
আকাশ সিদ্ধান্ত নিলো সে তন্বীর কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু কিভাবে আগাবে বুঝতে পারছিলো না , যদি তন্বী রিএক্ট করে! একটা সুযোগ যখন বিধাতা দিলো ক্ষমা চাওয়ার , তাকে যেভাবেই হোক ক্ষমা চাইতেই হবে। এদিকে তন্বী দীনার প্রস্তাব গুলো নিয়ে ভাবছিলো। না সে দীনার কোনো সাহায্য নিবেনা। আর আকাশকে বিয়ে করাটা হবে একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর ক্ষতি করা আর নিজের আত্মসম্মানটা বিকিয়ে দেয়া । আত্মহত্যা ‘মহাপাপ’ সেটাও করবেনা। কিন্তু সে কি করবে? চারদিকে সমস্যা আর বিপদ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে।
সে তমালের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলো। কিছু একটা তো উপায় আসতে পারে তার থেকে। ওদিকে অফিসে ওদের দুজনকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। সে রাতে তমালের সাথে সবকিছু শেয়ার করলো। তমাল বললো , ‘তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আছো। তুমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে ব্যাক করো । আপাতত বাবা-মায়ের সাথে থাকো। একটা পথ বের হবেই । আমি ও তোমার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।’ তন্বী তমালকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলো। ওদিকে খবর পেল ওর সেই কাজিন ওর বাবা-মায়ের খেয়াল রাখছে খুব ভালোভাবে। কাজিনের কথা মনে পড়তেই আৎকে উঠলো। বাড়িতে গেলেই ওর উৎপাত শুরু হবে।
দীনা আজ অনেক ভালো ভালো খাবার রান্না করলো। সবই আকাশের পছন্দের তালিকায় থাকা মেনু। টাকি ভর্তা, সরষে ইলিশ, গলদা চিংড়ির দোপেঁয়াজা, ভেজিটেবল রাইস, মাটন কড়াই, আলু বোখারার চাটনি। আকাশ খাবারের মেনু দেখে অবাক। সারা শরীরে যেন হিমবায়ু বয়ে গেল। দীনার ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। তবুও এই মুহূর্তে কিছু জানতে চাইলো না। ঝড়ের আগে যেমন থমকে যায় প্রকৃতি তেমনি মনে হচ্ছে আকাশের কাছে। না জানি আজ কি আছে কপালে!! আকাশ মাথা নিচু করে সব একটু একটু খেয়ে নিল। পাশে বসে দীনা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আকাশ যথারীতি খেয়েদেয়ে গেস্ট রুমে চলে গেল।
দীনা রুমে এসে খুব সুন্দর একটা শাড়ি পড়লো, কপালে বড় একটা সিঁদুর রাঙা টিপ দিল, দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি , ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপগ্লস, গলায় দশ ভড়ির সীতাহার , কানে ঝুমকো, মাথায় চূড় । আকাশের চোখ আজ কিছুতেই ফেরাতে পারবেনা দীনা। রুমের সমস্ত লাইট অফ করে ক্যান্ডেল লাইট জ্বালালো। জানালার কার্নিশ বেয়ে সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই আকাশ ধরফড়িয়ে উঠলো। বেডরুমে এসে দেখলো ক্যান্ডেল গুলো নিভু নিভু হয়ে প্রায় মিশে গেছে; জানালার পর্দা সরাতেই দীনার সুসজ্জিত সাজ চোখে পড়লো। অনেক দিন পর দীনাকে এমন অপরূপ সাজে দেখতে পেলো। কতক্ষণ দেখলো হুশ নেই আকাশের। একটা চড়ুইয়ের কিচিরমিচির ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। আকাশ দীনাকে ডাকতে গেলো নাস্তা তৈরি করার জন্য। হঠাৎ আকাশ চিৎকার করে উঠলো দীনার নাম ধরে। কিন্তু দীনা আজ আর ওর ডাকে সাড়া দিলো না। দিবে কিভাবে? সেতো আজ সবার ডাক শোনার ঊর্ধ্বে চলে গেছে।
১৮টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
বিয়োগান্তক পর্ব দিয়ে শেষ করলেন।
নতুন আশা সম্ভাবনা কি উকিঁ মারছে ?
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দেখি কি আশা উঁকি মারে। ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
বাপ্রে!
দুম করে মেরে দিলেন!
অপেক্ষা করি, পালে হাওয়া কোন দিক থেকে লাগে!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কেউ না কেউ এমন আত্মহননের পথ বেছে নেয় যখন সম্পর্ক গুলো প্যাঁচ লেগে যায়, ছুটাতে পারে না। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ফয়জুল মহী
আত্মহত্যা মহাপাপ। ঘৃণা আর ঘৃণা। তবুও কি আর করবে। মন খারপ হলো পড়ে দিদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ভাইয়া। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো
এস.জেড বাবু
এতো সাঁজুগুজোর পর মৃত্যূ !
মেনে নেয়া কঠিন-
আত্মহত্যা মহাপাপ সেটা তন্বী জানে / মানে।
দীনা মানলে কিছু একটা ব্যাবস্থা তো হয়েই যেত।
করুন অবস্থায় শেষ হলো এই পর্ব- আসছে দিনগুলি আগামী পর্বে হাসি আনন্দ নিয়ে আসুক।
শুভকামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। দেখি কতটুকু হাসি আনন্দ রাখা যায়! ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
নৃ মাসুদ রানা
ক্যান্ডেল গুলো নিভু নিভু হয়ে প্রায় মিশে গেছে; জানালার পর্দা সরাতেই দীনার সুসজ্জিত সাজ চোখে পড়লো।
আমার মনে হয় গল্প না লিখে এটাকে উপন্যাসেে পরিনত করলে আরও বেশি ভালো হতো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামতের জন্য। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো
হালিম নজরুল
চমৎকারভাবে দ্বিধা ফুটিয়ে তুলেছেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো। শুভ সন্ধ্যা
ইসিয়াক
পরের পর্বের অপেক্ষায়…………..
শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা ও শুভ সন্ধ্যা
জিসান শা ইকরাম
শেষ পর্যন্ত দীনা চলে গেলো না ফেরার দেশে?
তাকে বাঁচিয়ে রাখা যেতনা?
ঘটনা কোন দিকে গড়ায় অপেক্ষা করি জানার জন্য।
শুভ কামনা ছোটদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এটা হয়তো বিধাতার প্রতিশোধ আকাশের জন্য , সে একদিন তন্বীকে একা করে দিছিলো আজ সে নিজেই একা হয়ে গেল। ধন্যবাদ দাদা ভাই
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লেখা আপু, শুভ কামনা রইল
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য