
গাছে গাছে নবপত্র পল্লবের সমারোহ।
প্রকৃতির সুপ্ত উদ্ভাসে ঋতুচক্রের পালাবদলে প্রখর রৌদ্রের খরতাপ পেরিয়ে আগমনী গ্রীষ্মের ছোঁয়া।
ফুল,প্রকৃতি তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে ঋতুচক্রের ভ্যাপসা গরমে। তৃণলতা বৃষ্টিরজলে গা ভেজাতে অপেক্ষার প্রহর গুনে।
বুরো ধানের পুষ্পমঞ্জরি জুড়ে মৌমাছি আর ভ্রমরের গুনগুন গুঞ্জনে আহরিত সবুজে আচ্ছাদিত পুরো ধানক্ষেতের মাঠ। ফুলের সৌরভ নিতে বাগানজুড়ে ভিন্ন রঙের প্রজাপতির আনাগোনা।
সুজলা, সফলা, শস্যশ্যামলা, অরণ্যকুন্ডলা সবুজাভ প্রকৃতির দেশে ষড়ঋতুর মুগ্ধতা।
আজ চৈত্রসংক্রান্তি।
বাংলা বছরের সমাপনীমাস চৈত্র।
বাঙালির আদি ঐতিহ্যে লোকাচার অনুযায়ী আজকে চৈত্রের বিদায় উৎসব।
সৌন্দর্যময় প্রকৃতির সুবাসে ভোরে সূর্যদয়ে যখন বাগানে প্রস্ফুটিত হয় ফুলের কলি,
আর শেষ বিকেলের গোধূলির আরক্তভায় সূর্যাস্তের মতো ঝরে পড়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় একটি বঙ্গাব্দ।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের ধর্ম। আর এ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা,সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আচার আচরণে আবদ্ধ থাকে।
আবহমান কাল হতে বাঙালির বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে চৈত্রসংক্রান্তি একটি লোকজ সংস্কৃতি।
বুকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের মানুষ সহ অবস্থানে বসবাস করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। আর একসাথে পালন করে আসছে ভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান। তারমধ্য আজকের চৈত্রসংক্রান্তি অন্যতম।
চৈত্রসংক্রান্তির প্রথম প্রহরে নিমপাতা,ভাঁটগাছের পাতা,মনগাছের পাতা,কাঁচা হলুদ সাথে শস্যতৈল দিয়ে একসাথে পিষে গায়ে মেখে স্নান করা হয় থাকে।
এতে করে সকল রোগব্যাধি নিরাময় হবে বলে বিশ্বাস করেন সকলেই।
এছাড়া সমাগত চৈত্রের রোগ হতে নিরাময়ে এদিনে সকালবেলা স্নানের শেষে নিরামিষ, তেতো, শাকসবজি ও নিমপাতা ভাজি খাওয়া হয়ে থাকে।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে চৈত্র সংক্রান্তির দিনটিকে গণ্য করা হয় মহবিষুব সংক্রান্তি নামে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পিতৃপুরুষের তর্পন করে থাকে, নদীতে বা দিঘীতে পুন্যস্নান করে থাকে।
আজকের দিনে নীল পুজা বা চড়ক পুজা, গজল, চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা,শেষ প্রস্তুতি চলে হালখাতার।
বাংলা সনের শেষ মাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘চিত্রা’ নক্ষত্রের নামানুসারে। আদি গ্রন্থ পুরাণে বর্ণিত আছে সাতাশটি নক্ষত্র আছে যা রাজা/প্রজাপতির দক্ষের সুন্দরীকন্যার নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
প্রবাদতুল্য সুন্দরী এই কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার চিন্তায় উৎকণ্ঠিত রাজা দক্ষ।
উপযুক্ত পাত্র কোথায়? যোগ্যপাত্র খুজে পাওয়া কি সহজ বিষয়? সৎপাত্রে কী কন্যা দান করা যাবে?
না, অবশেষে বিধির বিধানে উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেল।
একদিনে মহাধুমধামে চন্দ্রদেবের সাথে বিয়ে হলো দক্ষের সাতাশজন কন্যার। দক্ষের এককন্যা চিত্রার নামানুসারে চিত্রানক্ষত্রা এবং চিত্রানক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়। রাজা দক্ষের আরেক অনন্য সুন্দরী কন্যা বিশখার নামানুসারে ‘বিশখা’ নক্ষত্র এবং ‘বিশখা’ নক্ষত্রের নামানুসারে বৈশাখ মাসের নামকরণ করা হয়।
পূর্বে বাংলা সন বলতে কিছু ছিলনা। ছিল ভারতীয় সৌরসন গণনা পদ্ধতি।
মোঘল সম্রাট আকবর ‘সুবে বাংলা’ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে ফসল কাটার মৌসুম অনুসারে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে নতুন একটি সনের প্রবর্তনের জন্যে অনুরোধ করেন বিজ্ঞ রাজ জ্যোতিষী ও পন্ডিত আমির ফতেহউল্লাহ্ সিরাজীকে। সিরাজী হিজরী চন্দ্রমাসের সঙ্গে সম্রাটের সিংহাসনের আরোহোনের বছর এবং ভারতীয় সৌরসনের সমন্বয়ে বাংলাসনের প্রবর্তন করেন। মাসের নামগুলো সৌরমতে রেখেই পূর্ণবিন্যাস করেন তিনি। সে অনুযায়ী বৈশাখ বাংলা সনের প্রথমে চলে আসে।
চৈত্র সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষণ গাজন।
গাজন একটি লোকউৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে আষাঢ়ি পূর্ণিমা পর্যন্ত সংক্রান্তি কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে এ উৎসব উদযাপিত হয়। এই উৎসবের সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতাদের নাম। যেমন- শিবের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি।
এ উৎসবের মূল লক্ষ্য সূর্য এবং তার পত্নীরূপে কল্পিত পৃথিবীর বিবাহ দেওয়া। গাজন উৎসবের পিছনে কৃষক সমাজের একটি সনাতনী বিশ্বাস কাজ করে।
চৈত্র থেকে বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত সূর্যের যখন প্রচণ্ড উত্তাপ থাকে তখন সূর্যের তেজ প্রশমণ ও বৃষ্টি লাভের আশায় কৃষিজীবী সমাজ বহু অতীতে এই অনুষ্ঠানের উদ্ভাবন করেছিলেন।
আগামীকাল রোজ মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখ-
নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৭।
জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এই আহ্বান জানাবে বাঙালি।
বিদায়ী সূর্যের আহ্বানে সমগ্র বিশ্বে আজ একটি পবিত্রতার বাণী উচ্চারিত হোক. সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। সকলের শান্তি লাভ করুন।
[বৃহদারন্যক উপনিষদ 📓]
আজকের এ পবিত্রময় শুভদিনে
সমাগত মহা বিপর্যয় মহাসংক্রামক করোনা নামক মহামারি ব্যাধি থেকে যেন সকলে মুক্তি লাভ করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা যেন সকলের মঙ্গল করেন।
সবাইকে শুভ চৈত্রসংক্রান্তির শুভেচ্ছা।
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আজকের এ পবিত্রময় শুভদিনে
সমাগত মহা বিপর্যয় মহাসংক্রামক করোনা নামক মহামারি ব্যাধি থেকে যেন সকলে মুক্তি লাভ করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা যেন সকলের মঙ্গল করেন।
এইটি এখন বেশি দরকার দাদা।
চৈত্র সংক্রান্তির শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
লেখাটি প্রিয়তে নিলাম। খুব ভালো লাগলো। চৈত্র সংক্রান্তি শুভ হোক। নতুন বছর, নতুন সূর্যোদয় শুভ সংবাদ নিয়ে আসুক এই ক্রান্তিকালে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি,
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ফয়জুল মহী
উপভোগ্য পড়া। আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সুপায়ন বড়ুয়া
আজকের এ পবিত্রময় শুভদিনে
সমাগত মহা বিপর্যয় মহাসংক্রামক করোনা নামক মহামারি ব্যাধি থেকে যেন সকলে মুক্তি লাভ করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা যেন সকলের মঙ্গল করেন।
চৈত্রসংক্রান্তি নিয়ে সুন্দর লেখাটি অভিনন্দনযোগ্য
আপনাকে ও শুভ চৈত্রসংক্রান্তির শুভেচ্ছা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
তৌহিদ
আপনাকেও চৈত্রসংক্রান্তির শুভেচ্ছা দাদা। বিস্তারিত জানলাম আপনার লেখায়। করোনাভাইরাস এবারে নববর্ষ পালন করতেও দিলোনা এটাই আক্ষেপ। তবু সবাই ভালো থাকুক এটি প্রার্থনা করি।
ভালো থাকবেন দাদা। সুন্দর পোস্ট।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সুরাইয়া নার্গিস
আপনাকেও চৈত্রসংক্রান্তির শুভেচ্ছা দাদা। লেখাটা অনেক ভালো লাগলো, অনেক কিছু জানলাম আপনার লেখায়।
আল্লাহর কাছে চাওয়া একটাই করোনা মহামারি থেকে তাঁর সৃষ্টিকে তিনি রক্ষা করুন।
নতুন বছরে সব কিছু ভালো হবে এই প্রত্যাশা রাখি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
ভালো থাকবেন দাদা। সুন্দর পোস্ট।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি,
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
হালিম নজরুল
শুভ নববর্ষ
আবার জমবে মেলা
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
রেহানা বীথি
ভালো লাগলো লেখাটি। চৈত্র শেষের সাথে সাথে যেন শেষ হয়ে যায় এই দুঃসময়। নতুন বছর আসুক নতুন বারতা নিয়ে। ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি,
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
সমস্ত উৎসব ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছে করোনার থাবায়।
খুবই ভালো পোষ্ট।
শুভ বাংলা বর্ষ ১৪২৭।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ দাদা!
শুভ নববর্ষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ইসিয়াক
শুভ বাংলা বর্ষ ১৪২৭।
ভালো থাকুন সবসময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভকামনা দাদা।