অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন মীরার কথা লিখব। কিন্তু কিভাবে লিখব, কি লিখব গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। আজ ভাবলাম, যেমনই হোক, তা লিখেই ফেলি।
মীরার গ্রামের বাড়ি পলাশডাঙা। সেখানে ছায়াঘেরা ঘন সবুজ প্রকৃতির নিবিড় পরিবেশে বেড়ে উঠেছিল মীরা। বয়স চার কি পাঁচ। বাড়িতে মা, চাচী, চাচাতো ভাই, বোন সহ অনেক মানুষ। সবার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু ছিলো ছোট এই শিশুটি। আরেকটু বলতে গেলে বলা যায় চাচাতো ভাই বোন সবাই বড় থাকায় একটা মাত্র ছোট বাচ্চা পেয়ে সবাই আহ্লাদিত হত। ফলে মীরা সারাদিন কারও না কারও কাছে আদর পেত। চাচাতো বোন ইভা কখনো চুল আঁচড়ে দিচ্ছে তো বড়বোন নিশু তাকে মুখে তুলে খাওয়াচ্ছে। বড় ভাইয়েরা কোলে পিঠে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। কখনও চাচী ডেকে নিয়ে আদর করে দিচ্ছে। মা সন্ধ্যার পর বিছানায় শুইয়ে রূপকথার গল্প শোনাচ্ছে। শিপু ফুপু এসে মুখে তুলে ভাত খাওয়াচ্ছে আর গল্প বলছে। এভাবে আদরে আদরে বেড়ে উঠেছিল মেয়েটি।
তার বাবা এবং চাচা শহরে চাকরি করতেন। তাই মাসে একবার তাঁদের সাথে দেখা হত। এই মেয়েটি ছিলো বড্ড অস্থির। একটা মুহূর্ত সে চুপটি করে বসত না। সারা গ্রামে টৈ টৈ করে ঘুরত। কখনো যদি পুরো গ্রাম খুঁজে তাকে না পাওয়া যেত, তখন মা বুঝতো নিশ্চয়ই কোন না কোন গাছের ওপর বসে আছে মেয়েটি। গিয়ে দেখতো ঠিক ঠিক লিচু গাছের ওপর মীরা! গাছের পাতা লতা দিয়ে টেলিফোন বানিয়ে খেলা করত। কখনো গাছের ওপর সংসার পাততো, গাছের পাতা দিয়েই পিঠা পায়েস রান্না করত। হেসে খেলে দিন কেটে যাচ্ছিল বেশ।
হঠাৎ একসাথে দুটো খবর এলো। প্রথম খবর, মীরার বাবা বিদেশে চাকরি পেয়েছে। আর দ্বিতীয় খবর, মীরার আরেকটা ভাই/বোন আসতে চলেছে। এই দুটো খবরে কোনটাতে খুশি হবে,কোনটাতে দুঃখ পাবে তা ভেবে ওঠার মত বয়স ও বুদ্ধি কোনটাই ছিলো না মীরার। এই খবরের পর আর বেশি দিন গ্রামে থাকা হলো না। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন মীরা ও তার মাকে চট্টগ্রাম বড় ফুপুর বাসায় রেখে যাবেন। খুব অল্প দিনের মাঝেই তা বাস্তবে পরিণত হল।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাস।মীরা এবং তার পরিবার চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাল। চট্টগ্রাম শহরের খুব পরিচিত একটি এলাকা বায়োজিদ বোস্তামীর মাজার। সেই মাজারের কাছেই বড় ফুপুর বাসা। এই বাসায় আসার পর প্রথম কয়েকদিন খুব একা লাগতো মীরার। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরে পাহাড় দেখে একমনে কী যেন ভাবতো। কিন্তু এই অখণ্ড অবসর খুব বেশিদিন রইলো না। ইতোমধ্যে তার ফুপাত বোনেরা তাকে চক, পেন্সিল ধরা থেকে শুরু করে অ আ ক খ সব শেখাতে লাগলো। কখনো ধৈর্য্য নিয়ে শিউলি আপা পড়ায়, কখনো শাসনে আদরে তানি আপা পড়ায়। চাল বাছতে বাছতে, রান্না করতে করতে ফুপুও পড়াতে থাকেন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলে আলিফ লায়লা! বিরতি দিলে আবার পড়া। তাঁদের নিরলস পরিশ্রমে ও চেষ্টায় এক মাসের মধ্যেই অ আ ক খ থেকে শুরু করে শব্দ গঠন, ইংরেজি, গনিত সব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠে মীরা।
এবার স্কুলে ভর্তির পালা। শহরের নামকরা বায়োজিদ লাইন স্কুলে তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়।প্রতিবেশীদের বেশ কয়েকজন বাচ্চা ঐ স্কুলে ২/৩ বার করে পরীক্ষা দিয়ে অনুত্তীর্ণ হয়ে বসে আছে। আর সেই স্কুলে এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে টিকে যাবে মীরা? এ যেন অলীক স্বপ্ন তানি আপা এবং শিউলি আপার কাছে! তাই তারা কেউ সেদিন রেজাল্ট আনতে যায়নি, পাঠিয়েছিলো একজন প্রতিবেশীকে। তিনি এসে জানালেন “মীরা ২৭ তম হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেছে!” মা,তানি আপা, শিউলি আপা, ফুপুসহ বাসার সবার আনন্দ সেদিন দেখার মত ছিল।
চলবে…
২৪টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
আমার প্রিয় শহরের নীরা আপুর কথা
শেষ করে জানলাম। মীরার কথা
নামে কি আসে যায়। লেখা ভাল লাগলেই হলো
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
মীরার কথা আরও জানতে পাশেই থাকুন। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলো
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
শিল্পসম্মত মনোভাবের প্রকাশ, ভালোই হয়েছে।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথম পর্ব ভালো লাগলো আপু। নতুন একটি গল্প, নতুন শুভ সূচনা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভ সকাল
নীরা সাদীয়া
আশা করছি পাশেই পাবো। শুভ সকাল।
পার্থ সারথি পোদ্দার
ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম।সুন্দর বর্ননা শৈলী আপনার।শুভ কামনা রইল।
নীরা সাদীয়া
আপনাদের ভালো লাগছে জেনে প্রীত হলাম।
শুভ কামনা রইলো।
ইসিয়াক
চমৎকার লেখা।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। শুভ কামনা জানবেন।
বন্যা লিপি
মীরা’কথা জানতে আছি সাথে।
চলুক……
শুভ কামনার সাথে।
নীরা সাদীয়া
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ সকাল।
জিসান শা ইকরাম
মীরার গল্পের প্রথম পর্ব পড়লাম।
সুন্দর উপস্থাপনা।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
নীরা সাদীয়া
পরের পর্বেও উপস্থিতি প্ত্যাশা করছি।
শুভ সকাল।
তৌহিদ
মীরার কথা পড়ছি। আসলে নামে কিইবা এসে যায়। জীবিকার তাগিদে অনেককেই আপনজন ছেড়ে যেতে হয়। চলুক গল্প।
নীরা সাদীয়া
হুম। তাই ঘটেছিলো।
শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর একবার চট্রগ্রাম বায়োজিদ বোস্তামীর মাজার সংলগ্ন একটা টেক্সটাইল মিলে বেশকিছুদিন চাকরি করেছিলাম। সেসময় এখনকার মতো হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। যদি থাকতো, তাহলে ঐ পাহাড় ঘেঁষা এলাকার সুন্দর সুন্দর ছবি নিজের সংগ্রহে থাকতো। কিন্তু নেই। এখন আপনার গল্প পড়ে সেই জায়গার কথা মনে পড়ে গেল এবং আপনার লেখা “মীরার কথা-১” গল্প পড়ে যেন আবার সেই জায়গাটাই ভ্রমণ করলাম।
আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
নীরা সাদীয়া
তখন আমার জন্মই হয়নি।
আপনার স্মৃতিকথা জেনে ভালো লাগলো।
শুভ সকাল।
তৌহিদ
আপনার কথায় মনে পড়ে গেলো দাদা- ৮৮ সালের বন্যায় আমাদের বাসায় পানি উঠেছিল। কোমর পানিতে হেঁটে বেড়িয়েছি কয়েকদিন। ☺
নিতাই বাবু
তখনকার সময়ের অনেক কথাই মনে পড়ে যায়, দাদা। এ-বিষয়েও একটা লেখা পোস্ট করা যায়। কিন্তু সময় কই?
নীরা সাদীয়া
তখন আমার জন্মই হয়নি। হায়রে সময়…
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো।