আমার সাথে তোলা সেলফি এবং প্রথম দেখার অনুভূতি নিয়ে প্রথম যিনি সোনেলায় পৃথিবীটা কমলা লেবুর মতন গোল শিরোনামে পোস্ট দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন তিনি হচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় ব্লগার, পাখি বিশারদ শামীম চৌধুরী ভাই। তিনি সেখানে লিখেছিলেন-

“তৌহিদকে দেখে কিছুক্ষন বোবা হয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম এটাও কি সম্ভব? ভার্চুয়াল জগতে দেখা ও ভার্চুয়াল কথা। ভার্চুয়াল কি করে রিয়েল হয়? নানা প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখন তৌহিদের স্বভাব সূলভ হাসি, মিষ্টি কথা ও ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বড় ভাই হিসেবে আমাকে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও বিশ্বাস করার প্রবনতা দেখে আমার মনে হলো আমরা একই মায়ের গর্ভে দুই ভাই।” 

পেছনের গল্প-

তিনি যেদিন আমাকে মেসেঞ্জারে প্রথম ফোন দিয়েছিলেন-

– তৌহিদ ভাই কেমন আছেন?

– এইতো ভাই আছি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন ভাই?

– আর বলবেননা, খুব পেরেশানিতে আছি। সোনেলার ঝরে কোনদিকে যাব, কার কাছে যাব বুঝতে পারছিনা। সে কারনেই ফোন দিলাম।

– ভাইজান, আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। তাই প্রথমে তুমি করে বলুন তারপর কথা বলবো।

– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া। এখন বলতো আমি কি করি। বিভিন্নজন আমাকে নানান কথা বলছে, আমি তোমাকে ফোন দিলাম কি করা যায় আসলে! আমাকে বলো। আমি সত্যিই কনফিউজড!

– বললাম, ভাইজান ইনবক্সে আপনার নাম্বার দিয়ে রাখুন আমি কল দেবো। আমার কল দেয়া হয়নি আর।

এরপরে তার সাথে ৪৭ মিনিট কথা হয়েছে সেদিন। আমার কাছে সব শুনে তিনি আশ্বস্ত হয়ে বলেছিলেন- যাক এইবার মনটা হালকা হলো তৌহিদ। ভাগ্যিস তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম। আমি তোমাদের সাথেই আছি।

এর ৩ মাস পরে-

উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়েছে। দেশের সব জায়গায় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি সাথে ঝড়োবাতাস। সে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে শামীম ভাই এসেছেন পদ্মার ধারে পাখিদের ছবি তোলার জন্য! আশ্চর্য লোক একজন, মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেনা আর তিনি সদলবলে ৩০০ কি.মি পথ ভ্রমণ করে চলে এসেছেন দুষ্প্রাপ্য পাখিদের ছবি ফ্রেমবন্দী করতে! ভাগ্যক্রমে আমিও সে জেলায় ছিলাম সেদিন। ফেসবুকে তার মাঠা গলাধঃকরণের ছবি দেখেই ফোন দিলাম।

– আসসালামু আলাইকুম

– ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে বলছেন?

– ভাই, আমি তৌহিদ।

– আরে! কি আশ্চর্য! তৌহিদ তুমি কোথায়?

– ভাই, আপনি কই?

– এইতো হোটেলে।

– কোন হোটেল?

– হোটেল মুন।

– তাকে বিস্মিত হবার সুযোগ না দিয়েই বললাম, আচ্ছা থাকেন আমি আসছি ২০ মিনিটের মধ্যে।

সেদিন বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তিনি আমার জন্য নিজেই দাঁড়িয়ে ছিলেন হোটেলের নীচের গেটে। এরপরে কোলাকুলি। তার রুমে গিয়ে শুধু পাখি নিয়েই কথা। আমি অবাক বিস্ময়ে শুনছিলাম সেসব। পাখি বিষয়ে তার জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এরপর নীচে নেমে এসে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যুৎ হোটেলের হালিম দিয়ে নানরুটি, টং দোকানের চা খেতে খেতে আমিও মন খুলে অতীত জীবনের কত যে কথা বলেছি তার হিসেব নেই। অথচ সেসব কথা আমার অনেক বন্ধুরাও জানেনা। প্রথম দেখাতেই মানুষটি আমাকে সত্যিকারের বড়ভাইয়ের মত আপন করে নিয়েছিলেন সেদিন।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তার সাথে আমার আন্তরিকতা বেড়েছে ঝড় আর বাদলার দুর্দিনের দিনগুলোতে, এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে টাইপ অবস্থায়। তিনি সোনেলাকেও নিজের পাখি এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখাগুলো দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন।

আজ সোনেলার জনপ্রিয় ব্লগার শামীম চৌধুরী ভাইয়ের জন্মদিন।

ব্লগার শামীম ভাই আমার কাছে খুব প্রিয় এবং সম্মানিত একজন ব্যক্তি। ভার্চুয়ালি পরিচিত হয়েও অতি অল্প সময়ে তিনি আমাকে যতটা আপন করে নিয়েছেন আমার জীবনে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনাই শুধু মনের গভীরে এতটা স্থান করে নিতে পেরেছেন। শামীম ভাই হচ্ছেন তেমনই একজন মানুষ।

এই যে শামীম ভাই! আপনি কি জানেন- আমি আদর করে আপনাকে পাখি ভাই বলে ডাকি? রাগ করলেও কিছু করার নেই। এক চূটকিতেই আপনার রাগ ভাঙাতে আমিও জানি। আর হ্যা, পাখি নিয়ে আপনার ক্লিক করা সকল ছবির বিস্তারিত লেখা সোনেলায় চাই। কিছুদিন আগে বাঘের সাথে থেকে এলেন। সেই গল্পের বিস্তারিত তো এখনো জানাই হলোনা!

প্রিয় শামীম ভাই, কখনো যেন শুনতে না হয় আপনি ভালো নেই। করোনার এই বিষণ্ণ সময়ে সোনেলা পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আপনি সবসময় ভালো থাকবেন ভাইজান। তা না হলে পাখিদের গল্প আমাদের কে শোনাবে বলেন?

৯২৯জন ৭৮৬জন

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ