
অনিক ধীরে চোখ খুললো, কিন্তু চোখে প্রচন্ড আলোর ধাক্কা খেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো, সাথে সাথে ওর মুখের উপর বালতি ভর্তি পানির ঝাপটা খেয়ে মাথা ঘুরালো একদিকে, সাথে সাথে গুঁগিয়ে উঠলো ঘাড়ের ব্যাথায়।
চোখ খোল ইউ বাস্টার্ড (ইংরেজিতে) বলে কেউ গালি দিয়ে উঠলো।
অনিক ধীরেধীরে চোখ খুলে দেখতে চাইলো, মাথা কাজ করছেনা ওর, ও কোথায় তাও বুঝতে পারছেনা, কেউ একজন ধরাম করে ঘুষি মারলো ওর পেটে, এতেই ওর বুকের সব বাতাস বেড়িয়ে গেলো, মুখ বাঁধা থাকায় নাক দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
হাত পা বাধা, চেয়ারে বসিয়ে মারছে ওরা, অনিক মাথা ঝাড়া দিয়ে চোখ খুললো, সামনেই বসে আছে চ্যাং।
চ্যাং দুর্বোধ্য ফিলিপিনো ভাষায় কিছু একটা বললো, একজন এসে অনিকের মুখ খুলে দিলো।
তোমরা আমাকে মারছো কেন, অনিক চ্যাংকে জিজ্ঞেস করলো।
তোমাকে যে মেরে ফেলিনি এখনো সেই অনেক, চ্যাংয়ের শ্লেষাত্মক জবাব।
কিন্তু কেন?
চ্যাং উঠে এসে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চর মেরে বললো, তুই হারামজাদা জানিস না, ন্যাকা সাজছিস?
এখন বল তোর সাথে আর কে কে জড়িত?
অনিক বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো, কে জড়িত, কিসে জড়িত?
বুঝলাম তুই সহজে বলবিনা, এখন আমার লোক তোর প্রতিটি নক তুলে ফেলবে, তোকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হবে, তোকে এতো অত্যাচার করবে ওরা, তুই বারবার মৃত্যু কামনা করবি, কিন্তু তোকে আমরা সহজে মারবোনা, এই ওর নখ তোলা শুরু কর।
একজন প্লাস নিয়ে এসে অনিকের পায়ের নখ তোলা শুরু করতে গেলে আরেকজন মুখে টেপ লাগিয়ে দিলো।
অনিকের নখ টেনে খোলার সময় অনিকের পুরা পৃথীবি যেন ঘুরে উঠলো, গুঁগিয়ে চিৎকার করতে চাইলো।
একজন এসে মুখের টেপ খুলে দিতেই অনিক চিৎকার করে বললো, আমি কিছু করিনি, আমাকে যেতে দাও।
আগে বল ফিলিপাইনের একশনে কারা ছিলো, চ্যাং আবার প্রশ্ন করলো।
আমি জানিনা।
আবার মুখে টেপ লাগিয়ে আরেকটা নক টেনে ছিড়ে ফেললো, অনিক চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু টেপের কারণে গোঁগানোর মতো শব্দ হলো, এরপর জ্ঞান হারালো।
জ্ঞান ফিরলে অনিক চোখে কিছু দেখলোনা, কিছু সময় পর চোখ সয়ে এলে বুঝতে পারলো অন্ধকার এক কক্ষে ওকে ফেলে রাখা হয়েছে, অনিক উঠে দাঁড়াতে গেলো, পায়ের ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।
বুঝতে চেষ্টা করলো ও কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলো, হাত ঘড়িতে দেখতে চাইলো কয়টা বাজে, হাতে ঘড়ি নেই, সাথে সাথে পরনেও কাপড় নেই, সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ফেলে রাখা হয়েছে ওকে।
ছায়া মেইন রোডে এসে টেক্সি পেলো, টেক্সিতে উঠে ঠিকানা বলে চুপচাপ বসে আছে, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তেই ডান হাত দিয়ে মুছলো।
মনে মনে বলছে, আমাকে ক্ষমা করতে পারবেনা জানি কিন্তু জেনে শুনে তোমার ক্ষতি করতে পারবোনা আমি, আমি এতটুকু স্বার্থপর হইনি এখনো, আবার চোখ মুছলো ও।
তোমাকে বললে তুমি মানতে না, আমি জানি, আমি জানি তুমি মানতে না, তুমি যে সুপার হিরো কিন্তু যেখানে তোমায় সন্তানের সুখ দিতে পারবোনা সেখানে কিভাবে বলি আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি?
সেলফোনে কল হচ্ছে শুনে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো আফরিনের কল, ছায়া সাউন্ড অফ করে দিয়ে ব্যাগে পুরে রাখলো।
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
মিস, হেই মিস।
ছায়া চমকে উঠলো।
টেক্সি ড্রাইভার বললো, তোমার ঠিকানায় এসে পড়েছি।
শূন্য চোখে বাইরে তাকালো ছায়া, এরপর ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলো।
বুকটা হাহাকার করছে আজ, ও জানে আজ ওর প্রিয় মানুষটিকে হারালো, বড় এক নিশ্বাস ফেলে লিফটে উঠে পড়লো, চোখ মুখ ভালো করে মুছে নিলো।
ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেল চাপ দিলো, কিছু সময়ের মধ্যে দরজা খুলে দাঁড়ালেন অনিকের মা, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, এসেছো, আসো আমি চুলায় চা চড়িয়েছি, তুমি ঝটপট ফ্রেস হয়ে আসো।
জ্বি, বলেই ছায়া এগিয়ে গেলো নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।
ফ্রেস হয়ে চা খেতে বসলো ছায়া, সাথে বাকিরাও বসলো, সবাই টুকটাক গল্প করছে চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে, ছায়া চুপচাপ শুধু চা খেয়ে উঠে গেলো।
কি ছায়া কিছু খেলেনা, অনিকের মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
না আন্টি, কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা।
শরীর কি খারাপ?
না আমি ঠিক আছি।
এক কাজ করো, তুমি একটু রেস্ট করো।
জ্বি, বলেই ছায়া নিজ রুমের দিকে এগুলো, রুমে এসে দেখলো ওর সেলফোনে রিং হচ্ছে, সেলফোনটা নিতে নিতেই রিং অফ হয়ে গেলো, এগারোটা মিস কল আফরিনের, দেখে অবাক হলো ছায়া, দ্রুত কল ব্যাক করলো।
একটা রিং হতেই আফরিন রিসিভ করে বললো, হ্যালো ছায়া?
হাঁ আফরিন বলো।
আমি অনেক্ষণ ধরে কল করছি তোমাকে।
আমি ফোনের পাশে ছিলাম না।
অনিক কোথায়, বাসায় ফিরেছে কি?
না আসেনি।
আমি ওকে কল করেছিলাম, ও পার্কস্ট্রিটে ছিলো, কথা বলতে বলতেই হটাৎ কথা বন্ধ করে দিলো, ফোন কাটেনি কিন্তু কথা বলছেনা।
তো আমি কি করবো?
না না, ভাবলাম হয়তো ও ফিরে এসেছে, চিন্তায় পড়ে গেছি।
চিন্তার কি আছে, হয়ত কোথাও আছে, ফিরে আসবে।
হাঁ তাতো ফিরে আসবে, তা তুমি কেমন আছো?
আছি মোটামুটি, বড় এক নিশ্বাস ফেললো ছায়া।
ছায়া কি হয়েছে?
কি হবে?
তুমি কেমন যেন সাউন্ড করছো, শরীর ভালো তোমার?
না না তেমন কিছু না, আসলে টায়ার্ড ফিল করছি হয়ত, তুমি ভালো আছো, আন্টি কেমন আছে?
হুম আমরা দুজনেই ভালো আছি, তুমি আজ রেস্ট নাও, অনিক ফিরলে কল দিও।
ওকে।
তাহলে রাখছি, বাই।
বাই।
……… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৯টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আজও আমি প্রথম 🙂
ইঞ্জা
গত পর্বে কমেন্ট পাইনি আপু। 😣
জিসান শা ইকরাম
এমন ভাবে শুরু করলেন যেন কোনো থ্রিলার মুভি দেখছি।
অনিকের উপর টর্চারের বর্ননা নিখূত হয়েছে।
ছায়া তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে অনিকের জীবন থেকে চলে যাওয়ার?
কার মনে কি নিয়ে ভাবনা তা অন্য কেউ জানছে না, এটাও বেশ ভালো লাগছে।
ছবিটা কিন্তু অনেক মানান সই হয়েছে।
অপেক্ষা পরের পর্বের।
শুভ কামনা ভাইজান।
ইঞ্জা
আমি মাসুদ রানা গল্পের ভক্ত, তার কিছুটা এইখানে আনার চেষ্টা করেছি ভাইজান।
ছায়ার মনের খবর কিছু কিছু ছড়িয়ে দিচ্ছি পাঠকের মনে কিন্তু পাঠক মেসেজটা ধরতে পারছেনা দেখে অবাক হচ্ছি, পুরোনো ব্লগাররা থাকলে এতক্ষণে ধরেই ফেলতো। 😉
আমি আগেও চেষ্টা করেছি যেন গল্পের সাথে মানায় এমন ছবি সংযুক্ত করতে, নিশ্চয় খেয়াল করেছেন?
পাশে থাকবেন ভাইজান, ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
লেখা পড়ে ভালো লেগেছে।
ইঞ্জা
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
এতো পৈশাচিক নির্দয় কায়দায়
অত্যাচার টা পড়তে গিয়ে শিহরিয়ে উঠছিলাম।
নিখুত বর্ণনা।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
একশন মুভি এবং গল্পের ভক্ত আমি, ওরা আমার শিক্ষক দাদা, বাকিটা বুঝে নিন। 😉
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গা শিউরে ওঠার মতো পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
ইঞ্জা
লেখক হিসাবে এইখানেই আমার সার্থকতা আপু, পাঠক যদি আনন্দ না পাই থাহলে আমার লেখা পড়বে কেন?
অক্লান্ত ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। 😊
ছাইরাছ হেলাল
এবারে ঠিক ঠাক জমে উঠেছে, দু’দিকেই।
ধীরে ধীরে চালাবেন, নো হুঠ-হাঠ।
ইঞ্জা
হুট হাটের বিষয় নয় ভাই, ভাবছি কেঁচে গুন্ডুস না হয়।
এস.জেড বাবু
অগণিত কি ফিরবে ?
ওরে আল্লাহ
যে ভয়ংকর টর্চারের বর্ণনা দিলেন- একদম যুত্সই।
পড়ছিলাম আর কল্পনায় ভাসছিলো।
পরের পর্ব জলদি চাই
শুভকামনা
ইঞ্জা
দ্রুতই দেওয়ার চেষ্টা করবো ভাই, দোয়া রাখবেন, ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
আগে একটা পর্বও পড়া হয়নি
সময় করে প্রথম থেকে পড়বো ইনশাআল্লাহ
ইঞ্জা
পড়ে নিলেই মজা পাবেন আপু, সাথে থাকবেন।
হালিম নজরুল
পায়ের আঙুল তুলে ফেলার কষ্ট ভুলতে পারছি না
ইঞ্জা
নখ টেনে তুলে ফেলাটাই যে খুব কষ্টের ভাই, এ ভুলার নয়।
ধন্যবাদ অবিরত।
রেহানা বীথি
অত্যাচারের ভয়াবহতায় শিউরে উঠলাম ভাইয়া। চমৎকার গতি লেখার।
ইঞ্জা
অত্যাচার যখন মাফিয়ারা করে, তখন তার ভয়াবহতা সীমাহীন হয় আপু, পাশে পেয়ে খুশি হলাম।
ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনিকের উপর বর্বরোচিত অত্যাচারের বর্ণনা এত ভয়ংকর ভাবে তুলে ধরেছেন যে, পরের লাইনগুলো আর মাথায় ঢুকছিলো না। কি করলেন ভাইজান ? এই ছিলো আপনার মনে! নখগুলো উপ্রে না ফেলে শান্তি পেলেন না? খুব খারাপ কাজ করলেন।
অত্যাচার করতে করতে নিজেই অত্যাচারী হয়ে গেছেন। কতগুলো বানান ভুল করেছেন সেই খেয়াল আছে? এগুলো ঠিক করবে কে?
ইঞ্জা
হায় হায়, বানান ভুল করছি! 🤔
মাফিয়াদের অত্যাচার নাকি খুবই চরম হয়, স্বাভাবিক ভাবেই গল্পের খাতিরে এমন করেই লিখতে হলো আপু, খুশি হলাম মন্তব্য পেয়ে কিন্তু গল্পের মেসেজটা কেউ ধরতে পারলোনা দেখে অবাক হলাম।
সুরাইয়া নার্গিস
আমি নিয়মিত পর্ব গুলো পড়ি তবে আজকে অনিকের উপর অত্যাচারটা দেখে নিজেও কষ্ট পেলাম কারন এটা গল্প হলেও ভাইয়া প্রতিটা চরিত্র এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে আমার কাছে বাস্তব মনে হয়েছে অনিকের কষ্টে আমিও মর্মাহত হলাম। গল্পে কিছুটা পরিবর্তন আসছে দেখে আরো ভালো লাগলো, অনিকের ভাগ্যে পর্ববতীতে কি আসবে দেখার অপেক্ষায় রইল।
ভাইয়া পরের পর্ব লিখুন পড়ার তর সইছে না, অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
ইঞ্জা
এমন মন্তব্য একজন লেখকের জন্য খুবই সম্মানের আপু, সত্যি আপ্লুত হলাম আপনি আমার আগের পর্ব গুলোও পড়েছেন যেনে, গল্পটি এখন এমন মোরে নিয়ে এসেছি যে, এখন যেকোন সময় কিছু একটা ঘটতে থাকবে একে একে, পাশে থাকুন।
অক্লান্ত ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
মনে হলো যেন চোখের সামনে থ্রিলার মুভি দেখছি। চ্যাং ব্যাটা এই কাজ করতে পারলো?
ছায়া যে কেন বুঝতে পারছেনা তাইতো বুঝছিনা। যখন বুঝবে তখন হয়তো সময় আর থাকবেনা!!
একমুঠো ভালোবাসা যেন হাড়িয়ে না যার এদের জীবন থেকে। ভালো লাগছে পড়তে দাদা।
ইঞ্জা
দুঃখজনক হলো ছায়া কি বুঝছে না বুঝছে তা এই পর্বে আলোকপাত করা হয়েছে, কিন্তু সকল মন্তব্যদাতারা তা এড়িয়ে গিয়ে একি প্রশ্ন করছে, কিন্তু পরবর্তী পর্ব গুলোতে এইসব লিখবো কিনা তা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ভাই।
আমি আসলেই আমাদের পুরানো ব্লগারদের মিস করছি যারা লেখা খুটিয়ে পড়তো।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
মনে মনে বলছে, আমাকে ক্ষমা করতে পারবেনা জানি কিন্তু জেনে শুনে তোমার ক্ষতি করতে পারবোনা আমি, আমি এতটুকু স্বার্থপর হইনি এখনো, আবার চোখ মুছলো ও।
এটার কথা বলছেন? পড়েছিতো!! তবে কি জানেন একেকজন একেক ভিঊ থেকে মন্তব্য করেন। তাই অন্য কারো কথা জানিনা আমি পড়েই মন্তব্য করি। এতে যদি আপনার মনে হয় পুরোনো ব্লগারই ভালো ছিলো তাহলে এ গল্প আমার জন্য নয় দাদা।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
আপনি এই মন্তব্যে যারা চলে গিয়েছে তাদের উৎসাহিত করলেন!! দুঃখজনক দাদা।
ইঞ্জা
তোমাকে বললে তুমি মানতে না, আমি জানি, আমি জানি তুমি মানতে না, তুমি যে সুপার হিরো কিন্তু যেখানে তোমায় সন্তানের সুখ দিতে পারবোনা সেখানে কিভাবে বলি আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি?
এই লাইনটিতেই কি কিছুই বুঝা যায়না ভাই?
আর আমার কষ্ট থেকে বলা কথাটিতে যদি আহত হয়ে থাকেন, তাহলে সত্যি আমি লজ্জিত।
ক্ষমা করবেন ভাই।