
আমি শৈশবে বাবা-মার সাথে শহরে ঈদ করেছি। সেটা রোজার ঈদ হোক বা কোরবানীর ঈদ। শহরে ঈদের মজাই আলাদা ছিল। বন্ধুরা সব একসাথে ঈদের নামাজ পড়তাম পাড়ার মসজিদে। সেখানেতো আর ঈদগাহ ছিলনা। ঈদগাহে নামাজ পড়তে হলে জাতীয় ঈদগাতে যেতে হতো। একবার সেখানে যেয়ে নামাজ পড়েছিলাম। বাবা আমাকে একটা বেলুন কিনে দিয়েছিলেন।
ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা সবাই কোলাকুলি করতাম। নামাজ শেষে বাসায় এসে বাবা-মা সহ বড়দেরকে সালাম করতাম। তাদের কাছ থেকে ঈদের সালামী (বর্তমানে অনেকে অবশ্য বলে ইদী) নিতাম। বাবা যেহেতু ব্যাংকে চাকুরী করতেন তিনি নতুন টাকার বান্ডিল আনতেন। সেখান থেকে আমাদের সালামী দিতেন। সেই নোটের গন্ধ এত ভাল লাগতো । এখনো তা মনে করে পুলকিত হই। আজ বাবা নেই সেই নোটও নেই। সেই শৈশবও নেই। মা সেমাই দিতেন। চটপটি দিতেন। আজও মনে পড়ে সেই দিনগুলি।
আমরা তখন থাকি খিলগাও সি ব্লকে। রোজার শেষে ঈদ। বাবার কাছ থেকে নতুন জামা জুতা পেয়েছি।যদিও এগুলো কোন বড় শপিং মল থেকে কিনা নয় গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে কেনা। আমার বাবা ব্যাকার হিসেবে সৎ ছিলেন।তাই আমরা তিন ভাই এক বোন এর জন্য তার যা আয় তা দিয়ে বড় কোন মার্কেট বা শপিং মল হতে কেনা তার জন্য সম্ভব ছিলনা। গুলিস্তানের সেই জামা কাপর যাকে আমরা তালকোম্পানীর মাল বলতাম তাই পড়ে মজায় ঈদ করেছি। আবার সেই পোষাক কেউ্ ঈদের আগে দেখে ফেললে তা পুরনো হয়ে যাবে তাই তা লুকিয়ে রাখতাম। ভুলা যায় সেই মজার দিনগুলো।
সি ব্লকের ঈদের আনন্দ মানে ঈদের জামাত শেষে পাড়ার যত বাড়ী আছে তাতে যাওয়া আর সালাম করে সেলামী কালেক্ট করা। আর সেমাই, চটপটি খিচুড়ি পোলাও খাওয়া। দিন শেষে হিসাব করতাম কে কত সেলামী পেলাম। মাঝে মাঝে ঘুরতে বেড় হতাম চিড়িয়া খানা আর শিশু পার্কে। নয়তো মালিবাগ ষ্টাফ কোয়াটর মেঝো মামার বাসায়। নয়তো মিরপুর আমার বড় মামার বাসায়। প্রায়ই ঈদে আমি বড় মামার বাসায় যাই। আমার সঙ্গি দুই ভাই। বন্ধু শাহজাদা আর তার ছোট ভাই শাকিল। একবার ওদের কে নিয়ে চিড়িখানায় পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওদের কি মনে আছে সে কথা? অনেক ভুগতে হয়েছে। হেটে হেটে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত এসেছিলাম।
যে কোন ঈদে আমাদের বাসায় ছিল একটা আলাদা আড্ডা একটা আলাদা আনন্দ। এর কারন আমাদের বাসার চটপটি। যে খেয়েছে সে মজছে। প্রতি ঈদেই তাই এই জিনিস খেতে আমাদের বাসার প্রতি সবার একটা আলদা উৎসাহ দেখাযেতো। ব্যপারটা এমনছিল যে এ বাড়ীর চটপটি না খেলে ঈদ যেন জমবেই না।
রোজা আর ঈদ এ দিনগুলো এলে আজো মনে পড়ে সি ব্লকের সেই দিনগুলির কথা। এখন বাবার মত কেউ টাকা দেয়া না । উল্টো সেলামী দিতে হয়। নতুন জামা পড়ার সেই আনন্দ আর থ্রীলটা্ও নেই। এখন সবার জন্য কিনতে হয়। সবার জন্য ভাবতে হয়। আমিযে এখন নিজেই বাবা। এখন মাঝে মাঝে একাকি নির্জনে স্মৃতি রোমন্থন করি আর ভাবি কেন বড় হলাম? কেন হারিয়ে গেল সেই শৈশব আর দুরন্ত কৈশর?
২৩টি মন্তব্য
তৌহিদ
ভাই অত্যন্ত চমৎকার লিখাটি পড়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। আহা কতইনা ভালো ছিলো সেসব দিন। এখন আমাকে কেউ সেলামী দেয় না। উলটো দিতে হয়।
স্মৃতিকথা ভাল লেগেছে।
আতা স্বপন
ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। আল্লাহর যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার উপস্থাপন দাদা,
পড়ে আবেগময় হলাম।
ভালো থাকবেনা সবসময় শুভ কামনা রইলো।
আতা স্বপন
ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। আল্লাহর যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সুপায়ন বড়ুয়া
নতুন জামার গন্ধ শুখে ঈদের
আনন্দটাই আলাদা। আর সেলামী সেতো
গুরুজনের ভালবাসা আর আশীর্বাদ।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
আতা স্বপন
ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। আল্লাহর যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
ইঞ্জা
আহা সেউসব দিন গুলো, আনন্দ গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।
খুব ভালো লাগলো ভাই।
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব। আল্লাহর যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
ফয়জুল মহী
কবে যে দেশের সুখবর পাবো। সুখবর পেলে মন ভালো লাগে ।
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লাগলো। আবেগময় লেখা। স্মৃতি গুলো কেন ফিরে আসে না? ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। নব রঙ্গে সাজুক আমার বাংলাদেশ।
আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া পারভীন
স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্ত গুলো কিছুতেই ভোলা যায় না। চমৎকার স্মৃতি রোমন্থন। কেনো যে আমরা বড় হলাম?
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। নব রঙ্গে সাজুক আমার বাংলাদেশ। আবার মুখরিত হোক প্রতি জনপদ প্রাণের উচ্ছাসে।
আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঈদের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া হয় ছোটবেলাতেই। বড় হবার পর ঈদের আনন্দ পাই ছোটদের দেখে। তখন নিজের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়, আর মন হয়, অন্তত ঈদের দিনে যদি আবার ছোট বেলায় ফিরতে পারতাম!
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। নব রঙ্গে সাজুক আমার বাংলাদেশ। আবার মুখরিত হোক প্রতি জনপদ প্রাণের উচ্ছাসে। বুকে বুকে করতে পারি যেন কোলাকুলি। ঈদ মোবারক ধ্বনীতে যেন মুখরিত হোক অলিগলি।
আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সাবিনা ইয়াসমিন
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের দোয়া কবুল করেন। আমীন।
আপনাকেও ধন্যবাদ স্বপন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
শৈশবের ঈদের আনন্দের স্মৃতি ভুলে যাওয়া যায় না। মনের গহীন কোনে সে আনন্দ গচ্ছিত থাকে।
আপনার ব্যাংকার পিতার প্রতি শ্রদ্ধা।
ঈদের স্মৃতি ভালো লেগেছে খুব।
শুভ কামনা।
ব্লগে আপনাকে আরো একটিভ দেখতে চাই।
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। নব রঙ্গে সাজুক আমার বাংলাদেশ। আবার মুখরিত হোক প্রতি জনপদ প্রাণের উচ্ছাসে। বুকে বুকে করতে পারি যেন কোলাকুলি। ঈদ মোবারক ধ্বনীতে যেন মুখরিত হোক অলিগলি। আনন্দময় হোক ছোট মনিদের শৈশব ।
আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া নার্গিস
আপনার লেখাটা পড়ে আবেগপ্রবন হয়ে পড়লাম, চমৎকার লিখছেন।
আপনার বাবার মতো আবার আব্বুও খুব সৎ ছিলেন তবু তিনি সার্ধের মধ্যে আমাদের খুশি করবেন।
আপনার বাবা ও আপনার জন্য দোয়া রইল,
আতা স্বপন
সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। ঈদ হোক করোনা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে। মধুময় স্মৃতি যোগ হোক স্মৃতির ভান্ডারে। সুস্বাস্থ্য আর পবিত্রায় জেগে উঠুক বিশ্ব।প্রতি প্রান নেচে উঠুক আনন্দ হিল্লোলে। নব রঙ্গে সাজুক আমার বাংলাদেশ। আবার মুখরিত হোক প্রতি জনপদ প্রাণের উচ্ছাসে। বুকে বুকে করতে পারি যেন কোলাকুলি। ঈদ মোবারক ধ্বনীতে যেন মুখরিত হোক অলিগলি। আনন্দময় হোক ছোট মনিদের শৈশব । ধনী গরিব সবার মুখের হাসিতে কেটে যাক অভিশাপ । পুত পবিত্র হোক ধরণী।
আল্লাহ যেন কবুল করেন। ধন্যবাদ ।
হালিম নজরুল
ভাল লাগল।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ নেক হায়াত দান করুন।