
সিধু এলাকার মেথর নিচু জাত সবাই তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে
রোজগারের টাকা কেও হাতে দেয়না তার গলায় টিনের কৌটা ঝুলানো থাকে সেই কৌটায় ফেলে দেয় পাত্রে টুংটাং পয়সার শব্দে সিধুর মন নেচে উঠে দিন আনে দিন খায় লোকদের জন্য এই শব্দ প্রাণের প্রতিশব্দ নতুন করে বাঁচার ঘণ্টা
এতদিন সিধুরা পাড়ার মেথর হিসেবে কাজ করতো কখনো কারো মলাধাম পরিষ্কার করার ডাক পড়লে ছুটে যেত দিন দিন মেথর পট্টির লোকসংখ্যা বাড়ছে সব মেথর এখন কাজ পায়না
নামজাদা দুই একজন পরিছন্নতার সুনামধন্য কাজ পায়
সিধু তাদের মতো একজন জমিদার বাড়ি দেওয়ান বাড়ি জোতদার বাড়ি গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতে তার ডাক পড়ে মল ঘর পরিষ্কারের জন্য
হঠাৎ হঠাৎ ডাক পড়া যথাসামান্য টাকায় তার আর চলেনা তার কেন পুরো মেথর পট্টির কারো চলেনা
অনেকে জাতে মেথর কিন্তু কাজ পায়না জাতের বাহিরে অন্য কাজ করতে
পারে না
কেও কেও ছাগল পুষে বাজারে দুধ বেচতো কিন্তু নিচু জাতের মেথরের হাতের দুধ খেলে জাত যাবে বলে ব্রাহ্মণরা হট্টগোল করায় জমিদার তাদের দুধ বেচা বন্ধ করে দিয়েছে
এখন ওরা দুধ না বেঁচলেও পাঠার পাল লাগায় অনেকেই ছোট পট্টির চাপড়া ঘরের কোনায় কাঞ্চিতে পাঠা পুষে গৃহস্থরা তাদের ছাগী এনে পাঠার বীজ নিয়ে যায়
সিধুর কাছে আছে উন্নত জাতের শিরই পাঠা সিধু একবার এক সাহেবের মল ঘরের কাজ করেছিল সাহেব তার কাজ দেখে পছন্দ করে ভাঙা বাংলায় বলেছিলো কি চাই তোর
সিধু বলেছিলো আপনি প্রভু অন্নদাতা আপনি খুশি হয়ে যা দেন তাই নেবো
সাহেব খুশি হয়ে তার ছাগীর একটা পাঠা বাচ্চা তাকে দিয়ে দেয় সিঁধু আনন্দে হতবাক সে কি বলবে বুঝতে পারছিলোনা সে অবাক বিস্ময়য়ে বাক রুদ্ধ
সাহেব কিন্তু বিস্ময় মাখা ভাবনায় তাকে কিন্তু পাঠা বাচ্চা দেয় নি সিঁধু ঘরে আসার পর থেকে সাহেব লক্ষ করছে সিধুর নজর পাঠা বাঁচার দিকে হয়তো তার ভালো লেগেছে সাহেব তার মনের কথা বুঝতে পেরেছেন সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এদেশের মনের কথা না বুঝলে হয়
সাহেব সিধুর চোখে মুখে ফুটে উঠা মনের ভাব বুঝতে পেরে পাঠাটা তাকে দিয়ে দিয়েছেন
সিধুর পাঠা অনেক বড় হয়ে গেছে অনেকেই পাল নিতে আসে সে দেয় না তার নিজের পোষা ছাগীর সাথে আগেও দিবে এর পর অন্য কারো ছাগীর সাথে
সিধু মুগ্ধ হয়ে তার পাঁঠার দিকে তাকিয়ে থাকে দিন দিন কত বড় হয়ে যাচ্ছে পাঠাটা
তাকে কেও জাতের জন্য পছন্দ করেনা মেথর বলে গণ্যমান্যরা দূরত্ব বজায় রাখে কেও কেও স্রান করে উঠার পরও নাকে কাপড় চেপে কথা বলে
তাকে ঘেন্না করে তাকে ছুঁলেও তাদের জাত যায়
কিন্তু তার শিরোই পাঠার কি ভাগ্য ব্রাহ্মণ পুরোহিত এর ছাগীও বীজ নেয় গণ্যমান্যরা ছাগী এনে বীজ নিতে চায়
ছাগলের কোন জাত নেই মেথরের পাঠাও ব্রাহ্মণের দুধের ব্যবস্থা করে
সামান্য ছাগলের মতো অবলা প্রাণীর মধ্যে জাতপাত না থাকলেও মানুষের মধ্যে এতো জাতপাত কেন
ঘাস খাওয়া পাঠা দেখতে দেখতে গভীর ভাবনায় তলিয়ে যায় সিধু
৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
জাত পাত নিয়ে দারুণ একটা ম্যাসেজ দিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার একটা পোষ্ট পড়লাম ভালো লাগছে আপু।
শুভ কামনা রইল।
ফয়জুল মহী
ভালো, উপভোগ্য পড়া।
সুপায়ন বড়ুয়া
জাতহীন পাঠা নিয়ে
ম্যাশেজটা ভালো লাগলো।
করোনা ও আজ জাত পাত মানছে না
ডাক্তার বাঁছাই করার ও সুযোগ দিচ্ছে না।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
“দিন আনে দিন খায় লোকদের জন্য এই শব্দ প্রাণের প্রতিশব্দ নতুন করে বাঁচার ঘণ্টা”
——–চমৎকার উক্তি