রং নাম্বারে ফোন কল আসার দিনও কিন্তু এখন আর তেমন নেই বললেই চলে। বিরম্বনার আরেক নাম ছিলো রং নাম্বারে কল আসা। গোল গোল চাকতির মত ফাঁকাঘরে নির্দিষ্ট নাম্বার বিচিত্র শব্দে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করা, অপর প্রান্তে ঘন্টি বাজছে….. ক্রাডলে থেকে রিসিভার তোলার আওয়াজটা শোনার পর মনে হচ্ছে, এবার কাঙ্খিত কন্ঠে বলে উঠবে, হ্যালো, কে বলছেন,, কাকে চাই? এপার থেকে নিজের পরিচয় দেবার তোয়াক্কায় সময় নষ্ট করার চেয়ে অনর্গল শ্ল্যাং ( গালাগালি) শুরু। ওপারে মানুষটা তব্দা খায় আর কি! কতক্ষন শোনা- টোনা শেষ করে উল্টো ঝারি…মিঞা, ডায়াল করার সময় কি চক্ষু দুইডা লুঙ্গী র খোটে বাইন্দা লইছেলেন? কারে ফোন দেতে যাইয়া কারে গাইল্লাতাছেন? ফোন থোয়ন মিঞা! আমি কুদ্দুস আলী না, রং নাম্বারে ফোন দেছেন আহমনে’
এরকম কাহিনী কারো সাথে ঘটে নাই, এটা বুক ফুলিয়ে কেউ বলতে পারবে না। রং নাম্বার নয়, রং মানুষ যদি হয়, তাহলেও রম্য কাহিনী জমে ওঠে হাসির খোরাকে।
আমি তখন বাপের বাড়ি আছি কয়েকদিন হলো। অনেকেই জানেন, অনেকে জানেন না। যেমন আমি গেলে অনেকেই দেখা করতে আসেন, বা সবসময় যারা আসেন তারা দেখেন/ জানেন আমি ঝালকাঠিতে আছি। এরকম এক কাকু, যিনি সবসময় বাসায় আসা যাওয়া করতেন,ফোন করেছেন বাসায় , সাধারনত আব্বা আম্মা কাছাকাছি থাকলে আমরা ভাই বোনরা ফোন রিসিভ করি না। ফোনের কাছে টিভি দেখছিলাম বলে আমিই রিসিভ করলাম-
: আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন? কাকে চাচ্ছেন?
– তুমি এত ঢং কইরা কতা কওয়া ধরলা কবে থেইক্কা?
চান্দি গরম হওয়ার পথে গরমের পারদ উঠছে আমার মাথার দিকে।
: কে বলছেন আপনি? কাকে কি বলছেন? কত নাম্বারে ফোন করেছেন?
– তা স্বামী যে বাইরে বাইরায়, হের জিনিস পত্র যে এহানে ওহানে(যেখানে সেখানে) ফালাইয়া থুইয়া যায়! হেয়ার কিছু করতে পারো না?
এতক্ষনে বুঝলাম….বুঝে আর তাঁকে লজ্জা না দিয়ে বলে উঠলাম,
: আপনি বোধহয় আমার মা’কে কল করেছেন। ধরুন তাঁকে ডেকে দিচ্ছি।
বলে রিসিভার চেপে ধরে দমক দেয়া হাসি চেপে আম্মাকে জোড়ে ডাক দিলাম। আম্মাঃ হ্যালো? কে?
জনৈক- কে মানে? আগে কও তুমি এরহম কতা কওয়া শেখলা কবে?
আম্মাঃ কি রহম কতা কইলাম? কেডা আহমনে?
জনৈক– এই তোমার হইছে কি? আগে কও আগে ফোন ধরছেলে কেডা?
আম্মাঃ ধরছে তো আমার মাইয়া।
ওপারে দিলীপ কাকুর চেহারাটা তখন আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। কত কি বলে ফেলেছেন ভাবিকে ভেবে আমাকে!
দিলীপ কাকু- লিপি? ও আইছে কবে? চাঁন ভাই দেহি এতক্ষন আমার স্টুডিও তে বইয়া গেলো, কই কইলো নাতো লিপি আইছে? হে আরো ভুলে মোবাইল ফালাইয়া থুইয়া গেছে দেইক্খা আমি তোমার লগে মস্করা কইরা কতকিছু কইলাম।
যাদের প্যারালাল টেলিফোনের ব্যাবস্থা ছিলো, তাদের বিরম্বনাও ছিলো চরমে গরমে নাকানিচোবানি খাবার মতো অবস্থা। এখন যেমন আধুনিক বলতে অতি আধুনিক এ্যান্ড্রয়েড মোবাইলগুলোতে রেকর্ডিং সিস্টেম সুবিধা অনেকেই অনেক কার্যসিদ্ধি সম্পন্ন করার লক্ষে ভোগ করে থাকেন! তখন এই কাজটা করতো বিষেশ করে প্যারালাল ফোনের কারনে। এক প্রান্ত থেকে কেউ ডায়াল ঘুরিয়ে কল করেছেন তো অপর পাশ থেকে নিঃশব্দে আরেকজন রিসিভার উঠিয়ে কানে চেপে ধরে আছেন নিঃশ্বাস চেপে রেখে। টেপ রেকর্ডারে সেই কথাগুলো রেকর্ড করে রেখে, পরে সেই রেকর্ডকৃত কথা নিয়ে তুমুল বিতণ্ডায় জড়িয়ে সে এক এলাহী কাণ্ডকারখানা।
আরো এক বিরম্বনার নাম ক্রস কানেকসন! আহা মরি মরি! কতজন বেঁফাস কিছু শুনে ফেললো! কতজনার গোপনীয় প্রেমালাপ অথবা আদিরসাত্মক চুটকুলা(চুটকি) শুনে কান টান লাল করে ফেললেন! তার ইয়ত্তা নেই। ক্রসকানেকসনে অনেক প্রেমের কাহিনীও জন্ম নিয়েছে পজেটিভলি। আবার দৈবাৎ কপাল খারাপের দোষে ভেঙেও গ্যাছে নিটোল প্রেমের গল্প।
একটা গল্প মনে পড়ছে এই লেখা লিখতে এসে। গল্পটা বানানো কল্পকাহিনী নয়, একেবারে সত্য কাহিনী।
কাহিনীর চরিত্র এখানে গোপন রাখছি ইচ্ছে করেই। আমি চাইছিনা প্রকাশ করতে কেন্দ্রীয় চরিত্রের পরিচয় দিতে।
**********************
সামনেই এস এস সি পরীক্ষা। পড়াশুনার চাপ একটু বেশিই। তারওপর আর্টসের বিষয় গুলো বড্ড ঝামেলা লাগে রিতা’র কাছে। ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনিতী, পৌরনিতী, তারওপর অংক! কে যে নাম দিছিলো অংকের সরল? অংক আবার সরল হয় কবে? ভাবতে ভাবতেই রেডিওর নব ঘুরিয়ে বাংলা ছায়াছবির চ্যানেল ধরলো। গান বাজছে অঞ্জু ঘোষ, ওয়াসিম অভিনীত আবেহায়াত ছায়াছবির গান-‘ চাকভুম চাকভুম চাঁদনি রাতে,
কিছু বলবো কথা তোমার সাথে……’ রিতার জানতে ইচ্ছে করে গান গুলো লেখে কোন ছাগলে কাঁঠাল পাতা খাইয়া? বিরক্তিতে নব ঘুরায় আবার। চট্টগ্রাম বেতারে বাজছে –‘ আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে ‘মাসুদ রানা’ ছায়াছবির গান…… ‘মনের ও রঙে রাঙাবো, পাখির ও ঘুম ভাঙাবো,
সাগর, পাহার সবাই যে কইবে কথা……’ শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরও পায়নি। সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার আগেই জেগে গেলো হঠাৎ করে। ঘরটা খালি খালি লাগছে কেন? ছোট বোনটা ঘরে নেই বোধহয়। মা কোথায়? ছোট ভাই দুটোও ঘরে নেই। নেই বাবাও। এরকম ফাঁকা ঘরে দিনে দুপুরেও গা ছমছম করে। রুম ছেড়ে সামনের রুমে চলে এলো। বসার ঘরটাও ফাঁকা। দরজা দিয়ে সোজা চোখ গেলো উঠোন পেরিয়ে সদর গেটের দিকে। এক আঙিনায় ৩/৪টা ঘর। প্রধান গেট একই।
ঘর আলাদা হলেও চাচা চাচিরা সব একই আঙিনায় আছেন বলে কখনো মনেই হয়না, সব আলাদা আলাদা পরিবার। পারিবারিক বন্ধনটাও সমানতালে ব্যালেন্স হয়েই চলে। মা আর চাচিদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। শাহিনা মেজো চাচি’র সাথে মা’র সব চাচিদের থেকে একটু আলাদা সম্পর্ক। মা যেমন সব কাজে মেজো চাচিকে সহযোগিতা করেন, তেমনি মেজো চাচিও মা’কে মান্য করেন বড় জা হিসেবে। যে কোনো কাজের আগে মা আগে মেজো চাচির সাথে আলাপ করেন। চাচিও তেমনি। রিতা দেখছে দুভজনেই গেটের সামনে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছেন গেটের বাইরে রাস্তার দিকে। রিতার ভীষণ কৌতুহল হলো। এমনটা তো সাধারনত দেখা যায়না! ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলে ধমক খেতে হবে নির্ঘাত। পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে বরং। কিছুই বুঝল তো নাইই, বরং কানে এলো কিছু এলো মেলো কথার টুকরো টুকরো শব্দ….. আসেনাই,- হ, হেইয়াই, – কইছিলাম না?এয়া বাটপার!
রিতা মাথামুণ্ড না বুঝে নিজের মনে ফিরে গেলো ফ্রেস হতে। পড়তে বসার আগে পাড়ার আইভিদের বাসায় একটা ঢুঁ না মারলে পড়া মাথায় ঢোকে না। যথারিতী আইভিদের বাসায় ঘন্টা পার করে পড়ার টেবিলে এসে বসা। পরেরদিন সকালে সেলিনার কাছে রিতা নোট বই আনতে গিয়ে যখন ফিরে এলো ঘরে; কি দেখছে? মা মেজো চাচি এবং ছোট চাচ্চু টেলিফোনের কাছে একসাথে জড়ো হয়ে আছে। চাচির কানে রিসিভার। খুবই স্মার্টলি কথা বলছেন কিশোরি মেয়েদের মত। রিতার চক্ষু ছানাবড়া! হচ্ছেটা কি?
বলা বাহুল্য টেলিফোন বাসায় আসার পরে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন রিতার বাবা মা দুজনেই। ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেলেও যেন রিতা ফোন রিসিভ না করে। একান্ত প্রয়োজন পড়লে, যেমন রিতার মা মাছ কাটছেন, কি বাথরুমে আছেন, অথবা একেবারেই কেউ ঘরে নেই ফোন রিসিভ করার তখনই কেবল রিতা ফোন রিসিভ করে। আর ফোন করার কথা তো প্রশ্নই ওঠেনা। রিতা ফোন করবেই বা কাকে। রিতার বান্ধবিরাও কেউ ফোন ধরেও না করেও না। কাজেই রিতা জানেই না কি এবং কার ফোন আসাতে এই সব লুকোচুরি চলছে। কৌতুহলি হয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছে কাণ্ডকারখানা। চাচির এপারের কিছু কথা শুনছে এর মধ্যে মার চোখ পরলো রিতার দিকে। মায়ের চোখে কি যেন ছিলো, মনে মনে প্রমাদ গুণলো, জ্ঞানত পূর্বে এমন কোনো কাজ করেনি, যাতে মায়ের রক্তজবার মতো চোখ দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যাবে। রিতা ততধিক চোখে প্রশ্নের চিহ্ন এঁকে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। এদিকে ছোট চাচ্চু মেজো চাচির কানে রিসিভারের সাথে নিজের কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছে অপর প্রান্তে কে কি বলছে শোনার জন্য। চাচির শেষ কথাগুলো আরো কৌতুহলের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো রিতার। আন্দাজ যা করার মোটামুটি করো নেয়া ততক্ষনে হজম! রিতার ঠোঁটের কোনে হাসি এলেও চেপে গেলো। পুরোটা বোঝার জন্য অপেক্ষা……
চাচি ফোন রেখে দিয়ে তাকালোন শামসু চাচ্চুর দিকে। চাচিঃ কিছু বুঝছো? আন্দাজ করতে পারছো এ কার কন্ঠ হইতে পারে?
চাচ্চুঃ মনে হচ্ছে মনির। ওর গলাই তো লাগলো। আর যেভাবে কইলো মনির ছাড়া এ বয়সী পোলা তো আর কেউ নাই।
চাচিঃ মমিন কমিশনারের ভাই?
চাচ্চুঃ আমার তো তাই মনে হয়। কালকেও তো চৌমাথায় আসছিলো!
মাঃ শামসু তুমি শিওর এই পোলা কাইল বিকালে চৌমাথায় আইছিলো?
চাচ্চুঃ হ, আইছিলো তো!
চাচিঃ তাইলে তো মিথ্যা কয়নায় পোলাডা!
ঘটনা এরকম******
প্রায়ই ফোন আসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে। যেহেতু রিতার ফোন রিসিভ করা বারন। রিতা জানেও না কখন এবং কি বিষয়? মা ফোন ধরেন, ওপাশে কোনো আওয়াজ নেই। দিনের মধ্যে আরো কয়েকবার এরকম ফোনে আওয়াজ হলেই মা দৌঁড়ে এসে ফোন ধরেন কিন্তু কেউ কোনো কথা বলেন না। রিতার মায় খটাস করে ফোন রেখে দিয়ে ইচ্ছা মতো গালাগালি করেন– হারামজাদারা ফোন কইরা কতা না কইলে আমার কামে ডিস্টাব করো ক্যা? এমনি করে কয়েকদিন পার হবার পর চিকন বুদ্ধি জাহির করার খায়েশ হইছে রিতার মায়ের। রিতার মেজো চাচি বয়সের তুলনায় যথেষ্ঠ চৌকশ, স্মার্ট, কন্ঠ প্রায় রিতার বলে চালিয়ে নেবার মত। চিকন বুদ্ধি কি? শাহিনা চাচিকে দিয়ে ফোন রিসিভ করাবেন রিতা সেজে। মা ধরেই নিয়েছেন যেহেতু ঘরে কিশোরি মেয়ে আছে। এরকম ব্লাংক কল নিশ্চিত রিতার জন্যই হতে পারে। রিতার মায়ের গলার আওয়াজে বেচারা ব্লাঙ্ক কলদাতা ফোন রেখে দিতে বাধ্য হয়। বেচারার ধৈর্যও আছে বলতেই হয়। রোজ নিয়ম করে ফোন করে যাচ্ছে নিরলস ভাবে। যদি লাইগ্যা যায় লটারির টিকিটের মত! সেদিন হয়ত রিতাকে ফোনের ওপারে পাওয়া যাবে। ট্রিকসটা কাজে লেগে গেলো এদিকে মা আর শাহিনা চাচির। চাচি চমৎকার ভঙ্গিতে ২/৩ বার হ্যালো বলতেই ওপারে নিরবতা ভেঙে আওয়াজ উঠলো- : হ্যালো
রিতা ওরফে শাহিনা চাচি– কে বলছেন?
: চিনবে না
চাচি– চিনবো না তো ফোন করেছেন কেন?
: তোমার সাথে কথা বলার জন্য
চাচি- আমি কেন অচেনা কারো সাথে কথা বলবো? আগে আপনার পরিচয় দিন।
: পরিচয় তো অবশ্যই দেব। তার আগে আমাকে বুঝতে দাও।
চাচি- কি বুঝতে চান?
: তোমাকে আমার খুব পছন্দ। অনেকদিন ভেবেছি। তুমি যেমন একটা নাম করা পরিবারের মেয়ে, তেমনি এ শহরে আমারো পরিবারের একটা স্বনামি পরিচয় আছে।
এমনি নানারকম কথার ফাঁকে কলদাতা শর্ত দিলেন যে, বিকেলে যদি রিতা গেটের সামনে দাঁড়ায় তাহলেই বুঝবে রিতার সম্মতি আছে। তাহলেই পরেরদিন যথাসময়ে আবার ফোন করো বাকি কথা বা পরিচয় দেবে। এও চাচি কৌশলে জেনে নিয়েছিলেন যে তাঁকে চিনবে কি করে? কলদাতা বলেছিলো, সাদা শার্ট আর ব্লু জিনস্ আর হাতে কালো ডায়েরী থাকবে তাঁর হাতে। রিতার রোজকার ভাতঘুমের প্রাক্কালে দুই মা চাচি গেট দখল করো পরম বিশ্বাসে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন গেটের সামনে ব্লু জিনস্, সাদা শার্ট হাতেতো কালো ডায়েরীর যুবককে দেখে রাখার জন্য।
কথা হলো এখানে, ভাত ডাল মাছের ঝোলে লবন পরিমানমতো হলো কিনা দেখার মতো পাকা গৃহিনীদ্বয় নিজেদেরকে ব্যোমকেশ বকশী ভাবতে চাইছিলেন নিজেদের গোয়েন্দাগিরিতে। সে গুড়ে বালি ঢেলো কলদাতা উপরিঅন্ত শেয়ানাগিরিতে উৎরে গেছেন নিজের পরিচয় গোপন রাখতে। তিনি এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ভিন্ন পোষাকে। কলদাতারও সন্দেহ নিশ্চই হয়েছিলো আসলেই কি ফোনের অপর প্রান্তে রিতা নাকি অন্য কেউ? পরেরদিন ফোন দেবার আগেই নিজেদের ( মা চাচি) জল্পনা মোতবেক শামসুকে ডাকানো হলো, বোঝার জন্য যে, তাঁর কোনো বন্ধু কিনা?
এই ঘটনার এক বছর আগে এই শামসু চাচ্চুর আরেক বন্ধু সাহস করে বাসায় টেলিফোন করতে আসার নাম করে রিতার হাতে হাতে প্রেমপত্র ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। রিতা সেই পত্র মা চাচির হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো জাহাঙ্গীর এ চিঠি দিয়েছে। মেজো চাচা জাহাঙ্গীরের মাকে আলটিমেটাম দিয়ে তাঁর ছেলেকে শহর ছাড়তে বাধ্য করেছিলো।
কলদাতা ছেলেটির নাম কখনোই নিশ্চিত করে রিতা জানতে পারেনি। একগাদা লেকচার দিয়ে চাচি কলদাতাকে পড়াশোনায় মন দেবার উপদেশ দিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে দিয়েছেন। ” আমি রিতা না, রিতার চাচি। কলদাতা ছোট্ট করে বলেছিলো, ” আমি বুঝতে পেরেছি”…….
আজ♦ বিকেলে মেয়ে শশুড়বাড়ি চলে যাবার পর, শমরেস মজুমদারে গর্ভধারিণী পড়ছিলাম। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো। সালাম দিয়ে কে জানতে চাইতেই অপর প্রান্ত থেকে মহিলা কন্ঠ — ইতি? তুই কি ইতি?
: কি? ইতি? আপনি কে?
— আমি আসমা,
: কোন আসমা?
— আরে, চেনো না? আসমা! জর্দ্দা কোম্পানী! তুমি ইতি না? তোমার নাম্বার রিবু দিছে। তুমি ইতি না?
আমি এ প্রান্তে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দন্ত বিকশিত করে ভারী হওয়া গালে পান চিবুতে চিবুতে হাসছি চোখের কোনে চিকচিকে খুশি নিয়ে। কারন হলো- রিবু ভুল শুনেছে। আসমা চেয়েছে রিবুর কাছে ইতির ফোন নাম্বার। রিবু দিয়েছে লিপির নাম্বার। ইতি, রিবু, আসমা তিনজনই রং নাম্বারের শিকার। আর এই রিবুর ভুল শোনা আসমার আমাকে ফোন দেয়া সবটাই কোয়েন্সিডেন্স। আসমা, রিবু, ইতি, লিপি। এবার পাঠক বৃন্দ ভাবুন একবার। এই চারজনই এক্কেবারে বাল্যকালের প্রথম স্কুল জীবনের বান্ধবি। যাদের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলোনা এ পর্যন্ত। রিবু একবার ফোন দিয়েছিলো বছর পাঁচেক আগে। সেও আচমকা আরেক বান্ধবির কাছ থেকে লিপির মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। আমি আসলে বড্ড ভাগ্যবতী। আমায় মনে রেখেছে এখনো এরকম কিছু দূরমূল্যের বান্ধবিরা।
জয় রং নাম্বার……….
নোটঃ তৌহিদ ভাই। কইছিলাম ছোট ছোট পুকুর কাইট্টা নদী নিয়া আসমু😊 এখন ধৈর্য নিয়া পইড়া মন্তব্য করেন।
আসলেই, এ যাবৎকালের মনে হয় সবচে বড় লেখা লিখলাম। আশা করি পড়তে বোরিং হবেন না কেউ।
শুভ ব্লগিং🌹
২৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ছিল একটি সময় রঙ নম্বরের বিড়ম্বনা,
এখন সব ইতিহাস, সাক্ষী এই সব অম্ল মধুর স্মৃতি।
বন্যা লিপি
এখনো মাঝে মাঝে আসে, নাম্বার টাইপিংএ ভুল হলে। মন্তব্যে ধন্যবাদ।
সুপায়ন বড়ুয়া
রং নাম্বারের দিন শেষ
ডিজিটাল বাংলাদেশ।
নাম্বার দেখে চিনে নিয়ে
কথা বলবেন না হয় শেষ।
ভাল লিখলেন আপু। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ছড়াকার সুপায়ন দাদা
কথা বলেন না ছন্দ ছাড়া
মন্তব্যেও জুড়ে দেন ছন্দের কাব্য।
নান্দানিক হয়েই ওঠে দাদার মন্তব্য।
শুভ কামনায় দিচ্ছি বাদ-ধন্য।
শামীম চৌধুরী
টেলিফোনের যুগে রং নাম্বারটা মেনে নেয়েছিলাম। কারন ডায়াল নাম্বার সয়ংক্রিয় ভাবে মিস হতো। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা মানুষ আজও সেলফোনে করে যাচ্ছে। এখন মেনে নিতে পারি না। কষ্ট বাড়ে।
ভাল হয়েছে বফু।
বন্যা লিপি
রাগ বাড়ে, বাড়ে মেজাজ খারাপের মাত্রা
ধন্যবাদ শা’চাচ্চু।
তৌহিদ
ওরেবাবা, বিশাল লেখা আপু! তবে পড়ে মজা পেয়েছি।
টেলিফোনে ক্রসকানেকশন বিড়ম্বনা প্রায় প্রত্যেক ল্যান্ডফোন ব্যবহারকারীরই আছে। এরকম মজার কাহিনী আমারও আছে। একবার টানা একসপ্তাহ এক ভদ্রমহিলা প্রতিদিন রাত ১১ টায় ফোন দিয়ে বলতেন- হ্যালো, একটু আসিফকে দিননা প্লিজ!
আমি বলতাম, আসিফ নামেতো কেউ এখানে থাকেননা। তিনি বলতেন, ও তুমিই আসিফ আমি বুঝতে পেরেছি।
আমার চাচাতভাই আমার সঙ্গে থাকতো। সেও ভদ্রমহিলার কল রিসিভ করতে শুরু করলে প্যারালাল লাইন থেকে অপররুমে আব্বার কাছে একবার সে ধরা পড়ে গেলো। রাত দশটার পরে আমাদের টেলিফোনে হাত দেয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেলো।
পরে জানা গেলো দুটো ডিজিট ভুল ডায়ালের বিড়ম্বনা আমাদের উপর খরগ হয়ে নেমে এসেছে! বুঝুন অবস্থা!
চমৎকার লিখেছেন আপু। একনাগাড়ে পড়ে গেলাম। এরকম বড় বড় লেখা দেবেন মাঝেমধ্যে ওক্কে? আসলে ফেসবুক টাইপ লেখা ব্লগে দিলে হয়তো লেখার সংখ্যা বৃদ্ধি হয় তবে ব্লগের জন্য মানসম্মত লেখা হয়না সেটি।
২০০টি ছোট লেখার চেয়ে ২০ টি মানসম্মত লেখা একজন লেখককে বেশী সম্মানিত করে এটি প্রত্যেক ব্লগাররের বোধগম্য হতে হবে।
শুভকামনা সবসময়।
বন্যা লিপি
ছোট ছোট অনেক কাণ্ডকারখকন আছে এসব টেলিফোন বিরম্বনা নিয়ে প্রায় অনেকেরই।
আসলে বড় লেখা -লেখার যেমন ধৈর্য নাই তেমন বড় লেখা পড়ারও ধৈর্য কম। আবার কিছু ব্যাপার থাকে তা পুরো ব্যাখ্যকারে না লিখলে লেখার মানও থাকেনা।
কবিতাকারে যা লিখি, তা কখনোই বেশি বড় করে লিখতে পারিনা। বলা ডায় ভাবনার দৌঁড়ে হোঁচট খেয়ে লেখা ছোটই থেকে যায়। তবে মাঝে মাঝে এরকম লেখা লিখবো আশা করি তেমন টপিক পেয়ে গেলে।
আপনার রংনাম্বারের কাহিনী বেশ মজার ছিলো। ছেলেদেরও তাহলে ফোন ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা মানতে হয়েছে?
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রং নাম্বার নিয়ে তো একটা যুগ তুলে ধরলেন। ঘটনাগুলো খুব মজার ছিল। এমন অনেক ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে। তবুও সেই দিনগুলো ই সুন্দর ছিল। এখন স্মার্টফোন এর যুগেও কতকিছু ঘটছে রং নাম্বার নিয়ে। যত ই বলি রং নাম্বার ওপ্রান্তের ওনারা মানতেই চায়না উল্টো নিবাস, নাম, ধাম কতকিছু জানতে চায়। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা রইলো
বন্যা লিপি
আরেকটা পর্ব লিখতে ইচ্ছে করছে যে! এই টেলিফোন নিয়ে! দেখি ভাববো লেখা যায় কিনা। ভালো থাকবেন সবসময় ছোটদি।
আরজু মুক্তা
আমি হাঁফায় গেছি। ঠাণ্ডা পানি খাই।
আমারও এইরকম এক ইতিহাস আছে। পারলে লিখবো
বন্যা লিপি
পারলে লিখব মানে? লিখে ফেলুন দ্রুত।
ঠান্ডা পানি খেয়ে হাঁফানী দূর করেন। সামনে আরো বড় লেখা নিয়ে আসবো রেডি থাকেন।
ইঞ্জা
মিঞা, ডায়াল করার সময় কি চক্ষু দুইডা লুঙ্গী র খোটে বাইন্দা লইছেলেন? কারে ফোন দেতে যাইয়া কারে গাইল্লাতাছেন? ফোন থোয়ন মিঞা! আমি কুদ্দুস আলী না, রং নাম্বারে ফোন দেছেন আহমনে’
ওরে বাবারে, এ ঝারি শুনেই তো ব্যাটার কম্ম সাবার। 😂🤣
রং নাম্বারের ভেজাল ভুলি কি করে, ক্রসকানেকশনের পাল্লায় পড়ে আমি নিজেই গিয়েছিলাম ভালো লাগার মেয়েটিকে প্রেমিকের সাথে হাতে নাতে ধরতে, ধরেছিলামও। 😜
আমাদের বাসায় টেলিফোনের রিং বাজতে থাকলে কে আগে ফোন ধরবে সেই জন্য দৌড় লাগাতো আমরা আন্ডা বাচ্চারা।
আহা সেইসব দিন গুলোকে খুব মিস করি আপু।
চমৎকার পোস্ট দিলেন।
বন্যা লিপি
হা হা হা হা….. এটা কি করলেন ভাইজান? ভালো লাগার প্রেমিক-প্রেমিকাকে হাতেনাতে ধরে কি কাজি ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন😆😆
ইঞ্জা
না আপু, তারে বুঝাইলাম যে তুমি আমার চোখে চোখে আছো। 😆
ফয়জুল মহী
চমৎকার ভাবনায় মননশীল লেখা ।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা হা
আমি বেশ মজা আর আগ্রহ নিয়ে পুরো লেখাটা পড়লাম। লেখা বড় হলেও সমস্যা নেই যদি সে লেখায় এমন সব মজার মজার ঘটনা থাকে।
প্রত্যেকটি ঘটনায় দুর্দান্ত।
চক্ষু দুইডা লুঙ্গী র খোটে বাইন্দা লইছেলেন
বেচারা দিলিপকাকুর মস্করা ব্যর্থ হলো
বেচারা করদাতার রিতার সাথে কথা কওন হইল না
সবশেষে চার বান্ধবীর এক করে দিলো রং নম্বর
জয় হোক রং নম্বরের
বন্যা লিপি
বেচারা সেই কলদাতা যে কি ছিলো যদি জানা যেত? তাহলে হয়তো রিতাই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারতো।
লেখা পড়ে মজা পেয়েছো জেনে ভালো লাগলো। ভালবাসা নিও❤❤
শবনম মোস্তারী
পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল।
রং নস্বর বিড়ম্বনায় অনেক বার পড়েছি।
কখনো চরম বিরক্ত লাগতো আবার কখনো কখনো দুষ্টামীও করতাম.. 😀😀
তবে আপনার রং নম্বরের ঘটনাগুলো পড়ে অনেক মজা পেলাম.
বিশেষ করে, চাচীর রিতা সেজে কথা বলা,,,,,
বন্যা লিপি
আমি নিজেও একবার একবার এক ভাস্তির কাছে আসা ফোনকল এ্যাটেন্ড করেছিলাম। সে কাহিনীও বেশ মজার ছিলো।ওইটা
দুষ্টুমীর কাহিনী আমাদেরও আছে। আমরা কয়েক বান্ধবি মিলে করতাম পরিচিত একজনকে ফোন করে জ্বালাতাম😃😃🙊😃 একদিন ধরা খেয়ে গেছি😊
ধন্যবাদ পৌষী ভাবি।
Jasim uddin
অনেক সময় লাগছে তবে পরে অনেকের পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়বে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হাহাহা।।আমি ভাবি আপনি একটু রাগী মানুষ।হাসাতেও জানেন?
মজা পেলাম।পরের পর্ব ঝটপট লিখে ফেলুন। পড়তে ইচ্ছে করছে।
শুভ কামনা। শুভ সকাল।
বন্যা লিপি
আমি কি খালি রাগ করি? রসিকতাও করতে জানি ঢের। ২/১টা পেণ্ডিং পোষ্ট বাকি আছে। ওগুলো শেষ করে টেলিফোনের মজার কাহিনী নিয়ে আবার লিখবো।
শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
রং নাম্বার নিয়ে দারুণ লিখেছেন আপু। এরকম মজার অভিজ্ঞতা অনেক আছে।
আমার এক চাটগাঁইয়া আপা রং নাম্বারে বিরক্ত হয়ে অপর পক্ষকে গালি দিচ্ছিলো এভাবে __”বেডা তুই বকলম না! ন বুঝছ রং নম্বরে কল দিয়ছ।তোরে রাখিবার লাই কইদ দেননা। এন পিডা পিটটুম বেডা আঁই চিটাইংগা মাইয়েপোয়া। ফোন রাখ। ”
আমার প্রতিবেশি ছিলো। আমার তো হাসতে হাসতে পেট ব্যথা।
খুব ভালো লেগেছে আপু পুরো লেখাটি। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার গল্পটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
হালিম নজরুল
“কতক্ষন শোনা- টোনা শেষ করে উল্টো ঝারি…মিঞা, ডায়াল করার সময় কি চক্ষু দুইডা লুঙ্গী র খোটে বাইন্দা লইছেলেন? কারে ফোন দেতে যাইয়া কারে গাইল্লাতাছেন? ফোন থোয়ন মিঞা! আমি কুদ্দুস আলী না, রং নাম্বারে ফোন দেছেন আহমনে’
—————- আমার ব্যক্তিগত জীবনের একটি মজার ঘটনা মনে করিয়ে দিলেন। উস্কে দিলেন লেখার জন্য। ধন্যবাদ।