
বৈশাখের জন্য কেনা নতুন পাঞ্জাবীটা আর পড়া হয়নি। নরসিংদী থেকে ধামরাই যাওয়ার জক্কিতো আর কম নয়, সেই সাথে ক্যামেরা চালানোর জন্য পাঞ্জাবীর চাইতে টিশার্ট ভালো। খুব ভোরে রওয়ানা দেওয়াতে সকাল সকাল ধামরাই পৌছে যাই । মূল উদ্দেশ্য চড়ক পূজা দেখা । কিন্তু পূজা শুরু হবে বিকালে, কি আর করা পুরা ধামরাইটাই চষে বেড়ালাম সারাদিন। সেসব নিয়া পরে পোষ্ট হবে।
চড়ক কথাঃ এই ঐতিহাসিক চড়ক পূজা কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস জানা জায়নি। তবে জনশ্রতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন।
প্রতি বছরই এই ঐতিহ্যবাহী ভয়ঙ্কর গা শিউরে উঠা চড়ক উৎসব পালন হয়ে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। চড়ক পূজায় পিঠে বাণ (বিশেষ বড়শি) ফুড়িয়ে চড়ক গাছের সাথে বাশঁ দিয়ে তৈরি করা বিশেষ চড়কার ঝুলন্ত দড়ির সাথে বেঁধে দেওয়া হয় পিঠের বড়শি। আর বাণ বিদ্ধ সন্ন্যাসীরা ঝুলতে থাকে শূন্যে। রাতে নীল পূজার পর সন্ন্যাসীরা সবাই থাকে নির্জলা উপোস। পরদিন বিকাল বেলা চড়ক পূজা শেষে উপোষ ভাঙ্গেন তারা।
চড়কে ঝোলার সময় সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ লাভের আশায় শিশু সন্তানদের শূন্যে তুলে দেন অভিভাবকরা। সন্ন্যাসীরা শূন্যে ঘুরতে ঘুরতে শিশুদের মাথায় হাত বুলিয়ে আশির্বাদ করেন। অনেক সময় কোলেও তুলে নেন। আর উরন্ত অবস্থায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বাতাসা ছিটান। যাদের ভাগ্য ভালো তারাই ঐ প্রসাদ ভাগ্য লাভ করেন। পরলোকে এই সন্নাসীদের শিব ঠাকুর স্বর্গে যাবার বর দিবেন বলেই ওদের বিশ্বাস।
(২/৩) চড়ক পূজার গাছ, এটাকে পুকুরে ফেলা রাখা হয় সারা বছর । পুকুর থেকে উঠিয়ে পরিস্কার করে অনেক পূজা-অর্চনা পর ইহা চড়কের জন্য প্রস্তুত হয়।
(৪) গাছের মাথায় যে চড়ক খানা লাগানো হবে তাকে নিয়া ও বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করে দুধ ও পানি দ্বারা ইহাকে গোসল দেওয়া হয়।
(৫/৬) জঙ্গলের বিভিন্ন গাছকে মন্ত্র পড়ে শুদ্ধ করা হচ্ছে। সেই সাথে লাল শালুকে ও মন্ত্রপূত করা হচ্ছে, চড়কের কাজে লাগানোর জন্য। যে পূজারিদের বিশেষ নিরাপত্তা দিবে।
(৭) এবার সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চড়কটার সাথে জুড়ে দেওয়া হলো। অপর দিকে গাছের সরু মাথায় গ্রীজ আর কলা মাখিয়ে চড়ক এবং গাছ এক সাথে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
(৮) এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাকি থাকল মাটির নিচে। যেখানে চড়কের গাছটা পুতবে সেই গর্তের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে সন্ন্যাসী ওটাকেও মন্ত্রপুত করে নিল যাতে কে কোন দূর্ঘটনা না ঘটে।
(৯) সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা শেষ হলে এবার চড়ক সমেত গাছের খুটিটা ঐ গর্তের ভেতর দাঁড় করিয়ে ভালোভাবে মাটিতে আটকে দিলো।
(১০) চড়ক পূজার প্রধান সন্ন্যাসীর সাথে দুজন ব্লগার।
(১১) কতো বছর যাবৎ সে চড়ক পুজার বাণে ঝুলছে তার একটা হিসাব এখানে পাওয়া যায়।
(১২) ওদিকে বাড়ির ভেতরে ফুল ফল নিয়া ব্যপক পুজা অর্চনা চলছে।
(১৩) সন্ন্যাসীরা বান বিদ্ধ হওার আগে সাত সখী সাত পুকুরের সাত কলসী পানি নিয়ে হাজির। এসব পানি ছিটিয়ে আরো নানা পূজা অর্চনা করে পাশের বিছানায় শুইয়ে ওদের বাণ বিদ্ধ করা হবে।
(১৪/১৫) পুরোহিতরা নানা মন্ত্রপড়ে কোথায় বাণ বিদ্ধ করবে তা মার্কিং করে তারপর ওদের কাজ শুরু করে দিল।
(১৬/১৭) একে একে দুজনকে বাণ বিদ্ধ করে চড়কে ঝুলানর জন্য প্রস্তুত করা হলো।
(১৮) ওদিকে চড়ক তলায় মানুষের ঢল নেমে এলো।
(১৯) চড়কে ঝুলার আগে ওরা শেষ পূজা অর্চনা সেরে নিল।
(২০/২১) এবার চড়কে ঝুলে ওদের উড়ে চলার পালা……
(২২) আশির্বাদ লাভের আশায় অভিবাবকরা শিশুদেরকে উরন্ত সন্ন্যাসীদের হাতে তুলে দেয় অনেক সময়। তাছাড়া উড়ন্ত সন্নাসীরা কিছু প্রসাদ ছুড়ে মারে যাদের ভাগ্য ভালো তারা কিছুটা প্রসাদের নাগাল পায়। আমার ভাগ্য অতোটা ভালো ছিল না……
২৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
দেখে ভয় লাগে, আমাদের এখানেও স্থানীয় ভাবে এই পুজা হয়,
ভয়ে ভয়ে কাছে দাঁড়িয়ে একবার মাত্র দেখেছি অনেক আগে, ভুলেই গিয়েছিলাম।
নিরাপদে থাকুন।
কামাল উদ্দিন
ভয়েরই বিষয় বড় ভাই, কিন্তু আমার কথা হইল এমন ভয়ঙ্কর পুজা এখনো চালু থাকে কিভাবে!
হালিম নজরুল
একবার স্বচক্ষে দেখে ভীষণ ভয় পাইছিলাম
কামাল উদ্দিন
ভয়কে করতে হবে জয়, শুভ কামনা।
Jahangir Alam
কামাল ভাই অনেক বছর পর ছবিগুলো দেখলাম। ছবি এবং লিখা অসাধারণ হয়েছে। শুভ কামনা আপনার জন্য। ঘরে থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
সুরাইয়া পারভীন
কি নৃশংস আর ভয়ঙ্কর
এ কেমন পূজা!
গা শিউরে ওঠা পূজা
যা হোক উপস্থাপন দারুণ।
কামাল উদ্দিন
আমি বলি সতিদাহ প্রথা বাদ হয়েছে, এগুলো এখনো বন্ধ হয়না কেন, ভালো থাকবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
বন্ধ করে দেওয়া দরকার
আপনিও ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া এমন ছবি না দিলেও পারতেন যেগুলোতে বিধানো হচ্ছে বড়শি গুলো। আপনার ভ্রমনের পরিধি যত দেখছি ততো অবাক হচ্ছি। ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
ছবিগুলো না দিলে আসলে কিভাবে বুঝাতাম আমি ব্যাপারটা আপু?
রেহানা বীথি
চড়ক পুজোর ছবি যতবার দেখি, শিউরে উঠি। কী ভয়ানক নৃশংসতা!
অবাক হই, কতকিছুর সাক্ষী আপনি!
কামাল উদ্দিন
নৃশংসতা কোথায় আপু? ওরা তো হাসি মুখেই এসব করে যাচ্ছে। কাউকে তো বাধ্য করা হচ্ছে না।
প্রদীপ চক্রবর্তী
চমৎকার বর্ণনা দাদা।
আমি ছোটবেলা বাবার সাথে অনেকবার চরক,গাজন উৎসব দেখতে যেতাম।
প্রথমে ভয় হতো। এখন স্বাভাবিক।
এছাড়া চরকপূজার আগের রাতে দাউদাউ করে জলন্ত আগুনের আঙ্গারের মধ্যে সন্যাসীদের কালীনাচ,বলির দা এর উপর শুয়ে থাকা ইত্যাদি। হঠাৎ এসব দেখলে গা শিহরিত হয়ে ওঠে।
কামাল উদ্দিন
আমি আগের দিনের অনুষ্টান গুলো দেখতে পারিনি। শুনেছি আগে আরো এমন অনেক ভয়ঙ্কর সব অনুষ্টানাদি হয়। কোন এক দিন হয়তো দেখবো……নববর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
এটাতো মহা বিপজ্জনক ?
এটা কিভাবে সম্ভব। পিঠে এটা কিভাবে লাগায় ?
আহারে বাংলাদেশ। পুজাঁ অর্চনার নামে একি দেখলাম ?
প্রশাষন অনুমতি দেয় কিভাবে ?
ধন্যবাদ ভাইজান।
কামাল উদ্দিন
চামড়ায় বরশির মতো গেথে দেয়, আমার ভাবনা হলো মানুষের গায়ের চামড়া এতোটা শক্ত হয় এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য…..শুভ নববর্ষ
তৌহিদ
উহ! কি ভয়ঙ্কর!! গাঁ শিউরে ওঠা সব ছবি। আপনার নিখুঁত বর্ণনায় অনেক কিছু জানলাম ভাই।
ধন্যবাদ জানবেন।
তৌহিদ
নববর্ষের শুভেচ্ছা ভাই
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, আপনার জন্যও রইল বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
ফয়জুল মহী
নববর্ষে শুভেচ্ছা আপনাকে ।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
জিসান শা ইকরাম
খুব ছোট বেলায় একবার দেখেছিলাম এই চড়ক। দেখে এত ভয় পেয়েছিলাম যে আর কখনো এটি দেখতে যাইনি। আপনার পোষ্ট দেখে সেই ভয়টা আবার এলো মনের মাঝে। কত যে বিশ্বাস প্রচলিত আছে এখনো আমাদের মাঝে!
ভালো লেগেছে পোষ্ট।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আমারও ঐ একবারই দেখা ….বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ভানবেন ভাই।
ইসিয়াক
ছবিগুলো দেখেই তো মাথা ঘুরে গেলো।
কি ভয়ঙ্কর!
শুভকামনা
কামাল উদ্দিন
শুভ নববর্ষ ইসিয়াক ভাই