
একটা সময় ছিল সবাই আমার আশে পাশে ঘুর ঘুর করত একটা বইয়ের জন্য। বই এনে বাসায় রাখা দায় ছিল। আমাদের পরিবারটি হলো পাঠক পরিবার। সবাই বই পড়ে। ফলে আমার পছন্দের বইযের সাথে তাদের চাহিদা মতো বইও কিনতাম। আর এভাবে আমি বাড়িতে বইয়ের একটি মোটামুটি ধরনের সংগ্রশালা বা ব্যাক্তিগত পাঠাগার করে ফেলেছিলাম।তাই বই পড়ুয়াদের আড্ডা ছিল আমাদের বাসায়। বই পড়ুয়াদের তালিকায় আমাদের পরিবারের সদস্যদের সবাইতো ছিলই আরো ছিল আসে পাসের পারা প্রতিবেশী আবাল বৃদ্ধ বনিতা শিশু কিশোররা। ইসলামিক সাহিত্য থেকে শুরু করে আধুনিক গল্প উপন্যাস সব ধরনের বই আমার সংগ্রহে ছিল।
যার বই সবচেয়ে বেশী আমার সংরক্ষনে ছিল তিনি হলেন হুমায়ুন আহমেদ। আমি তার লেখার অন্ধ ভক্ত। কি লিখেছে তা বিচার নাই বই বের হলেই কিনতে হবে সবার আগে পড়তে হবে। একুশে বই মেলা আসলেই হুমায়ুন আহমেদের বই কেনা চাই চাই। একুশে মেলা মানে আমার কাছে হুমায়ুন আহমেদ। আরো পড়তাম জাফর ইকবালের কিশোর সাহিত্যগুলো, সাইন্সফিক্সন, দস্যু বহনহুর সিরিজ, তিন গোযেন্দা সিরিজ, গোয়েন্দা রাজু সিরিজ, সেবা প্রকাশনীর নানা অনুবাদ গ্রন্থ।পড়তাম ওপার বাংলার লেখক নারয়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিষেন্দু মুখপাধ্যায়, সমরেশ মুজুমদার, বুদ্ধদেব গুহর বইগুলোও। ছিল শরৎচন্দ্র , বঙ্কিম চন্দ্র, জসিম উদ্দিন, রবিঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় কালজয়ি বইগুলো।
ভাড়াটিয়া জীবনে যত এলাকায় থেকেছি প্রায় সব এলাকাতে আমার এই ব্যাক্তিগত পাঠাগার এর বহু পাঠক জুটে যেত। বই কিনলেই কাড়াকারি চলত বই পড়ুয়াদের মাঝে। এর ফেরে পরে আমার বইগুলির দফরফা হয়ে যেত।সেই সংগহ আজ প্রায় ধংসের পথে। অবুঝ শিশুকালে আমার দুই কন্যা রত্ন কিছু বই ছিড়ে ফেলেছে আর কিছু ছিড়েছে নচ্ছার ইদুর। যে কটা বই আছে তার মধ্যে আবার কিছু বই তস্কর পাঠক হাপিস করে দিয়েছে। তারপরও যা আছে তাও ধুলোর স্তুপে অনাদরে পড়ে আছে। বই মেলা আসলে আগে যাও দু একটা বই কিনা হতো এখন তাও প্রায় বন্ধ। এখন বইগুলোর দিকে তাকাই আর সৃতি রোমন্থন করি। কত টাইপের বই যে এ ক্ষুদ্র জীবনে কিনলাম আর পড়লাম। বই পড়া আর কিনা নিয়ে কত যে ঘটনা যা আজো মনে হলে কোথায় যেন হারিয়ে যাই।
আজ বই কিনতে ইচ্ছে করে না আর। মন চাইলে অনলাইন থেকে ডাউনলোড কর বই পড়ি।আগে বই কিনলে কোন কষ্ট হত না। ইদানিং বই কিনার কথা মনে হলেই মনে আসে অযথা পয়সা নষ্ট। বই না কিনলেও বই পড়া কিন্তু ছাড়িনি। ভার্চুয়াল জগত নতুন ভাবে পড়ার পরিবেশের সন্ধান দিয়েছে।
আগে বই পড়ার সাথে সাথে কিছু লেখা লেখি করতাম। ডাইরিতে বা খাতায় বা সামনে কোন কাগজ থাকলে তাতেই। আমি আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে অনিক কে পড়াতাম। আমার মনে আছে তাকে পড়াতেই গেলে তার খালি খাতাটা কবিতা গল্প লিখে ভরিয়ে ফেলতাম। তার বোন টুম্পা আমার লেখা খুব ভক্ত ছিল। যাই লেখতাম মুগ্ধ হযে তাই পড়তো। মাঝে মাঝে মন্তব্য করতো।
এমন আরো কিছু ভক্ত আমার ছিল তাদরে একজন হল প্রিন্স। ছেলেটা দারুন মেধাবী্। আইডিয়াল স্কুলের ফাস্ট বয় ছিল। সে আমার সব কয়টা লেখাই পড়ে প্রায় শেষ করে ফেলেছিল। আমার ব্যাক্তিগত ডায়রী তাই সে চুপি চুপি ঘরে ঢুকে পড়ত আর কমেনটস করে যেত।
আমরা যখন খিলগাঁও কুমিল্লা হোটেলের পাশের বিল্ডিং এ থাকি ওখানে ছিল তিন ভাই। মাসুদ ফারুক আর আরেফিন। আমার লেখার দারুন ভক্ত ছিল। তিন ভাই খুব মেধাবী ছিল। তবে ছোটটা একটু বেশী। ঐটাই একদিন আমাকে বলে দেখবেন আপনার লেখা একদিন বই আকারে বেরুবে আমি তা কিনে পড়ব। এখনো অবশ্য সে সৌভাগ্য হয়নি তবে কি উৎসাহ সেদিন পেয়েছিলাম তার কথায় বলে বুঝাতে পারব না।
কোথায় সেই দিনগুুলি। আজ আর কাগজে কলমে লিখা হয় না। লিখাও ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। সামাজিক সাইট আর ব্লগের কল্যানে। আজ শুধু টুম্পা বা প্রিন্স বা আরেফিন নয় তাদের মত হাজারো পাঠক ব্লগে আমার লেখা পড়ে। ভালোইতো। কিন্তু এতকিছুর পরও কেমন যেন শুন্যতা থেকে যায়। আর তা হল পরিচত জনের কমেন্টস বা মন্তব্যের অভাব। আজ কত ভার্চুয়াল বন্ধুইতো মন্তব্য করে সামনা সামনি মন্তব্যের সেই ফিলিংসাটা পাই না।
(চলবে)
১৬টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
শুভ কামনা । ♥️♥️♥️
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ হেফাজত করুন ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক ভার্চুয়াল মন্তব্য গুলোতে তাদের স্পর্শ বা ছোঁয়া পাওয়া যায় না বলে কষ্ট হয়। আগে বই সংগ্রহ করা, পড়ার একটা অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করতো।এখন কেনা ও হয়না , পড়াটাও কমে গেছে। বই উপহার পাওয়া আর তাতে তাদের শুভেচ্ছা গুলো হৃদয়ে গেঁথে থাকতো । পুরানো স্মৃতি তাও বই নিয়ে আমি খুব আবেগী হয়ে তাই এ ব্যাপারে। ধন্যবাদ ভাইয়া শুভ কামনা রইলো
আতা স্বপন
বই পড়ুন । জীবনকে জানুন। পড়ার বিকল্প নেই। সেটা ভার্চুয়াল হোক বা মলাটবদ্ধ। ধন্যবাদ।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা,বই পড়ার আগ্রহ খুব ছিলো, কিন্তু সময় হয়নি,
এখন মাঝে মধ্যে আপনাদের লেখা গুলো পড়ে আগ্রহ পুণ্য করি।
ভালো থাকবেন দাদা শুভ কামনা।
আতা স্বপন
যে কোন পড়াই জ্ঞান হয়। যাই পড়ছেন জ্ঞান পাচ্ছেন। কাজেই পড়া চালিয়ে যান। ধন্যবাদ।
ইসিয়াক
আপনার লেখা অথচ যেনো মনে হলো আমার নিজের জীবনেরই ঘটনা। বেশ মিল …….ভালো লাগলো আপনার স্মৃতি কথা। শুভকামনা।
আতা স্বপন
আসলে জীবনটা এমনই । আমরা মাঝে মাঝে একে অন্যের আয়না হয়ে যাই। আল্লাহ যেন হামেশা সুস্থ রাখে।
সুরাইয়া পারভীন
আপনার স্মৃতি রোমন্থন, বই পড়া, কেনার গল্প ভালো লাগলো। বই কেনা, পড়া আমারও নেশা। আমিও বই পড়তে দেই তবে শর্তসাপেক্ষে। পাতা ভাঁজ করা যাবে না, আঁকা আঁকি করা যাবে না….ইত্যাদি ইত্যাদি
আতা স্বপন
শর্ত আমারো ছিল। কিন্তু নিষিদ্ধ জিনিসে সেই আদম আ. থেকেই আমাদের আসক্তি। আল্লাহ যেনো নেক হায়াৎ দান করে।
নিতাই বাবু
সাথে আছি দাদা। নিজের ডায়রিতে লিখতে থাকুন, আমরা পড়তে থাকি। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
আতা স্বপন
দাদা মাঝে মাঝে দেখি লেখা লেখির উপর খুব অভিমান করে ছেড়ে দেবার হুমকী দেন। ঘটনা কী?
যাক আপনি যে কষ্ট করে আমার লেখা পড়েন এতেই আমি কৃতার্থ। সত্যের জয় হোক।
কামাল উদ্দিন
বই পড়ার নেশাটা আমার ও ছিল দূর্দান্ত। প্রথম দিকে ঠাকুর মার ঝুলি দিয়ে শুরু করলেও পরে সুনিল হুমায়ুন ছাপিয়ে সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা আর তিন গোয়েন্দা সিরিজই আমার ফেবারিটের তালিকায় স্থান করে নেয়। টাকা জমিয়ে বই কিনতাম বলে এক একটা বইকে আমার কাছে রত্ন মনে হতো। কালের বিবর্তনে অনেক বই হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলেও এখনো শতাধিক বই রয়ে গেছে ধূলো জমার জন্য।
আতা স্বপন
বইগুলো আজ বুড়ো হয়ে গেছে। বাসায় ধুলোর চাদরে ওদের বড় কষ্ট। বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে হবে। ধন্যবাদ
হালিম নজরুল
ভাল লাগল।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ