
একটা মেয়েকে সবাই পুড়াতে নিয়ে যাচ্ছে স্বামীহারা নারীর কষ্ট কেও বুঝছেনা সবাই আছে মৃত্যু উৎসবের আনন্দে
স্বামীহারা মেয়েটা কি স্বামীর মৃত্যুর জন্য দুঃখ করবে নাকি নিজের জ্বলন্ত মৃত্যুর জন্য আতঙ্কিত হবে বুঝতে পারছেনা
স্বামীকে এত ভালোবাসতো স্বামীর দীর্ঘআয়ুর জন্য সিঁথিতে সিঁদুর লম্বা করে টানতো সেই স্বামী আজ নেই তার তিন কূলে কেও নেই
সেই দুঃখ আজ তার বড় দুঃখ হবার কথা ছিল কিন্তু সেই কাটা গায়ে নুনের ছিটা ছড়ানোর মতো তার মনে দগ্ধ হবার মৃত্যু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে
মনের মধ্যে এ কেমন দ্বন্ধ স্বামীর শোকে বিহ্বলে মৃত্যুর আতঙ্ক
কিছুদিন আগে মেয়েটা রুটি বানাতে গিয়ে হাতের আঙুলে আগুনের ছেকা লেগেছিলো শরীরের ভিতরে যেন স্ফুলিঙ্গের মতো দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল চামড়া পোড়া গন্ধটা নাকে লেগেছিলো আগুনপোড়া আঙুলে হলদে রেখা পড়ে গিয়েছিলো তা দেখেই মেয়েটা শিউরে উঠেছিল
আর আজ তার সারা শরীর পুড়ে যাবে তন্ত্র স্নায়ুতন্ত্র সব তন্ত্র পুড়ে অনুভূতিহীন ছাইভস্ম হয়ে যাবে
যে হাতে শশুর বাড়ির সবার জন্য ভাত বেড়ে দিতো যে হাতে ছিল ভালোবাসার মায়া স্নেহের মমতা সবার জন্য দায়িত্বের কর্ময়তা সেই হাত পুড়ে অঙ্গার হবে আজ
যে হাতের রেশমি চুড়ীর ছন ছন শব্দে স্বামীর মন চঞ্চল হতো ভালোবাসার তরঙ্গ তরঙ্গায়িত হতো সেই হাত আজ নীরব ভষ্মে ভস্মীভূত হবে
যে হাত পরম ভক্তিতে শশুর ভাসুরের পদস্পর্শ করতো সেই হাত আজ শশুর ভাসুরের প্ররোচনায় দগ্ধ হবে
যে হাতে ছিল এত মায়া এত মমতা ভালোবাসা সে হাত অগ্নিগর্ভে বিলীন হবে
যে যোনি শপথ নিয়েছিল এ বংশ বৃদ্ধি করার সে বংশের হাতেই এ শরীর মাতৃত্বের শিরা উপশিরাগুলো ভস্মীভূত হবে
সবাই মৃত্যু আনন্দের আনন্দ উল্লাস ফেটে পড়বে বোল হরি হরি বল জয় সতী মায়ের জয় জয় সতী মায়ের জয়
এ কেমন ধর্ম বাবা ভাই কেও আপন না সবাই করে অধর্ম শবযাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে
একটা মৃত শব অন্যটা জীবন্ত শব
সবার মৃত শবর থেকে জীবন্ত শবর প্রতি আগ্রহ বেশি জীবন্ত শবর আফিম ভ্যাং চেতনালোপি মাথায় এলোমেলো কথা গুলো ভাসছে
সবাই শশানে উপস্থিত চারিদিকে ডাক ঢোলের বিভিষীকাময় শব্দ অন্য সময় এই শব্দগুলো ভালো লাগতো পূজার সময় আলতি নাচে মেয়েটি নাচতো আজ এই শব্দই তার কানে বাজছে মৃত্যুর বিভীষিকা
তার স্বামীকে শুইয়ে দিয়া হয়েছে চিতায় তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে চিতায়
নিজের স্বামীর পা জড়িয়ে কাল যে মানুষটা জীবত ছিল আজ তার সাথে সেও মৃত্যু পথযাত্রী
আগুনের গর্জন চিতার নিচ থেকে কানে বাজছে সেই সাথে মৃদু মৃদু তপ্ত আচ অনুভূত হচ্ছেধীরে ধীরে আচের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে
মৃত মানুষের অনুভূতি নেই কিন্তু জীবন্ত মানুষের অনুভূতি আছে সেই অনুভূতি ছড়িয়ে অসহ্য হয়ে উঠছে আগুনের তপ্ত আচ
হঠাৎ চিতা থেকে লাফ দিয়ে মানবী দাঁড়িয়ে পড়লো সজোরে কয়েকটা লাঠির বাড়িতে চিতার উপর উপড়ে পড়লো
আগুনের লেলিহান শিখা তার চুল স্পর্শ করলো চুলপুড়া গন্ধ নাকে লাগতে লাগতে দেখলো তার দীর্গ কালো চুল আগুনের গ্রাসে কমে যাচ্ছে তার শাড়িতে আগুন লেগেছে পায়ের হাটু পর্যন্ত পুড়ে গেছে
আবারো সজোরে লাফিয়ে উঠলো চিতা থেকে আবারো ঘাতক লাঠি চারিদিকে মৃদু হয়ে আসছে মানুষের কোলাহল তপ্ত দগ্ধ শরীরে অসহ্য যন্ত্রনায় তার চোখ বুজে আসছে
যন্ত্রণাকর এই মৃত্যুকে বাহিরের নির্দয় সমাজ থেকে আপন লাগছে
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে বারবার আৎকে উঠেছি। কি বিভৎস! এসব তো মানবসৃষ্ট নিয়মনীতি। মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে নিয়ম তৈরি করে। ঈশ্বর এসব করতে কখনো বলেনা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো
মুন
ধন্যবাদ সবাইকে সব সময় আপনাদের উৎসাহ ও সমর্থন চাই
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সবকিছু। হিন্দু ধর্মে এগুলো মানুষের সৃষ্ট নিয়ম ধর্মের দোহায় দিয়ে যুগ যুগ কে সমাজে চলে আসছে।
শুভ কামনা রইল।
মুন
ধন্যবাদ সবাইকে সব সময় আপনাদের উৎসাহ ও সমর্থন চাই
সুপায়ন বড়ুয়া
সতীদাহ প্রথা কোন এক কালে ছিল
এই বিভৎস্য আত্মনাদে ওরা উৎসবে মাতে
আর নারী জলন্ত চিতায় পুড়ে মরে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
মুন
ধন্যবাদ সবাইকে সব সময় আপনাদের উৎসাহ ও সমর্থন চাই
ফয়জুল মহী
নিপুণ ভাবনার নান্দনিক উপস্থাপন
মুন
ধন্যবাদ সবাইকে সব সময় আপনাদের উৎসাহ ও সমর্থন চাই
সুরাইয়া পারভীন
সহমরণের বিভৎস বর্ণনা চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ধর্মান্ধরা ধর্মের দোহাই দিয়ে কতো অত্যাচার করেছে সব হারানোর নিঃস্ব মানুষদের
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভাবনাপঠে সতিদাহ প্রথার উপস্থাপন।
এস.জেড বাবু
কতটা বর্বর ছিলো মানুষ এবং তাদের রীতি!
ভয়াবহ।
আজও সভ্যতার এই চুড়ান্ত লগ্নে কখনো পত্রিকার পাতায় বা নিউজের হেডলাইনে দেখি তেমন পোড়ানোর মতো ভিন্ন গল্প-
মনে হয়- বর্বর এখনো আছে আমাদের আশেপাশে-
আজও মানুষ জ্বলে জীবন্ত।
চমৎকার লিখেছেন।
ইঞ্জা
প্রাচীনকালের বর্বর পদ্ধতি ছিলো সীতাদাহ, সেই কষ্টকর অনুভূতি আপনি আবার ফিরিয়ে আনলেন এই আধুনিক পৃথীবিতে কলমের খোঁচাতে, সত্যি আমি যেন অনুভব করছি সেই চিতারোহণ।
খুব ভালো মানের লেখা দেন আমি, সত্যি মুগ্ধ আপনার অসাধারণ লিখণে।
হালিম নজরুল
চমৎকার বিষয় নির্বাচনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের ভাগ্য ভালো যে এই বর্বরতাকে আমরা দেখছি না আর,
সহমরণের কষ্টকে খুব ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
লেখার বিষয়বস্তু চমৎকার আর লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মনে হয় চোখের সামনে ঘটছে সবকিছু। আপনি অসম্ভব ভালো লেখেন। নিয়মিত আপনার লেখা চাই।
মুন
আমাদের বংশে অনেকেই সতী হয়েছে শেষ সতী হয়েছিল আমার ঠাকুর মার নানী সেটাও বহু আগে প্রায় ১৮৬০ হবে