
বিয়ের মাস ছয়েক পর থেকেই পাল্টে যেতে লাগলো অঞ্জন। সে গতরাতেও ঘুমায়নি। অনলাইনে সারারাত জেগে কার সাথে যেন কথা বলেছে। সকালে জিজ্ঞেস করতেই উল্টো রাগ হলো।
–বললো সন্দেহ করা কমাও জান। বিশ্বাস করতে শেখো। এমন করলে সংসার বেশিদিন টিকে না সোনা।
তারপর থেকে প্রশ্ন করা কমিয়ে দিয়েছে। প্রেম তারপর বিয়ে। সংসার না করার প্রশ্নই আসে না।
– ফোন ধরলে না কেন?
= মিটিংয়ে ছিলাম।
– মেসেজও দিয়েছি
= দেখেছি, রিপ্লাই দিতে মনে ছিলো না।
– এতো জরুরী একটা ব্যাপারে লিখলাম, আর রিপ্লাই দিতে ভুলে গেলে!
= দেখো, ব্যাপারটা তোমার কাছে জরুরী কিন্তু আমার কাজের চাইতে জরুরী নয়। আর যখন তখন আমার উপর নির্ভর করা কমাও।
– রাতেও তুমি ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকো, নয়তো ঘুমিয়ে যাও। কথা বলার সময়ই পাই না।
= সারাদিন অফিস করে ঘরের ব্যাপার গুলো কি আমাকেই দেখতে হবে? টাকা গুলো অফিস থেকে আমায় এম্নি এম্নি দেয় না।
মৌ ভাবতে থাকে কিভাবে নির্ভরশীলতা কমানো যায়। বাইরে কোথাও চাকরী করা যেতো, কিন্তু তাতেও অঞ্জনের আপত্তি। উহু, চাকরী করা যাবে না। তাহলে সময় কাটবে কিভাবে! ঘরের কাজ সেরে, সারাদিন গান শুনে আর বই পড়ে তার অবসর যেন কাটেই না। বিশেষ করে রাতে যখন অঞ্জন তার অনলাইন জগতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তার হঠাৎ মাথায় এলো, একটা ফেসবুক আইডি করে নিলে কেমন হয়!
অফিসে গিয়ে অঞ্জন শান্তি পাচ্ছে না। মৌয়ের উপর যতই রাগ দেখাক, সেতো জানে মৌয়ের সন্দেহ ভুল নয়। অফিসে নতুন জয়েন করা মেয়েটার প্রতি সে আসলেই দূর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও সে দুইদিকেই মেইনটেইন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেভাবে হয়ে উঠছে না। আর মেয়েটিও তার প্রতি বেশ দূর্বল। রাতে তার সাথে চ্যাট না হলে দুজনেই অসুস্থবোধ করে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? মৌ অনেক লক্ষী মেয়ে। অঞ্জনের জীবন ধন্য হয়েছে তাকে বউ হিসেবে পেয়ে।
কিন্তু কি করা যায়! কিভাবে দুইদিক সামাল দিবে সে!
হঠাৎ আইডিয়া চলে আসে! মৌকে একটা ফেসবুক আইডি করে দিলে কেমন হয়!
********************************************************************************
– মৌ তুমি তোমার ফেসবুক থেকে আমাকে আনফ্রেন্ড করেছো! ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছো কেন?
= হু। আমি আসলে ব্লক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ভালো দেখাতো না। আর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা খুব দরকার ছিলো , কারণ আমি চাইনা আমার আইডিতে তুমি প্রবেশ করো।
– সকালে দেখলাম, তোমার ফ্রেন্ড এক হাজার প্লাস, সাথে পাঁচ হাজার ফলোয়ার! কারা তোমার লিস্টে আছে দেখি, আজই তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভেট করে দিবো।
এই বলে অঞ্জন নিজেই মৌয়ের মোবাইল ফোন হাতে নিলো।
– মৌ! তুমি তোমার ফোন লক করে রেখেছো!!
= হ্যা। প্রাইভেসির জন্যে এটা সবাই করে।
– মানে! আমি তোমার হাজব্যান্ড….
টুং টুং টুং টুং মৌয়ের মেসেঞ্জারে কল আসছে.. অঞ্জনের কথা শেষ না হতেই ফোনটা তার হাত থেকে একরকম খাঁমছে নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো কিচেনে।
– কে ফোন করেছে? কার সাথে কথা বলছো মৌ?
= এইতো অনলাইন শপিং গ্রুপের একটা মেয়ের সাথে। অনলাইনে কিছু জিনিসের অর্ডার দিয়েছিলাম।
– কিন্তু আমি যে স্ক্রীনে দেখলাম একটা লোকের ছবি!
= অঞ্জন, তুমি এবার থামবে? এতো সন্দেহ করা ঠিক না সোনা। অহেতুক সন্দেহ করে সংসারে কেন অশান্তি ডেকে আনছো? তুমিও অনলাইনে ঘুরো অথবা ঘুমাও। আর শোনো, আমার বেডে আসতে দেরি হবে। অনেক জিনিস অর্ডার করেছি। ভিডিও কলে সব ভালো ভাবে দেখে কনফার্ম হয়ে তারপর কিনবো।
অঞ্জনের চোখে ঘুম নেই। মোবাইলের নেট বন্ধ করে, একহাতে মাথার চুল টানতে টানতে, সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবছে।
সে স্ক্রিনে ছবির সাথে ভেসে উঠা নামটাও দেখেছিলো..
মৌ কিচেন ছেড়ে চলে এসেছে ড্রইংরুমে। খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে..
– উফফফ আজ বেঁচে গেছি! এ্যাই শোনো, কালই তুমি একটা নতুন আইডি করে নিও। আকাশ বাদে যেকোনো একটা নাম দিলেই হবে। আর আমিও একটা ফেইক আইডি করেছি,,, আবেগী মন। রিক্যু দিও ***
২৮টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
জীবন সত্য সুন্দর । ফেইক কেন
সাবিনা ইয়াসমিন
যেখানে সত্য থাকে, তা সুন্দর হয়,
অসুন্দরের মাঝেই ফেইক এসে যায়।
প্রথম কমেন্ট এর জন্য ধন্যবাদ মহী ভাই 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
ফেসবুকের টিট-ট্যাট গল্প।
ফেসবুক দিয়ে/নিয়ে এত এত কিছু লেখা যায়!
ফেসবুক চালু করার সাহাস করে ফেলতে হবে দেখছি।
কত্তদিন কবিতা পড়ি-না, একখানা কড়কড়া কবিতা যদি দেতেন!
হালিম নজরুল
বুঝছি ম্যবাই, আপনে খালি লেহেন, পড়েন না !
হা হা হা
ছাইরাছ হেলাল
গাও-গেরামের মানু, এত্ত পড়া কৈ পামু, ভাইডি!
সাবিনা ইয়াসমিন
একদম ঠিক বুঝেছেন নজরুল ভাই 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
এটা টিট-ট্যাট এর গল্প না,
খাল কেটে কুমির আনার পরিনামের গল্প।
আপনি কবিতা পড়তে চান!
ওসব তো কবিরা লেখে, অকবির কম্ম নয় কবিতা লেখা। ভুংভাং কিছু চালু থাকে অ-কবিতার নামে 🙂
ধন্যবাদ মহারাজ,
ভালো থাকুন উইথ শুভ কামনায় 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
সেয়ানে সেয়ানে লড়াই, দুইজন তো বেশ ভালো জমিয়ে দিয়েছে। শুভ সকাল আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রবাদে আছে,
যার সাথে যেমন – শুটকির সাথে বেগুন।
শেষমেশ সবই মিলে যায় 😀😀
ধন্যবাদ কামাল ভাই,
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন জব্দ হয়েছে। একপক্ষ দিবে নিবে না , তা-কি হয়। দেয়া নেয়ার মধ্যে থাকলেই সব ঠিক থাকবে। 😋😋। ভালো থাকুন শুভকামনা রইলো। শুভ সকাল
সাবিনা ইয়াসমিন
আসলেই। দান-অবদান সমান সমান না হলে হয় না।
অনেক ধন্যবাদ,
শুভ কামনা অবিরত 🌹🌹
আরজু মুক্তা
ফেসবুকীয় গল্প। ভালো লাগলো
সাবিনা ইয়াসমিন
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ☺☺
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
নিতাই বাবু
বর্তমানে ফেসবুক দিয়ে কত্তকিছুই না হয়! কত্তকিছুই না দেখা যায়, করাও যায়, দেখানো যায়! আসলেও ঠিক যে, এই অনলাইনভিত্তিক সাইটগুলোর জন্য অনেক সুখের সংসারও ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যায়। তা যেন কারোর না হয়, এই কামনা করি।
ভালো লাগলো দিদি। ভালো থাকবেন আশা করি।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটা পড়ে সুন্দর মতামত দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা। অনলাইনভিত্তিক সাইট গুলো মানুষের কল্যাণের পাশাপাশি যাপিত জীবনেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই এসবে জড়িয়ে যায়, তাৎক্ষণিক আনন্দের মোহ কাটাতে না পেরে ভুল করতেই থাকে। কিন্তু বাস্তবতা যখন উপলব্ধি করে তখন ফিরতে দেরি হয়ে যায় কারো কারো।
ভালো থাকুন দাদা,
অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
রেহানা বীথি
দারুণ তো! যেমন বুনো ওল, তেমনই বাঘা তেঁতুল।
সাবিনা ইয়াসমিন
পড়ার জন্য ধন্যবাদ বীথি আপু ☺☺
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
দারুণ গল্প উপার দিলেন দিদি।
আকাশ বাদে যেকোনো একটা নাম দিলেই হবে। আর আমিও একটা ফেইক আইডি করেছি,,, আবেগী মন। রিক্যু দিও ***
একসেপ্ট হলে নিশ্চয় দুজনের কথোপকথন হবে!
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, আর এভাবেই সংসার থেকে বিশ্বাস নামক বস্তুটার অবশিষ্টাংশটাও চলে যাবে।
ভালো থেকো প্রদীপ,
শুভ কামনা 🌹🌹
সুপায়ন বড়ুয়া
বিশ্বাসে অবিশ্বাসের দোলাচলে
এ সংসার কেমনে চলে ?
কত সংসার ভাঙে
কত সংসার যায় বিফলে
তা শুধুই খোদাই জানে।
খুব সুন্দর হলো
পরকীয়া বারটা বাজলো
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটির মুল ভাব অল্প কথায় সুন্দর করে বলে দিয়েছেন দাদা। গল্পের নায়ক নিজের পরকীয়া সামলাতে গিয়ে সংসারের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। অথচ চেষ্টা করলেই সব ঠিক থাকতো 🙂
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা আপনাকে 🌹🌹
তৌহিদ
ইটটি মারলে পাটকেল খেতে হয়। বর্তমানে ফেসবুক আমাদের সমাজে ঘুণেধরা পোকার মত সংসারের শান্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। ফেসবুকের আর কি দোষ? সমস্যাতো আমাদের নোংরা মনে, মানসিকতায়।
জীবন সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে সেই সাথে তার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। অফিসে অনেক মেয়ে কলিগ থাকতেই পারে, পছন্দ হতেই পারে। তাই বলে আবেগ বিসর্জন দিতে হবে কেন? ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই সমস্যা আছে। পছন্দ হওয়াটা ন্যাচারাল কিন্তু তাকে পুষে রাখাটা অন্যায়। বরং হাজবেন্ড ওয়াইফ দু’জনাই দু’জনের প্রতি লয়্যাল থাকলে এগুলো প্রশ্রয় পায়না।
আর হাজবেন্ডই বা কেমন? অফিসে নিজে ফুসফাস করে অথচ বাসায় স্ত্রীকে সময় দেয়না! তাদের সংসারে অশান্তিতো হবেই।
সুন্দর লিখেছেন আপু। শুভকামনা সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
অত্যন্ত মুল্যবান কথা বলেছেন তৌহিদ। সাংসারিক সম্পর্ক সুন্দর আর মজবুত রাখতে হলে বিশ্বাস করার পাশাপাশি সেটা অর্জনও করতে হবে। নিজে বিশ্বাসঘাতকতা করে অপরকে বিশ্বাসের তর্জমা শেখানো উচিত না।
অসংখ্য ধন্যবাদ বিস্তারিত কমেন্টের জন্য।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
ত্রিস্তান
মৌ কি সত্যি সত্যিই ফেক আইডি খুলেছিলো ? অঞ্জনের অফিসের মেয়েটা কি জানতো না যে অঞ্জন বিবাহিত, তার গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলানো আছে ?
সাবিনা ইয়াসমিন
এটাতো গল্প! প্রতিকীরূপে ফেসবুক এসেছে।
সংসার বা যেকোনো ক্ষেত্র বিশ্বাস অর্জন করতে হলে সমস্যার ভেতরে গিয়ে সমাধান করা দরকার। সেইম সমস্যা অপরের উপর চাপিয়ে দিলে অনেক সময় হীতে বিপরীত হতে পারে।
ভাইরে,,, মেয়ে বা ছেলে পরকীয়া যখন করে জেনেশুনেই করে। ফাসির দড়ি থাকলেই কি!
জিসান শা ইকরাম
কত কিছু যে অনলাইন দুনিয়ায়,
এখনো আমি ফেইসবুকের ছাত্র, কিছুই শিখতে পারলাম না এখন পর্যন্ত।
মাত্র কয়েকদিন আগে শিখলাম, কিভাবে মেসেঞ্জারে লগ আউট হতে হয়।
আবেগী মন রে রিকুয়েস্ট দেয়া লাগবে, বুঝতে পারছি। একসেপ্ট করবে তো?
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, শেখার শেষ নেই। অনলাইন অফলাইন সবলাইনেই শেখার প্লাটফর্ম থাকে। যে যার প্রয়োজনমতো শিখে নেয়।
আবেগী মনের কাছে রিক্যু দিবেন? দিন,
আমার কাছে ১৭ টা আবেগী রিক্যু জমা হয়েছে। ঝুলিয়ে রেখেছি। দেখি এত আবেগ দিয়ে আসলে কি হয় 😜😜