
জানিনা কেমন করে তোমার জবাব লিখি। আজ আর কেমন আছো জানতেও ভয় পাই। প্রতিটি ঘরেরই তো একই চিত্র, একই ইজেলের গায়ে সাঁটানো চিত্রকল্প!
আমরা চেয়েছিলাম কবিতা, কাব্যের মোহে করতে রচনা সোনালী দিনের আশার শব্দমালা বুনতে। তোমাকে বলার পরে নিজেই ভুলে আছি। কতটা দিন পেরিয়ে গেছে…. তবু হয়নি কিছুই সৃষ্টি!
একেকটা বন্দীজীবন দেখছি…. শুনছি, কি করে কাটাচ্ছে কাঁচঘরের চারদেয়ালের প্রজাপতি জীবন। কি নিদারুন ক্ষোভে উচ্চারিত শব্দের প্রয়োগ! ভাবোন্মাদ,দিব্যোন্মাদ,বিদ্যানোন্মাদ…..বিশ্বের সাথে তাল মেলানো কথা বলা যত সহজ;ততটাই কঠিন কঠোর আমাদের আর্থসামাজিক দৃশ্যে। তুমি আমি আমরা সবাই মানি।
জানো, মাঝে মাঝে আমাকে কেউ কেউ বলে বসে — ” আপনি তো…..র দলীয় লোক!” প্রতিবাদ করি জোড় গলায়। লেবেল দেয়া যাবে না আমাকে। আমি খুব সাধারন ভাবে বুঝি আমার অধিকার। তাহলে জিগ্যেস করতেই পারো…… কি আমার অধিকার?
বলতে পারার অধিকার
সুবিধা বঞ্চিত আমি, নাগরিক অধিকার
ন্যায্য সুবিধা ,যা আমার পাওনা জন্মাধিকার বলে।
মা তার সন্তানদের ফাঁকি দিচ্ছে উনুনের হাড়িতে পাথর চাপা দিয়ে। রাষ্ট্রের গোলায় চালে ডালের তস্কর! কোথায় আমার কাব্যেরা জোগাবে ক্ষুদার নিবৃত্তি বলতে পারো?
রোকেয়া ভাবি সেদিন ফোন দিয়ে কেঁদে ফেললো মনোঃকষ্টে , তাঁর গৃহকর্মী নসিমন, তাঁকে ফোন করে বললো, ‘খালাগো, আইজ তিনদিন ধইরা পোলা মাইয়া লইয়া কলসির পানি খাইয়া আছি, কয়দিন বাঁচমু কইতে পারিনা খালা!”
জানো মিতা,
আমিও টের পেলাম, আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, কিন্তু চোখে এক ফোঁটা জল নেই আমার। চোখে আমার ক্রোধের আগুন।
আমার সাহায্যকারী দুদিন ফোন দিয়েছে, আমি অসহায়ত্বও ভুলে গেছি।
প্রতিদিন বেঁচে উঠছি — প্রতিদিন দিন পার করছি, রাত পার করছি ,প্রার্থনা করছি…… প্রতিদিন চোখ রাখছি আরো একটু মহাদূর্যোগের পরিস্থিতী জানতে! ততটাই নিজেকে আরো বেশি দেখছি মহাপ্রয়াণের ঘাটে পা রাখতে।
আমাদের দেখা হবার কথা ছিলো। তোমার ছোটো ছেলে জানান আমার কাছে প্যারাস্যুট আর ঘুড়ি আবদার করেছে। আমি জানিনা কখনো বাবাটার এই ছোট্ট আবদার পূরণ করার ফুরসত মহান আল্লাহ্ আমাকে দেবেন কিনা!
যদি ক্রান্তিকাল কেটেও যায়… আমরা জানিনা আরো কোন পঙ্গপাল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য দূর্ভিক্ষ নিয়ে। এইসব মেঘ কেটে গিয়ে আমাদের জন্য হেসে উঠবে কিনা আগামীর নতুন কোনো পৃথিবী?
সেই দিনের আশায় তবু বেঁচে থাকি আর কটা দিন!
তোমার ছেলে মুক্ত আকাশে উড়বে,ওড়াবে রঙিন ঘুড়ি।
আমার ছেলেরা আবার নিশ্চিন্তে গলির মোড়ে খুঁজবে বন্ধুদের আড্ডাবাজি। নিশ্চিন্তে সামাজিকতা বেড়ে উঠবে মানবিকতার নবজন্মে!
কাব্যেরা নেবে ঠাঁই আমাদের পৃষ্ঠার আলপনায়।
নিরন্ন মানুষ মুখে হাসি নিয়ে বলবে –” ভালো আছি”।
সেদিন আমিও বুক ভরে নিশ্বাস নেবো।
সেদিন আমিও লিখবো তোমাকে বেশ লম্বা করে ভালবাসার চিঠি।
ভালো থেকো ততদিন।
ভালো থেকো সবাইকে নিয়ে।
তোমার মিতা–
বন্যা//
৩৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বাহ, চিঠির উত্তর এসে গেছে 🙂
এবার পড়ে নেই চিঠি।
বন্যা লিপি
খুবই দুঃখিত। তিনদিন পরে জবাব দিতে এলাম। কিযে দিনরাত যাচ্ছে কেটে কে জানে? আশা করি ক্ষমা পাবো।
জিসান শা ইকরাম
ব্যাপার না। এই সময়ে সময় পাওয়াটাই কঠিন খুব।
মাছুম হাবিবী
অনেক সুন্দর একটি চিঠি পড়লাম আপু
সুন্দর লিখেছেন
বন্যা লিপি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
করোনাকালে করোনা বন্দী জীবনের অসহায়ত্ব সমস্ত চিঠি জুড়েই। আমরা একটা চরম বৈরী সময়ের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। চেনা জানা পরিবেশটা কেমন থমকে গিয়েছে।
সন্ধ্যায় বাসার বারান্দায় বসলে ছোট শহরকে কেমন ভুতুরে মনে হয়। ভয় লাগে এমন নিস্তব্দতা। এই শহর, এই পরিবেশ আমাদের অচেনা।
করোনা চলে গেলেও সব কিছু স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে।
তোমার ছেলেরা সহ সজনরা আবার হাসি আনন্দে স্বাভাবকতার মাঝে ফিরে আসুক এই প্রত্যাশা করি।
বন্ধুর কাছে দেয়া চিঠি ভালো হয়েছে খুব।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
করনা চলে গেলেও সব স্বাভাবিক হতে আসলেই কত সময় লাগবে তা কেবল মহান আল্লাহ্ তা’লাই জানেন। দুর্বিসহ হয়ে উঠবে এরপরে সবকিছু গোছাতে। বেকারত্ব, বেড়ে যাবে, সাথে সাথে বেড়ে যাবে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম। অসহনীয় হয়ে উঠবে জীবনমান।
তবু আশা ধৈর্য নিয়ে চেয়ে থাকি আগামীর পথে। হয়তো বাঁচবো নয়তো মরবো।
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
শিরিন হক
আমি পেলাম মুঠোয় ভরে নিলাম আগামী দিনের শ্বপ্ন প্রিয়।
ধন্যবাদ তোমাকে ভালোবাসা রইলো
বন্যা লিপি
তোমার মুঠোয় ভরা থাকা হাজারো স্বপ্নের রং। ভালবাসা তোমাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দু বান্ধবীর পত্রলেখা চমৎকার হয়েছে এই কঠিন বাস্তবতা ঘিরে। আমরা সবাই এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছি। বিধাতা কবে যে মুক্তি দিবে? হাঁপিয়ে গেছি এই বন্দীশালায়। ধন্যবাদ দুজনকেই । চিঠির চর্চা টা এভাবেই ফিরে আসুক , নতুন প্রজন্ম এর মহাত্ন উপলদ্ধি করুক। শুভ কামনা রইলো আপনাদের জন্য। শুভ রাত্রি
বন্যা লিপি
বিধাতা আমাদের সকলের প্রতি সদয় হোন। এই প্রার্থনা করি সকলে মিলে।
ভালো থাকবেন ছোটদি।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
কাছে-দূরের এমন শত শত ঘটনা/ দূর্ঘটনা গুলো আমাদের প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমরা কতটা অসহায়ত্বের মাঝে পড়ে গেছি। একটু সাহায্য বা সহানুভূতির অপেক্ষায় থাকা মানুষের হাহাকারে দিনদিন ভারি হয়ে যাচ্ছে চারিদিক। সুদিনের অপেক্ষায় আছি সবাই। যত না নিজেদের কথা ভেবে, তার চাইতে বেশি চাইছি তাদের জন্যে। সবাই আবার বেঁচে উঠুক বেঁচে থাকার মতো করেই।
লকডাউন চলাকালীন এই সময়ে স্বজন-বন্ধুদের সাথে মুখোমুখি বসে গল্প করার ফুসরত এখন কারোরই হয়ে উঠছে না। সেক্ষেত্রে চিঠির আদান-প্রদান এই সময়ের যোগাযোগ ব্যাবস্থার ভালো মাধ্যম। পছন্দ হলো ব্যাপারটি 🙂
অন্যদের পোস্টেও যেও বন্যা। সবাই যদি সবার পোস্টে না যাই তাহলে বাকিরা লিখবে কেমন করে, একটু ভেবে দেখো। তারাওতো চায় নিজেদের লেখায় তোমার মতামত পেতে।
ভালো থেকো,
শুভ কামনা অনেক অনেক ❤❤
বন্যা লিপি
এরপরে যদি সময় পাও, তবে চলো তুমি আমি চিঠির প্রচলনটা শুরু করি। কি বলো তুমি সখী? আমার খুব ইচ্ছে। ভেবে দেখবে?
বাকি পোস্টে কমেন্ট করার ইচ্ছা আমারও প্রবল। সময় পেলেই টুকটাক করছি। চেষ্টা করবো টুকটাকের গন্ডি বাড়াবো আরেকটু।
ভালবাসা তোমাকে❤❤
ফয়জুল মহী
দুর্দান্ত প্রকাশ। ভালো লাগলো
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও ! সুন্দর চিটির জবাব।
সমাজের বাস্তব ছবি তুলে আনলেন।
একদিকে ক্ষুধার্থ মানুসের কষ্ট।
অন্যদিকে ছুটির আমেজে আমরা খাদ্য
তালিকা লম্বা করছি
সুপায়ন বড়ুয়া
কথা ছিল সংযমী হবো আগামী দিনের খাদ্য ঘাটতির কথা ভেবে।
ভাল থাকবেন আপু। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
নিত্যদিনের মতো আমার ঘরে অ-সংযমীর কোনো ছাপ নেই দাদা।
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
নিরাপদে থাকবেন।
বন্যা লিপি
বিবেকবোধের কাছে যখন দরিদ্রতায় ভুগি, তখন সিমীত তালিকা আরো সিমীত হয়ে যায় দাদা। যেমনটা আমি আমার ঘরে চালু রেখেছি। স্বভাবিকতায় কোনো রকমফের নেই আমার ঘরে। এমনি করে কিন্তু আপনি আমি আমরা যে যার জায়গা থেকে সচেতন হতেই পারি।
চিঠি ভালো লাগলো বলে ধন্যবাদ।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক তাই আপু। সহমত।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার একটা চিঠি পড়লাম আপু।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
বন্যা লিপি
অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন আপু।
ভালো থাকবেন।নিরাপদে থাকবেন।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
করোনা সময়ের অসহায়ত্ব আপনার লেখার পরতে পরতে যা প্রতিটি ঘরের কাহিনী আপু, এমন চিটি এক সময় আমাদের মা খালাদের সেইসব চিঠি গুলোর কথা স্মরণ করে দিলো।
বন্যা লিপি
শিরিন হক অনেকদিন আগেই লিখেছিলো চিঠিটা।তাগাদা দিচ্ছিলো বারবার জবাব লিখতে। আমি সময় বা মন স্থির করতে পারছিলাম না। কি লিখবো জবাব?
ঘটনা আপনাকে খুলেই বলি এখানে।
আমাদের ঝালকাঠির একটা গ্রুপ আছে। যেখানে প্রতি রবিবার আমাদের দুইজনের দিন নির্ধারিত আছে। সেখানে আমরা পাল্টাপাল্টি জবাব পোস্ট দেই কবিতায়।।
(যদিও আমি কবিতা বলতে নারাজ)
আমাদের প্রচুর কথা হয় (শিরিন+আমার)
কথপকথনের মতো কাব্য নিয়ে আমরা পোস্ট দেই। সেখান থেকেই এই আইডিয়া নিয়ে চিঠি লেখা।
ভাবলাম এ চিঠি ব্লগে এলে কেমন হয়?
যেই ভাবা সেই কাজ। দেখলাম আপনারা পছন্দ করেছেন।
এরপরে আপনাদের প্রেরনা পেলে চলবে এ চলন আরো।
ধন্যবাদ ভাইজান।
ভালো থাকবেন।
সাবধানে থাকবেন।
আপনার এলাকা ঝুকির মুখে আছে জানলাম।
কামাল উদ্দিন
সেই দিনের আশায় তবু বেঁচে থাকি আর কটা দিন!
তোমার ছেলে মুক্ত আকাশে উড়বে,ওড়াবে রঙিন ঘুড়ি।
……….এমনি প্রত্যশা আমাদের সবারই, ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম কবি।
বন্যা লিপি
কামাল ভাই, আমারে কবি কওয়া ছাড়তে পারেন না? কবি হওয়ার গুণাগুণ নাই আমার মইধ্যে।
চিঠি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
সাবধানে থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, শুভ কামনা সব সময়।
সুরাইয়া পারভীন
বাহ্ চমৎকার এবং যথার্থ জবাব
চিঠির মাধ্যমে এতো সুন্দর করে বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন যা সত্যি অতুলনীয় আপু।
দুর্দান্ত লিখেছেন আপু❤❤
বন্যা লিপি
তোমার মন্তব্য আমার ভীষণ ভালো লাগলো সুরু।ভালবাসা তোমার জন্য❤
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
চমৎকার একটা চিঠি পড়লাম।
অনেক ভালো লাগলো দিদি।
বন্যা লিপি
অনেক ধন্যবাদ দাদাভাই।
তৌহিদ
আপনার বন্ধুর চিঠি পড়ে আসলাম আসলে আপনি ভাগ্যবান এরকম বন্ধু পেয়েছেন। ক’জনই এখন আবেগ মেশানো পত্র দিয়ে খবর নেয়?
আপনার বন্ধুও ভাগ্যবান আপনার উত্তর পেয়ে নিশ্চিত। এত সুন্দর উত্তরের চেয়ে ভালোবাসার আর কিছু হতে পারেনা।
ভালো থাকবেন আপু।
বন্যা লিপি
তৌহিদ ভাই, সত্যিই আমি ভাগ্যবান।
আমার জীবনে যার সাথেই পরিচয় হয়েছে, জানিনা কোন সে টানে, আমার থেকে আমাকে বেশি ভালবাসা দিয়েছে বন্ধুরা।আর শিরিনকে তো চিনতামই না। অথচ সে আমার আব্বার স্নেহধন্য ছিলো আমার ঝালকাঠি ছাড়ার পরে।
আমাদের যখন ফেসবুকে পরিচয় হলো! তারপর থেকে আমাকে দিন দিন ঋদ্ধ করেই যাচ্ছে নানা ভাবে।
আপনার প্রতি শুভেচ্ছা শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
চিঠি লিখে নয়, ফোন করে বর্তমান সময়ে এমনভাবেই দূরে থাকা আত্মীয়স্বজনদের জানিয়ে দিচ্ছি। সামনের দিনগুলো মনে হয় আরও কঠিন হচ্ছে। ১৯৭৪ সাকের দুর্ভিক্ষ চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। হয়তো সে সময়কার দুর্ভিক্ষ দেখা দিতেও পারে।
আপনার চিঠি পোস্টের লেখনীতে বিজের মনোভাব প্রকাশ করলাম, শ্রদ্ধেয় দিদি। আশা করি এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকবেন।
বন্যা লিপি
দাদা বাবু, এই চিঠি প্রতিকী হিসেবে দেখুন।
বাস্তবতা খুঁজলে তো হবে না। বাস্তবে আমরা সবাই পরিজনের খোঁজখবর টেলিফোন বা ভিডিওকলের মাধ্যমেই নিচ্ছি।
ভালো থাকবেন।
সাবধানে থাকবেন।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
চিঠি পেলাম। উত্তরও পেলাম। বাহ।
বন্যা লিপি
জ্বি, ধন্যবাদ