“মানুষ কখনো ভুল করেনা।”
না, এটি কোন বিখ্যাত মনীষীর কথা নয়। আমি নিজেই মাঝেমধ্যে কথাটা বলি। জানি অনেকেই একমত হবেন না। ঐক্যমতের বাধ্যবাধকতাও নেই। শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যই অনেক ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। আমার মতে একজন পাগলও যখন যে কাজটি করেন, সেটি সঠিক মনে করেই করেন। কিন্তু ফলাফলের বৈপরীত্য প্রমাণ করে সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। তেমনি পৃথিবীতে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত সংঘটিত হয়, তার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভুল বুঝাবুঝি থেকেই হয়। এক্ষেত্রে কারো আচরণ বা কথা পক্ষে গেলেই বন্ধু, বৈপরীত্যে শত্রু। বিষয়টি চিরন্তন। অতি প্রাণের প্রিয় মানুষটিও শত্রুতে পরিণত হতে খুব বেশী সময়ের প্রয়োজন হয় না, যদি সামান্য এক মুহূর্তের কথা বা ব্যবহার হৃদয়ে আঘাত করে। সুতরাং সেই বিবেচনায় এই বিষয়গুলোতে যে যত বেশী ভুল বুঝাবুঝি থেকে দূরে থাকতে পারে, সে তত বেশী সংঘাত এড়িয়ে চলতে পারে। স্যাক্রিফাইজ ইজ দ্যা মোস্ট ভাইটাল ফ্যাক্টর, সবাগ্রে অগ্রগণ্য। মনে রাখা উচিৎ আমার সর্বোত্তম বন্ধুটি কেন এবং কি অন্যায় করছে, তার ভুলটি শোধনযোগ্য কি না। তা না করে পরম প্রিয় মানুষটিকে শত্রু তালিকায় ফেলে দেওয়াও চরম অন্যায়। ইদানিং আমাদের সমাজে শত্রুপক্ষে ঠেলে দেবার প্রবণতা কম নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- সরকারের ভাল কাজের প্রসংশা করলে দালাল আর খারাপ কাজের সমালোচনা করলে রাষ্ট্রদ্রোহ। বিরোধীদলের ক্ষেত্রেও একই নীতি। অর্থাৎ হিসাব দাঁড়াল যে বোবার কোন শত্রু নেই! কিন্তু একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষে কি নীরব থাকা সমীচীন? নাকি সম্ভব? হয়না। আমিও পারিনা। কথা বলে ফেলি। তাই একদল ফেলে দেয় অন্য দলে। কারো শত্রু, কারো বন্ধু। ভাল লাগেনা। খুব বোবা হতে ইচ্ছে করে। অনেকটা বন্ধু হারানোর কষ্ট সহ্য করবার ভয়ে বন্ধুত্ব তৈরী করাটাই বন্ধ করার অপপ্রয়াস। কিন্তু কি করবো বলুন, সেই জন্ম থেকে যখনই যেখানেই গিয়েছি, মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা পেয়েছি। প্রতিটি মানুষ আমাকে অসম্ভব ভালবেসেছে। এই ভালবাসায় কোন খাদ ছিল না, কার্পণ্য ছিল না। সুতরাং এই ভালবাসাকে উপেক্ষা করি কি করে ! ঋণ শোধেরও তো একটা দায় থাকে। তাই বিধাতার তৈরী মায়ার বাঁধনে আটকে যাই। সুতরাং বন্ধু বা শত্রু তৈরী হয়। আপনিও আমার মত মহাবিপদে আছেন? তাহলে উপায়? পরিত্রানের পথ? ভয় নেই, এ সবকিছুই জীবনের অংশ। অপরের প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তুলুন। অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করুন। সময়ের মূল্য দিন। ক্ষমা করতে শিখুন। মানুষকে শুধুমাত্র মানুষ হিসাবেই মূল্যায়ন করতে শিখুন। দেখবেন অন্তরায় পেরিয়ে পৌঁছে গেছেন দূর- বহুদূর।
—————–0 0—————-
১৮টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
মার্জিত ভাষায় লেখা। ভালোবাসা ও শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
ভালবাসাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়!
তারপর ও অনেক সময় ভালোবাসা এত দামি হয়ে যায় যে, উপেক্ষা যেমন করা যায় না,
বহন ও করা যায়- না। সমস্যার উদ্ভব সেখানেই শুরু। তবুও ক্ষমার গুণ অর্জনের চেষ্টা আমাদের নিতেই হয়।
হালিম নজরুল
ভালবাসা প্রিয় কবি।
নিতাই বাবু
আপনার কথায়, আপনার লেখায় আমি এখানেই থেকে গেলামব। আশা করি আর বেশিকিছুর প্রয়োজন নেই। নিজের ভুলটাকে আগে সংশোধন করার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
হালিম নজরুল
শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক তাই যে যা-ই করুক সেটা তখন তার সঠিক মনে হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটাতে ভুল বা কষ্ট ধরা দেয়। আমরা একে অন্যের পরিপূরক হলে, সম্মান দিলে, ক্ষমা করলে এ পৃথিবী টা সবার কাছেই স্বর্গ হয়ে ধরা দিতো। কোনো রাগ, হিংসা, অহংকার থাকতো না। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। শুভ কামনা রইলো
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ইঞ্জা
সত্যি সময়টা আমাদের কারোরি অনুকূলে নেই ভাই, এ সময়টাতে বোবা থাকাই ভালো, নচেৎ বিপদ হতে পারে।
আপনার সহজ সরল স্বীকারোক্তি হলেও সময়টা দুঃসময়ের, সুতরাং সাবধান থাকবেন ভাই।
হালিম নজরুল
ভালবাসা রইল ভাই।
ইঞ্জা
😍😍😘
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমাদের নিকট থেকে সহনশীলতা, ধৈর্য, বন্ধুত্বের সুন্দর সম্পর্ক দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। যুক্তিপূর্ণ লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাই।
তৌহিদ
স্যাকরিফাইজ করতে হয় তবে তা একপেশে হলে গ্রহণযোগ্য নয়। ভালো লিখেছেন ভাইয়া।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই আমার।
মাহবুবুল আলম
অন্যরকমের লেখা পড়ে ভাল লাগলো।
শুভেচ্ছা জানবেন!
হালিম নজরুল
মন যখন যা চাই তাই লিখি। আপনার মন্তব্যে প্রেরণা বাড়ল।
আরজু মুক্তা
সুন্দর কথন।
আত্মত্যাগ আসল। নিজেকে বড় মনে করলে কিছু হবে না।