
চিঠি – পর্ব দুই
ভাবছি এই চিঠি যদি কোনওদিন লিখা শেষ হয়, মা কে নিজেই পড়ে শোনাবো। এখন আর মা আমার ঘরে যেতে পারে না। শেষ দু’বছর ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।এই আছে এই নেই অবস্থা। আজকাল যদি কখনো উল্টো ফিরে,গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে মা- ধুক করে উঠে বুক, আস্তে করে সন্দেহ নিয়ে মায়ের নাকের সামনে আঙ্গুল রেখে বুঝতে চেষ্টা করি- বিধাতা সত্যিই আমাকে কতটা নিঃশ্ব করে দিলেন।
শুকরীয়া যে আজও মা আছেন, কখনো বাসায় ফিরে এলে ঝং ধরা কব্জাটা মায়ের কানে কানে বলে- তোমার ছেলে ফিরেছে, দুই ঘন্টা ধরে পাশের টেবিলে যে শূন্য পানির বোতলটা পড়ে আছে, ওটা ভরবে এখনি। মা কে সঙ্গ দেয়ার মতো কাউকে মিলাতে পারিনি এখনো- পেট পুঁজার টানে চাকরি ছাড়তে পারিনি।
কখনো মনে হয়, এমন ছেলে জন্ম দিয়েও মা আজ কত অসহায়- কখনো মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় মানুষ তো আমি, নিজে।
সকালের নাস্তা রেডি হলে নিজেই দিয়ে আসি মায়ের ঘরে। মা নিজেই রুটি ছিড়ে খেতে পারেন, আমি অপেক্ষায় থাকি, সময় পেলে মা কে ফেইসবুকের হাস্যকর সব কৌতুক পড়ে শুনাই, কখনো সোনেলার প্রিয় কোন ভাই বা বোনের চরম প্রিয় কোন ধারাবাহিক লিখার এক অংশ। মায়ের খাওয়া শেষ হলে ঔষধ তুলে দিই মুখে। এরপর সকালের ছুটি।
মা কখনো বলেন, শরীরের অসুখের ঔষধ তো দিলি বাবা, মরার আগে মনের অসুখটা যদি সারতো। আমি বরাবরই চুপ করে থাকতাম, আজও চুপ করেই থাকি। কারণ এক বন্ধু বলেছিল- এই বয়সে মায়েদের মনের ঔষধ হল ছেলের ঘরের “নাতি নাতনী”। ভাবছিলাম, সাহস করে বৌ ঘরে আনলেও নাতি-নাতনী পর্যন্ত গড়াতে কত সময় লাগবে। হিসেব করতে করতে মায়ের মনের অসুখ মনেই বইল, একমাত্র সন্তান একলাই রইল, মেয়ে দেখতে যাই যাই করে ছত্রিশ পেড়োয়, পছন্দ করতে করতে আজ আমি চল্লিশের কোঠায়।
পছন্দ !!
আচ্ছা ! এখনো কি পছন্দ করার মতো অধিকার টা আমার আছে? বয়স সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি আমায়?
-০-
চলবে__
২১টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠি টা পড়ে মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। সৃষ্টিকর্তা আপনার মায়ের আশা পূর্ণ করুন, আপনার ও সময় হয়েছে কারো দায়িত্ব নেবার। আমরা দাওয়াত পাবোতো?
এস.জেড বাবু
চিঠি
সে কথা বলে- যে কথা কখনো উচ্চারিত হয়না, মুখে বলা যায়না।
দেখি এই চিঠি কোথায় গিয়ে থামে,
শুভেচ্ছা প্রিয় আপু।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
“এখনো কি পছন্দ করার মতো অধিকার টা আমার আছে? বয়স সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি আমায়? “
মনের বয়স তো হয়নি পার
পছন্দ হোক মোর অধিকার।
ভাল লাগলো শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
মনের কোন বয়স হয়না হয়ত-
যা হয় তা হলো “চোখে দেখা পরিবর্তন”
মন যদি কেউ দেখতে পেত- বয়সের হিসেব রাখা বন্ধ হয়ে যেত।
চমৎকার মন্তব্যে অনুপ্রানিত দাদা।
শুভেচ্ছা রইলো।
ফয়জুল মহী
সুন্দর লেখা। পড়ে অভিভূত হলাম। শুভ কামনা
এস.জেড বাবু
অনেক শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা প্রিয় ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম অংশ অসুস্থতার জন্য পড়া হয়নি,
আগে প্রথম অংশ পড়ে আসতেছি।
এস.জেড বাবু
অবশ্যই পড়বেন,
চিঠি পড়ার একটা আলাদা কৌতুহল সবসময় আমার ভেতর কাজ করে। চিঠি দেখলেই লোভী হয়ে পড়ি।
শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
মা কে নিয়েই লেখা,
মা এর অসুস্থতার সময়ে মা অন্ত প্রান এক সন্তান এমনই চিন্তা করে। মা এর অসুখ সেরে যায় নাতী নাতনী দেখলে, এটি আসলেই সত্যি।
সত্যি ঘটনার মত লাগছে,
সুন্দর উপস্থাপনা।
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
হুমম- মাকে নিয়ে লিখা”
মায়ের চাওয়া পূর্ণ করতে গিয়ে যতটা অপূর্ণতা- তার জন্য সন্তানের হৃদয়ে লাগাতার রক্তক্ষরণের চিত্র-
তেমন এক সন্তানের আরও কিছু বলার / লিখার বাকি, চিঠি চলবে।
শেষ অংশে সত্যিটা বলে দিবো।
ছাইরাছ হেলাল
আই বুড়ো ছেলেরা পচা হয়! (বিধবা ব্যাটাদের থেকে ও)।
তার থেকে ঘোষনা দিয়ে সন্ন্যাস নিয়ে ফেলুন, (অবশ্য ডাক্তার জবাব দিয়ে দিলে),
হারিয়ে যাওয়া চিঠি সাহিত্য পড়তে ভালই লাগে।
অনেক অনেক বিখ্যাত প্রিয় মানুষদের (কাফকা সহ) চিঠি পড়েছি। চিঠিতে প্রকৃত মানুষ কে প্রচ্ছন্ন ভাবে উপলব্ধি করা যায় বলেই জেনেছি।
এস.জেড বাবু
সে তো ষোল আঠারো এমন কারো চোখে, বত্রিশ / চৌত্রিশের কারও হিসেবে চল্লিশের কেউ পঁচা না- আশির্বাদ।
আর আমার ভাল লাগে লিখতে- হাজারটা চিঠি আছে নোটপ্যাডে, ডাইরিতে-
চিঠি পড়া একরকম নেশা- বিশেষ করে অন্যের প্রেমিকার চিঠি ( আমার ধারনা)
সাহিত্যর প্রয়োজনে লিখা সাজানো / গোছানো চিঠি কতটা …..ত্যি তা আল্লাহ ভালো জানে। – তেমন চিঠি কি কেউ বাস্তবে পড়বে যেখানে হাত কাটা রক্ত নেই- ভালোবাসি আর না পেলে মরে যাবো লিখা নেই ? একটা খসখসে চরিত্রের পরিচয় হয়ত উপলব্ধি ছুঁয়ে যাবে।
কি কি কইলাম !
থাক
রিমুভ / এডিট করতে মন চাইছে না, এমনিতেই জবাব লেট মহারাজ।
ভালো থাকবেন-
করোনা থেকে তিন ফুট দুরে থাকবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লেখা, অনেক ভালো লাগলো।
প্রথম পর্ব পড়া হয়নি ইনশাল্লাহ্ পড়ে নিব,চিঠি পড়তে আমারও বেশ ভালো লাগে এটা পড়ে মুগ্ধ হলাম।
অনেক গুছিয়ে লেখা কথা গুলো মনে জায়গা করে নিল, বাস্তবতা এমনি আমরা যা মুখে বলতে পারি না চিঠির ভাষায় কল্পনায় তা লেখা যায়।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া, ভালো থাকুন।
এস.জেড বাবু
আমার লিখা হাজারো চিঠি
কেউ পড়েনি
প্রশ্ন করবেন ?
জবাব দিচ্ছি
উত্তর ঃ পোষ্ট করা হয়নি তাই কেউ পড়েনি।
ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত। বুঝলাম আমিও চিঠি লিখতে পারি।
অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় আপু, সত্যি বলতে আসলেই চিঠিতে তেমন কথা বলা যায়, যা মুখে বলা যায়না।
সুরাইয়া পারভীন
প্রথম পর্ব পড়ে ততোটা মন আপ্লুত হয়েছে
দ্বিতীয় পর্ব পড়ে বিষণ্ণ বিষাদে ভরে গেলো মন।
আবার রাগও হচ্ছে চল্লিশের দোরগোড়ায় পৌঁছেও
মায়ের জন্য কাউকে জোগাড় করতে পারেননি?
মায়ের জন্য দোয়া রইলো।যেনো মুখপোড়াটার গোছানো জীবন দেখে যেতে পারেন।
এস.জেড বাবু
হাহাহা
আপনার দোয়া কবুল হউক দুনিয়ার সকল মুখপোড়াদের জন্য।
হাসি কান্না আর রাগ নিয়েই তো অনুভুতি-
চিঠিতে হাসির খোড়াক আসতে পারে___
দেখি নিই সে সামনের পর্বগুলোতে কি কি লিখে- কি কি বলে।
চিঠিতো মনের কথাই বলে।
শুভেচ্ছা প্রিয় আপু।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
আপনিও ভালো থাকবেন ভাইয়া
সুস্থ থাকুন সবসময়
সৈকত দে
আচ্ছা ! এখনো কি পছন্দ করার মতো অধিকার টা আমার আছে? বয়স সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি আমায়?
এস.জেড বাবু
চিঠির লিখক নিজেও তা জানেনা হয়ত। দেখি পরের পর্বে কি বলে সে।
শুভকামনা ভাইজান-
হালিম নজরুল
শুকরীয়া যে আজও মা আছেন, কখনো বাসায় ফিরে এলে ঝং ধরা কব্জাটা মায়ের কানে কানে বলে- তোমার ছেলে ফিরেছে, দুই ঘন্টা ধরে পাশের টেবিলে যে শূন্য পানির বোতলটা পড়ে আছে, ওটা ভরবে এখনি। মা কে সঙ্গ দেয়ার মতো কাউকে মিলাতে পারিনি এখনো- পেট পুঁজার টানে চাকরি ছাড়তে পারিনি
এস.জেড বাবু
জ্বী ভাইজান-
চিঠি হয়ত একমাত্র অবলম্বন- যেখানে না বলা কথাগুলি অকপটে বলা যায়।
নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য।
ভালো থাকবেন।