
ফাগুন!
শুভ সকাল জাদু। কেমন আছো তুমি? ভালো আছো? রাতে তোমার পাঠানো চিঠি পেয়েছি। তারপর সারারাত্রি কেটে গেলো তোমার চিঠি পড়ে। কত কিছু লিখেছো তুমি! শত জনমের সহস্র স্মৃতি নিয়ে লেখা চিঠি খানা আমায় যেন নতুন করে আরেকটা জনম উপহার দিলো! কেমন করে বুঝেছিলে আমি কষ্ট পাচ্ছি? তোমার অপেক্ষায় আছি? অপেক্ষায় থাকি?
আমি কেমন আছি জানতে চেয়েছো। এর উত্তর কি এক লাইনে বলা যায়? তবু্ও বলছি, শোনো-আমার একটা একটা দিন কেটে যাচ্ছে তোমায় জড়িয়ে। ভোর হতে সন্ধ্যা, আবার রাত থেকে ভোর, তুমিময় সারাবেলা। আমি ভালো আছি, এমনটি আবার বুঝে নিও না। আমার অপেক্ষার প্রহর গুলো তুমিময়, কিন্তু তুমিহীন দিন শুধুই যাতনার। এভাবেই অনুভবেরা কখনো তোমার উপস্থিতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, আবার অনুপস্থিতির বিষাদেরা অনুভবকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি আসলে কেমন আছি নিজেই জানি না জাদু।
চিঠির উত্তরে কি লিখবো ভাবছি। তোমার মতো করে আমি লিখতে পারিনা। তুমি কেমন করে যেন কিছু না বলতেই সব বুঝে যাও! যত অব্যাক্ত কথা, অফুরান অভিযোগ, নিরব অভিমান, এমনকি অকারণে বাঁধিয়ে রাখা ঝগড়া গুলোও! আমি তেমন করে একটুও বুঝতে পারি না। এই জন্যেই হয়তো এত এত ভুল করি। আর তুমি স্থির পর্বতসম দৃঢ়তায় অবিচল থাকো। আরও নিবিড় বন্ধনে আগলে রাখো আমায়। অবিরাম উপচে পড়া ভুল গুলো তোমার হাতে গেলেই ফুঁটে উঠে নানা রঙের ফুলে। আদরে-প্রশ্রয়ে-স্নেহে- আমি তোমার মাঝে শান্তির হিমালয় দেখেছি জাদু।
জান, আজ আমাদের এক জনমের কথা খুব মনে পড়ছে। আমাদের দুজনকে নিয়ে একটা ট্রেন ছুটে যাচ্ছিলো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। অন্ধকারের মধ্যে, আরও অন্ধকারে। মাঝে মাঝে একেকটা স্টেশনে অল্প সময় নিয়ে থামছিলো। পরক্ষণেই আবার ছুটেছিলো এক শহর থেকে আরেক শহরের দিকে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম অন্ধকার দেখে। চারদিক থেকে ঘিরে আসা অন্ধকার আমায় বিচলিত করে দিচ্ছিলো। তুমি কাছে এলে। বললে,
-ভয় পেওনা জানু, অন্ধকার কেটে যাবে। আলোকিত দিন আসবেই।
আমার শংকা ছিলো, জিজ্ঞেস করেছিলাম,
– কেমন করে আসবে জাদু? এত অন্ধকার কেমন করে কাটবে?
= কেটে যাবে। তুমি আমার পাশে থেকো। আমি তোমায় প্রত্যাশিত ভোর এনে দিবো…
তুমি তোমার কথা রেখেছো ফাগুন। ঐ রাতের পর আমি আর কোনো অন্ধকার দেখিনি। যখনই কোনো অন্ধকার আমায় গ্রাস করতে চেয়েছে, তুমি তাড়িয়ে দিয়েছো তোমার অপ্রতিরোধ্য আলো দিয়ে। একাকী রাখনি, একা হতে দাওনি। চিরকাল তুমি আমার সাথে ছিলে, আমিই সঙ্গী হয়ে থাকতে পারিনি।
জাদুউউ, আমাদের জনম ফুরিয়ে যাবে। জনমের স্মৃতি গুলো আরও জমতে থাকবে কালের ভাঁজে-ভাঁজে। সমুদ্রের বুকে বেড়ে উঠা প্রবাল গুলোর মতোই অভেদ্য হয়ে থাকবে আর-জনমেও।
আমরা আমাদের ভালোবেসেছি জন্ম জন্মান্তরে
ফি জনমে- আর জনমের দূরত্ব মেনে,
নিষেধের চুঁড়া সাক্ষী রেখে
শপথের অগ্নিতে পুড়িয়েছি প্রাপ্তির দলিল।
অনুমোদনের প্রত্যাশায় সমর্পণ করেছি পরীক্ষিত প্রেম,
হয়তো একদিন তুলে দেয়া হবে সকল নিষেধাজ্ঞা
বিরহী-আকুল প্রার্থনায় জেগে উঠবেন অদৃশ্যমান,
প্রসন্ন সর্বদ্রষ্টার সীমাহীন অবদানে দেখা হবে আবার;
ভালোবাসার বিনিময়ে- মিতালীর বিপরীতে…
ভালোবাসি জাদুজান। ভালো থেকো, হৃদয়ে রেখো।
*নদী*
২৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর চিঠি। আবেগ, ভালোবাসা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ঈশ্বরের কৃপায় আবার দেখা হবে, প্রিয়জনের সাথে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো 🙂😍। সকালের মিষ্টি ও স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা রইলো
সাবিনা ইয়াসমিন
যখন কোন কিছু নিয়ে লিখতে চাই অথচ লেখার বিষয় খুঁজে পাইনা, তখন চিঠি লিখি। এটা আমার লেখা লেখিরই একটা অংশ। বাস্তবিক কিছু নেই।
ধন্যবাদ আপনাকেও 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
বিফলতাই সফলতার চাবিকাঠি, তেমনি করে বলতে চাই বিরহই মিলনের চাবিকাঠি। ফাগুনের সাথে নদীর মিলন হবে শীঘ্রই এই প্রত্যাশায়………শুভ সকাল।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিফলতা সফলতার চাবিকাঠি, কথাটি সার্বজনীন সত্যি। বিরহ মিলনের চাবিকাঠি কিনা ঐ ব্যাপারে সন্দেহ আছে। ঐযে কথায় আছেনা? “চোখের আড়াল তো মনের আড়াল ”
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কথাটিও সঠিক বলে প্রমাণিত হয় 🙂
করোনার অবসান হোক, সবাই সবার স্বজনের সাথে ভালো থাকুক।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা আপনাকে 🌹🌹
কামরুল ইসলাম
খুব চমৎকার চিঠি
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ কামরুল ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
সকাল সকাল এমন চিঠি পড়লে সবাই যেনো নতুন জন্ম পাবে, সমস্ত বিরহের অবসান ঘটবে। প্রাপ্তির প্রতীক্ষা আরো দৃঢ় হবে। কাছে থাকুক না থাকুক
ভালো থাকুক ভালোবাসা।
ভালোবাসায় ভরপুর লেখা চিঠিখানা দুর্দান্ত হয়েছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
কাছে থাকুক বা যেখানেই থাকুক
ভালো থাকুক সব সময়,, এটাই ভালবাসার দাবী।
সুন্দর মতামতের জন্যে অনেক ধন্যবাদ সুরাইয়া।
সুরাইয়া পারভীন
এবার সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে
আমি আপনার কাছের মানুষ হতে পেরেছি
বেশ আপন আপন মনে হচ্ছে
লাভ ইউ আপু💜💜
সুপায়ন বড়ুয়া
ভোরের পাখিরা তখনো উঠেনি জেগে
আপু আমার চিঠি লিখে যায় সুর্য উঠার আগে।
অন্ধকার ভেদ করে আলোর দিশা লাগে
কবিতায় করে শেষ পড়তে ভাল লাগে।
শুভ সকাল।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঘুম না এলে যা হয় আর কি। লিখে দিলাম যা তখন মনে এসেছিলো 🙂
ধন্যবাদ দাদা।
ইঞ্জা
আবেগ ভালোবাসার চমৎকার মিশ্রণ, খুব ভালো লিখেছেন আপু, অসাধারণ চিঠি লিখার জন্য ধন্যবাদ অহর্নিশ।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইজান।
ভালো থাকুন সব সময় 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
রাতেও তাহলে পোষ্ট ম্যান চিঠি বিলি করে! অবশ্য আজকাল আর কেউ কাগজে চিঠি লেখেনা।
মোবাইলের যুগে স্ক্রিনে ভেসে এসে ওঠে চিঠির শব্দগুলো।
অত্যন্ত আবেগময় চিঠি পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম,
এত আবেগ কই পান জানিনা।
জনম জনম ধরে বজায় থাকুক নদী ফাগুনের এমন ভালোবাসা,
প্রতিটি জনম ফাগুন নিয়ে যাক নদীকে আলোর দিকে।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ডিজিটাল চিঠির যুগে চিঠি লেনদেন করার জন্যে পোস্টম্যানের দরকার হয় না। আর কাল্পনিক চিঠিতো দেয়াই লাগে না।
পড়ে সুন্দর মতামত দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
জানু/মানুর দিন শেষ, তা চিঠি যখন ই লেনাদেনা করুন না কেন।
বাবু/বাবা দিয়ে রোজ রোজ লিখে লিখে লিখার হাত শক্ত করুন।
শেষে তো একেবারে সাগর-জলের ঢেউ তুলে ফেললেন,
দারুন আপনার কল্পনা প্রবনতা!
সাবিনা ইয়াসমিন
আসলে তাই, জানুমনুর দিন শেষ। নিত্তনূতন চাহিদার কাছে সবই হার মানে।
মহারাজ, আপনিও যুগের সাথে তাল রাখতে পারলেননা। ওটা বাবু/ বাবা না, বাবু/ বেইবি হবে।
দেখি পরেরবার একটা ডিজিটাল চিঠি লিখতে পারি কিনা। কল্পনা করেইতো লিখি, এখন জাস্ট ডিজিটাল কল্পনা ধরতে হবে 🙂
ফয়জুল মহী
নীল খামে চিঠি সেই কবে এসেছে ভুলতে বসেছি। এখন এসএমএস আসে
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিক। এই জন্যেই ফিচার ছবিতে মোবাইলের ছবি দিয়েছি 🙂
ধন্যবাদ মহী ভাই 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা আমাদের ভালোবেসেছি জন্ম জন্মান্তরে
ফি জনমে- আর জনমের দূরত্ব মেনে,
নিষেধের চুঁড়া সাক্ষী রেখে
শপথের অগ্নিতে পুড়িয়েছি প্রাপ্তির দলিল।
অনুমোদনের প্রত্যাশায় সমর্পণ করেছি পরীক্ষিত প্রেম,
হয়তো একদিন তুলে দেয়া হবে সকল নিষেধাজ্ঞা
বিরহী-আকুল প্রার্থনায় জেগে উঠবেন অদৃশ্যমান,
প্রসন্ন সর্বদ্রষ্টার সীমাহীন অবদানে দেখা হবে আবার;
ভালোবাসার বিনিময়ে- মিতালীর বিপরীতে…
ভালোবাসি জাদুজান। ভালো থেকো, হৃদয়ে রেখো।
*নদী*
নান্দনিক ভাষায় লেখনী চিঠি।
বেশ ভালো লাগলো দিদি।
এমন ভালোবাসা অমরত্ব লাভ করুক জন্মজন্মান্তর ভরে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালবাসা মরে না। বদল হয় সময়ের সাথে সাথে।
ধন্যবাদ প্রদীপ।
ভালো থেকো।
হালিম নজরুল
আমরা আমাদের ভালোবেসেছি জন্ম জন্মান্তরে
ফি জনমে- আর জনমের দূরত্ব মেনে,
নিষেধের চুঁড়া সাক্ষী রেখে
শপথের অগ্নিতে পুড়িয়েছি প্রাপ্তির দলিল।
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, ঠিক এগুলোই লিখেছি 🙂
তৌহিদ
ভালোবাসলে জাদু জানু কতকিছু বেরোয়। এরপর ফিকে হয় ভালোবাসা। না মানে প্রকাশভঙ্গী পরিবর্তন হয় আর কি!! ভালোবাসা অমলিন।
ভালো থাকবেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
আসলেই তাই। ভালবাসা শেষ হয় না। সময়ের সাথে সাথে রঙ-রুপ বদলাতে থাকে। হয়তো সম্বোধনও পাল্টে যায়। তবুও ভালো থাকুক ভালবাসার মানুষ।
ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।