুষ করতে?আজকের যে ছাত্ররা মেয়েটির সাথে এমন করেছে তাঁরাও নিশ্চয়ই আমার মত পরিবারের সন্তান।তাহলে কেন তাঁরা এমন?
থরথর করে কাঁপতে থাকি,চেয়াল শক্ত হয়ে যায়।আযানকে বুকে জোড়ে চেপে ধরি। চিৎকার করে কাঁদছে। আমি যেন শুনতে ই পাচ্ছি না।
হ্যাঁ আমি এমনই হব? তোকে চিপে মেরে ফেলব,যতই তোকে ভালবাসি না কেন? যতই আমি নিঃসন্তান হইনা কেন? এমন ঘৃনিত জঘন্য অপরাধে আমি তোকে স্থান দেবনা বুকে।উকিল নিয়োগ করবনা! তোর সাজার জন্য আইনকে সাহায্য করব। ছেলেমানুষ ভুল করে ফেলেছে এসব বলে শালিশের ব্যবস্হাও করতে যাবনা।বরং চাইব যত দ্রুত তোর চরম সাজা হয়,তত দ্রুত শান্তি আমার।
কষ্ট তো হবেই।কত শত চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে তোকে বড় করেছি।রেপিষ্ট হিসেব দেখবার জন্যই কি?
তুই কেমন রে?একজন নারীর গায়ের গন্ধ শুকে শুকে,বুকে জড়িয়ে বড় হবার পরও সম্মান করতে শিখিস না। তাহলে তোকে কি করা উচিত? ক্রস ফায়ার কিংবা এমন কোন সাজার ব্যবস্থা যাতে সারা জীবন বেঁচে থাকবি কর্ম ফল সাথে নিয়ে।তখন বুঝবি যন্ত্রণা কাকে বলে!
আযান আরো জোড়ে কাঁদছে। চটকা মেরে ফেলে দিলাম বিছানায়।গোটা পুরুষ জাতির উপরই ঘৃনা হচ্ছে,খুব ঘৃনা।
আমি কলেজে বাংলাদেশের সংবিধান,সাংবিধানিক আইন পড়াই না। লজ্জা লাগে ,বমি পায়। মেয়েরা বললে -তোমাদের স্যারই ভালো জানেন। অতবড় সংবিধান আমার মাথায় কুলায় না।কিংবা আমি হয়ত দেশপ্রেমিক না।তাতে অবশ্য সমস্যা নেই!
পড়াই UK,USA,France এসব। মাত্র দশপাতা সংবিধান।প্রয়োগ, সৃষ্টি, সফলতা এক সভ্য সমাজ।ভালোলাগে পড়াতে। এটাই হয়ত আমার প্রতিবাদ।পাতি বাঙালি হিসেবে আমার আর কিইবা করার আছে।
“দেখব শুনব বলবনা,কোন বিপদে পড়ব না।”এমন একটা ভাব নিয়ে বেঁচে থাকা!
ছবি-সংগ্রহ
২৮টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
দুঃখকরা ছাড়া কিছু করার নেই সময়টা খুবি খারাপ ———–রুকু আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ , ঠিকই বলেছেন ভাইয়া।
শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
একজন নারীর অনেক রুপ।একসময় সে বউ,তারপর, মা,তারপর কন্যা,আবার বোন। নারীদের সম্মান যারা দেয় না তাদের মধ্যে মনুষত্ব নেই।তাদের রুচিই বিকৃত।তাই এইসব ধর্ষন থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেকের আগে মানসিকতা চেঞ্জ করতে হবে তারপর বাকিসব।ভালো বিষয় নিয়ে লিখেছো।আর একটা কথা আমি ভবিষ্যতে আমার ছেলে বেবি হলে নাম রাখব আযান এটা ৫ বছর আগেই ঠিক করে রেখেছি।আজ জানলাম তোমার বেবির নামও আযান।অথচ জানতাম না।নামটা কমন হলো তবুও রাখব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কোন সমস্যা নেই।আমিই আযান ডাকি।মেয়ে হোক।বউ বানাবো।
কামনা রইলো। ভালো থেক।
রেজওয়ানা কবির
অপেক্ষায় রইলাম।
শামীম চৌধুরী
এই সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে আজ একটা ছড়া লিখেছি
দশে মিলে
এক নারীকে
ধর্ষণ করিস
খায়েশ মেটাতে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কিভাবে সম্ভব।একটা মানুষ চিৎকার করে।
অন্যরা সেটা মজা হিসেবে নেয়।
শুভ কামনা ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
“দেখব শুনব বলবনা,কোন বিপদে পড়ব না।”এমন একটা ভাব নিয়ে বেঁচে থাকা! কি করব বোন! গায়ে নায় শক্তি, মাথায় নাই ব্রেন, ক্ষমতা নাই তাদের শাস্তি দেওয়া চুপ থাকা ছাড়া কোন পথ পাইনা। হইতো বলবেন লড়াই করেন। জাস্ট মরতে পারব। এর পর কি হবে কিছুওই না। দেশে হাজার হাজার এই সমস্যা।
কারো কাছে কোন প্রতিকার পাবনা, বিশেষ করে আইনের রক্ষকের কাছে। তাই আমি আমি অধম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা আসলেই অধম।একদম সত্যি কথাগুলো বলেছেন।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
ইঞ্জা
সত্যি দুঃখজনক যে আমিও পুরুষ, আজ সমাজের এইসব কুলাঙ্গারদের কারণে নিজের প্রতি ঘৃণা হয়, ওদের কে কি কুত্তায় জন্ম দিয়েছে যে যেখানে সেখানে ধর্ষণ করে বেড়ায়, সে কোন মার জন্ম তোমরা যে মা বোন সম মেয়েদের ধর্ষণ করে বেড়াও, বুক কি কাঁপেনা তোমাদের, মনে পড়েনা তোমাদের মা বোনদের?
আপনার লেখা পড়ে সত্যি বুক আমার কেঁপে উঠলো আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই বুক কি কাপেনা। আমারও তাই মনে হয়।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
শুভকামনা অবিরত
খাদিজাতুল কুবরা
রুকু আপু বুকটা হুহু করে উঠলো। আমি ও পত্রিকা পড়িনা খবর দেখিনা। মারাত্মক কিছু ঘটলে এ ওর থেকে শুনি। আমার হার্ট দুর্বল সেনসেটিভ খবর হঠাৎ নিতে পারিনা।
নিজের ও একটি ছেলে আছে বার বছরের। জানিনা কতোটুকু সুশিক্ষা দিতে পারবো। সবসময়ই দুশ্চিন্তা হয়।
আল্লাহ পাক আমাদের ছেলেদের মধ্যে তাকওয়া পয়দা করে দিন। শুধু এই দোয়াটুকু করি মা হিসেবে।
ধন্যবাদ আপু এমন একটি বিষয়ে লেখার জন্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ, সবসময় দোয়া করতে হবে। আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
দোয়া করি আপনার ছেলের জন্য। মেয়ের মা হওয়ার বোধহয় ঝামেলা কম!
আর এইসব ছেলেদের বাবা মায়েরও সমস্যা থাকে। সঠিক শিক্ষা দিতে পারে না।
শুভ কামনা আপু॥ ভালো থাকবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
রুকু আপু আমার একটি মেয়ে ও আছে। সারাক্ষণ কুঁকড়ে থাকি আর আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। ওরা যেন অন্যায় না করে এবং অন্যায়ের স্বীকার না হয়।
পরিস্থিতি খুব খারাপ।
নৈতিকতার চরম ক্রান্তিলগ্নে আছি আমরা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাহ্ দারুন। শুভ কামনা ও অনেক ভালোবাসা আপনার বাচ্চাদের জন্য।😍😍😍😍
সুপর্ণা ফাল্গুনী
স্যালুট জানাই এই বিষয়টি নিয়ে এভাবে লেখার জন্য। আপনার প্রতিটি কথা যেন আমার কথা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। তাই মন্তব্য আর দীর্ঘ করলাম না। ভালো থাকবেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনিও ভালো থাকবেন দিদি।দোয়া আর শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
আমি মুখে স্কচ টেপ লাগাইছি।
সবার মেয়েই তো আমারও মেয়ে!
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার মেয়ের জন্য শুভ কামনা।
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
“দেখব শুনব বলবনা, কোন বিপদে পড়ব না।”
যখন কিছুই করার নেই তখন তো এমন ই হওয়ার কথা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সত্যিই তাই। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
মোঃ খুরশীদ আলম
আপনার “ আযান” যেন মানুষের মতো মানুষ হয় সেজন্য দোয়া করি। ওকে নিয়ে আপনার ভাবনা বেশ-বুঝতেই পারছি। ছোট থেকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। নৈতিক শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। আপনার আযান সুস্থ থাকুক। সেই প্রত্যাশা করি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দোয়া করবেন। শুভ কামনা। আপনিও অনেক ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীকে শুধুমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবেই দেখতে অনেকে অভ্যস্ত। যদিও সময়ে পরিবর্তন হচ্ছে। তারপরেও নারী তার প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি।
শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক কেউ নিরাপদ নয়। অথচ নিজের ঘরেও মা বোন আছে। তাদের সবার নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
ভালো থাকুন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সত্যিই বলেছেন ভাইয়া। শুভ কামনা। আপনিও ভালো থাকুন।
সুরাইয়া পারভীন
হ্যাঁ আমি এমনই হব? তোকে চিপে মেরে ফেলব,যতই তোকে ভালবাসি না কেন? যতই আমি নিঃসন্তান হইনা কেন? এমন ঘৃনিত জঘন্য অপরাধে আমি তোকে স্থান দেবনা বুকে।উকিল নিয়োগ করবনা! তোর সাজার জন্য আইনকে সাহায্য করব। ছেলেমানুষ ভুল করে ফেলেছে এসব বলে শালিশের ব্যবস্হাও করতে যাবনা।বরং চাইব যত দ্রুত তোর চরম সাজা হয়,তত দ্রুত শান্তি আমার।
তাবৎ দুনিয়ার মায়েরা এমন হলে হয়তো ধর্ষণ, ধর্ষক শব্দগুলো অভিধান উঠে যেতো। হাহাকার করে উঠছে বুক তবুও মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে যেতে হবে। অন্ধ বোবা কালা হয়ে বাঁচতে হবে
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা আপুনি।
ভালো থাকবেন।