
ছেলেটি আর মেয়েটি একই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়,প্রতিদিন দেখাও হয়,চোখে চোখ পড়ে কিন্তু কোন কথা হয় না।এভাবেই কেটে যায় প্রাইমারী। সবচাইতে মজার ব্যাপার তারা একই স্কুলে পড়ে ঠিকই কিন্তু কেউ কারো নামই জানে না।এরপর মাঝখানে অনেকদিন দেখা নাই তাদের।ছেলেটি ভর্তি হয় ‘বয়েজ স্কুলে’ আর মেয়েটি ভর্তি হয় ‘গার্লস স্কুলে’।হঠাৎ এক বৈশাখে মেয়েটি সাদা শাড়ী লাল পার পড়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছিল।ছেলেটিও সেদিন এক রাস্তার গলির মাথায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।একটা রিক্সা ক্রস করছে ঠিক সেই সময়েই মেয়েটির চোখে ছেলেটির চোখ পড়ল,মেয়েটির বুকের ভিতর ধুক ধুক করলো,কিন্তু রিক্সা চলছিল তার নিজস্ব গতিতে।ছেলেটি রিক্সার পিছনে ছুটতে থাকল,আর মেয়েটিও পিছনে তাকাচ্ছিল।কিন্তু কিছুদুর দৌড়ে ছেলেটি হাঁপিয়ে একসময় আর দেখা পেল না,এভাবে আবার কাটল বেশ কিছুদিন,,,,,
একদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে ছেলেটি ভিজে বাড়ি ফিরছিল,সামনে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগল,ছেলেটি বিরক্ত হয়ে বলল,দেখে চলতে পারেন না?
মেয়েটিঃ সরি,
ছেলেটি আর কিছু না বলে যখন ফিরছিল হঠাৎ কি যেন ভেবে একবার মেয়েটির দিকে তাকাল, আরে!এই চোখগুলো তো তার সেই চেনা চোখ,ছেলেটি এবার মেয়েটিকে ডাকল,মেয়েটিও অবাক এতদিন তো তোমাকেই খুঁজছিলাম মনে মনে ভাবছিল মেয়েটি।মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়ল, ছেলেটি তার সামনে গিয়ে বলল, কতদিন তোমাকে খুঁজেছি, তোমাকে ভেবেছি কিন্তু পাইনি খুঁজে। এরপর ছেলেটি একের পর এক তার মনের সব কথা বলে গেল যা এতদিন সে বলতে চেয়েছিল,মেয়েটি সব শুনল,তারপর একটা চিরকুটে ফোন নাম্বার লিখে ছেলেটির হাতে ধরিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।ছেলেটি, মেয়েটি যাওয়ার পর আনন্দে চিৎকার করে, ইয়াহু বলতে লাগল।
পরদিন,,,,,,,,
ছেলেটি ফোন দিল সেই নাম্বারে,
হ্যালো!
মেয়েটিঃ হ্যালো!
ছেলেটিঃ আমি
মেয়েটিঃআমি কে?
ছেলেটিঃ আমি,,,,,,
মেয়েটিঃতোমারতো আমি সেই স্কুল জীবনেই নাম দিয়েছিলাম
ছেলেটিঃতাই! কি নাম?
মেয়েটিঃ শিস
ছেলেটিঃএকটু হাসি তারপর বলল,তবে তোমার একটা নাম দেই?
মেয়েটিঃ দাও
ছেলেটিঃ নয়না।
মেয়েটিঃ বাহ! সুন্দর নাম
এভাবেই ছেলেটি আর মেয়েটির প্রেমের গল্প শুরু,,,,
তাদের ফোনে কথা বলা,ঘোরাফেরা,সব খুব সুন্দরভাবেই চলছিল,,,,
আবার আসল আরেক বৈশাখ,,,
তাদের কত প্লান,পান্তা,ইলিশ একসাথে খাবে,সারাদিন ঘুরবে আরও কত কি!
বৈশাখের দিন,,,,,,ছেলেটি একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে তাদের সেই চিরচেনা জায়গায় সাতসকালে অপেক্ষা করতে লাগল,সেদিন ছেলেটির পড়নেও ছিল সাদা পাঞ্জাবী।
ছেলেটি অপেক্ষা করতে করতে মেয়েটিকে ফোন দিল,,
মেয়েটির ফোন বন্ধ,ছেলেটি সেই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মেয়েটির বাসায় চলে গেল।
কলিংবেল বাঁজল,এক বৃদ্ধা বের হল,কি চাই?
ছেলেটিঃমেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করাতে বলল,ওরা আজ সকালেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে।
কোথায় গেছে তা বলতে পারে না।
ছেলেটি সেই ফোন নাম্বারে ট্টাই করে প্রতিনিয়ত কিন্তু আর পায় না তার সেই নয়নাকে।
এভাবে কেটে যায় প্রায় ৯ বছর,,,,,
এতদিনে কত পরিবর্তন হয়েছে ছেলেটির জীবনে,,,
আজ ছেলেটি ভালো একটা জব করে, সময়ের সাথে সাথে আরেক মেয়ে নবনীতার সাথে সম্পর্কে জঁড়ায় কেটে যায় দিন,,,
কিন্তু ছেলেটি এই নবনীতার মাঝে তার নয়নাকেই খোঁজে।নবনীতা ছেলেটির কোন অতীত জানে না,,,,
একসময় ছেলেটি নবনীতাকে বিয়ে করবে বলে নবনীতার বাসায় প্রস্তাব পাঠায়।
তারপর শুরু হয় দুজনের বিয়ের কেনাকাটা,,,,,,
ছেলেটি নবনীতার বাসায় তাকে নিয়ে বের হবে বলে নক করে,,,
দঁড়জা খুলে দিলে, ছেলেটি যে চোখ ২ টো দেখে সেটা তার সেই প্রিয় চোখ, নয়নার,,,,,,
ছেলেটি খানিকটা বাকরুদ্ধ,,,
মেয়েটিঃ তুমি!
ঠিক সেই মুহুর্তে নবনীতা দৌড়ে এসে বলল, ভাবী ওই আবির।
নয়নাঃ ও আচ্ছা আসুন,বসুন।
ছেলেটি আর একটা কথাও বলতে পারল না,সোজা নিচে নেমে এল।
পিছন পিছন নবনীতা তাকে ডাঁকতে লাগল,কিন্তু ছেলেটি কোন সাড়া দিল না।
প্রায় এক সপ্তাহ ছেলেটি আর কোন যোগাযোগ করে নি।।
এরপর ছেলেটি আবার চলে গেল নয়নার কাছে,,,,
সেদিনের মত আজও দরজা খুলল নয়না,
নয়নাঃ আসুন,,,,
ছেলেটিঃ তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।কেন সেদিন আসোনি?? বল,আমি কত তোমাকে খুঁজেছি।
নয়নাঃতোমার নাম আবির এটাই তো জানি না।শিস তোমাকে সব বলব আজ,,,তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব আজ।।
ঠিক সেই সময় নবনীতা চলে এল,আরে! তুমি এক সপ্তাহ লা পাত্তা।কোথায় ছিলে?
ফোন বন্ধ।।।
ছেলেটি বলতে যাচ্ছিল, আমার অতীত আজ,,,,, সেই সময় নয়না তাকে থামিয়ে দিয়ে,,,,,,অন্যপ্রসঙ্গে চলে গেল।
শিস আর কিছু বলতে পারল না।
ছেলেটি সেদিনও চলে যায়।
ছেলেটি আবার যায় শুধু নয়নার সাথে কথা বলতে,,, কিন্তু পারে না,,,
এভাবে চলছিল,তাদের বিয়ের তারিখ ও ঘনিয়ে আসছিল,,,
ছেলেটির মনে অনেক প্রশ্ন তাড়া করছিল,,,,,
আবার এল বৈশাখ,,,,,
সেদিন ছেলেটির নবনীতাকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার কথা,,,
সকালে আননোন নাম্বার থেকে ফোন,,,
হ্যালো শিস, আমি নয়না,,,তোমার সাথে দেখা করব, আমাদের সেই জায়গায়,,, আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিব।।।
ছেলেটা নবনীতার কথা ভুলে সেই জায়গায় অপেক্ষা করে নয়নার জন্য। কিন্তু আজও নয়না আর আসে না,,,,,
ছেলেটা খুব কষ্ট পেয়ে এগোতে থাকে,,,,সামনে দেখে সাদা শাড়ী লাল পার পরা এক মেয়ে একসিডেন্ট করেছে,এ আর কেউ না,,,,,,তার নয়না,,,,, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!!!!ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে,,,,, শোনা হল না আর সেই কথা।।।।।।।!
২৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হৃদয় বিদারক গল্প। শেষটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। এমন অনেক কথাই থাকে যা কখনো আর জানা হয়না নিয়তির নির্মম পরিহাসে, সময়ের আবর্তে হারিয়ে যায় সব। দারুন লেগেছে আপু। শুভ কামনা রইলো
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।
শামীম চৌধুরী
প্রেমগুলি এভাবেই হয়। এমন হৃদয় ছোঁয়া লেখায় মনটা খারাপ হয়ে গেল যখন পরিশেষ নয়না দূর্ঘটনায় মারা গেল। শীশের কষ্টের ভাগিদার হলাম। দারুন লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
সুন্দর করেই বিয়োগান্তক গল্প বলেছেন।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ফয়জুল মহী
লেখা পুরো না পড়লে মন তৃপ্ত হয় না । ভাব বুঝা যায় না l
রেজওয়ানা কবির
তবে পুরোটা পড়েন ভাইয়া।।
নিতাই বাবু
সত্যি নিয়তির নির্মম পরিহাস! না হলে এমন হতে পারে না। ছেলেটি মনে হয় শেষতক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া আর উপায় কিসে!
ভালো লাগলো, কষ্টও লাগলো। শুভকামনা থাকলো।
রেজওয়ানা কবির
ভালো লাগলে, দুঃখ লাগলে তবেইতো লেখার স্বার্থকতা।ধন্যবাদ ভাইয়া।
তৌহিদ
এত ত্যাগ কস্টের পরে যদিওবা দেখা হলো ভ্যাগ্যের নির্মম পরিহাসে আবার বিচ্ছন্ন হলো দুজনাই। চমৎকার আবেগময় প্রেমের গল্প পড়লাম।
ভালো থাকুন আপু।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া,শুভকামনা ত্থাকল।
মোঃ মজিবর রহমান
রসের মাঝেই বিষাদ ঠেলে
জিবনে বিষহীন বিসাক্ত ফেলে
হারিয়ে গেল থেমে গেল ভালবাসা।
সুন্দির প্রেমময় প্রেমকাহিনি।
ভালবাসায় কি এমনই।
রেজওয়ানা কবির
হয়ত এমনি ভাইয়া।ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন।
আলমগীর সরকার লিটন
গল্প পড়ে মজাই লাগল কিছুক্ষণ আমার স্মৃতি মনে পরল কবির আপু
অনেক শুভেচ্ছা রইল——————
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
হায়রে প্রেম।
ট্রাজেডি গল্প ভালো লাগলো।
শুভকামনা
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
এমনি শরীরটা ভালো নেই।তারউপর কসটমাখা প্রেম। ভালোবাসার মানুষটি কেন কাছে থাকেনা।কি হয় থাকলে?
বুঝি না।
ভালো থাক। শুভ কামনা॥
রেজওয়ানা কবির
ভালোবাসায় হয়ত বিরহই বেশি ভাল লাগে।আমার মনে হয় না পাওয়াই বেশি ভা, এতে অনুভূতি বেশি থাকে।ভাল থাক আপু।
রেজওয়ানা কবির
আমাদের পিকচারটার প্রশংসা করলা না কেন?এটা আজাদ আর আমার পিকচার সুন্দর না😋😋😋😋?
রোকসানা খন্দকার রুকু।
কানা তো তাই।
সুন্দর সুন্দর সুন্দর অসাধারণ ওয়াও দারুন ফাটাফাটি আর কিছু পাচ্ছি না।হাপায় গেলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটা পড়ে খুব কষ্ট পেলাম। নিয়তির উপর কারো হাত থাকে না। এমন প্রেম কারো জীবনে না আসুক।
ছবিটি খুব সুন্দর। নিজেদের বা নিজের তোলা ছবি দিয়ে ফিচার পোস্ট তৈরি করলে নীচে লিখবেন * ছবি-আমার। তাহলে লেখার পাশাপাশি আমরা ছবির জন্যেও কমেন্ট করবো 🙂
ভালো থাকুন, শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।শুভকামনা।