
মা…..//
নিজ ভাবনা থেকে–পর্ব(৩)
আমার ওপরে খাবার দাবারে বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়েছিলো সম্ভবনার শুরু থেকেই।কন্যা ভূমিষ্ঠ হবার পরে বেড়ে গেলো আরো বহুগুণ। আম্মা’র কাছে থাকাকালীন সময়ে ত্রাহি অবস্থা করে ছেড়েছেন।এমনকিছু খাওয়া যাবে না, যা কিনা বেবির ওপর এফেক্ট করে।মা যা খাবে তাই প্রভাব পড়বে বাচ্চা’র যেহেতু বাচ্চা দুগ্ধজাত নবজাতক। ২৪ দিন বয়সে মেয়ের দাদা ইন্তেকাল করলেন নাতনী মুখ না দেখেই।প্রবাদ/প্রচলন ভেঙে ঘর ছাড়তে বাধ্য। শিশু জন্মের ৪১ দিনে শিশুসহ প্রসূতি মা ঘর ছেড়ে বেরোনোও অঞ্চলভিত্তিক নাকি জানিনা প্রথা জারি( কেউ মানে, কেউ মানে না)। আমি কাঠের পুতুল! মানতে বাধ্য! মেয়ে লালন পালনে আমার বিষেশ কোনো ভূমিকা রাখতে হয়নি কেবল আমার অনুভূতি ছাড়া। আম্মা’র কলিজার টুকরা হয়ে গেলো আসলের চেয়ে সুদ। নানি নয় যেন নিজ সন্তানের মতো অভিজ্ঞতার সবটুকু ঢেলে নাতি পালছেন। খাবার সময় হলেই শুধু আমার কাছে দিয়ে যান।পাক্কা ৬ মাস পর ঢাকা ফিরলাম মেয়েকে নিয়ে। ঢাকা ফিরতে হবে জানার পর থেকেই প্রচন্ডরকম হৃদকম্প বেড়ে গিয়েছিলো আমার। কিকরে মেয়ে সামলাবো? দুই দেবর সহ আমি সাহেব দেড় রুমের বাসায় থাকি। কাজের বুয়া তিনবেলা কাজ যদিও করে দিয়ে যান! মেয়েকে গোসল করানো, ন্যাপি চেঞ্জ, পরিস্কার করা, কাঁথা কাপড় ধোয়া এই ৬মাসে কিচ্ছু দেখতেও হয়নি, করতেও হয়নি।এগুলো সব এখন আমাকে করতে হবে। ভাবতাম আর কাঠ হয়ে যেতাম। আম্মা, চাচি সমানে নসিহত করতে লাগলেন কি কেমন করে যত্ন নেবো মেয়ের। মাথার মধ্যে অন্যচিন্তা। সহযোগীতা বলতে পাশের ফ্লাট এবং আত্মীয় জা আছেন অনেক।
একা একা মেয়ে নিয়ে আমার সময় কাটে ব্যস্ততায়।মেয়ের বাবা, চাচারা বেরিয়ে যায় সকাল আটটার মধ্যে। এখন ভাবতে অবাক লাগে। কি করে সামলেছি সেইসব দিনগুলো? কিছু অভ্যাস গড়ে উঠছে মেয়ের আমার টের পাচ্ছি। যে কারো কাছে যায় হাত বাড়ালেই, হঠাৎ হঠাৎ কারো কারো কাছে মোটেই যায়না।জোড় চিৎকারে কেঁদে ওঠে।আমার কোলে সে আমার চুল মুঠোয় ধরে রাখে, বুকের কাছে কাপড় খামচে ধরে রাখে। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলে মুখ দিয়ে আঁ উঁ শব্দ করে ক্রমাগত।যার অর্থ আমি কেন তাঁকে প্রায়োরিটি দিচ্ছিনা।কেন অনর্গল তাঁর সাথে কথা বলছি না। ঘুমাবার সময় হলে তাঁকে ফিডার দিয়ে বালিশে শুইয়ে পাশবালিশ দিয়ে দিলেই একা একা খেতে খেতে ঘুমিয়ে পরে। ঘুম থেকে জেগেই চোখ খুলে মা’কে দেখতে না পেলে মেয়ে আমার আতংকে কেঁদে ওঠে। ফিডারের দুধের পাশাপাশি সুজি দিতে শুরু করেছি……. চলবে
১৯টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মা চাচী ছাড়া দুধের সন্তান সামলানো খুব কষ্টের। আপনি সেই কঠিন ধাপটি পার করলেন। অভিনন্দন আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
বন্যা লিপি
মন্তব্যে আন্তরিক ধন্যবাদ ছোটদিভাই।ভালো থাকবেন।সাবধানে থাকবেন।
ফয়জুল মহী
এক রাশ মুগ্ধতা । এক রাশ ভালো লাগার ভালোবাসা
বন্যা লিপি
আন্তরিক শুভেচ্ছা জানবেন। ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
মা, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি, শুধু মাত্র মাই জানেন তার কত কিছু ত্যাগ করতে হয় সন্তান জন্ম দিয়ে।
মা তোমায় সালাম।
আপু লেখাটি পড়ছি আর আমার মরহুম আম্মার কথা ভাবছি।
খুব ভালো লাগছে পড়তে।
তা আপনি কি ঢাকাতে, কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো?
বন্যা লিপি
ভাইজান, ঢাকাতেই বাসায় আছি সব।আলহামদুলিল্লাহ্ এখন পর্যন্ত ভালো আছি সবাই। দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন সাবধানে থাকবেন।
ইঞ্জা
আপনারাও সাবধানে থাকবেন আপু, দোয়া রাখবেন।
জিসান শা ইকরাম
নিজের ঐ সময়ের চিন্তা, অনুভুতি, অভিজ্ঞতাকে খুব নিখুত ভাবে বর্ননা করছো, মনে হচ্ছে যেন সেদিন গুলোয় ফিরে গেলাম।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
মা বলে কথা
মেয়ের যত্ন কম হবে একথা যায় না ভাবা।
মা-মেয়ের শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
যতো পড়ছি ততোই নিজের মেয়ের ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়ছে। এতো সুন্দর করে অনুভূতি গুলো প্রকাশ করছেন। আমি মুগ্ধ
অসাধারণ লিখেছেন আপু
তৌহিদ
আপু আগের পোস্টগুলি আগে পড়ে আসি।
বন্যা লিপি
আচ্ছা, ভাই পড়ে আসেন।অনেকদিন পর আপনাকে দেখা গেলো😊
তৌহিদ
আর আপনাকেতো দেখিই না 😭
বন্যা লিপি
😥😥😥ইদানীং আপনার ঘরে শক্ত মার্কা মার্বেল পাথর। কেমনে দেখবেন? উঁকি মারি ঠিকই ভাই, কিছু কওয়ার ভাষা পাইনা😂😂
রেহানা বীথি
নিজের সেই কষ্টের দিনগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে আপু! ভীষণ ভালো লাগলো পড়তে। ভালো থাকবেন সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
পড়তে পড়তে নিজের এই সময়ের দিনগুলোতে হারিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দুজনেরই মা-ভাগ্য দারুন। মেয়ে জন্ম দেয়ার পর তারাই সামলেছেন সব। শুধু খাওয়ানোর সময় ছাড়া সামনেই আনেনি। আমার মা বলতো ” তুই কোলে নিবি কিভাবে? তুইতো নিজেই এখনো কত ছোট ” 🙂 আসলেই তাই, আমি কেন জানি ঠিক মতো কোলে নিতে পারতাম না। মনে হতো এই বুঝি পড়ে যাবে!! হাত থরথর করে কাঁপতো। মা-বাবা, ছোটো ছোট ভাইবোনই সব করতো। তাদের চোখের মণি ছিলো আমার জন্ম দেয়া পুতুলটা। আমি একটু দূর থেকে দেখতাম, আর অবাক হয়ে ভাবতাম, এই শিশু পরীটা আমার!
কত কথা মনে করিয়ে দিচ্ছো। ভালো লাগছে তোমার সাথে তোমারই মতো নিজের দিনগুলোতে ফিরতে পেরে।
খুব ভালো থেকো বন্যা,
ভালবাসা সব সময় নিও ❤❤
প্রদীপ চক্রবর্তী
নিখুঁত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ দিদি।
মা মাতৃত্ব ভালোবাসা এক অনন্য মাধুর্যময়।
.
ভালো লাগলো দিদি।
শুভকামনা।
হালিম নজরুল
মা -সন্তানের বন্ধনের মত দ্বিতীয় কোন সম্পর্ক হতে পারে না।
বন্যা লিপি
সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি কড়জোড়ে।
কোথাও তেমন করে সময় করে সময় দিতে পারছিনা। জবাব দেবার জন্য ব্লগে ইন করেই আবার বেরিয়ে যেতে হচ্ছে নানান প্রয়োজনে।
লেখা পড়ি হয়তো মন্তব্য করার সময়টাই করে উঠতে পারিনা। সাহায্যকারী ছাড়া আমার একটা দিনও চলেনা। সেখানে আজ কতদিন ধরে সমস্তটাই নিজঘাড়ে বইতে হচ্ছে। আশা করি বুঝবেন সবাই।
সবার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা রইলো। সাবধানে থাকবেন সবাই নিজ নিজ অবস্থানে। ভালো থাকুন,সুস্থ্য থাকুন সবাই। সৃষ্টিকর্তা সহায় হোন আমাদের সকলের…….আমিন।