কষ্টের হরেকরকমের রুপ
“কষ্ট” শব্দটির অর্থ একই কিন্তু এর ব্যাপকতা বিশাল,প্রকারভেদ ভিন্ন।কেননা একেকজনের কষ্ট একেকজনের কাছে একেকরকম।যা আমার কাছে কষ্ট তা অন্যের কাছে হয়তো কষ্টের নাও হতে পারে। আবার যা অন্যের কাছে কষ্টের তা আমার কাছে নাও হতে পারে।
“কষ্ট”
অদ্ভুত ভয়ংকর অনুভূতি।কষ্টের অনুভূতি একেক বয়সে একেকরকম।শিশুরা জন্মের পরপরই কাঁদে এটা সহজাত প্রবৃত্তি।
ছোটবেলায় খেলনা না পেলে,কার্টুন না দেখলে, মাকে না দেখলে, কষ্ট হয়। যখন একটু বড় হয়, তখন খেলতে যেতে না দিলে,বন্ধুদের সাথে মিশতে না দিলে, নিজের স্বাধীনতায় বাঁধা দিলে কষ্ট হয়।কিশোর বয়সে প্রেমে পড়লে,ছ্যাকা খেলে,এক ধরনের কষ্ট,।
বিয়ের পর শুরু হয় আরেকধরনের কষ্ট।সংসার,নতুনভাবে মিশতে না পারা,তাল না মিলাতে পারা,নিজেকে সুখি ভাবতে না পারা,শুরু হয় কষ্টের আরেক রুপ।
এরপর শুরু হয়, নিজের কষ্টের পাশাপাশি সন্তানদের বড় করার কষ্ট,,,,,,,,
সন্তানরা বড় হলে তাদের কষ্টের সাথে যোগ হয় বৃদ্ধ বয়সের কষ্ট। এই বয়সে বৃদ্ধরা একদম নিজেকে অসহায় ভাবে,তারা শিশুর মত হয়ে পড়ে,তাই তারা অনেক অভিমানীও হয় আর এভাবেই তাদের আবার নতুন রকমের কষ্টের মাত্রা যোগ হয়।
বয়সের ধাপ অতিক্রম করার সাথে সাথে মানুষের কষ্টের রং বদলাতে থাকে,,,
স্থান, কাল, পাত্রভেদে কষ্ট ব্যাতিক্রম।আবার হয়তো পদমর্যাদার ভিত্তিতে কষ্টের রং পরিবর্তন হয়,কারো রাস্তায় থাকার কষ্ট,কারো দালানকোঠায় থাকা সত্বেও ঘুম না হওয়ার কষ্ট,কারো আবার টাকা না থাকার কষ্ট আবার কারো অতিরিক্ত টাকার কষ্ট।
কিন্তু কিছু কষ্ট হয়তো মানুষের একই থাকে শুধু অনুভূতি প্রকাশে ভিন্ন।
কালকে একটা মুভি দেখলাম,নাম খাঁচা। একটু বলি ছিনেমার সারাংশ,,,,,,,,
সেখানে অনেক ধরনের কষ্টের রুপ দেখলাম।গ্রামের এক নারীর অভাবের যন্ত্রনায় তাকে বেঁচে দেয়া হয়, মেয়েটি যখন বুঝতে পারে তখন সেই যৌন নির্যাতন থেকে পালানোর জন্য আশ্রয় নেয় আরেক কর্পোরেট অফিসার নারীর কাছে।সেই নারী নিজেই ভুক্তভোগী, স্বাধীনচেতা হওয়ার কারনে ডিভোর্স হয়, নিজের মেয়েকে কাছে রাখতে পারে না,দেখতে যেতে পারে না,আবার নতুনভাবে যোগ হয় গ্রামের মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা,এরপর যোগ হয় তার অফিসে যৌন নির্যাতনের ঝামেলা,চাকুরী, ইত্যাদি।
আসলে সিনেমা বাস্তব থেকেই হয়।গ্রামের মেয়েটির যে নির্যাতন,শহরের মেয়েটিরও সেই একই নির্যাতন, তাদের অনুভূতিও এক শুধু মানুষগুলো ভিন্ন,পরিবেশ ভিন্ন।
এভাবেই মানুষের জীবনের সাথে সাথে কষ্টের রং বদলাতে থাকে,,,,,
তবে কষ্টকে দমনের ক্ষমতা সবার একই না। যে যার মত কষ্টকে বহন করে সারাজীবন।
কোন কষ্টই ছোট না, যার যার কষ্ট তার তার কাছে অনেক বড়।
তবে এই কষ্টগুলোকে বহন করে,এর সাথে যুদ্ধ করে চলতে হবে, হয়তো তখনও কষ্ট থাকবে শুধু নিজের মধ্যে।
আমি একটু ব্যাতিক্রম, আমার কষ্টগুলো কোনদিন প্রকাশ করতে পারি না,কারো সাথেই শেয়ার করতে পারি না।কোথাও লিখতেও পারি না,এতটা আর্টিফিসিয়াল হয়ে গেছি,যে কষ্ট ব্যাপারটি এতটাই দমন করি যে বাইরে খুব সুন্দর অভিনয় করি।
হয়তো এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়,একদিক থেকে এটা ভালো,যে কেউ-ই দূর্বলতা জানে না, সমাজ মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নেয়,তাই নিজেকে বাইরের জগতে আর্টিফিসিয়াল রাখি, কিন্তু মানুষতো জানে ভালো আছি।
আবার এইটা ভিতরে দমন করতে করতে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়, একসময় খুব বিষন্ণতা ভর করে ফেলে ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে পড়ি,কাছের মানুষের কাছে অনবরত অভিনয় করি,সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেই,অবশেষে হয়ে পড়ি আমি একা,খুব একা।
সবাইকে হয়তো এভাবেই চলতে হয়,,,,,হবে,,,,,তাই অবশেষে বলতে চাই,,,
“কষ্ট নেবে কষ্ট,নীল কষ্ট,লাল কষ্ট,
হরেকরকমের কষ্ট আছে,
মাল্টিকালার কষ্ট আছে,কষ্ট নেবে কষ্ট???
ছবি সংগ্রহঃ গুগোল থেকে।
২৫টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মন ছোঁয়া লেখা দিলেন তাও অনেকদিন পর, ব্যাপার কি অনেকদিন পর এলেন?
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।হুম একটু গুটিয়ে নিয়েছিলাম তাই আর কি! ইনশাআল্লাহ নিয়মিত হবো খুব তাড়াতাড়ি।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ
আলমগীর সরকার লিটন
কষ্ট টাকে আপন করে সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ করেছেন কবি আপু
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ফয়জুল মহী
অনেক কষ্টের কথা । শিরোনাম কেন দেখছি না।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।শিরোনাম মিসিং হয়েছিল ভাগ্যিস আপনি বললেন তাই ঠিক করতে পারলাম।
সুপায়ন বড়ুয়া
আসলে সবাই কষ্টে আছে ছোট থেকে বড়
ধনী থেকে গরীব রূপটা খালি ভিন্ন।
কষ্টের রূপ নিয়ে সুন্দর লেখা ভাল লাগলো।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।এভাবেই মানুষ নিজের মাঝে কষ্টকে পুষে রেখে চলতে থাকে।এটাই জীবন।
বন্যা লিপি
রকমফেরে কষ্টের চিত্ররুপ। ওই সেই শেষ লাইনের মত……কষ্ট নেবে গো কষ্? হরেক রকমের কষ্ট?
রেজওয়ানা কবির
হুম আপু।শুভকামনা রইলো,ভালো থাকবেন সবসময়।
আরজু মুক্তা
আমি তো বাহিরে বের হওয়ার সময় কষ্টগুলো দরজার চৌকাঠে রেখে আসি। মিলায় ফেলি না। পথ তো চলতে হবে। আবার ওখান থেকে অর্জনও করতে হবে।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা
রেজওয়ানা কবির
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।ভালো থাকবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
“কষ্ট নেবে কষ্ট,নীল কষ্ট,লাল কষ্ট,
হরেকরকমের কষ্ট আছে,
মাল্টিকালার কষ্ট আছে,কষ্ট নেবে কষ্ট???****
কেউ নেবে না। কষ্ট কেউ নেয়না।এটাকে সহনীয় করে চলতে হয়।হয়ত এটা থাকে বলেই আমরা সুখকে এত ভালো বাসি।
শুভ কামনা আপু।নিয়মিত হও ভালো লাগবে।
রেজওয়ানা কবির
ঠিক কথা আপু।এভাবেই চলতে হয়।ভালো থেকো,নিয়মিত হবো ইনশাআল্লাহ।
শামীম চৌধুরী
আপনার কবিতাটি পড়ে মনটা যেন কথায় ছুঁয়ার জন্য গেল।
মনোমুগ্ধকর কবিতা।
শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।ভালোবাসা অবিরাম।
তৌহিদ
একজীবনে কষ্টের হরেক রুপ থাকবেই। বয়সের সাথেভআমাদের চাওয়া পাওয়াগুলির তারতম্যে সুখ দুঃখের রকমফের হয়। এসবকিছুকে ম্যানেজ করেই জীবনে এগিয়ে যেতে হয় আপু।
তবে কিছু কষ্টের সীমা পরিসীমা নেই-
পিতামাতাকে দেয়া সন্তানের কষ্ট
পারিবারিক অশান্তি
অযাচিত বিপদ ডেকে নিয়ে আসা কষ্ট ইত্যাদি।
সকলে ভালো থাকুক এটাই প্রার্থণা। আপনিও ভালো থাকুন আপু। চমৎকার লিখেছেন। নিয়মিত সোনেলায় লেখা চাই আপনার।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একসময় খেলনার জন্য কষ্ট পেয়েছি, পড়াশশোনার চাপে কষ্ট পেয়েছি তারপর ভালোবাসার মানুষটির জন্য কষ্ট পেয়েছি, টাকাপয়সার কষ্ট পাচ্ছি। এখন বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্ট। খুব ভালো লিখেছেন কষ্টের রকমফের নিয়ে। বয়সের সাথে সাথে কষ্টের ধরণ বদলে যায় কিন্তু কষ্ট থেকেই যায়। তেমনি সুখের রঙটাও বদলে যায়। শুভ কামনা রইলো
রেজওয়ানা কবির
এখন বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্ট,খুব ভালো লাগল, মন ছুঁয়ে দিল এই কথাটা। ভালোবাসা অবিরাম আপু।
খাদিজাতুল কুবরা
কষ্ট নিয়ে চমৎকার লেখা পড়লাম। আপনার কষ্ট পুষে ভালো থাকার গল্প শুনলাম। আমরা সকলেই হয়তো তাই করি। হয়তো এটাই জীবনের নিয়ম। কষ্টের খনি বুকে নিয়ে হাসিমুখে পথ চলতে হয়।
অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।হুম এটাই হয়তো জীবন। আর বেশিরভাগ মানুষই হয়ত এমনই পুষে রাখে।ভালো থাকবেন সবসময়।শুভকামনা রইল
Jasim uddin
অদ্ভুত ভয়ংকর অনুভূতি।কষ্টের অনুভূতি একেক বয়সে একেকরকম
রেজওয়ানা কবির
হুম ভাইয়া,তবে এই কষ্টটা সব বয়সেই থাকে,সবাই ছেড়ে যায় কিন্তু কষ্ট ছেড়ে যায় না।