নন্দীভূতের সাথে টুম্পার সম্পর্কটি বেশ কিছুদিনের। তার বিভিন্ন রকম ভাল কাজের জন্য সে প্রায়ই ভূতের দেশে ভ্রমণের সুযোগ পায়। এবারও তাই সে ভূতের দেশে ভ্রমণ করতে এসেছে। অন্যবারের মত এবারও সে ভ্রমণে খুব মুগ্ধ হচ্ছে।
ভূতের স্কুলটি টুম্পার খুব প্রিয় একটি জায়গা। এখানে এসে সে অনেক সমাজসেবামূলক ভাল কাজ শিখেছে। আজও হয়তো কোন ভাল কাজের প্রেরণা পাবে, তাই তার মনটা খুবই ভাল। সে ভূতের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিজের দেশের নানান গল্প বলছে। ওরাও তাকে ওদের দেশের নানান গল্প শোনাচ্ছে।
গল্পে গল্পে সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ টুম্পার চোখ পড়লো মন্টি নামের একটা ছোট্ট ছাত্র মাঠের এক কোনায় মনমরা হয়ে বসে আছে। সে প্রথমে আশ্চর্য হলো। এতগুলো ছাত্রছাত্রী সবাই তার সাথে এত আনন্দ ভাগাভাগি করছে, অথচ মন্টি কি না একা মন খারাপ করে বসে আছে ! অনেকটা কৌতুহল নিয়ে টুম্পা তার দিকে এগিয়ে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলো- “কি হয়েছে তোমার? এখানে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?” কিন্তু সে কোন উত্তর না দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
টুম্পার মত অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও এবার মন্টির দিকে এগিয়ে গেল। সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলো”তোমার কি হয়েছে মন্টি ? আমরা তোমার বন্ধু। তোমার সমস্যা জানলে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করবো।” টুম্পাও তাকে শান্ত্বনা দেবার জন্য মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর মন্টি কান্না থামিয়ে কথা বলতে লাগলো। সে বললো গতবছর জানুয়ারী মাসে তার বাবা মারা গিয়েছিল। আর কোন ভাই-বোন নেই। শুধুমাত্র মা’ই তার দেখাশোনা করতেন। কিন্তু আজ দুইদিন হলো মা খুবই অসুস্থ। মায়ের স্বল্প আয়ে তাদের সংসার চলে। কিন্তু আজ দুইদিন হলো মা কোন কাজে যেতে পারেনি। ওদিকে ঘরে যে ক’টা টাকা-পয়সা ছিল, স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফী দিতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মায়ের চিকিৎসার জন্য এখন হাতে কোন টাকা নেই। মাকে বাঁচাতে না পারলে তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাবে! তাই আজ তার মনটা ভীষণ খারাপ।
মন্টির কথা শুনে অন্য সবারও মন খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু মাস্টার মশাই সবাইকে বললেন “তোমরা মন খারাপ করো না। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে মন্টির মা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, মন্টিরও লেখাপড়ার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এই কঠিন কাজটি কারো একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
মাস্টার মশাইয়ের কথা শুনে সবার মনে সাহস ফিরে এলো। রিমু বললো “আমার মা আমাকে স্কুলে আসার সময় প্রতিদিন দশ টাকা করে দেন। আমি এটা-সেটা কিনে খাই। আজ থেকে আমি আর এইসব বাড়তি খরচ করবো না। এটা সাহায্য ফান্ডে জমা করবো।” কিমু বললো “আমিও আজেবাজে খেলনা কিনে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করি। আজ থেকে আমিও ওই টাকাটা সাহায্য ফান্ডে জমা করবো।”
রিমু ভূত আর কিমু ভূতের কথা শুনে অন্যরাও খুব উতসাহী হয়ে উঠলো। সবাই বললো “আজ থেকেই আমাদের সাহায্য ফান্ড গঠন করা হলো। মন্টির মাকে দিয়েই আমাদের এই সহযোগিতার কাজ শুরু করলাম। আজই আমরা আমাদের সবার টিফিনের টাকা দিয়ে মন্টির মায়ের ঔষধ কিনবো। তাকে আমরা সবাই মিলে দ্রুত সুস্থ করে তুলবো। আজ থেকে আমাদের যে কোন বন্ধু যত বিপদেই পড়ুক না কেন, আমরা সকলে মিলে তা মোকাবেলা করবো। একে অপরকে সাহায্য- সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি সুখী ও সুন্দর সমাজ গড়ে তুলবো।”
কথামতো সবাই মিলে একটা ফান্ড গঠন করলো। তাদের সহযোগিতায় কয়েকদিনের মধ্যেই মন্টিভূতের মা সুস্থ হয়ে গেল। এভাবে তাদের প্রচেষ্টায় কিছুদিনের মধ্যেই একটি সুখী ও সুন্দর সমাজ গড়ে উঠলো।
৩১টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন শিক্ষনীয় গল্প। তবে নন্দীভূতের মতো বন্ধু সব ভালো মানুষরা তো পাবেনা , পায়না। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
হালিম নজরুল
ভুলক্রমে আগের গল্প করে ফেলেছিলাম। সময় থাকলে আরেকবার পড়ার অনুরোধ রইল।
হালিম নজরুল
কপি করে ফেলেছিলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম তাইতো বলি গল্পটা আগেই পড়েছি কিন্তু কোথায় পড়েছি মনে পড়ছিলো না। সবাই সহযোগিতার হাত বাড়ালে এমন সুখী , সুন্দর হতো কষ্টে থাকা মানুষের জীবন। সবাই যদি মাস্টারের মতো উদ্যোক্তা হতো বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাহলে কতো না ভালোই হতো। শুভ কামনা রইলো
মাহবুবুল আলম
গল্প পড়ে ভাল লাগলো। ঈশপের গল্পের স্টাইলে লেখা।
ভাল থাকবেন।
হালিম নজরুল
ভুলক্রমে আগের গল্প কপি করে ফেলেছিলাম। সময় থাকলে আরেকবার পড়ার অনুরোধ রইল।
ফয়জুল মহী
অনন্যসাধারণ লেখা। অপরিসীম ভালো লাগলো।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
এবার পড়া শুরু করি।
হালিম নজরুল
ভুলক্রমে আগের গল্প কপি করে ফেলেছিলাম। সময় থাকলে আরেকবার পড়ার অনুরোধ রইল।
ছাইরাছ হেলাল
ধুর, ব্যাপার না, কবি।
অবশ্যই অবশ্যই পড়বো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভালো লাগলো দাদা।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্প পড়ে ভাল লাগলো
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল দাদা।
আতা স্বপন
ভুতের মায়ের সুস্থতা আদলে আমাদের শিক্ষা। ভাল লাগল। ধন্যবাদ
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
গল্পের ভূতের এমন উদ্দ্যোগ আমাদের এসময়ে খুব জরুরী,
গল্পে গল্পে এমন করে সবাই বলতে পারে না, কেউ কেউ পারে, তা দেখালাম এই গল্পে।
হালিম নজরুল
আপনার প্রেরণা যেন কখনো না হারাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুতের দেশে গিয়ে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়, তাহলে ভুতের দেশে ভ্রমণ করা মোটেও মন্দনীয় নয়।
গল্পে-গল্পের মাঝে শিক্ষণীয় বার্তা দিতে আপনার জুড়ি নেই।
শুভ কামনা নজরুল ভাই,
ভালো থাকুন 🌹🌹
হালিম নজরুল
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল আপু।
নাজমুল হুদা
অনুপ্রেরণামূলক গল্প। দশ মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
শিক্ষণীয় গল্প, বাচ্চাদের জন্য বেশ উৎসাহ ব্যাঞ্জক হবে।
হালিম নজরুল
হ্যাঁ ভাই কিশোরদের জন্য লেখা।
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত শিক্ষা মুলক গল্প।
শিশুদের কাছে ভুতের গল্প অত্যন্ত আকর্ষনীয়, শিশুদের মধ্যে সমাজ সেবার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।
আপনার এই গল্পে অন্যকে সাহায্য করার প্রেরণা আছে।
এমন গল্পের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
শুভ কামনা।
‘ আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে মন্টির মা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, টুম্পারও লেখাপড়ার কোন ক্ষতি হবে না। ‘- টুম্পার নামের পরিবর্তে এখানে মন্টি হবে কি?
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাই।
নিতাই বাবু
ওইসব ভূতদের মত আমাদের সমাজের চারপাশে হাজারো মানুষরূপী বাস্তব ভূত আছে। এঁদের যদি মন্টু ভূতদের মতো সঠিক সুন্দর ধারণা মনে জোগাতো, তাহলে হাজারও মায়ের দুঃখ দুর্দশা লাগব হতো। কিন্তু না, ওইরকম আর হয় না। সমাজ এমনিতেই দূষিত হয়ে পড়ে থাকে।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ প্রিয় দাদা।
আরজু মুক্তা
এভাবেই সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা যায়, যদি সদিচ্ছা থাকে।
শান্ত চৌধুরী
সুন্দর অনুভূতি।
সতত শুভ কামনা।